#নীড়ের_খোজে
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_৫
মায়ের কথা শুনে ধরফর করে উঠে বসে মাশরিনা। ঝট করে বিছানা থেকে নেমে দাড়ায়। দরজা খুলে দিতেই ওর মা দ্রুত পায়ে ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। মায়ের এমন অস্থির আচরনে ঘাবরে যায়। তারপর ধীর কন্ঠে শুধায়
– ক কি হয়েছে মা। তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
– তুই পালিয়ে যা মা রে।
– কেন মা কি হয়েছে?
– ওই লোক গুলো বাসায় এসেছে।
– আরে কোন লোক সেটা তো বলবে?
– তোর বাবা কাল যার কথা বলেছিল।
– এত তাড়াতাড়ি কি বল। আচ্ছা তাদের আমি দেখতেছি কিন্তু তুমি এমন ঘামতেছ কেন?
– কয়েক মাস আগে যে উত্তর পাড়ার গ্রামের একটা মেয়ে গলায় দড়ি দিয়া ম’ই’রা গেছিল শুনছিলি না?
– হুম। কি হয়েছে এখন।
– সেই মহিলার হাসব্যান্ড এর সাথে তোর বিয়া ঠিক করছে তোর বাপ।
– কি বলো তুমি। তার না আমার সাথে পড়ে একটা ছেলে আছে।
– হ। এই জন্যই তো কই। চইলা যা এখান থেকে। ওই পরিবার এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোন ঝামেলা আছে। নয়ত মাইয়াডা ম’রার পর কোন কারণ খুইজা পাইল না পুলিশ। ওরা কিছু তো একটা করছে মাইয়াডার লগে। এমনি এমনি তো আর ম’রে যায় নাই। এরকম ফ্যামিলিতে আমি তোরে পাঠাইতে চাই না মা। তোর বাপ জানলে তুই আর এখান থেকে যেতে পারবি না।
– মা ওই লোকটা কেমন নিজের মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চলে আসছে। লজ্জা শরম কিছু নেই নাকি।
– ভালো হলে কি আর প্রথম বউটা এভাবে ম’রত।
– এখন আমি কি করব আম্মা।
– ব্যাগ তো খুলিশ নাই। ওই ব্যাগটা নিয়াই পেছন দরজা দিয়া বেরিয়ে যা। তোর বাপরে আমি দেখব আনে।
মাশরিনা ওর মাকে জড়িয়ে ধরল। কপালে একটা চুমু দিল। ওর মা ও পরম যত্নে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে।
কাল যেখানে ব্যাগ রেখেছিল সেখান থেকেই ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায় মাশরিনা। ওর মা ওকে সাহায্য করে বেরিয়ে আসতে। বেরিয়ে আর কোন দিকে না তাকিয়ে সরাসরি স্টেশনে চলে আসে।
🌸🌸🌸🌸🌸
কই তোমার মেয়ের রেডি হলো। সেই কখন থেকে ওনারা বসে আছে।
বলতে বলতেই হঠাৎ থেমে গেল রমিজ। সে পর্দা ঠেলে ভেতরের ঘরে এসে দেখল মেঝেতে বসে চোখের জ্বল ফেলছেন জবেদা বেগম।
– এই কি হয়েছে কাদতেছো ক্যান হ্যা। কই তোমার মাইয়া কই।
– ও ও তো
– আরে কান্না থামাও। মাইয়্যা কই কও তাড়াতাড়ি।
– ও ওর রুমে নাই। ওর ব্যাগটাও নাই। কোথায় যেন চলে গেছে।
এটা শুনে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল রমিজ এর। সে জবেদা বেগমকে ওভাবেই ওখানে ফেলে রেখে দৌড় লাগাল সেই রুমের উদ্দেশ্য যে রুমে মাশরিনা থাকত। গিয়ে দেখল দরজা ভেজানোই আছে। সে দৌড়ে গিয়ে সেই দৌড়ের বেগেই দরজায় ধাক্কা দিল। কাঠের দরজাটা ওপাশের দেয়ালের সাথে সজোরে ধাক্কা লেগে বিকট এক আওয়াজ করল। যে আওয়াজ পৌছে গেল ড্রইংরুমে বসা মানুষ অবধি। এত জোরে শব্দ পেয়ে জবেদাও সেখানে দৌড়ে আসলেন। সামনের রুমে বসা লোকদের সাথে একজন মহিলা ছিল। তিনি সেখান থেকে উঠে ভেতরের ঘরে আসলেন। এদিকে মাশরিনাকে দেখতে না পেয়ে রমিজ এর মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়৷ নিজেকে কেমনন পাগল পাগল লাগতেছে। সে সবেগে এসে চড় বসাল জবেদার গালে। গাল চেপে ধরল। ব্যাথায় মনে হচ্ছে দাতগুলো খুলে পড়ে যাচ্ছে তাও টু শব্দ অবধি করল না জবেদা বেগম। রমিজ দাতে দাত চেপে বলল তুই মেয়েকে লুকিয়ে রেখেছিস আমি জানি। কোথায় রাখছিস বল নয়ত তোকে আজ আমি মে’রেই ফেলব। কু***বাচ্চা। গালি দেওয়ায় এবার জবেদার ও মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হলো। সে তার শরীর এর সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা লাগালো রমিজ এর বুক বরাবর। রমিজ সেখানে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে না থাকায় ছিটকে পড়ল নিচে। সেখানে বসেই বউয়ের দিকে তাকিয়ে রাগে দাত কিড়মিড় করল।
