Sunday, October 5, 2025







নিষ্প্রভ প্রণয় পর্ব-১৪

#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#পর্ব_১৪
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ

সেতু স্নান সারল বেলা এগারোটায়।ভেজা চুলে তোয়ালে মুড়িয়েই পা ফেলে বাইরে আসল।পরনে লাল টকটকে সুতি শাড়ি।চেহারায় স্নিগ্ধতা।আয়নার সামনে বসেই স্নিগ্ধ কপালে লাল টিপ বসাল।সিঁথি রাঙ্গাল লাল সিঁধুরে।তারপর ভেজা চুলগুলো থেকে তেয়ালে সরিয়েই ঝাড়া দিল।অল্পবিস্তর জলের ছিঁটেফোটা ফ্লোরে পড়ল।পরপরই বেলকনির দড়িতে ভেজা তোয়ালে মেলে দেওয়ার জন্য পা বাড়াল।নিষাদকে বেলকনিতে দেখেই একনজর দৃষ্টি ফেলে চাইল।বাসায় রঙ্গন আসবে,সেই উপলক্ষ্যেই আর অফিস যায়নি সে।সেতু নিজের মতো করে দড়িতে ভেজা তোয়ালে মেলে দিল।নিষাদকে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারও চলে আসতে লাগল রুমে।মুহুর্তেই হাতে টান অনুভব হলো।সেতু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখতে গিয়েও দেখা হয়ে উঠল না।তার আগেই টানটা প্রবল হলো।পেছনের পুরুষটি তার চিকনহাত দখলে নিয়েই একটানে কাছে আনল।ধাক্কা সামলাতে না পেরেই সে লেপ্টে পড়ল পুরুষালি শক্তপোক্ত চওড়া বুকে।সেতু অবাক হলো।নিজের পিঠ আর পেঁছনের পুরুষটির বুক লেগে আছে বুঝতে পেরেই নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসল।আড়ষ্ট গলায় কিছু বলার জন্য মিহি ঠোঁটজোড়া নাড়ানোর আগেই নিষাদ মুখ ডোবাল ভেজা চুলে।দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

” বলেছিলাম না ভেজা চুলে আমার সামনে না আসতে? মাথায় ছিল না কথাটা?এবার নাও শাস্তি।”

সেতু চোখ খিচল।নিষাদের উষ্ণ নিঃশ্বাসের স্পর্শ ঘাড়ের উপর পড়তেই সারা শরীরের লোমকূপ শিউরে উঠল।বুকের ভেতর দ্রুত কম্পন অনুভব করল।শরীর যেন অবশ হয়ে আসল মুহুর্তে।সেতু বৃথা চেষ্টা করে পায়ের নখ দিয়ে খিচে ধরল ফ্লোর।বহু কষ্টে ঠোঁটজোড়া দিয়ে শব্দ গলিয়ে বলল,

” ছ্ ছেড়ে দিন।”

নিষাদের কন্ঠ আগের মতোই শক্ত।ভেজা চুলে মুখ ডুবিয়ে চোখ বুঝল এবার।বলল,

” দোষ তো তোমারই।ছাড়ার প্রশ্ন আসবে কেন তাহলে?এটা তো শাস্তি।দোষ যখন করেছো শাস্তিও পেতে হবে তোমায়।”

সেতুর জমে যাওয়া শরীর আরো জমে গেল।ঠোঁট গলিয়ে আর কোন শব্দ বের হলো না।টের পেল পুরুষ মানবটির উষ্ণ আবেশে তার হৃদয়ে কম্পন উঠেছে।অনাকাঙ্খিত মুহুর্তে কেঁপে উঠছে শরীর।নিষাদ চুলে ডুবানো মুখ কানের কাছে নিল।পুরু ঠোঁটজোড়া কানের পাশে ছুঁয়ে দিয়ে গাঢ় স্বরে বলতে লাগল,

” এত বেশি টানো কেন তুমি আমায়?আমি নিজের উপর থেকে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেললে কি ভীষণ ক্ষতি হবে বুঝতে পারছো সেতু?আমার বুকের শিরশিরে অনুভূতি জ্বলজ্যান্ত হয়ে উঠছে।আমার চোখ না চাইতেও তোমার দিকেই ঝুকতে বাধ্য করছো কেন?কি চাও তুমি?উহ!কি অসহ্য মাতাল করা চুলের ঘ্রাণ!আমি মারা যাচ্ছি সেতু।এই নেশা বড্ড ভয়ঙ্কর।প্রথমবারই মৃত্যুসম যন্ত্রনা হচ্ছে আমার।”

