নিষিদ্ধ প্রেম পর্ব ৪

0
4366
নিষিদ্ধ প্রেম পর্ব ৪ তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু। -রাইমান তুই?তুই এখানে?(সাফিন) -হ্যাঁ আমি।তিতিশ্মার হাজবেন্ড রাইমান আহমেদ। এই বলে রাইমান আমাকে এক হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো। আমার হাত পা,সারা শরীর কাঁপছে। আমি রাইমানের চোখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম। আর ভাবতে লাগলাম, তবে কি রাইমান আর সাফিন পূর্ব পরিচিত? -ওহ আচ্ছা আচ্ছা।তুই তাহলে সেই পুরুষ যার কারণে আমি আমার ভালবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলেছি।
-হা হা হা,ভালবাসার মানুষ?রিয়েলি?তিতিশ্মা তোর ভালবাসার মানুষ হয়? তাই নাকি তিতিশ্মা? -হ্যাঁ হ্যাঁ,জিজ্ঞেস কর ওকে। -কি হলো তিতিশ্মা বলো? -আরো কিছু শুনবি?শুনলে তোর মাথা ঠিক থাকবেতো?নাকি এখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবি? -বলবো তিতিশ্মা?বল একবার বলবো?(সাফিন) ওদের কথা আর পালটা কথায় আমার কাঁপুনি বেড়ে যাচ্ছে।মুখ থেকে কোন কথা বেরুচ্ছেনা।সারা শরীর ঠান্ডা বরফ হয়ে যাচ্ছে। রাইমান আমাকে শক্ত করে ধরে আছে বলে, নয়তো এত ক্ষণে যে আমি পড়ে যেতাম,এতে কোন ভুল নেই। -উঁহু তোর কিছুই বলতে হবেনা বন্ধু,আমিই বলছি।আমার কথা শুনে তুই যেন আবার মাথা ঘুরে না পড়িস। তিতিশ্মা তুমি চুপ কেন?কেন বলছোনা কোন কথা?বলে দাও ও তোমার কে,বলে দাও ও একজন ধর্ষক।যে তোমার ভালবাসার সুযোগ নিয়ে তোমাকে… কিরে দোস্ত,সব টুকু না শুনিয়ে চোখ কপালে উঠলো কেন তোর? আমার কথা তো এখনো শেষ হয়নি, এখনি এতটা অবাক হোস না। এখনো তো আরো কিছু বাকি, -কি বলতে চাস তুই? -মনে আছে সেদিনের কথা?যেদিন তুই তিতিশ্মাকে আমতলা দেখা করতে বলেছিলি? ছিঃ সাফিন ছিঃ কতটা নিচে নামলে মানুষ তার ভালবাসার মানুষ এর সাথে এমনটা করতে পারে? -আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছেনা।(সাফিন) -ওয়েট বন্ধু আমি মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছি। যেদিন তুই তিতিশ্মাকে আম তলা দেখা করতে বলেছিস, সেদিনই আমি আমার মাকে বলে ওর মায়ের কাছ থেকে ওর মোবাইল নাম্বার নেই।ওর সাথে তখন আমার বিয়ের কথা হচ্ছিলো।আর ও আমার রিলেটিভ। কিন্তু শুধু মাত্র তোর মত মানুষ রুপি পশুর জন্য ও বার বার ওর পরিবারকে না করছিলো।আর ওর পরিবার আমার পরিবারকে না করে দিচ্ছিলো। কিন্তু ওকে আমি ওর ছোট বেলা থেকেই খুব পছন্দ করি, আর মনে মনে বলি,বিয়ে যদি করতে হয় তবে ওকেই করবো। সেই জন্য আমি কারণ জানতে তিতিশ্মার নাম্বার যোগাড় করি। কেন ও এই বিয়ের জন্য না করছে। আর পরের দিন যখন ওর তোর সাথে দেখা করার কথা,সেদিন সকালেই আমি ওকে ফোন দেই। কয়েক বার ফোন দেয়ার পর ও রিসিভ করে। কিন্তু ওর ভয়েজ শুনে আমি আঁতকে উঠি, মেয়েটা সকাল সকাল কাঁদছে কেন? বললাম,আমি রাইমান। কি হয়েছে তোমার?কাঁদছো কেন তুমি? ও বল্লো অনেক বড় ঘটনা।আমি আপনাকে এভাবে ফোনে বলতে পারবোনা। -ওকে এই মুহূর্তে আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। অনেক বার বলার পর তিতিশ্মা রাজি হলো। সকাল ৯ টায় আমরা দেখা করি। -কি হয়েছে তোমার?কাঁদছো কেন তুমি এত সকালে?আর তুমি বিয়ের জন্য রাজি কেন হচ্ছোনা?যেখানে তোমার আমার পরিবারের সবাই রাজি। -শুনতে চান কেন আমি রাজি হচ্ছিনা?শুনতে চান কেন আমি কাঁদছি? -হ্যাঁ শুনতে চাই আমি। -বলো তুমি। -তবে শুনুন, আমি একটা ছেলেকে ভালবাসি।ভালবাসি বললে ভুল হবে খুব ভালবাসি। আর চেয়েছিলামও ওকে বিয়ে করতে। ও যখন আমাকে এ কথা গুলো বলছিলো।আমার বুকের ভেতর যেন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিলো। -তারপর? -ও নিজেও আমাকে ভালবাসে,আমাদের দুই বছরের রিলেশন। একদিন ও আমাকে বলে ওর মার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিবে। -তারপর? -তারপর ও আমাকে ওর বাসায় নিয়ে যায়।কিন্তু বাসায় গিয়ে দেখি ওর বাসায় কেউ নেই।বাসা একদম খালি। -এরপর? -তারপর আমি ওকে বলি,মা বাবা কই?তুমি যে বললে তাদের সাথে আজ আমাকে দেখা করাবে। ও আমাকে বলে,বাসায় কেউ নেই।সবাই খালার বাড়ীতে বেড়াতে গেছে,আর তোমাকে যদি বলতাম তারা বাসায় নেই তাহলে তুমি আসতে?আসতেনা। আজ তোমাকে আমার খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। এই বলে ও আমার বুকের ওড়না টা কেড়ে নেয়,আর আমি ওকে অনেক অনুরোধ করেও হাতে পায়ে ধরেও নিজেকে ওর কাছ থেকে বাঁচাতে পারিনি। পারিনি আমার সতীত্ব রক্ষা করতে।ও আমাকে নষ্ট করে ফেলেছে রাইমান, নষ্ট করে ফেলেছে ও আমায়। -কে ওই জানোয়ার তিতিশ্মা?বলো আমায়!কে করেছে তোমার এত বড় ক্ষতি? -ওর নাম সাফিন।আর ও আজও আমাকে দেখা করতে বলেছে।আমাকে ভোগ করার জন্য।আমি বলেছি চলো আমরা বিয়ে করে নেই।কিন্তু ও বলে ৫ বছর পর।আর এত দিন ও আমাকে ভোগ করবে শুধু। -ও বললেই কেন যাবে তুমি ওর সাথে দেখা করতে? -কারণ ও আমাকে বলেছে,আমি যদি ওর সাথে দেখা করতে না যাই তবে ও সেদিন লুকিয়ে যেই ছবি গুলো তুলেছিলো সেগুলো ও ভাইরাল করে দিবে। আর এগুলো যদি ভাইরাল হয় তবে আমার মা বাবা সহ্য করতে না পেরে মরে যাবে।তাই ওর সাথে দেখা করা ছাড়া কিংবা আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার আর কোন পথ নেই। এখন আপনিই বলুন আমি কিভাবে এই নষ্ট শরীর নিয়ে আপনার জীবনে জড়াই? কিভাবে আপনাকে ঠকাই? কিভাবে কিভাবে কিভাবে? আর আপনিই বলুন,ও কি আমাকে বিয়ে করবে?আর কিভাবে এই মানুষ টাকে আমি বিয়ে করি?যে কিনা আমাকে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোড় পূর্বক আমাকে ধর্ষণ করেছে। তবুও আমি বলেছি ওকে,চলো বিয়ে করি। কিন্তু ওর এক কথা ও আমাকে এখন বিয়ে করবেনা। আরো ৫ বছর পর করবে, কিন্তু আমাকে ওর এখন কাছে পেতে হবে।যখন ইচ্ছে তখন। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি,আমি সুইসাইড করবো।এতে করে আমার শরীর টাও বিলাতে হবেনা একটা নরপশুর কাছে,আর আমার মা বাবারও মান হানি হবেনা। এই কথা শোনার পর আমি তিতিশ্মার গালে একটা সজোরে থাপ্পড় মেরে বলেছিলাম, আমি কি মরে গেছি?যে তোর মরতে হবে? এই মেয়ে শোন, তুই আমার জন্য বাঁচবি ওকে? আমার জন্য বাঁচবি।
-কখন দেখা করতে বলেছে ওই জানোয়ার?আর ছবি গুলো কোথায় আছে? -ছবি গুলো ওর মোবাইলে আছে। আর ও একটু পরেই দেখা করার টাইম দিয়েছে।আম তলায়। -ওর কোন কম্পিউটার বা ল্যাপটপ আছে? -না নেই। -তবে যে করেই হোক ওর মোবাইল থেকে মেমোরিটা নিয়ে নিতে হবে।তাহলেই সব সমাধান। -কিন্তু তা কিভাবে হবে?ও কী দিবে মেমোরি? -দিবেনা,কিন্তু কোন ভাবে নিতে হবে। তারপর আমি ওর কাছে সাফিনের ছবি দেখতে চাই।আর ডিসিশন নেই আমি আগে সাফিনের সাথে দেখা করবো। কিন্তু ও যখন তোর ছবি দেখায়,বিশ্বাস কর তখন আমার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যায়। কেননা আমারই বন্ধু,আমার কলেজ ফ্রেন্ড,যার সাথে কিনা আমার এত ভালো সম্পর্ক। সে কিনা এতটা নিচ?এত টা জঘন্য হয়ে গেছে? আমি ছবি দেখে ওকে বলিনা যে তুই আমার পরিচিত। আর ওকে বলি,তুমি এখানে দাঁড়াও।আমি ফোন দিলেই তুমি আম তলা যাবে।আর না দিলে তুমি যাবেনা। আর ফোন টা আমি যেভাবেই হোক সাফিনের ফোন থেকেই দিবো। এই বলে ওকে দাঁড় করিয়ে রেখে আমি তোর সাথে দেখা করি। এমন ভাব ধরি যেন হঠাৎ করেই তোর সাথে আমার দেখা। -দোস্ত তুই এখানে? -কিরে কেমন আছিস? -এইতো ভালো।তুই কেমন? -এইতো চলছে। -তা এখানে দাঁড়িয়ে কেন তুই? -না মানে এমনি। -ও আচ্ছা, -তুই এখানে কি মনে করে? -আরে আমি আসছি আমার লাভারের সাথে দেখা করতে।অবশ্য লাভার না,আমার হবু বউ। -বাহ্!বিয়েও ঠিক। -হ্যাঁ রে।তাই একটু দেখা করতে এসেছি,কন্তু দেখ না।ভুল করে মোবাইল টাই বাসায় ফেলে রেখে এসেছি। এখন বেচারিকে ফোনও দিতে পারছিনা। ওহ হো!তোর মোবাইল টা দেতো। -কিভাবে ফোন দিবি আমার মোবাইল দিয়ে?নাম্বার কি মুখস্ত নাকি? -হুম রে,মুখস্ত।গত কাল রাতে নাম্বারটা পেয়েই মুখস্ত করে ফেলেছি।উড বি বউ এর নাম্বার বলে কথা। -সাব্বাস ব্যাটা! এই নে মোবাইল।তুই কথা বল আমি একটা সিগারেট ধরাই। আর সেই সুযোগে আমি তোর মোবাইলের মেমোরিটা বের করে নেই। আর চ্যাক করি মোবাইলে আবার কোন ছবি রয়ে গেলো কিনা।উঁহু নেই। ব্যাস আমি আমার তিতিশ্মাকে ফোন করে বলে দেই,কাজ শেষ। মেমোরি এখন আমার কাছে। এখন তুমি সময় মত ওর সাথে দেখা করতে পারো।আর তোমার যা ইচ্ছে বলতে পারো। তারপর ওর নাম্বার টা ডায়াল লিস্ট থেকে কেটে দেই। আর তুই দেখে বলিস,শালা!বউ এর নাম্বারটাও কেটে দিলি।তোর বউ কি নিয়ে যাবো নাকি? আমি হা হা করে হেসে বিদায় নিয়ে চলে এলাম তোর কাছ থেকে। এর পর তোর আর তিতিশ্মার মধ্যে কি কথা হয়েছে তোরাই ভালো জানিস। -ছিঃ রাইমান ছিঃ তুই বন্ধু হয়ে আমার সাথে এমন বাটপারি টা করতে পারলি? দেখ তোকে আমি কতটা বিশ্বাস করি,একটা বারও আমার তোর কথা মাথায় আসেনি যে মেমোরি টা তুই সরাতে পারিস। -হা হা হা, চোরের সাথে একটু তো বাটপাড়ি করতেই হয়। আর কি বললি?বিশ্বাস?বিশ্বাস তো তিতিশ্মাও তোকে করেছিলো। তুই সেটার কি করলি? -কি অদ্ভুত দেখ,তুই ওকে বিয়ে করেও আমার কাছে হেরে গেলি। কারণ ও তোকে না আমাকে ভালবাসে। হা হা হা। (অট্ট হাসি) আর বাচ্চাটা?ওর পেটের বাচ্চাটাও যে আমার। হা হা হা। তুই কি তাহলে?তুই কি শালা? তুই তো কাবাব মে হাড্ডি,কাবাব মে হাড্ডি রে ইয়ার। হা হা হা। খুব মায়া হচ্ছে তোর জন্য আমার।খুব মায়া। -তোর বাচ্চা?কিসের বাচ্চা?আমার পেটে তোর কোন বাচ্চা নেই জানোয়ার। (তিতিশ্মা) -শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না জানেমান।(সাফিন) -তুমি থামো তিতিশ্মা,এবার আমাকে বলতে দাও।(রাইমান) চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে