#নীড়ের_খোজে
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_৩
ছেলের অপকর্ম সম্পর্কে বিচার দিতে এসে ছেলের বাবার কথা শুনে হতবাক দুই বান্ধবী।
– তা মামনিরা বাহির দাড়িয়ে কেন। ভেতরে চলে এস।
সাবিহা মাশরিনা দুজন দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করল একবার। এরপর দুজন হাত ধরেই ভেতরে প্রবেশ করল।
ওরা ভেতরে প্রবেশ করতেই হাত জাগিয়ে সোফা দেখিয়ে বসতে বলল ওদের। ওরা দুজন খুব ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বসল সেখানে। ওরা বসতেই শাফিন এর বাবা বললেন তোমরা একটু বসো আমি আসতেছি। তিনি ভেতরে চলে যেতেই মাশরিনা সাবিহার হাত শক্ত করে চেপে ধরে। এমন ভাবে ধরেছে যেন ওর নখ দেবে যেয়ে এখনি সাবিহার হাত থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হবে। তখন সাবিহা দেয় মৃদু এক ধমক।
– আগে মনে ছিলনা এসব কথা। প্রেম করছিস তো দেখে শুনে করবি না। এত বোকা কেন তুই আজিব। আগে ভাবতাম এখন মডার্ন যুগ চলে এসেছে। এ যুগে এসে মেয়েরা আর বোকা নেই তারা নিজেদের অধিকার নিজেরা ছিনিয়ে নিতে জানে। কিন্তু এই মুহুর্তে এসে মনে হচ্ছে এই যুগে আগের থেকেও বোকা মেয়ে মানুষ আছে। যারা খুব সহজেই কাউকে বিশ্বাস করে ফেলে। বিশ্বাস এমন বিশ্বাস তা আর কি বলব। এই যে আন্টি আঙ্কেলকে না জানিয়ে তুই তো বিশ্বস্ত মানুষের হাত ধরলি। জি পেলি দিনশেষে। দিনশেষে ঠকেই গেলি। এরপর এমন একটা সিচুয়েশন আসবে যে না পারবি আন্টি আঙ্কেলকে কিছু বলতে আর না পারবি সহ্য করতে।
তাদের দুইজন এর কথা বলার মাঝেই সেখানে চলে আসে শাফিন এর বাবা। এসে গম্ভীর মুখে বসতে বসতে বলে
– আমি সানওয়ার চৌধুরী। শাফিন এর বাবা।
সানওয়াার চৌধুরী যে লম্বা বক্তব্য ছোড়ার জন্য আটঘাট করে বসছে তা বুজতে বেগ পেতে হয় না। সাবিহা বিড়বিড় করে বলে এতকথা না বইলা মুল কথা বল বুইড়া।
কিন্তু বিড়বিড় করে বলা কথা তার কানে গেল না। সে তার মতো করে বলতে লাগল
– তুমি মাশরিনা তাইত। শাফিন এর সো কল্ড ওয়াইফ।
সো কল্ড ওয়াইফ কথা শুনে থমকে দুজনই। এ কেমন ব্যাবহার তার। তার মানে কি শাফিন এর বাবাও শাফিন এর মতোই। ওদেী চিন্তার মাঝেই তিনি আবার বলতে লাগলেন
– দেখো মা শাফিন তো এখনো ছোট অনেক কিছু বোঝে না। না বুঝে হয়ত ভুলটা করে ফেলেছে। ও এসে আমাকে সবটাই বলেছে। পারলে তুমি ওকে ক্ষমা করে দিও কেমন।
এরপর তিনি শাফিনকে ডাক দেন। তার ডাক পাওয়া মাত্রই শাফিন রুমে প্রবেশ করে। সোফায় বসতে বসতে সামনে একটা কাগজ তুলে ধরল। মাশরিনা জানতে চাইল কি এটা৷ শাফিন প্রতিউত্তরে বলল এটা একটা চেক। এখানে যে পরিমাণ টাকা আছে তাতে এবোরশন এর পরেও যে টাকা থাকবে তাতে তোমার নেক্সট কয়েক মাস খুব ভালো ভাবে চলে যাবে। তোমার টাকা নিয়ে তো আর চিন্তা থাকল না।
– শাফিন এগুলা আমি চাইনা। দেখ আমি তোমার স্ত্রী আর এটা তোমার সন্তান। তুমি এভাবে করতে পার না আমাদের সাথে।
– কীভাবে করেছি। আমি তো আর অস্বীকার করিনি যে এটা আমার সন্তান না। কিন্তু এই মুহুর্তে আমি সন্তান চাচ্ছি না তাই তোমাকে এবোরশন করাতেই হবে। আমি তোমার সাথে হ্যাপি নই। মুক্তি চাই আমার।
– তার কারণ বুঝি থার্ড পারসোন?
– দেখো এত কৈফিয়ত আমি তেমাকে দিতে পারব না।
শাফিনকে থামিয়ে দিয়ে সানওয়ার চৌধুরী বলেন
– এই মেয়ে তোমার কি যোগ্যতা আছে চৌধুরী পরিবার এর বউ হওয়ার।
মাশরিনা কিছু বলার জন্য মুখ খুলে এর মধ্যে শাফিন এর কথা শুনে থেমে যায়।
– এই মেয়ের চেহারা ছাড়া আর কিছুই নেই। জন্মের পরেই বাপ ম’রেছে বড় হয়েছে মায়ের শ্বশুর বাড়ি। সেখানের মানুষ পছন্দ করত না বলে মা তাকে হোস্টেল এ দিয়ে দিয়েছে আর সেখানে এসে করেছে ফস্টিনষ্টি। এখন পেটে সন্তান নিয়ে অধিকার চাইতে এসেছে।
এতক্ষণ বসে থাকলেও এসব নোংরা কথা সহ্য হলো না মাশরিনার। পাশে থাকা গরম চায়ের কাপ ছুড়ে মা’রল শাফিন এর মুখ বরাবর। গরম চা এসে চোখে মুখে লাগল। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে মা বলে এক চিতকার দিল শাফিন। মাশরিনা ততক্ষণে নিজ জায়গা ছেড়ে উঠে পড়েছে। শাফিন ব্যাথায় কাতরাচ্ছে তার মধ্যে গিয়ে ওর শার্টের কলার চেপে ধরে। গালে উরাধুরা থাপ্পর লাগায়। এক তো গরম চায়ে গাল পুড়েছে তার উপর থাপ্পড় গুলো যেন শরীর এর চামড়া ছিলে লবন ছেটানোর মতো ছিল। সানওয়ার সাহেব মাশরিনার চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যান। দেখতে যেন কোন হিংস্র বাঘিনি মনে হচ্ছে। তিনি উঠে মাশরিনা কে ছাড়াতে চেষ্টা করেন কিন্তু এই মুহুর্তে মাশরিনা দেখতে যেমন বাঘিনির মতো তেমনি যেন শক্তিও। সানওয়ার সাহেব পারছে না দেখে সাবিহা ও ওকে ধরে।
– ছেড়ে দে মাশরি কি করছিস। এমনিতেই চোখ মনে হয় গেছে।
– ওর সাহস কি করে হয় নিজের বউকে নষ্টা মেয়ে বলার। ওকে তো আমি শে’ষ করে ফেলব একদম।
– শোন কুকুর মানুষের পায়ে কা’মড় দিলে মানুষ ও কুকুরের পায়ে কামড় দিতে পারে না। ছেড়ে দে। আগে ও ওর চোখ তো ঠিক করুক। চোখ না থাকলে তোর এই বাঘিনি রুপ কাকে দেখাবি।
সাবিহার কথায় ছ্যাত করে ওঠে সানওয়ার চৌধুরী। তেতে উঠে বলে
– তোমাদের তো আমি পরে দেখে নিচ্ছি। আগে ছেলেকে সুস্থ করে নেই। বেরিয়ে যাও আমার বাসা থেকে।
মাশরিনা বলল সে নাহয় দেখা যাবে হিটলার শ্বশুর আব্বা। কে কাকে দেখে নেয় সেটাও আমি দেখে নিব৷ তারপর সাবিহার উদ্দেশ্য বলল
– সাবিহা টেবিল থেকে চেক টা নে।
– এই মেয়ে এই চেক ধরবা না। ভালো মতো চেক দিয়েছিলাম নাও নাই। উল্টা আমার ছেলেকে আঘাত করছ। রাখো চেক।
– তা কি করে হয় হিটলার শ্বশুর ফাদার। আওনার ছেলে বাজে কথা বলছে তাই আঘাত করছি। বাট আপনাদের বংশের রক্ত আমার গর্ভে। তাকে কীভাবে আপনাদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করি বলুন তো। ত্রিশ লাখ টাকার এমাউন্ট টা কিন্তু কম নয়। আমার আর আমার বাচ্চার ছোটবেলা খুব ভালো ভাবেই কে’টে যাবে। তার বাবা জন্ম দিয়ে কুড়েঘরে ফেলে বাপ অট্টালিকায় কা’টাবে ব্যাপারটা খারাপ দেখায় তাই এই চেক আমি রেখে দিলাম। আপনি যা করার করে নিবেন হিটলার শ্বশুর আব্বা। আজ আসি। আবার দেখা হবে।
নরম ভদ্র মেয়েটার এমন রুপ দেখে সাবিহা নিজেই হতবাক। যেখানে সব সময় চুপ করে মটকা মে’রে বসে থাকত মাশরিনা। সাবিহা সব সময় চঞ্চল থাকত আর মাশরিনাকে বলত এই আবুল মার্কা লুক একটু বাদ দে একটু চালাক হ। বাট সেই মাশরিনার এই ক্ষিপ্ত বাঘিনি রুপ দেখে সাবিহা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রয় ওর দিকে। মাশরিনা দুই বার ডাক দিয়েছে সাবিহা শোনে নি। তাই ওর হাত টেনে ধরে টানতে টানতে দোতলার সিড়ি দিয়ে নামাচ্ছে আর সাবিহা এখনো ব্যাবলাকান্তের ন্যায় তাকিয়ে আছে।
ওরা বেড়িয়ে যেতেই পর্দার আড়াল থেকে কেউ একজন সড়ে গেল। বিড়বিড় করে আওড়াল এই মানবীই একদিন তোমাদের ধ্বংসের কারন হবে দেখ। পাপ যখন বেড়ে যায় তখন পাপকে বিনাস করতে কেউ না কেউ চলে আসে। তোমাদের পাপ বিনাস করার সময় এসে গেছে। তারপর শাফিন এর উদ্দেশ্য বলে এটা তোর প্রাপ্য ছিল। ইউ ডিজার্ভ ইট।
সানওয়ার সাহেব ততক্ষণে চেচিয়ে লোকজন জড়ো করে ফেলছে। বাসার সব সার্ভেন্ট রা এক জায়গায় হয়েছে। পোড়া জায়গায় আইস কিউব লাগাচ্ছে। কিন্তু শাফিন কিছু বুজে ওঠার আগেই চা ছুড়ে মা’রায় সেটা চোখের ভিতরে চলে গিয়েছে। এখনো চোখ খুলতে পারতেছে না। ভীষন যন্ত্রনা হচ্ছে। শাফিন এর মা মমতা বেগম এতক্ষণ বাসায় ছিল না। বাসায় এসে ছেলের এই অবস্থা দেখে কেদে কে’টে একাকার করে ফেলছেন। শাফিন এর বাবাকে বলতেছে এখনো হসপিটাল না নিয়ে বসে আছেন আপনি। আবার ছেলে বোধ হয় আর দেখতে পাবে না। আল্লাহ এইটা তুমি কি করলা। ওর অন্যায়ের শাস্তি কি এভাবে দিবা।
এম্বুলেন্স এ কল করে। হসপিটাল কাছে হওয়ায় অত বেশি সময় লাগেনি। ডক্টর এসে চোখ টেনে দেখলেন চোখ যেন ভয়ঙ্কর রকমের লাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ডক্টর কন্ডিশন দেখে সানওয়ার সাহেব কে বললেন এখনি ইমারজেন্সিতে নিতে হবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। চোখের অবস্থা ভালো না। কি হবে বলা যাচ্ছে না।
#চলবে