খিচে রাখা চোখের পাতা এতক্ষনে মেলে ধরল সেতু।কান গরম হয়ে উঠল নিষাদের কথা শুনে।জড়োসড়ো হয়ে হাঁসফাঁস করতে করতেই আবারো কানে এল নিষাদের গাঢ় কন্ঠ,

“তুমি আমার দুর্বলতা বুঝো।তবে এই দুর্বলতার কথা কেন বুঝলে না সেতু?ভেজা চুলে আমার সামনে না আসলে খুব বেশি ক্ষতি হতো কি?আমি তোমার শরীর কখনো ছুঁতে চেয়েছি কিনা জানা নেই, তবে তোমার গলার নিচে তিল আর ভেজা চুল আমায় প্রবল আকৃষ্ট করে।চৌম্বকবলের ন্যায় আমায় টানে!আমি বড্ড অসহায়!একটু মায়া তো রাখতেই পারতে অসহায় যুবকটির উপর।”

সেতু জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজাল।মিহি ঠোঁটজোড়া নেড়ে অতিকষ্টে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,

” আ্ আর আসব না।এবারের মতো মাফ করে দিন নিষাদ।”

নিষাদ হাসল।থুতনিটা সেতুর ঘাড়ে রেখেই একরোখা জবাব দিল,

” মাফ না করলে?”

সেতু জড়সড়ো হলো।কিছুক্ষন চুপ থেকে কথা ঘুরানোর উদ্দেশ্যে বলল,

” আমার কাজ আছে নিষাদ।বাইরে অনেক কাজ পড়ে আছে।আপনি কি ছাড়বেন আমায়?”

নিষাদ আবারও ত্যাড়া উত্তর ছুড়ল,

” যদি না ছাড়ি?কি করবে তুমি?পালিয়ে যাবে?”

সেতু শান্তস্বরে উত্তর দিল,

” পালানোর পথ রেখেছেন?”

নিষাদ হেসে উঠল এবার আওয়াজ করে।বাঁকা হেসে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে শুধাল,

“রাখিনি বলছো?”

সেতু জবাব দিল না।চুপচাপ কিয়ৎক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতেই নিষাদের হাতের বন্ধন আলগা হলো।কানের কাছে চাপা স্বরে বলল,

” আমি তো তোমায় ধরে রাখিনি সেতু।তবে বারবার ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছো কেন?ভালোভাবে খেয়াল করে দেখো।ধরে রাখিনি কিন্তু আমি।”

সেতু দূরত্ব টানল দ্রুত।নিষাদের কথার বিনিময়ে কোন বাক্য ব্যয় না করে তড়িঘড়ি করে সেই স্থান ত্যাগ করল।কান গরম হয়ে আছে।ফর্সা মুখ লালাভ রক্তিম রূপ ধারণ করেছে।এত এত দিনের চেনা আর অনুভূতিসমেত পুরুষটিকে প্রথমবারের মতো এতটা কাছে পেয়ে আড়ষ্ট হলো শরীর।মনের ভেতর জড়তারা সব দ্রুত পরিণত হতো লালাভ লজ্জ্বায়।

.

নীরু নীরকে কোলে তুলে পা তুলে সোফায় বসে টিভি দেখছিল।সেতুকে হন্তদন্ত হয়ে লাল রক্তিম মুখ নিয়ে রান্নাঘরে ছুঁটতে দেখেই দৃষ্টি সরু করল।পরমুহুর্তেই কোন এক অজানা কারণেই হেসে উঠল।হেলেদুলে সোফায় বসে পা নাড়াতে নাড়াতেই মিহি কন্ঠে গাইল,

আকাশে বহিছে প্রেম,
নয়নে লাগিল নেশা
কারা যে ডাকিল পিছে,
বসন্ত এসে গেছে

নীরুর কন্ঠে গানখানা কানে যেতেই সেতুর শরীরে শিহরন বইল।রান্নাঘর থেকে উঁকি দিয়ে নীরুর দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল নীরুর ঠোঁট চাপানো ফিচেল হাসি।দৃষ্টিতে কৌতুকভরা রসিকতা।সেতু সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি সরাল।নীরু কি তবে বুঝে নিল কিছু?লজ্জ্বায় শিরশির করল শরীর।সেতু কাজে মনোযোগ দিতে পারল না।তরকারির কড়াইয়ে তেল দেওয়ার পরই শ্বাশুড়ির নরম গলা আসল কানে,

” কিছু ভাবছো তুমি?তেল তো গরম হয়ে গেছে।কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করছো?”

সেতু বিষম খেল।পিঁছু ফিরে শ্বাশুড়ির মুখের দিকে তাকানোর সাহস করল না।ফের যদি নীরুর মতো শ্বাশুড়িও কিছু বুঝে যায়?ছিঃ ছিঃ!নীরু গলা ঝেড়ে পরিষ্কার করল।মাথা ডানে বামে নাড়িয়ে বলল,

” না, তেমন কিছু না মা।”

.

নিষাদের পরনে তখনও একই টিশার্ট।সেতুর ভেজা চুলের জলে বুকের একপাশ ভিজে গিয়েছে।সেই ভেজা টিশার্ট নিয়েই রুম ছেড়ে বাইরে আসল সে।সোফায় গা এলিয়ে হাত বাড়াল নীরের দিকে।নীর এক লাফে নীরুর কোল ছেড়ে নিষাদের কোলে ঝাপটে বসল।নরম তুলতুলে হাত দিয়ে নিষাদের গালে হাত দিয়েই ঠোঁট নেড়ে খিলখিলিয়ে হাসল।খোঁচা দাঁড়িতে চিকন আঙ্গুল দিয়ে টান তুলতেই নিষাদ অস্ফুট স্বরে আওয়াজ তুলল।চোখের দৃষ্টি সরু করে বলল,

” কি শুরু করলে ভাই?একবার চুল, একবার দাঁড়ি!সব নীরু শিখাচ্ছে তাই না?বেয়াদবটার সাথে মিশে মিশে এভাবে আমার শিক্ষার অপমান করছো নীর?”

নীর খুব বেশি পাত্তা দিল না নিষাদের কথায়। আগের মতোই চিকন আঙ্গুল দিয়ে নিজের খেলায় মনোযোগ দিল।নিষাদ হতাশ হলো।নরম গলায় বলল,

” এমন করলে তোমায় বিয়ে দিব না।সারাজীবন চিরকুমার হয়ে হা হুতাশ করতে হবে কিন্তু।ভেবে নাও, নীরুর দলে যাবে নাকি আমার দলে?”

নীরু হেসে উঠল আওয়াজ করে।বলল,

” নীর ভালো ছেলে।তুমি ওকে লোভ দেখালেই দল পরিবর্তন করে ফেলবে নাকি?ও আমার আদর্শ শিষ্য!তুমি বিয়ে না করালে আমি আছি কি করতে?সবথেকে সুন্দর মেয়েটাকে ওর বউ করে আনব৷ হুহ!”

” ততদিনে তোকে এই বাড়িতে রাখলে তো?ঠেলেঠুলে শ্বশুড়বাড়ি পাঠিয়ে দিব।তখন শ্বশুড়বাড়ির কথা ভাবতে ভাবতে এই দলবলের কথা ভুলে যাবি।”

নীরু সহজে হার মানল না।ঠাট্টার সুরে বলল,

“বিয়ে টিয়ে দিয়ে কিচ্ছু হবে না গরু।এসব বৃথা চেষ্টা।তবে হ্যাঁ মরে গেলে আলাদা হিসেব!যদি মরে যাই তাহলে হয়তো নীরের বিয়েটা দিতে পারব না।অন্যথায় বিয়েটা আমিই দিব।”

নিষাদ ত্যাড়া চাহনীতে তাকাল।বলল,

” তুই না বিয়ের জন্য লাফাচ্ছিলি?রঙ্গন আসলে বলে দিই বিয়ের কথাটা?ঠাস করে হয়ে যাক বিয়েটা।”

নীরুর ঝাঝালো গলাটা এবার মিইয়ে এল।ঝগড়ার জন্য চকচক করা চোখজোড়ার দৃষ্টি সরু হলো।বলল,

“তোমার বন্ধু তোমার মতোই বজ্জ্বাত!দেখা যাবে বিয়ে করে নিয়ে যাবে বাড়িতে।পরে মে’রে হাত পা ভে’ঙ্গে রাস্তায় বসিয়ে দিয়ে চলে যাবে।ওই ছেলের বিশ্বাস আছে নাকি?”

নিষাদ হাসল।হাসতে হাসতেই বলল,

” বিশ্বাস না থাকলে বিশ্বাস করে বসে আছিস কেন?”

নীরু কথাটা শুনল ঠিক কিন্তু কোন জবাব দিতে পারল না।চুপচাপ বসে রইল।নিষাদ আবারও বলল,

” রঙ্গন হঠাৎ বাড়িতে কেন আসছে জানিস?”

নীরু ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বুঝাল কিছু জানে না সে।নিষাদ বলল,

” আমিও জানি না।শুধু এইটুকু বলল যে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা জানাবে বাড়ি এসে।কি এত গুরুত্বপূর্ণ কথা যে আমার পুরো পরিবারকেই জানাতে হবে বুঝলাম না। তুই কিছু করিসনি তো আবার?”

নীরু অবাক হলো।রঙ্গন নিজ থেকেই এবাড়িতে আসছে?সকাল থেকে রান্নার তোড়জোড় আর ব্যস্ততা দেখেই মাকে প্রশ্ন করেছিল, কে আসবে?সে প্রশ্নের উত্তরে শুধু এইটুকু জানতে পেরেছিল, ” রঙ্গন আসবে।বিয়েতে আসেনি তাই আয়োজন করে রান্না করা।” কিন্তু ঠিক কি কারণে আসবে? নীরুর সম্বন্ধে কিছু বলার জন্যই আসবে?আচ্ছা নীরুর জন্য বিয়ের প্রস্তাব রাখবে না তো?নয়তো পুরো পরিবারকেই কেন জানাতে হবে?তবে কি রঙ্গনও তাকে ভালোবাসে?বাসতেই পারে।নীরু আর ভাবতে পারল না।অজানা কারণে তার লজ্জ্বা লজ্জ্বা লাগছে।মনের ভেতর ফুরফুরে আনন্দ বইছে বসন্তের রঙ্গিন প্রজাপতির ন্যায়।অলস শরীরটাকে কোনভাবে ঠেলেঠুলে সোফা থেকে উঠাতেই সামনে মা এসে হাজির হলো।নীরু কোন এক অজানা কারণে দৃষ্টি নত করল দ্রুত।মা রাশভারী গলায় নিষাদের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,

” এই কি নিষাদ।আধভেজা জামা পরে বসে আছিস কেন?তুই কি ছোট?বকে বকে জামা পাল্টাতে হবে?পরে অসুখ বাঁধালে?”

নিষাদ মায়ের দিকে ফিরে চাইল।মায়ের কথার বিনিময়েই বুকের ভেজা অংশে তাকাল।নরম গলায় মায়ের উদ্দেশ্যে বলল,

” থাক না ঐ একটু ভেজা।ক্ষতি কি মা?”

মা ধমক দিয়েই ফের বলল,

” ক্ষতি আছে।তাড়াতাড়ি গিয়ে জামা পাল্টে আয়।অসুখ বাঁধবে পরে।”

“মাঝেমাঝে অসুখ বাঁধানো ভালো মা।অসুখ হলে কত যত্ন মেলে তোমার।তাই না?টিশার্টটা ভেজাই ভালো লাগছে আজ।”

” পরে অসুখ বাঁধলে আমি জানি না।তোর যা ইচ্ছে কর।”

নিষাদের মা কথাটা বলেই পাশ ফিরে নীরুকে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকাল।নীরুর উদ্দেশ্যে কিছু বলার আগে নীরুই অকপটে বলে উঠল,

” মা? তোমার আলমারিতে শাড়ি আছে না?একটা শাড়ি পরিয়ে দিবে আমায়?সবথেকে সু্ন্দর শাড়িটা দিবে কিন্তু।”

নিষাদের মা অবাক হলো।যে মেয়ে কোনদিন শাড়ি পরে নি সেই মেয়েই শাড়ি পরতে চাইছে?অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে ভ্রু জোড়া কুঁচকালেন তিনি।প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,

” হঠাৎ শাড়ি?”

নীরু বায়না ধরেই বলল,

” উহ, দাও না মা।আজ ভীষণ শাড়ি পরতে মন চাইছে আমার।”

মেয়ের কথায় মা অবশেষে হার মানলেন।মেয়ে মানুষ।শাড়ি পরা অন্যায় নয়।মেয়েকে পিঁছু পিঁছু নিয়ে গিয়ে কাঠের আলমারি থেকে বের করে দিলেন সবুজ রাঙ্গা একটা শাড়ি।হাতে ধরিয়েই দিয়েই বলল,

” সেতুকে বলছি শাড়ীটা পরিয়ে দিতে।আমার হাতে কাজ।তুই বরং হাত মুখ ধুঁয়ে আয়।”

.

