নীড়ের খোজে পর্ব-০৪

0
627

#নীড়ের_খোজে
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_৪

মাশরি তুই এই অবস্থায় বাড়িতে যেতে চাচ্ছিস ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে। ও বাড়ির লোক এমনি তোকে পছন্দ করে না। সেখানে যদি ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যায় তাহলে ব্যাপারটা ঘেটে ঘ হয়ে যাবে। তার থেকে তুই হয় এখানে থাক নয়ত আমাদের বাসায় চল।

– আমি তোর বাসায় গিয়ে তোর ফ্যামিলিতে ঝামেলা বাড়াতে চাই না।

– কি বলিস মাশরি। তুই আমার বাসায় গেলে ঝামেলা বাড়বে?

– সেরকম ভাবে বলতে চাইনি। শোন মানুষ মেহমান একদিন, দুইদিন বড়জোড় এক সপ্তাহ পছন্দ করবে। কিন্তু দিন এর পর দিন তো আর তারা পছন্দ করবে না। এক সময় বিরক্ত হবেই। তাই আমি চাচ্ছি মায়ের কাছে যেতে।

সাবিহা আর কোন মতেই মাশরিনাকে আটকাতে পারেনি। চলে আসার সময় দাদা দিদুন জিজ্ঞেস করছিল আবার কবে ফিরবে। মাশরিনা জবাবে বলেছে সঠিক বলতে পারছি না দিদুন। মা যে কয়দিন তার কাছে রাখবে সে কয়দিন থাকব। এরপর না হয় তোমাদের কাছে চলে আসব কেমন।

🌸🌸🌸

চোখে তেমন একটা সমস্যা হয়নি। সামান্য যন্ত্রণা আছে। ডক্টর বলে গেছে ঠিক হয়ে যাবে। ভয়ের কিছু নেই।

শিয়রের কাছে বসে চোখের জল ফেলছেন শাফিন এর মা। আর মুখে বিড়বিড় করে কিসব বলে যাচ্ছেন। সানওয়ার সাহেব এ মাথা থেকে ও মাথা পায়চারি করছিল। হাটা থামিয়ে শোনার চেষ্টা করলেন তার স্ত্রী কি বলছেন। তাতে যা মনে হলো তাতে তার স্ত্রী তাকে আর তার ছেলেকেই বকে যাচ্ছেন।

– আমার ঘরের লোকই সব বদের হাড্ডি। ভালো মানুষ হলে কি আর আজ এই দিন দেখা লাগে। নিজের বউ এসে মে’রে যায়। এমন ছেলে পেটে ধরেছি আমি। আল্লাহ মাটি ফাক করে দাও চলে যাই। বসে বসে এসব দেখতে আর ভালো লাগে না।

সানোয়ার সাহেব ধমকে উঠলেন তার স্ত্রীকে। এই প্যান প্যান থামাও তো। ছেলের কানের কাছে বসে কি শুরু করলা হ্যা। আগে ছেলে সুস্থ হোক। এরপর ওই মেয়েকে তো আমি দেখে নিব। কত বড় সাহস। আমার সামনে আমার ছেলেকে আঘাত করে ড্যাং ড্যাং করে চলে গেল।

– মেয়েটা ভুল করে ফেলেছে। তোমাকে সহ মা’রা উচিত ছিল।

– ফালতু মহিলা। নিজের পরিবার এর কথা না ভেবে বাহিরের একটা মেয়ের কথা ভাবতেছ।

– মেয়েটার সাথে যে অন্যায় হয়েছে সেটা?

– অন্যায়ের কি আছে হ্যা। পুরুষ মানুষ ভালো লেগেছে একটা বিয়ে করেছে। এখন ভালো লাগে না আবার বিয়ে করবে। সারাজীবন এক জনের আচল ধরে বসে থাকবে নাকি।

– কি বললা তুমি।

সানওয়ার বুজলেন ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছেন। তাই তাড়াতাড়ি করে বললেন অপেক্ষা কর আমি ঔষধ নিয়ে আসি।

– এখন পালাচ্ছেন কেন। তো শুনি আমার আচল ছেড়ে আর কতজনের আচল ধরেছেন।

– উফফ ছেলের পাশে বসে কি শুরু করলে। আসছি আমি।

🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸

অনেক মাস পর মেয়েকে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছেন জবেদা। মাশরিনা মাকে জড়িয়ে ধরল। মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল মাশরিনা। কান্নার শব্দ পেয়ে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসল রমিজ। এসে মা মেয়ের এমন দৃশ্য কিছুক্ষন নিরব দৃষ্টিতে অবলোকন করলেন। এরপর বললেন

– জবেদা এত কান্নাকা’টি করার কি আছে। মেয়েটা কত দূর থেকে আসছে। একটু ছাড়। ঘরে গিয়া জিড়িয়ে নিক।

– হ মা আয় ভিতরে আয়। হাত মুখ ধুইয়া খাবি কিছু। কত সময় জানি গাড়িতে ছিলি।

মাশরিনার সাথে থাকা ব্যাগটা হাতে তুলে হাটা ধরলেন জবেদা। এতক্ষনে মাশরিনার নজর পড়ল একটু দূরে দাড়িয়ে থাকা রমিজ এর দিকে। এখন সম্পর্কে সে ওর বাবা হয়। মাশরিনা জিজ্ঞেস করলেন

– বাবা কেমন আছেন?

– আমি তো ভালো আছি। তোমারে দেখার পর আরো ভালো আছি।

এভাবে পেচিয়ে কথা বলার কি আছে বুঝলনা মাশরিনা তাই চোখ তুলে তার দিকে তাকাল। সে পান খাওয়া দাতগুলো বের করে হাসি দিলেন। এমন কুটিল হাসি দেখে কিছুটূ ঘাবরাল মাশরিনা। এই লোক এমন করে হাসছে কেন। আবার কোন কুবুদ্ধি এটেছে কে জানে। তারপর জানতে চাইল

– আমাকে দেখে বেশি ভালো থাকার কারণ।

– ঘটক বেটা কদিন যাবত খুব জালাচ্ছে। তার কাছে নাকি ভালো ছেলে আছে। বেশ পয়সাওয়ালা। সেখানে বিয়ে হলে বেশ সুখে থাকতে পারবা।

– আমি এখন বিয়ে করব না বাবা।

– তা বললে কি হয় আম্মাজান। বড় হইছেন বিয়ে শাদী করবেন না। এত ভালো ছেলে হাত ছাড়া করোন ঠিক হইব না আম্মা। তাদের সাথে আমার কথা হইছে। ঘরে আপনের যে ছবিখান ছিল ওইডা তাদের দেখাইছি।তারা আপনাকে পছন্দ করছে। পাচ লাখ টাকা নগদ দিব। আর গহনা ও দিব। তবে একখান ঝামেলা আছে।

মাশরিনার আর শুনতে মন চাইল না। সে আছে এমনিতেই বিপদে। তার উপর আবার কোন আপদ এসে ঝুটতেছে কে জানে। সে দৃষ্টি ঘুরিয়ে মায়ের দিকে চাইল।

– আম্মা আমি কি এখন বিয়ে করব বলেছিলাম।

– না।

– তাহলে আমার বিয়ে অথচ আমাকে না জানিয়ে এদিকে বিয়ে ঠিক করে ফেলছ। তাদের আবার আমাকে পছন্দ ও হয়ে গেছে।

– তোর বাপ আমাকে কিছু বলেনি রে মা। আজকেই বলল সকালের দিকে। বলছিল তোকে ফোন দিতে। আমি ভাবছিলাম রাতে দিব। তার আগেই তো চলে আসলি।

– আম্মা আমি একটু ফ্রেশ হতে চাই।

– আচ্ছা রুমে যা।

– জারিফ কোথায়?

– কোথায় আবার থাকবে। মোড়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে মনে হয়। সন্ধ্যার আগে আইসা পড়বেনে। তুই যা।

মাশরিনা আর কথা বাড়ায় না। মাথাটা মনে হচ্ছে ফেটে যাচ্ছে। এখন রুমে গিয়ে একটা ঘুম দেয়া জরুরি। মাথায় এত চাপ আর নিতে পারতেছে না।

ফ্রেশ হয়ে না খেয়েই ঘুম দেয় মাশরিনা। তার মা এসে ডেকে গেছে অনেক্ষন। না উঠে বিছানায় গা এলিয়ে বসে থাকে। উঠেও না দরজাও খুলে না। খায় ও না। জারিফ এসে ডাকছে। অনেক বার। বলছে আপু ওঠ দেখা করেই চলে যাব। মাশরিনা বলছে মাথা ব্যাথা করে অনেক। পরে কথা বলব। জারিফ ও আর কথা বাড়ায় নি। রাতে খাওয়ার সময় ডাকাডাকি করেও আর উঠাতে পারেনি কেউ।

রাতটা কে’টে গেছে। সকালে বেশ বেলা করেই ঘুম ভাঙে মাশরিনার৷ তাও এমনি এমনি ভাঙেনি। বাহির থেকে জবেদা বেগমের ডাকে ঘুম ভাঙে। ওঠ মা। সর্বনাশ হয়ে গেছে। ওঠ তাড়তাড়ি।

মায়ের এমন কথায় তড়াক করে উঠে বসে মাশরিনা। এমনি তো জীবনে ভাটি লেগেছে। আবার নতুন করে কি সর্বনাশ ঘটল।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে