Monday, October 6, 2025







নিষ্প্রভ প্রণয় পর্ব-০৭

#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#পর্ব_০৭
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ

ঘরোয়া ভাবেই স্বল্প আয়োজনে শুরু হলো নিষাদ আর সেতুর বিয়ের তোড়জোড়। কাছের আত্নীয়দেরই কেবল নিমন্ত্রন জানানো হলো বিয়েতে।বিয়ের জন্য কেনাকাঁটাও সেতুর বউদিই করেছে।সেতু নীরকে কোলে নিয়েই বসে ছিল।রাত পোহালেই হলুদের অনুষ্ঠান।বিয়ে উপলক্ষ্যে তার মামারা আর পিসিরাই এসেছে কেবল।হঠাৎ করেই বড় পিসি এসে তার পাশে বসল।পান চিবুতে চিবুতে ব্যস্ত হয়েই বলে উঠল,

” তা তোর দ্বিতীয় সংসারে বাচ্চাটা আদর যত্ন পাবে তো সেতু?শত হোক! বউ হয়ে যাচ্ছিস।শ্বশুড়বাড়িতে বউদের কদর আর কতটুকুই!শ্বশুড়বাড়ির লোকজন ভালো তো?”

সেতুর বুকে অজানা ভয় মুহুর্তেই জেগে উঠল।শুকনো চাহনীতে নীরের হাসি হাসি মুখটায় তাকাল।কি সুন্দর হাসছে।বউদির কথামতো দ্বিতীয় বিয়ে করে এই হাসিটা কেড়ে নিচ্ছে না তো সে?নিষাদের মা, বোনেরা সবাই কি নীরকে মেনে নিবে সুন্দরভাবে?নাকি কোন ভুল হচ্ছে তার বিয়েটা করে?নীরের জীবনে এর কোন প্রভাব পড়বে না তো পরে?নীর তো বড় হয়ে সবটা জানবে।যদি তার জীবনে সুখের বিনিময়ে কষ্ট এসে হানা দেয় তাহলে তো বড় হয়ে মাকেই ভুল বুঝবে সে।সেতু আর সবকিছুতে দোষী হতে পারলেও, মা হিসেবে দোষী হতে চায় না।
ছোট্ট শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল।ঘড়ির কাঁটা তখন আট এর ঘরে।ধীর পায়ে নিজের ঘরে গিয়েই মোবাইলটা হাতে নিল।গুঁটিগুঁটি অক্ষরে নিষাদের নাম্বারে টাইপ করল,

” একটু দেখা করতে পারবেন নিষাদ?আমার আপনার সাথে অনেক কথা আছে।দয়া করে আমার বাড়ির সামনে আসতে পারবেন একবার?”

তারপর বেশ অনেকক্ষন সময় কাঁটল।নিষাদ ম্যাসেজটা দেখল কি দেখল না কিছুই বুঝে উঠত পারল না সেতু।আধো আসবে তো?নাকি সবকিছুর মতো ম্যাসেজটাকেও উপেক্ষা করবে?সেতুর ভাবনার মাঝেই কল এল নিষাদের নাম্বার থেকে।সেতুর বুকে হৃদস্পন্দন বাড়ল।সত্যিই এসেছে কি নিষাদ?নিষাদের সামনে সরাসরি দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারবে? নাকি সব কথা গলা পর্যন্ত এসে থেমে যাবে?প্রশ্নগুলো মাথায় খেলতেই ভেতরের মা-সত্ত্বা জেগে উঠল।নিজের ছেলের জন্য হলেও তাকে কথাগুলো বলতে হবে।অনুভূতিদের থামিয়ে দিয়ে কঠিন হতে হবে।সেতু আঙ্গুল উঁচিয়ে কল রিসিভড করল।কানের কাছে নিতেই নিষাদ ছোট করে বলল,

” নেমে আসো।তোমার বাসার সামনেই আছি।”

নিষাদের শান্ত গলায় শিহরন বইল সেতুর শরীরে।মৃদু কন্ঠে “হু” জবাব দিয়েই কল রাখল। আজ কতবছর পর মানুষটার সামনাসামনি দাঁড়াবে সে।কতগুলো দিন পর কাছ থেকে মানুষটাকে দেখবে।নিষাদ কি আগের মতোই তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে গভীর দৃষ্টিতে?কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠবে আগের মতো?

” এই মেয়ে,একবার ভালোবাসি বলে দাও না দয়া করে।আর কিচ্ছু চাইব না।”

সেতু ঢোক গিলল।রুম থেকে বের হয়ে নীরকে বউদির কোলে দিয়ে বাসা ছেড়ে বের হলো।সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে গেইটের দিকে যেতে যেতেই টের পেল তার হৃৎপিন্ড লাফাচ্ছে।নিঃশ্বাস দ্রুত হচ্ছে।কাঙ্ক্ষিত মানুষের সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত আলাপের ভয়ে জমে আসছে ভেতরটা।সেতু পা বাড়াল।রাস্তার উপর মৃদু আলোয় নিষাদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই শুকনো ঢোক গিলল।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে উঠল,

” আমার কিছু কথা আছে।আপনার যদি সময় হয়,শুনবেন দয়া করে?”

নিষাদ অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল।মেয়েলি কন্ঠ পেয়েই পিঁছু ফিরে চাইল।খয়েরী রংয়ের শাড়ি পরিহিত রমণীকে দেখেই স্নিগ্ধ চাহনীতে তাকাল একনজর।পরপরই নজর সরাল।মাথা নাড়িয়ে বলল,

” বলো।”

সেতু পুণরায় শুকনো ঢোক গিলল।একটা লম্বা শ্বাস ফেলে এক মুহুর্তেই বলে উঠল,

” আপনি বিয়ের প্রস্তাবটা ফিরিয়ে নিন নিষাদ।আমি এই বিয়েটা করতে চাই না।”

নিষাদ এবার মাথা তুলে চাইল।শান্ত স্নিগ্ধ চোখজোড়া মুহুর্তেই কেমন কঠিন রূপ নিল।লাল টকটকে চোখের চাহনী।নিষাদ হাতের মুঠো শক্ত করল।চোয়াল কঠিন করেই বলল,

” এই কথাটাই বলার জন্য ডেকেছো?”

সেতুর নরম গলায় উত্তর,

” হ্যাঁ।অনেক ভেবে দেখলাম, বিয়েটা করা উচিত নয় আমার।”

নিষাদ নিরেট কন্ঠে শুধাল,

” কেন?আমি বলেই?”

সেতু মৃদু হাসল।বলল,

” আপনি ভালো মানুষ নিষাদ।পরিপূর্ণ আদর্শ যুবক।আপনার জীবনে ঠিক তেমনই ভালো আর আদর্শ মানুষ আপনি ডিজার্ব করেন।আমি চাইনা, আমায় বিয়ে করে আপনাকে শতসহস্র প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হোক।বাড়িতে বিয়ে করব না বলার সেই ক্ষমতা আমার নেই।আপনিই বরং প্রস্তাবটা ফিরিয়ে নিন। ”

নিষাদ হাতের মুঠো শক্ত করেই সামনের ইটের দেওয়ালটায় লা’থি দিল।দাঁতে দাঁত চেপে কঠিন কন্ঠে বলল,

” পারব না।আশা করি উত্তরটা ক্লিয়ার?”

” আমায় বিয়ে করে সুখী হবেন আপনি?হবেন না।মাঝখান থেকে আমি, আমার সন্তান, আপনি।তিনজনেরই জীবন অগোছাল হয়ে যাবে।পাগলামো বাদ দিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবুন।আপনি যথেষ্ট ম্যাচিউরড!আশা করি পুরো বিষয়টা বুঝবেন।”

নিষাদের গম্ভীর সুরে উত্তর,

” বুঝতে চাইছি না।”

সেতু ক্লান্তির শ্বাস টানল।ঠোঁট চেপে বলে উঠল,

” আপনার দিকটা নাহলেও আমার দিকটা বুঝার চেষ্টা করুন।আমি নীরের চোখে একজন খারাপ মা হতে চাইছি না।ওকে একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর দিকে ঠেলে দিতে পারব না আমি।”

নিষাদ চোখ বুঝে বারকয়েক শ্বাস ফেলল।বলল,

” নীর আমার থেকে একজন বন্ধুর মতোই ভালোবাসা পাবে,একজন বাবার মতোই আদর পাবে, একজন শিক্ষকের মতোই শিক্ষা পাবে।যা কিছু দূরত্ব থাকবে তা শুধু তোমার-আমার।অবহেলা কুড়োলে তুমি কুড়াবে।কষ্ট দিলে তোমায় দিব। নীরের সাথে আমার কোন দূরত্ব থাকবে না।আশা করি আর কোন সংকোচ থাকবে এই নিয়ে?নীর -নিষাদ মিলেমিশে থাকবে।”

” সংকোচ কাঁটলেও আমি বিয়েটা করতে চাইছি না।আপনি বিষয়টা বুঝতে চাইছেন না কেন?”

” কারণ বিষয়টা বুঝার আমার সাধ্য নেই।আগ্রহও নেই।কিংবা সাধ্য আর আগ্রহ থাকলেও উপায় নেই।এট এনি কস্ট, বিয়েটা তোমায় করতেই হবে।তোমার সামনে হাজার অপশন থাকুক, তবে সব অপশনেই শুধু এটাই থাকবে যে বিয়েটা তোমায় করতেই হবে।”

সেতুর চাহনী সরু হলো।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে গম্ভীর গলায়
শুধাল,

” ভেবে দেখুন।একটা প্রতিশোধর প্রয়োজনে নিজের জীবনটা ছারখার করছেন না তো?এটলিস্ট একটা বিয়েই তো প্রতিশোধের একমাত্র পথ হতে পারে না তাই না?”

নিষাদ তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল।ঠোঁট চওড়া করে বলল,

” আমার জীবনে যা ছারখার হওয়ার অনেক আগেই হয়েছে।নতুন করে ছারখারের অবশিষ্ট কিছু নেই।তবে সেই ছারখার হওয়া জীবনটা শতসহস্র অবহেলা কুড়িয়ে জুড়ে দিতে চাইলে জুড়ে দিতে পারো।”

সেতু আগের মতোই তাকিয়ে রইল।নিষাদের কথার অর্থ বুঝেই শীতল অনুভব হলো বুকের ভেতর।হুট করেই প্রশ্ন করল,

” আপনার প্রতিশোধের মাধ্যম কি তবে অবহেলা?”

নিষাদ এবার সশব্দে হাসল।ফিসফিসিয়ে বলল,

” তুমি খুব বুদ্ধিমতী সেতু।সবকিছু কত তাড়াতাড়ি বুঝে নাও।”

” আপনার অবহেলায় আমি কষ্ট পাব এমনটা ভাবলেন কেন? হতে পারে না আপনার অবহেলায় আমার কিছুই যায় আসল না?”

” যায় আসবে।খুব ভালো করেই যায় আসবে তোমার।অন্তত আমি চাই আমার অবহেলায় তোমার কিছু যায় আসুক।আগের আমি, আর এখনকার আমির তফাৎটা তোমার হৃদয়ে কষ্টের স্রোত আনুক।ভেতরে ভেতরে তুমি ক্ষত বিক্ষত হয়ে আমার দিকেই ঝুঁকে যাও।বিধাতা কি এতটাই নিষ্ঠুর?আমার চাওয়া পূরণ করবে না?”

সেতু কিছু বলতে পারল না।চোখজোড়া আগের মতো স্থির রেখে সামনের মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইল।অভিমান, অবহেলার গল্পরা মনের ভেতর ঝুড়ি মেলাতেই গলা আটকে আসল।চোখের দৃষ্টি ক্ষীন আর ঝাপসা হলো।আর সেই ক্ষীন দৃষ্টিতেই এক যুবকের চলে যাওয়া ভেসে উঠল।সেতু চোখ মুঁছল।টসটসে চোখ গাল গড়িয়ে পড়তেই ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না থামানোর চেষ্টা চালাল।ভাগ্যিস!চোখে জল আসার আগ মুহুর্তেই নিষাদ পিঁছু ঘুরে পা বাড়িয়েছে।নয়তো নিষাদের সামনেই অশ্রুরা নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিত।সেতু আর দাঁড়াল না।পা ঘুরিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ডুকতে ডুকতেই মোবাইলে আওয়াজ হলো।সেতু ভ্রু কুঁচকে তাকাল।মোবাইলের স্ক্রিনে চেনা নাম্বারই অনাকাঙ্ক্ষিত ম্যাসেজ,

” তোমার অশ্রু দেখলে আমি সুখ কুড়োতে পারি না সেতু।আমি যে সুখী হতে চাই।তাই তোমার অশ্রু নামার আগেই বিদায় নিলাম।তৈরি থেকো নতুন দিনের জন্য।”

.

সেতুর পরনে লাল জামদানী।পায়ে গাঢ় লাল আলতা।সিঁথিতে লাল রাঙ্গা সিঁধূর!হাতে শাখাফলা।নিষাদ সরু চোখে পরখ করে দেখছিল সব।ডান গালের লালচে ফুলে উঠা ব্রন থেকে, গলার নিচে ছোট কালো তিল।আপাদমস্তক সবটা পরখ করে নিজের বুকের উপর হাত রাখল। চোখের সামনের রমণীকে দেখে হৃদস্পন্দন বাড়ছে ক্রমশ।দৃষ্টিরা লোভী হয়ে উঠছে এক মুগ্ধ হওয়া ঘোরে। ইচ্ছেরা উম্মুক্ত হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেতে মন চাইছে।পরমুহুর্তেই নিজেকে সংযত করল সে।গলা শক্ত করে কেঁশে উঠল।নিজের থেকে কিছুটা দূরের রমনীকে উদ্দেশ্য করেই বলল,

” খাট পরিষ্কার করে রাখো।নীরু নীরকে নিয়ে আসছে।”

সেতু নিজের চুল খোঁপা করছিল।নিষাদের কন্ঠ শুনেই হঠাৎ কেঁপে উঠল।কখন এসেছে সেটাও বুঝেনি সে।নিষাদ এতটাই নিঃশব্দে চলে?শুকনো ঢোক গিলে নিষাদের দিকে ফিরে চাইতে চাইতেই নিষাদ সেই স্থান ছেড়ে অন্যত্র পা বাড়াল।সেতু এক নজর তাকাল।বিয়ের দিন আর সকালে বউভাতের অনুষ্ঠানে কিছুটা সময় নিষাদকে চোখে দেখেছিল।বাকি পুরোটা সময় নিষাদ নিরুদ্দেশ!এখন রাত দশটা। কিছুটা সময় আগেই নীরু নীরকে নিয়ে গেছে।সেতু বসা ছেড়ে উঠল।খাটের উপর থাকা ফুলগুলো দেখেই নিজেকে বড্ড বেশি বেমানান বোধ করল।কারো জীবনে এমন মুহুর্ত এসেছে কি?অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বিয়ের পাকা কথা কিংবা নয়মাসের বাচ্চা সহ বিয়ের পিড়িতে বসা?সেতু মনে মনে সংকোচ করল।হাত বাড়িয়ে খাটের উপর ফুল সরিয়ে বিছানা পরিষ্কার করল।বালিশ দুটো ঠিকঠাক মতো রেখে উঠে দাঁড়াতেই ঘুমন্ত নীরকে নিয়ে নীরু রুমে ডুকল।বিয়ের ঝামেলা হতে বউভাতের অনুষ্ঠান, সবকিছুতেই নীরুই নীরকে সামলেছে।যেন নীরের দ্বিতীয় মা!সেতু হাসল।নীরকে কোলে তুলে নিয়েই বলল,

” ঘুমিয়ে গেছে?”

নীরু দাঁত কেলিয়ে হাসল। বলল,

” হ্যাঁ।আমি ভেবেছিলাম আজ রাতটা আমার সাথেই ঘুমোতে দিবে ওকে। কিন্তু তুমি তো ওর জন্য জীবন দিয়ে ফেলছো।নিষাদ গরুও এক্ষুনি শাসিয়ে আসল যাতে ওকে রুমে দিয়ে যাই।তোমরা দুইজনই আমায় বুঝলে না।”

সেতু চোখ ছোট ছোট করে তাকাল।মৃদু কন্ঠে বলল,

“তুমি ঘুমোবে না? সারাদিন তো কম ছুটোছুটি করোনি।”

” তাতে কি?আমি সারারাতও ছুটোছুটি করতে পারব।এনার্জি আছে!”

সেতু ক্লান্তির হাসি হাসল।বলল,

” হ্যাঁ, ঘুমের মধ্যে ছুটোছুটি করো।কোন নিষেধ নেই।”

নীরু খিলখিলিয়ে হাসল।চোখ টিপে বলল,

” ঘুমের মধ্যে ছুটোছুটি করব কোন দুঃখে?ঘুমের মধ্যে প্রেম করব।স্বপ্নের মধ্যে তার সাথে বাস্তবে না হওয়া প্রেমের প্রেমালাপ করব ঘন্টার পর ঘন্টা।অন্তত স্বপ্নে হলেও সে আমায় বলুক, ‘ভালোবাসি বালিকা তোমায়।’কিন্তু সে তো বলে না সেতু দি।”

” বালিকার সেই বালকটি কে? ”

নীরু আনমনে হয়ে ছিল। হঠাৎ প্রশ্নটা শুনেই আবারও খিলখিলিয়ে হাসল।রুম ছেড়ে যেতে যেতেই বলে উঠল,

” কেউ না, কেউ না।সব কল্পনা গো!”

সেতু মলিন হাসল।নীরকে কোলে নিয়ে বিছানায় বালিশ পেতে শোয়াল।আশপাশে কোথাও নিষাদকে না দেখে ধীর পায়ে পা বাড়িয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল।।বেলকনিতে অন্ধকার।আলো জ্বালানোর সুইচ কোনদিকে সেই সম্পর্কে অবগত না হওয়ায় আলো জ্বালাল না আর।রুম থেকে আসা হালকা আলোয় আন্দাজ করেই পা বাড়াল।রুমের সাথে লাগোয়া একটা কাঁচের জানালা বেলকনির দেওয়ালে।সেতু সে জানালা বরাবর রাখা চেয়ারটায় বসল। বাইরের অন্ধকার পরিবেশ দেখার সাথে সাথে কাঁচের জানালায় মাঝেমাঝে চোখ রেখে বিছানায় ঘুমানো নীরকে ও দেখছিল।কিছু মুহুর্ত পরই দরজা লাগানোর আওয়াজ শুনে টনক নড়ল তার।কাঁচের জানালা দিয়ে ঘরে নীরের দিকে আবার তাকাতেই চোখ আটকে গেল।নিষাদ বিছানায় ঝুঁকে গিয়ে নীরের তুলতুলে হাত ছুঁয়ে দিল।পুরু ওষ্ঠ দিয়ে সেই চিকন হাতে চুমু খেল।সেতু অপলক চেয়ে থাকল সেই দিকে।পরমুহুর্তেই নিষাদকে বেলকনির দিকেই এগিয়ে আসতে দেখে আড়ষ্ট হলো।বসা থেকে দ্রুত উঠে যেতে নিতেই নিষাদ বেলকনির দরজা পার হয়ে হলদে আলো জ্বালাল।চোখের সামনে সেতুকে দেখে শীতল চাহনীতে তাকাল।গমগমে সুরে বলল,

” তুমি এইখানে?আমি তো ভোবেছিলাম ওয়াশরুমে।”

সেতু কাঁপা স্বরে বলল,

” না মানে, ভাবলাম আপনার বেলকনিটা ঘুরে যাই।”

” হয়েছে ঘোরা?”

নিষাদের স্পষ্ট প্রশ্নে সেতু ভ্যাবাচ্যাকা খেল।মাথা নাড়িয়ে বুঝাল ” হ্যাঁ”। নিষাদ গহীন চাহনীতে সেতুর মুখবয়বে তাকিয়ে ছিল।বুকের ভেতর উচ্ছল অস্থিরতা টের পেয়েই চোখ বুঝল।ঠোঁটে ঠোঁট চেপেই লম্বা শ্বাস ফেলল।চোখ মেলে আবারও চাইল সামনের মানবীর দিকে।মুহুর্তেই চোখাচোখি হলো দুজনের।সেতু তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি সরালেও নিষাদ দৃষ্টি সরাল না।পরমুহুর্তেই মনের মধ্যে হুড়মুড়িয়ে চলা সব অবাধ্য ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখতে নিজেকে সংযত করল।দৃষ্টি সরিয়ে মনে মনে আওড়াল,

” বেশিক্ষন তোমার সামনে থাকা যাবে না সেতু।তুমি কাছে থাকলে হৃদস্পন্দন বেসামাল হয়ে উঠে।অস্থিরতা কাবু করে ধরে আমায়। তুমি আস্ত এক যন্ত্রনা।আস্ত এক নেশা।আস্ত এক অনুভূতি।উহ!আমার বুকের ভেতর ব্যাথা হচ্ছে! চিনচিনে ব্যাথা!”

কথাগুলো মনে মনে বলেই পা ঘুরাল নিষাদ।আবারও রুমে ডুকে বিছানায় সটান শুঁয়ে পড়ল নীরের পাশে।জোরে জোরে বার কয়েক শ্বাস ফেলে চোখ বুঝল দ্রুত।অন্যদিকে বেলকনি থেকে ছোট ছোট চোখে তা পরখ করছিল সেতু।নীরের পাশে কি সুন্দর বিনা সংকোচে শুয়ে ঘুমিয়ে গেল নিষাদ।সেতু চোখ নামাল।নিষাদের সংকোচ না হলেও তার সংকোচ হচ্ছে।একই বিছানায় ঘুমোতে রাজ্যের বাঁধা কাজ করছে।সে বাঁধা নিয়েই দাঁড়িয়ে রইল সে।মাঝে মাঝে মৃদু পায়ে হাঁটাহাঁটি করল বেলকনিতে।দৃষ্টি রাখল বাইরের আঁধার পরিবেশে।

#চলবে…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