#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#পর্ব_০৪
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ
ধীরে ধীরে আরো কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেল।সেতু এখন সুস্থ।বিকালের দিকে থালাবাসন ধুঁয়ে ঘুম দিয়েছিল সে।রাতে ঘুম হয়না বললেই চলে।চোখে ঘুম নামলেই হঠাৎ মধ্যরাতে পেটের ভেতর সন্তানের নড়াচড়া অনুভব হয়। পেটের চামড়ায় চিনচিনে ব্যাথা হয়।এপাশ ওপাশ করে শুয়েও আর রাতভর ঘুম আসে না।এখন বিকালবেলায় ঘুমিয়েও সেই একই ঘটনাই ঘটল।হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গল পেটের ভেতর ছোট্ট বাচ্চার হাত পা নাড়ানোর অনুভূতি পেয়ে।সেতু চোখ মেলে চাইল।পেটের ভেতর সন্তানের ছোট্ট পায়ের লা’থি দেওয়া বুঝতে পেরেই মলিন হাসল সে।পেটের চামড়ায় চিনচিনে ব্যাথা করে উঠল।উঠে বসে ঝুঁকে শাড়ি সরিয়ে উঁচু হওয়া পেটের দিকে চাইতেই শ্যামলা ত্বকে সন্তানের নড়াচড়ার ছাপ ভেসে উঠল।যেন ছোট একটা পায়ের আলতো ছাপ তার উঁচু হওয়া পেটের চামড়ায়।সেতু হেসে নিজের হাতটা পেটের উপর রাখল।সন্তানের নড়াচড়া হাত স্পর্ষ করতেই মিনমিনিয়ে বলল,
“এই পিচ্চি, তুমি কিন্তু খুব দুষ্টু!মাকে ঘুমোতে দাও না।খেতে বসলে, ঘুমোতে গেলেই তোমার হাত পা নাড়িয়ে খেলার সময় হয়ে যায়।হুহ?”
কথাটা বলে শেষ করতেই মোবাইলের রিংটোনের তীক্ষ্ণ আওয়াজ আসল কানে।সেতু ভ্রু জোড়া কুঁচকে তাকাল।আকাশের নাম দেখেই কল রিসিভড করার আগ্রহ দেখাল না আর।এই কয়েকদিনে আকাশ তাকে অনেকবার কল দিয়েছে।কল দিয়েই অস্থির গলায় কেবল প্রশ্ন ছুড়েছে।প্রশ্নগুলো এমন,
” সেতু তুমি সত্যিই প্রেগন্যান্ট?তোমার গর্ভে বাচ্চাটা কার সেতু?তোমার আমার মেলামেশার ফলস্বরূপই কি তোমার এই প্র্যাগনেন্সি?বাচ্চাটা কি আমার সেতু?”
সেতু এই প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন হতে চায়নি। আর না তো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে চেয়েছে।প্রতিবারই কোন না কোন কথা বলে এড়িয়ে গেছে। আর নয়তো আকাশের মুখের উপরই কল কেঁ’টে দিয়েছে।আকাশের পাশে এখন তার দ্বিতীয় স্ত্রী।সুন্দরী, রূপবতী আর যথেষ্ট স্মার্ট সে!আকাশের তো উচিত দিনরাত তার দ্বিতীয় স্ত্রীর রূপে মোহিত হওয়া।দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে ফোনালাপ করা।দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রেমে মত্ত হয়ে চোখে বিভোর স্বপ্ন দেখা।তা না করে এই সামান্য বিষয়টা জানার জন্য এতটা উদ্গ্রীব হয়ে আছে কেন আকাশ?এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার জন্য কেন এত মরিয়া হয়ে আছে?সেতু নিজের হাতটা আগের মতোই পেটের উপর রেখে মৃদু গলায় বলল,
” এই পিচ্চি,তুমি কি কখনো আমায় ভুল বুঝবে? তোমার মা তোমাকে তোমার বাবার পরিচয় জানাবে না বলে ভুল বুঝো না প্লিজ।আমি চাই না তোমার বাবা তোমার কথা জানুক।কিংবা তুমি তার কথা জানো।যে তোমার অস্তিত্বের জানান পাওয়ার আগেই তোমার মাকে এক নরক যন্ত্রনায় ঠেলে দিয়েছে, আমি চাই না তুমি তাকে বাবা বলে চেনো।বাবা বলে ডাকো।ক্ষমা করে দিও তোমার মাকে।তোমার মা কখনোই বলবে না, তোমার মা-বাবার ভালোবাসার ফলই তুমি।কেন বলব না জানো?কারণ তুমি শুধু তোমার বাবার কামনা আর লালসার ফল। এর বাইরে তোমার বাবার কাছে তোমার কোন অর্থ থাকতে পারে না।কোন অর্থই না।”
কথাটা বলেই আবারও সে তাকাল মোবাইলের দিকে।এখনও বাঁজছে।চারবার কল দিয়েছে আকাশ।সেতু না চাওয়া স্বত্ত্বেও পাঁচবারের সময় ফোন তুলল।বলল,
” কেন কল করেছো ?”