হাত তালির শব্দে ধ্যান ভাঙে দুজনেরই। সেই মহিলা যে ভিতরে এসেছিল সে এতক্ষণ সবটাই অবলোকন করেছেন। রমিজ চটজলদি উঠে দাড়ায়। ব্যাস্ত কন্ঠে শুধায়
– সে কি আপনি এখানে কেন? আর এলেন ই বা কখন।
– কেন আমি এখানে আসতে পারি না বুজি। এখানে না আসলে তো আপনাদের এই রুপ দেখতেই পারতাম না। তা আপনার মেয়ে পালিয়ে গেছে আপনারা ফাইট কেন করছেন। যাই হোক এসে ভালোই করেছি। নয়ত এরকম একটা ফ্যামিলিতে আমার ভাইপো টার বিয়ে হতো। ওমন সোনার টুকরা ছেলেটার জীবন এভাবে আপনারা নষ্ট করতে চেয়েছিলেন।
এই মহিলা হচ্ছে সেই লোকটার ফুপু৷ তার এসব কথায় পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে জবেদার। তাও স্বামীর সামনে এদের সাথে তর্ক করবে না তাই সব রাগ জেদ যেন গিলে নিল।
তখন সেই মহিলা আবার গম্ভীর কন্ঠে রমিজকে সামনের রুমে যেতে বলে চলে গেল। রমিজ যাওয়ার সময় জবেদার দিকে এমন ভাবে চোখা রাঙানি দিয়ে গেল যেন পারলে এখনই চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিত। রমিজ সেখানে যেতেই সেই মহিলা কর্কশ গলায় বলে উঠল
– এই বিয়ে হবে না রমিজ মিয়া। এরকম পালিয়ে যাওয়া মেয়েকে কোন দিন ও আমরা আমাদের ঘরের বউ করে তুলব না।
এবার সেই ছেলে নিজে মুখ খলল।
– এভাবে বাসায় ডেকে এনে এনে এভাবে অপমান না করলেও পারতেন আঙ্কেল।
আর একজন বলল
– তোমাকে দিয়ে আমরা এটা আশা করিনি রমিজ।
-তুমি একটা নষ্টা মেয়েকেম খাইয়ে পড়িয়ে মানুষ করেছে। আশ্চর্য।
যেই নয় সেই কথা শুনিয়ে তারা বাসা থেকে বেরিয়ে গেল৷ মানুষের অপমান, নগদ পাচ লক্ষ টাকা না পাওয়ার ক্ষোভে রমিজ রেগে বোম। ইচ্ছে করছে সামনে যা আছে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে। লোকটা পা’গল হলেও জাাতে ঠিক। নিজের ঘরের জিনিস ভাঙলে নিজেরই কেনা লাগবে সেই জন্য নিজের ঘরের কিছু তিনি ভাঙেন না। বরং সেই রাগ গিয়ে ঝাড়েন বউয়ের উপর৷ আজও ব্যাতিক্রম হলো না। সে গিয়ে ওই দুর্বল মহিলার উপর নিজের রাগ ঝাড়তে লাগল। ইচ্ছে মতো পেটাতে শুরু করল। জারিফ এতক্ষণ রুমে ছিল৷ রাত জেগে গেমস খেলার ফলে সকাল বেলা আর ঘুম ভাঙেনি। বাহিরে চেচামেচির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে সে বাহিরে আসে। এসে মায়ের উপর এভাবে আঘাত হতে দেখে সহ্য হয় না ওর৷ ও গিয়ে বাবাকে ফিরাতে চায়। বাবা থামেন কি করছেন এগুলো। আম্মায় বাচব না এমনে মারলে।
রমিজ তখন রাগের বসে পুরো উন্মাদ হয়ে গেছে। সে নিজের ছেলেকেও ধাক্কা মে’রে ফেলে দিল। জারিফ উঠে দোড়ে কিচেন এ গেল। সেখানে থাকা সবজি কা’টার বটি টা নিয়ে আসল। রমিজ যেই না আবার হাত জাগিয়েছ জবেদাকে মা’রার জন্য অমনি বাহু বরাবর বটি ধরে জারিফ।
– আব্বা আপনি যদি আর একটা আঘাত ও করেন আম্মার শরীরে আমি এই হাত নামাইয়া দিব বইলা দিলাম। ভালভাবে বলছিলাম শুনেন নাই। এবার কো’প দিতে কিন্তু আমার হাত কাপবে না।
ছেলের মুখে এমন কথা শুনে ঘাবড়াল রমিজ। উপরে তোলা হাতটা চটজলদি নামিয়ে ফেলল। তারপর ছেলের দিকে তাকিয়ে তার পান খাওয়া দাত গুলো কেলিয়ে হাসি দিল যা দেখে আরো মেজাজ খারাপ হলো জারিফ এর।
#চলবে