নিষিদ্ধ_প্রেম।শেষ_পর্ব (৬)
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
রাইমান ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে যাচ্ছিলো আর আমি ওর হাত টা টেনে ধরে বলি…
এমনি করে সারাজীবন আমার পাশে থাকবে?
-পাগলী একটা!সারাজীবন পাশে থাকার জন্যই তো হাত টা ধরেছি।নইলে কি ধরতাম?
রাইমান আমার দুই হাত ধরে আমাকে খাটে বসায়।
আর ও ফ্লোরে বসে আমার হাত দুটো ধরে রেখে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে:
এ হাত যখন ধরেছি,মৃত্যু অবধি এ হাত ছাড়বোনা।
-তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও রাইমান।
আমি ভুল করেছি,তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
-ক্ষমা আমার কাছে না,ক্ষমা চাইবে তুমি আল্লাহ্ তায়ালার কাছে।আর তিনি পরম ক্ষমাশীল,দয়াময়।তিনি চাইলেই যে কাউকে ক্ষমা করতে পারেন।
কিন্তু তোমাকে তার কাছে খাস দিলে ক্ষমা চাইতে হবে।নামাজে বসে প্রার্থনা করতে হবে।কেননা,অতীতে তুমি যেই ভুল করেছো নিষিদ্ধ প্রেমের ফাঁদে পড়ে।
সেই ভুলের শাস্তি খুবই ভয়াবহ।
ইসলামে জিনাকারির শাস্তি খুব কঠিন।
তাই তুমি তওবা করো,আর আল্লাহ্ কে নামাজের পাটিতে বসে ডাকতে থাকো।
আল্লাহ্ তোমাকে ক্ষমা করবেন।
আর বিয়ের আগে তো এমনিতেই ইসলামে প্রেম নিষিদ্ধ।যদিও আমরা তা মানিনা।তবে সবার উচিৎ এটা মেনে চলা।
আর বিয়ের পর বর বঁধুর সাথেই চুটিয়ে প্রেম করা।
-আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।আর আমি আল্লাহর কাছেও কান্নাকাটি করে ক্ষমা চেয়ে নিবো।আমি জানি আমি ভুল করেছি,জঘন্যতম কাজ করেছি।কিন্তু
আমি চাই সব ভুলে তোমার সাথে নতুন ভাবে জীবন শুরু করতে।তোমাকে ভালবাসতে।
যেই ভালবাসায় নেই কোন পাপ,যেই কোন যাতনা,নেই কোন অন্যায়।
দিবেনা আমাকে একটা সুযোগ?
-তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো এতেই আমি খুশি পাগলী।
এই বলে রাইমান আমাকে জড়িয়ে ধরে।
আমি অনুভব করি পরম শান্তি।মনে হচ্ছিলো আমার জীবন থেকে যেনো সকল দুঃখ কষ্ট মুছে গেলো।আমার বুকটা হালকা হয়ে গেলো।
-যাও এবার ফ্রেশ হয়ে নাও,খেতে হবেতো নাকি?আর একটা কথা,এখন থেকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে,
এবং আমিও পড়বো।ফজরে যে আগে জাগবো সেই অপর জনকে ডাকবো।ওকে?
-আচ্ছা।
আমরা দুজনই ফ্রেশ হয়ে খেতে গেলাম।
খেয়ে এসে রাইমানকে বললাম,তুমি একটু হল রুমে বসবে?আমার একটু কাজ আছে আমাদের রুমে।
রাইমান হল রুমে বসলো।আর আমি এ ফাঁকে লাল রঙের একটা শাড়ী পরলাম।
চোখে কাজল দিলাম,ঠোঁটে লিপ্সটিক।হাত ভর্তি চুড়ি।আজ যেন আমাকে একদম রাইমানের বউ বউ লাগছে।
চুল গুলো খোঁপা করে পরিপাটি হয়ে রাইমানকে ফোন দিলাম।
এবার তুমি আমাদের রুমে আসতে পারো।
রাইমান রুমে ঢুকতেই দেখে রুম অন্ধকার।
তাই ও লাইটের সুইজে হাত দিয়েই জিজ্ঞেস করে,
রুম অন্ধকার করে রেখেছো কেন তিতিশ্মা?
কিন্তু যখন ও আমাকে এই সাজে দেখে।ও শুধু আমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।কোন কথাই যেন আর ওর মুখ থেকে বের হচ্ছেনা।
-এভাবে কি দেখো?কোন দিন দেখো নি মনে হয়।
-দেখেছি,তবে এমন ভাবেতো আর দেখিনি।অপূর্ব লাগছে তোমায়।
এই বলে রাইমান আমার কাছে এসে আমার খোঁপাটা খুলে চুল গুলো ছেড়ে দেয়।
-আমার বউকে খোলা চুলেই বেশি সুন্দর লাগে।
-হয়েছে,এত পাম্প দিতে হবেনা।
-সত্যি বলছি।
-আচ্ছা।
আজ কেন যেন আমি রাইমানকে খুব লজ্জা পাচ্ছি।
ওর চোখের দিকে তাকাতে পারছিনা।
বার বার চোখ নিচের দিকে নামিয়ে কথা বলছি।
-আমার লজ্জাবতী বউ টা যখন লজ্জায় লাল হয়ে যায়,তখন আরো সুন্দর দেখায়।
-ধুর।যাও তো।
-কোথায় যাবো হু?
জানো?আজকের দিন টার জন্য আমি কতটা অপেক্ষায় ছিলাম।মনে মনে ভাবতাম কবে আমার জীবনে এই দিন টা আসবে।কবে তিতিশ্মা আমাকে ওর স্বামী রুপে মেনে নিবে।কবে শুরু করবো আমরা নতুন করে জীবন।
ধন্যবাদ আমাকে বোঝার জন্য।
আমি কোন দিন তোমার এ চোখে জল আসতে দেবোনা।
আর তুমিও কথা দাও কক্ষনো আমায় ছেড়ে যাবেনা।আমি তোমাকে খুব ভালবাসি তিতিশ্মা,খুব ভালবাসি।
-আই লাভ ইউ রাইমান,আই লাভ ইউ।
আমিও তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি রাইমান।জানিনা কখন কিভাবে তুমি আমার মনে জায়গা করে নিয়েছো।
কোন দিন ছেড়ে যাবোনা তোমায় আমি,কোন দিন না।
রাইমান আমাকে জড়িয়ে ধরে,আমিও হারিয়ে যাই ওর ভালবাসায়।
শুরু করি আমাদের নতুন জীবন।
আজ আমাদের বিয়ের ৫ বছর পূর্ণ হলো।
এ পাঁচ টা বছর কিভাবে চলে গেছে বুঝতেই পারিনি।
এখন আমাদের দু বছরের একটা মেয়ে আছে।
মেয়ে দেখতে ঠিক ওর বাবার মত হয়েছে।
সে তার বাবাকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা।
আর বাবাও তার মেয়ে ছাড়া কিছু বুঝেনা।
আজ রাতে আমি গাল ফুলিয়ে বসে আছি।
আজ রাইমান আমাকে একটা বার উইশও করেনি।এই ৫ বছরে এই প্রথম এমন টা হলো।
রাইমা (মেয়ে) বাবার অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আর আমি অপেক্ষার প্রহর গুনছি,
হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ,
দরজা খুলতেই আমি অবাক হয়ে যাই।
-ইয়ান তুই?(ছোট ভাই)
-হ্যাপী ম্যারেজ এ্যানিভার্সারি আপু।
ইয়ানের হাতে একটা কেক।
পেছনে তাকাতেই দেখি আমার রাইমান সাহেব ফুলের তোরা দিয়ে তার মুখ ঢেকে রেখেছেন।
-আমাদের কি ভেতরে আসতে দিবেন না ম্যাডাম?বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকবো?
-হুহ,আমিতো ভেবেছি ভুলেই গেছেন।
-বিয়ে তো আর দু চার টা করিনি,
একটা মাত্র করেছি।
কি করে ভুলি?
-রাইমা কই আপু?
-ও ভেতরের রুমে ঘুমাচ্ছে।
-আচ্ছা আমি ওর কাছে যাই।
-হ্যাপী ম্যারেজ এ্যানিভার্সারি মাই সুইট হার্ট।
-হু থ্যাঙ্ক ইউ।
-একটু ওই দিকে ঘুরেন।
-কেন?
-ঘুরেনই না।
এরপর রাইমান আমাকে একটা চেইন পরিয়ে দেয়।চেইনের সাথে একটা লকেটও আছে। R অক্ষরের।
-এটা আপনার গিফট।আমার গিফট কই?
-রুমে যে ঘুমিয়ে আছে ওটা কি কম বড় গিফট হ্যাঁ?
-থ্যাঙ্ক ইউ রাইমার জন্য,আমার জীবনটাকে এত সুন্দর করে গুছিয়ে দেবার জন্য,আমার সুখে দুঃখে পাশে থাকার জন্য।
-সেইম টু ইউ।
-লাভ ইউ বউটা।
-লাভ ইউ টু রাইমার পঁচা বাবাটা।
-চলো চলো কেক কাটতে হবেতো,মা বাবা সবাইকে ডাকো।
ইয়ানও অপেক্ষা করছে।
তারপর আমরা তিন জন মিলে কেক কাটলাম,রাইমান আমি আর রাইমা।
-বাবাকে দেখে কাঁচা ঘুম থেকে জেগেও মেয়ের কোন কান্না কাটি নেই।
-দেখতে হবেনা মেয়েটা কার।রাইমানের মেয়ে বলে কথা।
-হ্যাঁ হ্যাঁ আপনারই তো মেয়ে।আমার তো কিছুনা।
-কি শুরু করলি তোরা?রাইমা তোদের কেউনা।রাইমা আমার দাদুমনি।তাইনা দাদু মনি?(শাশুড়িমা)
রাইমা ওর দাদুর দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকলো।
আর এমন হাসি আনন্দেই চলতে থাকলো আমাদের জীবন।
(সমাপ্ত)
Amar Facebook id nei chrome theke story gulo pori. Amr story porte khub valo lage.
Ajker story ta khub valo laglo khub…
Amio chrome thekei pori, ar ei jaygay je golpo gulo thake just amazing ?