ওপাশ থেকে আকাশ অধৈর্য্য গলায় বলে উঠল দ্রুত,
” প্লিজ কল কাঁ’টবে না প্লিজ সেতু।কিছু কথা আছে আমার।”
সেতু জানে আকাশের সে কিছু কথার মানে।তবুও না জানার ভান করেই বলল,
” কি বলবে?আগের প্রশ্নগুলোই?”
” সেতু সত্যি বলছি আর কখনো কল করব না।প্লিজ একবার!একবার বলো তোমার গর্ভের সন্তানটি কার?সে কি আমারই সন্তান?প্লিজ সেতু। বলো না।”
সেতু চুপ থাকল।আকাশ আবারও বলে উঠল,
” তুমি তো দ্বিতীয় বিয়ে করোনি।কারো সাথে সম্পর্কেও ছিলে না। তাহলে কি বাচ্চাটা আমারই?”
” তুমি কি পাগল?কিসব বলছো আমার সন্তান নিয়ে।আমার সন্তান নিয়ে তোমার এত ইন্টারেস্ট কেন আকাশ?নতুন সংসারে মনোযোগ দাও।”
আকাশ করুণ গলায় বলল,
” আমি শুধু উত্তরটা জানতে চাই সেতু।”
” কেন?আমার সন্তান কার সেটা জেনে তোমার কি হবে?”
” কৌতুহল।বলো না।ও কি আমারই….”
আকাশ বাকি কথাটা বলার আগেই সেতু দাঁতে দাঁত চাপল।কঠিন কন্ঠে জবাব দিল,
” না।সে তোমার সন্তান নয়। আর কখনো কল করবে না দয়া করে।”
কথাটা বলেই ফোন রাখল।মোবাইলটা বিছানায় রেখেই বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল।সন্ধ্যা নেমেছে বেশ কিছুক্ষন হলো।চারদিকটা অন্ধকার হলেও দূরের রাস্তায় আলো জ্বলছে।গাড়িরা সব ছুটে যাচ্ছে যার যার নির্দিষ্টি গন্তব্যে।সেতু সেদিক পানে তাকিয়ে থাকল। কিুছুক্ষন বেলকনিতে দাঁড়াতেই হঠাৎ ঐ তার পেটের চিনচিনে ব্যাথাটা এক তীক্ষ্ণ ব্যাথায় রূপান্তরিত হলো।তলপেটে অসম্ভব যন্ত্রনা।সেতু চোখ বুঝল।ব্যাথাটা কমে যাবে ভেবেই আবারও ঘরে গিয়ে বিছানায় বসল।বেশ কিছুক্ষন ব্যাথায় ছটফট করে বসে থাকল চুপচাপ। কিন্তু কমল না ব্যাথা।ক্রমশ যেন বাড়ছে।দাঁতে দাঁত চাপল সেতু।বিছানা খামচে ঘনঘন শ্বাস ফেলেই ব্যাথা সহ্য করার চেষ্টা চালাল।না, ব্যাথা কমছে না।সেতু এবার বসা ছেড়ে উঠল।পেটে হাত চেপে ধীর পায়ে বউদির কাছে গেল।যন্ত্রনা নিয়েই অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,
” ব্ বউদি?আমার খুব পেট ব্যাথা করছে।অসম্ভব যন্ত্রনা হচ্ছে।”
বউদি তখন সোফায় আরাম করে বসে টিভি দেখছিল।সেতুর কথা শুনেও বিশেষ পাত্তা দিল না।টিভি দেখতে দেখতেই বলে উঠল,
” আহ সেতু!তোমাকে তো বলেছিই এই সময়ে এমন ব্যাথা কতশতবার হয়।তা বলে কি বারবার ডাক্তারের কাছে ছুটবে?আশ্চর্য!এমনিতেই ঐদিন ডাক্তার দেখাতে কতগুলো টাকা খরচ হলো।খবর আছে তোমার?তোমার দাদার আর কয়টাকার চাকরী!দাদার দিকটাও একটু ভাবতে পারো তো।”
” বউদি, ডাক্তারের কাছে ছুটতে তো বলিনি আমি।শুধু ব্যাথা হচ্ছে তাই জানালাম।খুব কষ্ট হচ্ছে বউদি।”
বউদি থমথমে মুখে তাকাল।গম্ভীর গলায় জবাব দিল,
” আমরা কি সন্তান জম্ম দেয়নি সেতু?আমরা একটু থেকে একটু হলেই ব্যাথায় মূর্ছা যাইনি।মা হতে গেলে এমন যন্ত্রনা সহ্য করার অভ্যেস থাকতে হয়।এইটুকু ব্যাথাই যদি সহ্য করতে না পারো যখন প্রসব ব্যাথা উঠবে তখন কি করবে?তোমার শরীর নাকি ননীর পুতুল বুঝি না!একটু থেকে একটুতেই তোমার কষ্টের ঝুড়ি মিলে যায়।কষ্ট কি এমন আমাদের সময় হয়নি?এমন কতশত কষ্ট প্রকাশই করিনি কোনদিন।মুখ বুঝে সহ্য করেছি,বুঝলে?”
সেতু ব্যাথায় কাঁতরে উঠল।কাঁপা কন্ঠেই বলল,
“খ্ খুব ক্ কষ্ট হচ্ছে বউদি।না হলে জানাতাম না।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে!মনে হচ্ছে ম’রে যাব।”
বউদি এবার শান্ত চাহনিতে তাকাল।কপাল কুঁচকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকেই আবার টিভি দেখায় মনোযোগ দিল।টিভি দেখতে দেখতেই বলল,
” হয়তো এমনি ব্যাথা।কতক্ষন শুয়ে বসে রেস্ট নিয়ে দেখো। চলে যাবে।”
” য্ যাচ্ছে না।এতক্ষন আমিও তাই ভেবেছি বউদি।”
বউদি এবার বিরক্ত হলো।একরাশ বিরক্তির সঙ্গেই বলল,
” আর কিছুটা সময় দেখতে তো ক্ষতি নেই সেতু।যদি অবস্থা বেশি গুরুতর হয় তখন নাহয় দেখা যাবে।যাও এখন নিজের ঘরে।”
সেতু আর পারল না।ঝুঁকে গিয়ে বউদির হাত চেপে ধরেই যন্ত্রনায় কাঁতরে উঠল। অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,
” ব্ বউদি সত্যিই পারছি না আর!আজকের ব্যাথাটা ঐদিনের ব্যাথার মতো নয়।বেশ যন্ত্রনা হচ্ছে।পুরো শরীরেই।তল পেট যেন ছিড়ে যাচ্ছে।খুব ব্যাথা হচ্ছে বউদি।”
বউদি এবার ভ্রু কুঁচকে তাকাল।সেতুর ব্যাথায় নীল হয়ে যাওয়া মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়েই কিছু একটা আঁচ করল। সঙ্গে সঙ্গেই ঘাবড়ে গেল।দ্রুত গলায় বলে উঠল,
” তুমি বরং বসো এখানে।আমি তোমার দাদাকে কল করে জানাচ্ছি।”
সেতু বসল।ব্যাথা যেন দ্রুত বাড়ছে।পুরো শরীর জুড়ে ব্যাথা।পেটের ব্যাথাটা বেশিই তীব্র।সেতু চোখ বুঝেই ব্যাথায় কাঁতরাতে কাঁতরাতে কেঁদে দিল।দাঁতে দাঁত চেপে নখ দিয়ে খামচে ধরল সোফার কিনারা।কি ভীষণ যন্ত্রনা!এটাই বুঝি প্রসব ব্যাথা?হয়তো।মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে লাগল সে।পারবে তো এই যন্ত্রনা পেরিয়ে সুস্থসবল বাচ্চাটাকে পৃথিবীতে আনতে?দুনিয়ার মুখ দেখাতে পারবে তো সন্তানটাকে এই মরন যন্ত্রনা পাড়ি দিয়ে?মনের মধ্যে অজানা এক ভয়।শরীরের ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠা মনে ব্যাথার থেকেও যেন সেই ভয়েরই জয়জয়কার!
.
নিষাদ অফিস থেকে বাড়ি ফিরেই মা আর বড়বোনের থমথমে চাহনীর দিকে চাইল।হঠাৎ তার দিকে এমন থমথমে চাহনীর কারণটা ঠিক খুঁজে পেল না সে।ভ্রু জোড়া কুঁচকে তাকাতেই মা রাশভারী গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
” মেয়েটার কি খবর এখন?”
নিষাদ ভ্রু জোড়া আরো খানিকটা কুঁচকাল।মায়ের প্রশ্নের আগামাথা কিছু না বুঝেই সোফায় বসল।পায়ের মোজা খুলতে খুলতেই উল্টো প্রশ্ন ছুড়ল,
” কোন মেয়ে?কিসের খবর?”
নিলি এতক্ষন থমথমে মুখ করে তাকিয়ে ছিল।গম্ভীর কন্ঠেই বলল এবার,
” তুমি কিছু জানো না বোধ হয়?না জানার ভান করছো?”
নিষাদ ক্লান্তিভরা চোখে দিদির দিকে চাইল।দিদি আজ অনেকদিন তার সাথে ভালোভাবে কথা বলে না।বললেও তুমি তুমি করে সম্বোধন করে।হতাশ হয়েই বলল,
” আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না।কার কথা বলছো দিদি?”
নিলি আগের মতোই গম্ভীর স্বরে শুধাল,
” তুমি যার জন্য মরিয়া হয়ে আছো।কি জানি নাম?সেতু নাকি কি!তার কথা।”
নিষাদ এবার সচেতন হয়ে তাকাল।সেতুর সাথে তার নিয়ম করে প্রতিদিন কথা হয় না।সেদিন যে ম্যাসেজ করেছিল তারপর আর কল করেনি সে।সেতুও অবশ্য কল করেনি।ভ্রু জোড়া কুঁচকেই জিজ্ঞেস করল সে,
” কি হয়েছে ওর?”
” না জানার ভান করছো তুমি?আজকে কল করে কথা বলোনি নাকি?”
নিষাদ হাসল।দিদির অভিমান ভরা কথাগুলো শুনেই বলল,
” ওর সাথে কি আমার প্রেমের সম্পর্ক দিদি?প্রেমিকা হয় ও আমার? প্রেমিকা হলে নাহয় দিনরাত কল করে ফোনালাপ করতাম।”
” প্রেমিকা না হলে তাকেই বিয়ে করার জন্য লাফাচ্ছো কেন?সে নাহলে কাউকেই বিয়ে করবে না এমন প্রতিশ্রুতি কেন তাহলে?”
” সেটা বাদ দাও, বুঝবে না তুমি।”
নিলি মুখ ভার করল।শত হোক সেও একজন মা।মা হওয়ার যন্ত্রনা সম্পর্কে সেও জানে। তাই থমথমে গলায় আবারও জিজ্ঞেস করে ফেলল,
” ঐ মেয়েটার প্রসব ব্যাথা উঠেছে শুনলাম।এখন কি খোঁজ কিছু জানো?”
নিষাদের চোখের দৃষ্টি এবার সরু হলো।মস্তিষ্ক কথাটার অর্থ বুঝতে পেরেই মৃদু গলায় বলল,
” না।তুমি কি করে জানলে?”
” নীরু বলল কল করে।”
” কখন?”
” এই তো সন্ধ্যার বেশ পরেই।”
নিষাদ কথাটা শুনেই উঠে নিজের রুমে চলে গেল।বুকজুড়ে এক অস্থিরতা কাজ করছে।কিন্তু অস্থিরতাটা কিসের জন্য?কার জন্য?সেতুর জন্য কি?মস্তিষ্কে প্রশ্নটা ঘুরতেই চমকে গেল নিষাদ। হ্যাঁ সেতুর জন্যই তো।মাথার মধ্যে তো কেবল একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে এখন।তা হলো,” সেতু ঠিক আছে তো?”
নিষাদ পকেট থেকে ফোন বের করল।দ্রুত সেতুর দাদার নাম্বারে কল করল।ওপাশ থেকে অবশ্য কল রিসিভড হলো না।একবার, দুইবার, অনেকবার কল করল সে।কিন্তু সাড়া পেল না।অবশেষে কোন উপায় না পেয়েই নীরুকে কল দিল।দুবার রিং হতেই নীরু রিসিভড করল।চঞ্চল গলায় বলে উঠল,
” তোমাকে সন্ধ্যায় কল দিয়েছিলাম। মোবাইল বন্ধ ছিল কেন?”
নীরুর প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই উল্টো প্রশ্ন ছুড়ল নিষাদ,
” তুই কোথায়?কয়টা বাজে রাতের?এখনও বাইরে কেন?”
” উহ,মাত্র সাড়ে নয়টা। মাকে বলে এসেছি আমি।”
“মা অনুমতি দিয়েছে?”
“না, আমিই জোর করে অনুমতি নিয়েছি।তুমি বরং এসে নিয়ে যেও আমায়।তাহলেই তো হয়ে গেল।”
নিষাদ ক্লান্তির শ্বাস ফেলল।বলল,
” কোথায় তুই?”
“হসপিটালে।”
নিষাদ চোখ বন্ধ করল।তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলেই নিজের মনের অস্থিরতাকে দমাতে বলে ফেলল,
” সেতুর খবর কি করে জানলি?কি হয়েছে ওর? ”
নীরু মৃদু হাসল।বলল,
” তুমি অস্বীকার করলেও এটা স্পষ্ট যে সেতু দি কে এখনও তুমি ভালোবাসো।কি বলো?”
নিষাদ কন্ঠ কঠিন করল।বলল,
” যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দে।”
নীরু আবারও হাসল।বলল,
” আসলে হসপিটালেই এসেছিলাম আমি এক ফ্রেন্ডকে দেখতে।এখানে এসে দেখি সেতু দির এই অবস্থা।তাই মাকে কল করে জানিয়েছি।তুমি জানো?সেতু দির একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে।কি নরম তুলতুলে শরীর! কি মিষ্টি দেখতে!”
নিষাদ এতক্ষনে চোখ মেলে চাইল।বুকের ভেতরের অজানা ভয়কে ঝেড়ে ফেলতেই কাঁপা কন্ঠে বলল,
” আ্ আ্ আর সেতু?ওর কি অবস্থা?”
” সেতু দির অবস্থা একটু জটিল রক্তশূণ্যতার কারণে।একটু পরই রক্ত দেওয়া হবে।আরো একটা বিষয় জানো?”
নিষাদ শান্ত কন্ঠে বলল,
” না,কি বিষয়?”
নিরু হাসল আনমনে।অন্যসময় হলে নিষাদ সববিষয়ে কৌতুহল দেখায় না।এভাবে প্রশ্ন করে জিজ্ঞেস করে না, ” কি বিষয়?” কিন্তু আজ জিজ্ঞেস করছে।জিজ্ঞেস করার কারণটা বুঝতে পেরেই মিষ্টি হাসল সে।দ্রুত তার কোলে থাকা ঘুমন্ত বাচ্চাটা সহ একটা সেলফি তুলল।তারপর ভাইয়ের নাম্বারে পাঠিয়েই বলল,
” সেতু দির আর আমার ব্লাড গ্রুপ একই।আমি রক্ত দিব বলেছি।ভালো করেছি না?আর তোমার মোবাইলে দেখো একটা ছবি গিয়েছে।ওটা সেতু দির বেবির।একদম সেতু দির মতোই। আমার কোলেই ঘুমাচ্ছে বুঝলে?কি সুন্দর কোমল একটা বাচ্চা!ইচ্ছে করছে কেবল আদর করতে।”
নিষাদ দ্রুত নীরুর পাঠানো ছবিটায় ক্লিক করল।মোবাইলের স্ক্রিনে সঙ্গে সঙ্গেই ফুটে উঠল নীরুর হাসিমাখা মুখের সঙ্গে একটা ছোট্ট বাচ্চার ঘুমন্ত ছবি।নীরুর কোলেই ঘুমিয়ে আছে।নিষাদ অপলক তাকিয়ে থাকল।একদম ছোট্ট তুলতুলে একটা শরীর।চিকন চিকন হাতে ছোট্ট ছোট্ট আঙ্গুল।চেহারাটা সত্যিই একদম সেতুর মতো।হালকা হাসল সে।ফোন কানে নিয়েই বলে উঠল,
” একা তো ফিরতে পারবি না।আচ্ছা, আমি আসছি কিছুক্ষন পর। রাখলাম।”
কথাটা বলেই কল রাখল নিষাদ।ফোনের স্ক্রিনে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল সেই নবজাতক শিশুর ঘুমন্ত চেহারার দিকে।আসলেই বাচ্চাটা ভীষণ মিষ্টি!
#চলবে…..