#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#পর্ব_২২
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ
সেতু আকাশের কলটা তুলবে কি তুলবে না ভাবতে ভাবতেই কল কেঁটে গেল।একবার নিষাদের দিকে তাকিয়েই মোবাইলটা রাখবে তখনই আবারও কল আসল ওপাশ থেকে।নিষাদ বেশ আগ্রহ নিয়েই প্রশ্ন ছুড়ল,
” কে কল দিল?কল ধরছো না যে? ”
সেতুর মনে অজানা ভয়।আকাশ কি কোন কিছু জেনে নিয়েছে?নাকি আবারও প্রশ্নের সম্মুখীন করবে। মিহি কন্ঠে উত্তর দিল,
” আকাশ কল দিয়েছে। ”
নিষাদের মুখে এতক্ষন হাসির রেশ থাকলেও মুহুর্তেই যেন উবে গেল।মৃদু গলায় বলল,
” ওহ,কল ধরো।আমার জন্য সংকোচ করছো?”
সেতু ডানে বামে মাথা দুলাল৷ বলল,
” না, আপনার জন্য নয়।”
নিষাদ বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
” তাহলে?কল তুলে কথা বলো।সমস্যা কি?”
সেতু মাথা নাড়াল।কল রিসিভড করে কানের সামনে নিতেই দেখল নিষাদ পা বাড়িয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল।সেতু আড়চোখে তা চাইল।নিষাদ কি কিছু মনে করেছে?কিন্তু সেই তো কল তুলতে বলল।সেতু ছোট্ট শ্বাস ফেলল।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কিছু বলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।ওপাশ থেকে আকাশ বলে উঠল,
” সেতু?কেমন আছো?”
সেতু ক্ষীনস্বরে উত্তর দিল,
” ভালো আছি। তুমি হঠাৎ? কোন দরকার আকাশ?”
আকাশ বেশ কিছুক্ষন চুপ রইল।হয়তো বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না,কিংবা বলার অনেক কিছু থেকেও বলতে পারছে না।সেতু আবারও বলল,
” কিছু কি বলবে আকাশ?”
আকাশ এবার মুখ খুলল।নরম গলায় বলল,
” সেতু?তুমি আমায় মিথ্যে বললে? কেন মিথ্যে বললে?”
সেতুর কলিজায় মোঁচড় পড়ল।কাঁপা স্বরে বলল,
” ক্ কি?ক ক্ি মিথ্যে বলেছি আমি? ”
” আমার ছেলেকে নিয়ে মিথ্যে বললে কেন সেতু?ও তো আমারই সন্তান ছিল। তবে?আমি তোমায় বিয়ের পর থেকে যতটুকু চিনতে পেরেছিলাম তাতে আমি জানতাম তোমার দ্বারা অবৈধ সম্পর্কে জড়ানো সম্ভব নয় সেতু।প্রথম থেকেই ধারণা করেছিলাম তোমার গর্ভে সন্তানটি আমারই।আর এখন তো আমি নিশ্চিত!”
সেতু ভয় পেল। সন্তানের অনিশ্চায়তা এই প্রথম অনুভব করতে পারল। গলা শক্ত করে বলল,
” কি বলছো এসব আকাশ?ভুল বলছো তুমি।তোমার সংসার আছে, দ্বিতীয় স্ত্রী আছে, তবুও আমার পেঁছনেই কেন পড়ে আছো আকাশ?আমাকে আর আমার সন্তানকে থাকতে দাও নিজেদের মতো।”
আকাশ হালকা হাসল।মুখে বলল,
” তুমি আমায় কতটা খারাপ ভাবো তা তোমার কথাতেই স্পষ্ট সেতু।ভয় পাচ্ছো কেন আমায়?আমি এতটাই খারাপ? এতটাই?”
সেতু চোখ বুঝে ঠোঁটে ঠোঁট চাপল।কেন জানি না তার কান্না আসছে। চিন্তায় হাত পা কাঁপছে।আকাশ কি কিছু করে বসবে?এটা তো সত্যি, বায়োলজ্যিকিলি আকাশই নীরের বাবা।আকাশ কি তবে এতগুলো দিন পর সন্তানকে কেড়ে নেওয়ার জন্যই কল দিয়েছে?সেতু আর ভাবতে পারল না। চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে এল।বলল,
” তুমি আমাকে আর কল দিবে না আকাশ।কল রাখো।আমি তোমার সাথে আর কথা বলতে চাই না।”
ওপাশ থেকে আকাশ দ্রুত বলে উঠল,
” প্লিজ সেতু।কল রেখো না।আমার কিছু কথা আছে।প্লিজ।”
” বলো।”
আকাশ যেন স্বস্তি পেল।মুখে বলল,
” তোমার সাথে সামনাসামনি কথা বলতে চাইছি সেতু।কাল?কাল একটু দেখা করতে পারবে?আমি কথা দিচ্ছি, তোমার ভয়ের নতুন করে কোন কারণ আনব না আমি। প্লিজ সেতু।”
” কি বলবে তুমি?”