সেতু রান্না ঘর ছেড়ে ঘরে আসল শ্বাশুড়ির কথায়।ঘামে স্যাঁতস্যাঁতে হওয়া শরীরটা নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখমুখে পানির ঝাপটা দিল।বের হয়ে নীরুর রুমের জন্য পা বাড়াবে তখনই নিষাদের আগমন ঘটল কোলে নীর সমেত। নিষাদ কোল থেকে নীরকে বিছানার উপর বসিয়েই বলে উঠল,

” আমার জামাটা ভিজিয়ে দিয়েছো কেন?এখন ভেজা জামা পরে ঘুরতে হচ্ছে আমায়।সব তোমার দোষ সেতু।”

সেতুর মুখ লজ্জ্বায় লালাভ হলো।নিষাদ কি ইচ্ছে করেই কথাটা বলল? বার কয়েক শ্বাস টেনে নিষাদের কথার উত্তরে কিছু না বলে বাইরে পা রাখবে তার আগে আবারও নিষাদ বলে উঠল,

” এই মেয়ে?কিছু বলছি না?কথা কানে যায় না নাকি শুনেও না শোনার ভান করছো?”

সেতু হতাশ হলো।দৃষ্টি ক্ষীন করে পেঁছন ঘুরে না তাকিয়েই বলল,

” ভেজা জামা পরে থাকা তো উচিত নয়।বদলে নিন।”

” আমার কাছে তো আজ ভেজা জামা পরে থাকাই উচিত মনে হচ্ছে।তাহলে?”

সেতু মৃদু গলায় বলল,

” আপনার মনে হওয়াটা ভুল।মা বলল না? অসুখ বাঁধতে পারে ভেজা জামা পরে থাকলে।দ্রুত বদলে নিন।”

নিষাদ সেই কথার গুরুত্ব দিল না বিশেষ।বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঝল। বলল,

” অসুখ তো বেঁধে গেছে বহু আগে।সেই কবে, কতদিন,কতমাস, কতবছর আগে সাংঘাতিক এক অসুখ আমার হৃদয়ে বাসা বাঁধল।হুশ আছে তোমার?সেই সাংঘাতিক অসুখের খোঁজ না নিয়ে ঐ সামান্য অসুখের হদিশ করলে বেমানান দেখায় না?”

সেতু কিয়ৎক্ষন চুপ থাকল।পেঁছন ঘুরে তাকিয়ে একনজর নিষাদের দিকে তাকাল।বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঝে থাকা নিষাদকে দেখেই পা বাড়িয়ে একটা টিশার্ট নিল।খাটের এককোণে রেখে মৃদু আওয়াজ তুলে বলল,

” দিয়ে গেলাম টিশার্ট।উঠে বদলে নিয়েন।”

সেতুর মেয়েলি গলার আওয়াজ কাছাকাছি অনুভব করেই চোখ মেলে তাকাল নিষাদ।গহীন অথচ শান্ত চাহনীতে তাকিয়ে শুধাল,

” উহ!থাক না।বুঝলে সেতু?সেই সাংঘাতিক, ভয়ংকর রোগটা আমার হৃদয়ে দানবীয় অত্যাচার করে চলেছে এতকাল।বুকে কী ভীষণ যন্ত্রনা সহ্য করে চলেছিলাম।যেন আস্ত এক আগুনখন্ড আমার বুকের মধ্যে জ্বলজ্বল করছে।আজ এতকাল পর এসে সেই জ্বলজ্বল করা আগুন নিভুনিভু হলো।ব্যাথা সহ্য করা বুকে শীতল অনুভবরা বয়ে বেড়াল জড়ো হাওয়ার মতো।বোধ হয় এই ভেজা জামার কারণেই এই ভয়ংকর রোগের এই পরিণতি আজ৷ তাই না?তাই ভাবলাম থাকুক এই ভেজা টিশার্ট।”

সেতু বিনিময়ে কিছু বলতে পারল না।প্রবাহমান রক্ত শীতল থেকে উষ্ণ হয়ে উঠল মুহুর্তে।চাহনী আবারও লজ্জ্বায় নুঁইয়ে আসতেই দ্রুত পা বাড়িয়ে সেই স্থান ত্যাগ করল।

#চলবে….

[ কেমন হয়েছে?ভুলত্রুটি ক্ষমাস্বরূপ দেখার অনুরোধ।]

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