#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#পর্ব_০৬
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ
“সেতু তুমি দ্বিতীয়বার বিয়ে করছো?কাকে বিয়ে করছো?তোমাদের কি আগের থেকেই সম্পর্ক ছিল সেতু?বাচ্চাটা কি সেই ছেলে আর তোমার অবৈধ সন্তান?”
সেতু চোখ বুঝে আকাশের কথাগুলো শুনল।শেষের কথাটাতে এসেই মেজাজ বিগড়ে উঠল তার।তার সন্তানকে অবৈধ সন্তান বলার আকাশ কে?রাগে শরীর শিরশির করে উঠল।সেতু চোখ মেলে তাকাল।আকাশের দিকে আপাদমস্তক তাকিয়ে শক্ত গলায় বলে উঠল,
” তোমার মনমানসিকতা নোংরা আকাশ!সেই নোংরা মনমানসিকতায় আমার সন্তানকে টেনো না।”
আকাশ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল।কফিমগে চুমুক দিয়েই বলল,
” যার সাথে যেমন মানসিকতা যায় আমি তাকে তেমন মানসিকতায়ই রাখি।এবার বলো ছেলেটা কে যাকে বিয়ে করছো?”
সেতু দাঁতে দাঁত চাপল।বলল,
” তোমার আর ইরার বিয়ের সময় তো আমি একটা অক্ষরও জিজ্ঞেস করেছি বলে মনে পড়ছে না।জিজ্ঞেস করেছিলাম কি?”
“আমিও জিজ্ঞেস করতাম না।যদি সত্যিটা জেনে যেতাম।”
” কোন সত্যির কথা বলছো তুমি?”
সেতুর এই প্রশ্নটায় আকাশ মাথা তুলে চাইল।হালকা কেঁশেই বলল,
” বাচ্চাটা কার?”
সেতু স্থিরভাবে তাকাল।আকাশের চোখে কৌতুহলের শতসহস্র রেশ।সেতু গম্ভীর কন্ঠে শুধাল,
” আমার।”
” আমি জিজ্ঞেস করেছি, বাচ্চাটার বাবা কে?”
সেতু চুপ থাকল কিছুটা সময়।তারপর বলল,
” এই প্রশ্নটার জন্যই কি আমায় এখানে ডেকে এনেছো?আমার নয়মাসের বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে ঘরে রেখে এসেছি।হয়তো এখন কান্নাও করছে।”
” কথা ঘুরাবে না সেতু।বাচ্চাটার বাবা কে?ঐ ছেলেটা? ”
সেতু পুনরায় একই প্রশ্ন শুনে ধারালো চোখে তাকাল।গলা শক্ত করে শুধাল,
” হ্যাঁ, বাচ্চাটার বাবা নিষাদ।আর কিছু?”
আকাশ আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।যেন উত্তরটা তার একেবারেই পছন্দ হয়নি।নরম গলায় বলল,
” এক সপ্তাহ পরই বিয়ে?ভালোবাসো বুঝি খুব ঐ ছেলেটাকে?”
” হয়তো।”
” তুমি আমায় ঠকালে সেতু।ভীষণভাবে ঠকালে।”
সেতু অবাক হয়ে চাইল।সে ঠকাল আকাশকে?নাকি আকাশ ঠকাল তাকে?দুটো প্রশ্ন উলোটপালোট করে মস্তিষ্কে ঘুরিয়েই স্থির হয় বসল সে।তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে দৃঢ় গলায় বলল,
” দ্বিতীয় বিয়ে তো তুমিও করেছিলে আকাশ।তাও ডিভোর্সের পরপরই।বলা যায় তোমার সাথে ইরার সম্পর্ক ডিভোর্সের আগেও ছিল।তখন তো ঠকানোর প্রশ্ন আসেনি আকাশ।আজ আমিই ঠকিয়েছি?আমারই দোষ?”
আকাশ বলল,
” ডিভোর্সের পর প্রতিটা মুহুর্তে মনে হয়ছিল আমি তোমায় ঠকিয়ছি।তোমার সাথে অন্যায় করেছি।কিন্তু আজ আমার মন বলছে, তুমিই ঠকিয়েছো।অন্যায়টা তুমিই করেছো।”
সেতু হাসল। মৃদু গলায় বলল,
” যা তোমার মনে হয়।”
কথাটা বলেই উঠে আসল সেখান থেকে সেতু।আকাশের সাথে দীর্ঘদিন তার কথা হয়নি।কালরাতে হঠাৎ কল পেয়ে ভেবেছিল বিশেষ কোন দরকার।কিন্তু সে আগের প্রশ্নগুলো নিয়েই যে হাজির হবে এতগুলো দিন পর তা সে ভাবেইনি।সেতু পা বাড়াল।রাস্তা পার হয়ে ওপাশে যেতেই চোখে মিলল এক উচ্ছল তরুণীকে।হাসিখুশি, প্রাণবন্ত,চঞ্চল নীরু!সেতুর মুখে হাসি ফুটল সঙ্গে সঙ্গে।সেদিন হসপিটাল ছেড়ে বাড়ি আসার পর এই নয়মাস নিষাদের সাথে আর যোগাযোগ না হলেও নীরু এই নয়মাসে বেশ অনেকবার গিয়ছে তাদের বাড়ি।সেতুর বাচ্চাকে কোলে নেওয়া, আদর করা কোনকিছুরই কমতি রাখেনি সে।একটা নামও রেখেছে সে তার নামের সাথেই মিলিয়ে।নীর!সে নামেই ডাকা হয় সেতুর ছোট বাচ্চাটাকে।বউদির কথামতো টাকার অপচয় করে আনুষ্ঠানিকভাবে নামকরন অনুষ্ঠান না করে একটা নামে ডাকলেই হলো।সেতু অবশ্য অসন্তুষ্ট হলো না তাতে।বাকি সবার কাছে যেখানে তার ছেলেটা বোঝাস্বরূপ।সেখানে ভালোবাসা, আদর সমেত একটা নাম বিনা অনুষ্ঠানেই ঠিক করা হলে ক্ষতি নেই।বরং সেই নামে তার ছেলেকে সারাজীবন ডাকা হলে আলাদা প্রশান্তি কাজ করবে হৃদয়ে।নামের সাথে সাথেই কল্পনায় ভেসে আসবে এক উচ্ছল তরুণীর স্নেহ, আদর, ভালোবাসা।যার সাথে তার ছেলের না ছিল রক্তের সম্পর্ক, আর না ছিল দীর্ঘদিনের পরিচয়।তবুও স্বল্পদিনেই কতটা ভালোবাসে নীরু সে ছোট্ট বাচ্চাটাকে।সেতুর বাড়িতে গেলেই প্রথমে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিয়ে চুমু খাবে।মিষ্টি গলায় বলে উঠবে,
” কেমন আছো নীরসোনা?”
সেতু ও নীরুকে দেখে মনে মনে বেশ খুশি হয়।নীরের প্রতি নীরুর আদর দেখে সুখ অনুভব করে।আর কেউ তেমন আদর না করলেও অন্তত কেউ একজন তো তার ছেলেকে আদর করে,ভালোবাসে।এইটুকুতেই তো আলাদা তৃপ্তি!আলাদা ভালোলাগা মেয়েটার প্রতি!এই কয়েক মাসেই মেয়েটাকে ভীষণ আপন মনে হয় সেতুর।কি সুন্দর চঞ্চল, প্রাণবন্ত, হাসিখুশি একটা মেয়ে।সহজেই সবাইকে কত আপন করে নেয়।অথচ এই বয়সে সেতু কিন্তু এতটা হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত ছিল না।তার সমস্ত চঞ্চলতা তার মা মারা যাওয়ার সাথে সাথেই তাকে ছেড়ে গিয়েছিল। সেতু ছোট্ট শ্বাস ফেলেই ভাবল।পা বাড়িয়ে নীরুর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠল,
” এই নীরু, কেমন আছো?”
নীরু পেঁছন ঘুরে চাইল।সেতুকে দেখেই মিষ্টি হেসে এগিয়ে আসল।চঞ্চল কন্ঠে বলে উঠল,
” আমি সবসময় ভালো থাকি সেতু দি।তুমি কেমন আছো? ”
” এইতো ভালো।হঠাৎ এইদিকে?কোন দরকার ছিল?”
নীরু থতমত খেল সেতুর প্রশ্নে।তারপর কিছুটা সময় চুপ থেকেই দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে উঠল,
” আসলে আজ পড়া মিস দিয়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে এসেছিলাম এদিকে। ফেরার পথে মনে হলো তোমাদের বাড়িতে গিয়ে নীরকে দেখে আসা যাক। আমি কিন্তু তোমাদের বাড়িতেই যাচ্ছিলাম।ভালো হলো, দেখা হয়ে গেল।”
সেতু হাসল। তারপর দুইজন একসাথে পা বাড়াল।হাঁটতে হাঁটতেই সেতু আবারও প্রশ্ন ছুড়ল,
” বাড়ির লোকে জানে?”
নীরু ঘাবড়ে গেল।সেতুর দিকে তাকিয়েই বলল,
” ক্ কি?কি জানবে?”
” পড়তে না গিয়ে ঘুরতে এসেছো তা?”
নীরু যেন স্বস্তি পেল কথাটা শুনে।ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলে উঠল,
” জানলে পড়া মিস দিয়ে আসতে দিত?”
” বকবে না জানলে?”
“তা একটু বকবে।”
সেতু হাসল হালকা।তারপর মিনিট কয়েক পা চালিয়ে হেঁটেই বাড়ি পৌঁছাল।বাড়িতে ডুকেই নীরুকে বসতে বলে নিজের রুমে গেল দ্রুত।বিছানায় ঘুমন্ত নীরের দিকে তাকিয়েই স্বস্তির শ্বাস ফেলল।এখনও ঘুমোচ্ছে।ঝুঁকে গিয়ে নীরের তুলতুলে গালে চুমু দিতেই চোখ মেলে তাকাল সে।হাত পা নেড়ে আড়মোড়া ভেঙ্গে আলতো ঠোঁট নেড়ে “আ্ আ” আওয়াজ তুলল।সেতু হাসল। পাতলা কাঁথা দিয়ে জড়িয়ে কোলে তুলে রুম থেকে বেরিয়ে এসেই বসার ঘরে বউদি আর নীরুর দিকে তাকাল।সঙ্গে সঙ্গে নীরু দৌড়ে এগিয়ে এল।ঝুঁকে গিয়ে নীরের তুলতুলে গালে হাত ছুঁয়ে দিয়েই বলে উঠল,
” কেমন আছো নীরসোনা?”
নীর ফিটফিট করে তাকিয়ে রইল আগের মতোই।পরপরই অদ্ভুত কাজ সেরে বসল।সেতু ভ্রু কুঁচকে তাকাল।নীরকে জড়িয়ে নেওয়া কাঁথাটা ভেজা অনুভব করতেই দৃষ্টি সরু করে নীরের দিকে তাকাল।মিনমিনিয়ে বলল,
” এই ছেলে!তোমাকে এখনই এই কাজ করতে হলো?”
নীরু কথাটার মানে বুঝতে না পেরেই সেতুর দিকে তাকাল। সেতু ইশারায় ভেজা কাঁথা দেখিয়ে বুঝাতেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল সে। তারপর সেতুর পিঁছু পিঁছু রুমে ডুকে বিছানায় পা মেলে বসল।সেতু তখন নীরের ভেজা কাঁথা পাল্টে নতুন কাঁথা নিচ্ছিল।নীরু বলে উঠল,
” তুমি কাঁথা পাল্টে দাও।আমি বরং হাতমুখ ধুঁয়ে আসছি।ওকে কোলে নিব তো।বাইরে কত ধূলোবালি ছিল।”
কথাটা বলেই নীরু উঠে গিয়ে ওয়াশরুমে পা বাড়াল।সঙ্গে সঙ্গেই বিছানায় থাকা মোবাইলটা আওয়াজ করে উঠল।সেতু তাঁকিয়ে বুঝল এটা নীরুর মোবাইল। চোখ নামিয়ে তাকাল মোবাইলের স্ক্রিনে।গুঁটিগুঁটি অক্ষরে লেখা, “নিষাদ গরু”।সেতু না চাইতেও হাসল।গলা উঁচিয়ে নীরুর উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
” তোমার কল এসেছে নীরু।কথা বলে তারপরই নাহয় যাও হাত পা ধুঁতে।”
কথাগুলো সেতু বলল ঠিকই।কিন্তু নীরু পাত্তা দিল না।ওয়াশরুমে ডুকেই বলল সে,
” সেতু দি,রিসিভড করে বলো একটু, ওয়াশরুমে আছি।পরে দিয়ে কলব্যাক করছি।”
সেতু চাহনী সরু হলো।রিসিভ করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতেই কল কেঁটে গেল।সেতু যেন রক্ষা পেল। মনেপ্রাণে বোধহয় এটাই চেয়েছিল সে।কিন্তু তাকে পুরোপুরি রক্ষা না দিয়ে আবারও কল আসল ওদিক থেকে।সেতু এবার ক্লান্ত চাহনিতে তাকাল।ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে কল রিসিভড করেই কানের কাছে নিল।মুহুর্তেই ওপাশ থেকে ভেসে আসল গুরুগম্ভীর কন্ঠ,
” নীরু!তুই আজ পড়তে না গিয়ে ফুচকা খেতে গিয়েছিস কার সাথে?কোথায় তুই এখন?বাসায় সত্যিটা জানলে কি হবে বুঝতে পারছিস?”
সেতু ঘাবড়ে গেল নিষাদের শাসানোতে।কি বলবে বুঝে উঠল না ঠিক।কিছুক্ষন চুপ থাকতেই ওপাশ থেকে আবারও নিষাদের কন্ঠ ভাসল,
” ধরা পড়ে গিয়ে চুপ করে আছিস?তুই কি ভেবেছিস আমি অন্ধ?এসব প্রেমভালোবাসার কিছু বুঝি না আমি?”
সেতু এবারও কিছু বলল না।চুপচাপ পুরো ঘটনাটা বুঝার চেষ্টা করল। নীরুর বন্ধুদের সাথে ঘুরতে আসাটা যে আসলে একটা চরম মিথ্যে কথা তা বুঝতে পেরেই চমকে গেল।নীরু কি কাউকে ভালোবাসে?বাসতেই পারে।হয়তো জানাতে চায় না বলেই বলেনি।কিন্তু নিষাদ কিভাবে জানল?জেনে গেছেই যখন তার পরবর্তী কাজ কি হবে?নীরু আর সেই ছেলেটার প্রেমের বিচ্ছেদ ঘটানো?কথাগুলো ভেবেই শুকনো ঢোক গিলল সেতু।কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে আবারও নিষাদ কড়া সুরে বলল,
” নীরুর বাচ্চা নীরু!কথা বলছিস না কেন?নাকি শুনতে পারছিস না?এক চড়ে গাল লাল করে দিব বলে দিলাম।”
সেতু এবার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজাল।নীরুকে ওয়াশরুম থেকে বেরোতে না দেখেই হালকা কাঁশল।বলল,
” আসলে আমি নীরু না।”
নিষাদ এবার চুপ হয় গেল।বেশ কিছুটা সময় পরই আবার বলল,
” তুমি?তোমার কাছে নীরুর ফোন কি করে?”
” ও এখানে এসেছিল তাই।”
” এখন কোথায়?”
নিষাদের স্পষ্ট প্রশ্নে কিয়ৎক্ষণ চুপ থাকল সেতু।তারপর বলল,
” নীরু ওয়াশরুমে।একটুপর কলব্যাক করবে।আপনি একটু অপেক্ষা করুন বরং।”
” রাখছি।”
কথাটা বলে কল রাখল নিষাদ।সেতু মোবাইলটা আগের মতোই বিছানায় রেখে দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে তাকাল।
.
জানালার ফাঁক দিয়ে আলো এসে জানান দিল সকাল হয়েছে।সেতু নীরকে কোলে নিয়ে বসে ছিল।রাতে অনেকবার কান্না করেছে নীর।কিছুক্ষন পরপরই কন্ঠে ঝংকার তুলে কান্না করেছে।সেতু অসহায় মুখে তাকিয়ে থাকল নীরের মুখের দিকে। কোলের মধ্যেই যেন তার আরাম।কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় রাখতে গেলেই কপাল কুঁচকে চোখ ফিটফিট করে তাকিয়েই কান্নার মেলা বসাচ্ছে।সেতু তবুও চেষ্টা চালাল। ছেলেকে কোল থেকে ধীরে ধীরে বিছানায় শোয়াল।পাশে বালিশ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠবে ঠিক সে সময় কান্না জুড়ে দিল নীর।সেতু চোখের দৃষ্টি ছোট ছোট করল।দুইহাতে ছেলেকে কোলে তুলে নিল আবারও।বেশ কিছুক্ষন কোলে রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াল।অতঃপর একটা সময় পর ধীরে ধীরে বিছানায় শোয়াল।তারপর ধীরে ধীরে সরে এসেই রান্নাঘরে পা বাড়াল।সকাল সাতটা বাঁজে।কিছু সময় পরই নিশ্চয় দাদা বেরিয়ে যাবে।সারাদিন ছেলেকে নিয়ে বসে থাকবে তেমন ভাগ্য যে তার নেই।হাজার হোক, দাদা বউদির সংসার!বসে বসে দাদার ঘাড়ে ছেলেসহ খাবে। কেমন বিচ্ছিরি দেখায়!সেতু তড়িঘড়ি করে নাস্তা বানাল।তরকারি কেঁটে চুলায় তরকারি বসাতেই কানে আসল নীরের কান্না।কান্নার আওয়াজ শুনেই আর দাঁড়াল না সেতু। চুলায় রান্নাটা সেভাবেই রেখে এসে দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে গেল।নীরকে হাত পা ছুড়ে কান্না করতে দেখে কোলে তুলে নিল মুহুর্তেই।তারপর অনেকক্ষন কোলে রেখে মাথায়, গায়ে হাত বুলিয়ে কান্না থামাতে সফল হলো।আবারও বিছানায় নীরকে ঘুম পাড়িয়ে রান্না ঘরের দিকে এগোতেই নাকে আসল পোড়া গন্ধ।সেতুর খেয়াল হলো এতক্ষনে।তড়িঘড়ি করে চুলায় তরকারি বসিয়ে যে এসেছিল তা বেমালুম ভুলেই বসেছিল সে।সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পা বাড়িয়ে রান্নাঘরে গেল। কিন্তু যা হওয়ার তা হয়ে গেল।তরকারির কড়াইয়ে পোড়া তরকারির অবশিষ্টাংশ।সেতু হতাশ হলো।চুলার উপর থেকে কড়াইটা নামাতে নামাতেই সেখানে এসে হাজির হলেন বউদি।মুখে তীব্র বিরক্তি টেনে ঝাঝালো গলায় শুধাল,
” কি করেছো কি সেতু?মন কোথায় থাকে তোমার?কিভাবে কাজ করো আজকাল।কোনদিন ভাত পুড়ছে, কোনদিন তরকারি পুড়ছে, কোনদিন ডিমভাজা।অপচয় তো হচ্ছেই, শান্তিতে খেতেও পারছি না।সত্যিই বুঝি না তোমার মন কোথায় থাকে।নাকি ইচ্ছে করেই এমনটা করো।যাতে দাদার টাকার অপচয় হয় আর পোড়া খাবারই খেতে হয়?”
সেতু অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকল।অপরাধীর মতো মাথা নত করেই বলে উঠল,
” আমি খেয়াল করিনি বউদি। ”
” খেয়াল করবে কেন।নিজের তো আর যাচ্ছে না কিছু।সব অপচয় তো ভাইয়েরই হচ্ছে।তরকারিগুলো তো এমনি এমনিই চলে আসে তাই না?টাকা তো লাগে না।”
“আমি তো ইচ্ছে করে করিনি বউদি।ভুল হতে পারে না মানুষের?”
” ভুল প্রতিদিন কিভাবে হয় সেতু?আশ্চর্য!”
বউদি বিরক্তিসমেত কথাটা বলেই চলে গেল সেখান থেকে।সেতু শুধু ছোটছোট চোখে তাকিয়ে থাকল সেদিক পানে।
#চলবে…