“কলে বলা গেলে তো কলেই বলে ফেলতাম সেতু।সময় হবে তোমার?”
সেতু চুপ থাকল।পরক্ষনে প্রশ্ন ছুড়ল,
” তুমি কি সন্তানের অধিকার দাবি করবে আকাশ?তবে শুনে রাখো নীর আমার সন্তান৷ তুমি কতটুকু জানো, কি জানো আমি জানি না৷ তবে এইটুকু বলব তুমি ভুল জানো আকাশ।”
আকাশ কন্ঠে বিষাদ ঢেলে বলল,
” আমি যে জানতে বড্ড দেরি করে ফেলেছি সেতু।আজ সব আমার হাতের বাইরে। সবকিছুই।আশ্চর্যের বিষয় হলো আমি আজকাল ইরাকেও আগের মতো ভালোবাসতে পারছি না। ওর প্রতি আমার আগ্রহ দিন দিন ফুরিয়ে আসছে।মানুষ বোধ হয় দূর থেকেই সুন্দর সেতু। ইরাও আমার কাছে দূর থেকেই বড্ড বেশি সুন্দর আর লোভনীয় ছিল।আজ আর সে সৌন্দর্য টের পাই না আমি, আজকাল আর আমার মধ্যে ওর প্রতি সেই লোভ আসে না।আমি খুব অসহায় বোধ করছি সেতু।”
” মানে? ”
আকাশ হালকা হেসে উত্তর দিল,
” তুমি চিন্তা করো না সেতু।আমি তোমার সুখ দ্বিতীয়বারের মতো ছিনিয়ে নিব না। আমি মন থেকে চাই তুমি সুখী হও, ভালো থাকো।সন্তানের অধিকারও ফলাব না আমি সেতু।তবে বাবা হিসেবে সন্তানকে দেখতে তো পারি?দূর থেকে ভালোবাসা তো যায়?সেতু জানো?আমার আর ইরার একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে।এই তো মাস দুয়েক বয়স। ”
সেতু যেন এবার একটু স্বস্তি পেল।মনে মনে অল্প স্থির হয়ে শুধাল,
“ভালো। আমি খুব খুশি হলাম আকাশ।”
“আমি হয়তো চাইলে আমার সন্তানকে তোমার থেকে কেড়ে নিয়ে আসতে পারতাম সেতু।কিন্তু সত্যি কথা এতে তুমি বা সেই ছোট্ট ছেলেটা, কেউই ভালো থাকবে না। ইরা কখনোই ওকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসতে পারবে না।তাই বলব,তুমি এই বিষয়ে ভয় পেও না।আমি এমন কিছু চাইব না।”
” তবে?”
” নিজের অনুশোচনা টা প্রকাশ করতে চাই।অনুতপ্ততা স্বীকার করতে চাই।একটাবার দেখা করো সেতু দয়া করে।”
সেতু চুপ রইল।বিনিময়ে কি উত্তর দিবে বুঝে উঠল না।দেখা করা উচিত?পরিবারের সবাই কি বলবে?নিষাদ কি বলবে?সেতু মুহুর্তেই বলল,
” আমি আসলে এখন দেখা করতে পারব না আকাশ।”
কথাটা বলেই কল কাঁটল। মোবাইল তৎক্ষনাৎ বন্ধ করে ড্রয়রে রাখল।মাথার ভেতর অস্পষ্ট ভয় এখনও কাজ করছে।এখনও বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে।
.
নিষাদকে সামনাসামনি পেল একদম রাতের খাবারের পরে।এর আগে একবারও নিষাদ রুমে ডুকল না।আগ বাড়িয়ে কথাও বলল না।সেতু অবাক হলো।নিষাদ কি কষ্ট পেয়েছে?কিছু বুঝে না উঠে সরু চোখে নিষাদের দিকে চেয়ে রইল।নিষাদ অবশ্য তার দিকে ফিরে চাইল না।ধুপধাপ পা ফেলে বেলকনিতে গেল।সেতু ছোট্ট শ্বাস ফেলে নীরকে ঘুম পাড়ানোতে ব্যস্ত হলো।নীরের চোখে ঘুম নামতেই খাট ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।পা ফেলে বেলকনিতে গিয়ে নিষাদকে পর্যবেক্ষন করেই বলল,
” নিষাদ,কিছু কি হয়েছে?”
নিষাদ পেঁছন ফিরে একবার তাকাল।আজকের চাহনীটা অন্যদিনের মতো প্রাণবন্ত মনে হলো না সেতুর কাছে।কেমন যেন নির্জীব দৃষ্টি।সেতু আবারও জিজ্ঞেস করল,
” কিছু হয়েছে নিষাদ?”
নিষাদ গলা ঝাড়ল।মৃদু হেসে বলল,
” কি হবে সেতু?”
” কিছুই কি হয়নি?”
নিষাদ নির্বিকার ভাবে চেয়ে থেকেই বলল,
” না।”
সেতু ফের প্রশ্ন ছুড়ল,
” তবে এমন দেখাচ্ছে কেন আপনাকে?”
নিষাদ ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেলল।সেতুর দিকে গহীন ভাবে তাকিয়ে থেকে উত্তর দিল,
” আমার বোধহয় মাথা ধরেছে।”
সেতু মানল না সেই উত্তর৷ নিষাদের সামনে দাঁড়িয়েই বলল,
” আপনি কি রেগে আছেন নিষাদ?আকাশের সাথে কথা বলেছি বলেই কি রেগে আছেন?আকাশকে আমি নাম্বার দিইনি নিষাদ, ও কিভাবে যোগাযোগ করল আমি জানি না। আর কলটা তো আপনিই তুলতে বলেছিলেন। ”
সেতুর জববদিহি শুনে নিষাদ এবার ঠোঁট চওড়া করে হাসল।সেতুর নরম হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলল,
” আমি তোমায় ভালোবাসি সেতু।শুধু ভালোবাসিই না,তোমায় বিশ্বাস করি।তোমায় সম্মান করি।এই অল্প কারণে আমি রাগ করব না তোমার উপর। ”
” তবে?হঠাৎ এই পরিবর্তন কেন নিষাদ?”
নিষাদ চোখ বুঝল।নরম গলায় বলল,
” ভালোবাসলে হারিয়ে ফেলার ভয় থাকে সেতু, অনিশ্চায়তার যন্ত্রনা থাকে।আমি তোমায় হারিয়ে ফেলেছিলাম সেতু, ফিরেও পেয়েছি।কিন্তু কেন জানি না তবুও আমার ভয় হয়।তুমি না থাকলে আমার কি পরিণতি হবে?আকাশ ছেলেটাকে শুরু থেকেই আমি আমার প্রতিদ্বন্ধি হিসেবেই কল্পনা করেছি।সেই আকাশ নামটা এতদিন পর আবারও শুনে পুরোনো কষ্টগুলো একটুআধটু মনে পড়ছে।ভয় হচ্ছে। এই ছাড়া কিছুই না।”
” আপনি চাইলে আমি কলটা বরং নাই তুলতাম।”
নিষাদ হাসল।ঠোঁট চওড়া করে বলল,
” কেন?বললাম তো, ভালোবাসি, বিশ্বাস করি, সম্মান করি।আমার তোমার প্রতি বিশ্বাস আছে সেতু।কথা বলতেই পারো।তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।”
সেতু ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,
” জানতে চাইলেন না তো কল করে কি কি বলেছে?”
” সবাইকে আলাদা আলাদা প্রাইভেসি দিতে হয় সেতু।তোমার সব বিষয়ে আমি নাক গলালে বিষয়টা খারাপ দেখায় না?তাছাড়া দুইজন মানুষ কলে কি বলেছে এটা জানতে চাওয়াটা কেমন জানি নিম্ন মানসিকতার পরিচয় না?”
” আপনি যে বললেন সেদিন? কোন আড়াল থাকা চলবে না, কোন সংকোচ থাকা চলবে না? ”
” সেদিন ওসব বলেছি বলে যে তোমার সব ব্যাক্তিগত ইস্যুই আমার সাথে শেয়ার করতে হবে এমন মানে নেই সেতু।তোমার ইচ্ছে হলে জানাবে, না হলে জানাবে না।আমি জোর করব না।সেদিন কথাগুলো বলেছিলাম, কারণ সবসময় জানতাম স্বামী স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক। একজন কোন একটা সমস্যার সমাধান করতে না পারলে অবশ্যই অন্যজনকে সেই সমস্যাটার সমাধান বের করতে হবে।একজন বিপদে থাকলে অন্য জন এসে বিপদ থেকে রক্ষা করবে।একজন কষ্ট পেলে অন্য জনকে হাসানোর দায়িত্ব নিতে হবে।কিন্তু যদি সমস্যা,বিপদ, কষ্ট এসবের কথা অন্য জন নাই জানতে পারল তো সে এগিয়ে আসবে কি করে?পরিপূরক হয়ে সাথে জুড়ে থাকবে কি করে?”
সেতু মাথা নাড়াল।বলল,
” আপনার মুখটা কেমন মলিন দেখাচ্ছে। ”
নিষাদ একটু ঝুঁকল। ঠোঁট চওড়া করে শুধাল,
” উহ!আমায় নিয়ে হঠাৎ এত চিন্তা কেন মেয়ে?আমি কি প্রেমিক হই তোমার?”
কথাটা বলেই নিষাদ হাসল।অল্প আওয়াজ হলো সেই হাসির।সেতু তাকিয়ে রইল সেই হাসির দিকে।যেন এতক্ষন পর নির্জীব মুখটায় উচ্ছলতা ফিরে আসল।কি ভীষণ সুন্দর সেই মুখটা!
.
নীরুর কাঁধে ঝুলে আছে ব্যাগ।কপালে বেশ ঘন ভাজ।দৃষ্টি হাতের মোবাইলটায়। পরমুহুর্তেই দৃষ্টি সরিয়ে ঘাড় পর্যন্ত চুলগুলো নাড়িয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা করল।কিন্তু বুঝে উঠল না। আবারও মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে থাকা রঙ্গনের পাঠানো ম্যাসেজটার দিকে চাইল।যেখানে স্পষ্ট লেখা,
” রাস্তায় এভাবে ঘুর ঘুর করতে মন চায় তোর অথচ আমার সাথে কথা বলতে তোর মন চাইল না নীরুর বাচ্চা নীরু?”
নীরু কিছু বুঝল না।আশপাশে রাস্তার কোথাও রঙ্গনকেও দেখল না।তবে কোথায় দেখল তাকে?নীরুর আগের মতোই মোবাইলটা ব্যাগে নিয়ে পা চালাল। বেশিদূর যেতে পারল না।তার আগেই রঙ্গনের সম্মুখীন হলো।পরনে সাদা ধবধবে শার্ট।হাতাগুলো গুঁটানো আছে কনুই পর্যন্ত।নীরু একনজর চাইল।বিরক্তি নিয়ে বলল,
” তুমি?তুমি এইখানে কি করছো গাঁধা?”
রঙ্গন কপাল কুঁচকাল। মৃদুশ্বাস ফেলে নীরুর হাতটা চেপে ধরেই
বলল,
” তোর সাথে কথা আছে আমার।চল, কোথাও বসি।”
নীরু ভ্রু জোড়া কুঁচকে হাত ছাড়াল।চঞ্চল গলায় বলল,
” এভাবে রাস্তার উপর হাত ধরে টানাটানি করছো কেন?ছিঃ ছিঃ!তোমার বউ জানলে কি হবে ভেবে দেখেছো?যদি আশেপাশে কোথাও তোমার বউ থাকে?যদি দেখে ফেলে তাহলে তো ভাববে আমিই তোমার গলায় ঝুলে পড়েছি।”
রঙ্গন ত্যাড়া চোখে তাকিয়েই বলল,
” তো ঝুলে তো পড়েছিস ই। এখন চাইলেও গলায় ঝুলে থাকা তুই নামক মেয়েটাকে সরাতে পারছি না। কি বিচ্ছিরি রকম ভাবে ফাঁ’সিয়ে দিয়েছিস আমায়। ”
নীরু অবাক হয়ে বলল,
” আমি ঝুলে পড়েছি?আমি ফাঁ’সিয়েছি?কিভাবে ফাঁ’সিয়েছি বলো।”
” এই যে সারাক্ষন আমার পিঁছু পিঁছু ঘুরে মাথা খেয়ে নিয়েছিস।তখন শোকচিন্তা ছিল না তোর?এখন এসে বলছে আমার বউ দেখে নিলে কি হবে।”
নীরু চোখ সরু করে বলল,
” তোমার পিঁছু পিছুঁ ঘুরেছি বলে অপমান করছো তুমি?বেশ করেছি পিঁছু পিঁছু ঘুরেছি।”
” চোরের মায়ের বড় গলা।তুই যে চোর এবার স্বীকার কর নীরু।”
” কি চুরি করেছি তোমার?বলো।”
রঙ্গন উত্তরের বদলে ফের প্রশ্ন ছুড়ল,
” চুরি কি আমি করেছি নাকি তুই করেছিস?যে চুরি করে সেই ভালো জানে কি চুরি করেছে সে।”
নীরু রেগে গেল। ফোঁসফাঁস নিঃশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিল,
” তুমি কিন্তু অপমান করছো আমায় গাঁধা।এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা মেয়েকে চোর বলা অপরাধ। জানো না তুমি?”
রঙ্গন পাত্তা না দিয়ে হাসল।বলল,
” চোরকে চোর বলবে, সেটা নাকি আবার অপরাধ।হাসালি নীরু।”
নীরুর নাক ফুলে উঠল।রাগে কান্না পেয়ে গেল।তবুও দমিয়ে রাখল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” তবে তুমি ডাকাত।”
রঙ্গন এবারও পাত্তা দিল না।ডাকাত বলাতে একটুও অপমানিত না হয়ে বরং গর্বে চকচক করল মুখ।বেশ অহংকার নিয়ে বলে উঠল,
” তোরা হলি ছোটখাটো চোরছ্যাঁচড়া।আর আমি ডাকাত!তোর মতো চোরের সাথে কি আমার তুলনা চলেরে নীরু?”
” তবে আমার মতো চোরের পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছো কেন?সরো এক্ষুনি।আমি বাড়ি যাব।”
রঙ্গন সরল না।নীরুর পথ আগলে দাঁড়িয়ে বলল,
” আগে আমার সব কথা শুনবি চুপচাপ।তারপর যেতে পারবি।নয়তো সোজা চ’ড় বসবে তোর গালে।”
নীরু জেদ নিয়ে বলল,
” শুনব না আমি। ”
রঙ্গন হতাশ হলো।অসহায় গলায় বলল,
” বুঝার চেষ্টা কর নীরু,আমার হাতে সময় নেই।তোকে কথা গুলো বলতে হবেই এই কয়েকদিনের মাঝে।তারপর বাকিটা আমি তোর উপর ছেড়ে দিব।”
” কি ছেড়ে দেবে?”
রঙ্গন কপালের বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো হাতের তালুতে মুঁছল।নীরুর প্রশ্নের বিনিময়ে বলল,
” একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত।”
নীরু আহাম্মাকের মতো প্রশ্ন ছুড়ল,
” মানে?কাদের একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত?”
রঙ্গন হুট করেই বলে দিল,
” তোর আর আমার।”
নীরু ত্যাড়া চাহনীতে চাইল।মুখ চেপে বলল,
” অসম্ভব!জীবনেও না।”
রঙ্গনের মুখ চুপসে গেল।বলল,
” কেন?”
নীরু আওয়াজ করে হাসল রঙ্গনের চুপসে যাওয়া মুখ দেখে।চঞ্চল গলায় উত্তর দিল,
” দা কুমড়ো সম্পর্ক বুঝো গাঁধা?তুমি আর আমি একসাথে থাকলে নির্ঘাত প্রত্যেকটা দিন মারা’মরি, কাঁটা’কাঁ’টি লেগেই থাকবে।সকাল, দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা, রাত সবসময়ই আমি তুমি ঝগড়া করছি। বিষয়টা কেমন হবে?”
রঙ্গন অস্ফুট স্বরে বলল,
” সুন্দর হবে।”
নীরু আবারও হাসল।বলল,
“মজা করে বললে?”
” না, সিরিয়াসলিই বললাম।”
” আচ্ছা, গেলাম তাহলে আজ।”
কথাটা বলেই হেলেদুলে পা বাড়াল নীরু।রঙ্গন ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে রইল।পেঁছন থেকে আবারও বলল,
” যাবি না নীরু, তোকে অনেক কথা বলার আছে।দাঁড়া প্লিজ।”
নীরু ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল একবার৷ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
” আজ আর বেশি হাসতে পারছি না গো।অন্য একদিন তোমার সব কথা শুনব৷ ঠিকাছে গাঁধা?”
রঙ্গন কিছু বলল না।মুখ টান টান করল।রাগে ফর্সা মুখ ক্রমশ লাল হয়ে উঠল।নীরু সেই রাগকে পাত্তা দিল না।আবারও ঘাড় ঘুরিয়ে হেলেদুলে এগিয়ে চলে গেল।
#চলবে….