#নিষিদ্ধ প্রেম
#জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
|৮|
~
নিরবের দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে অরিক বেশ খানিকটা অবাক হলো। এই জায়াগাটায় এর আগে কখনও আসেনি সে। মেইন শহর থেকে অনেকটা ভেতরে। গাড়ি নিয়ে আসতে অনেকটা সময় লেগেছে। চারপাশে আর তেমন কোনো বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে না। রাস্তাঘাটও বেশ শুনশান।
গাড়ি থেকে নেমেই অরিক নিরবকে কল করলো।
‘কিরে চলে এসেছিস?’
‘হ্যাঁ, কোথায় তুই?’
‘তুই যেখানে থেমেছিস, সেখানে থেকে ডানে একটা রাস্তা গিয়েছে দেখ। সেই রাস্তা দিয়ে কিছুটা পথ আগালেই একটা পুরাতন ভাঙা বিল্ডিং দেখতে পাবি, আমি সেখানেই আছি। চলে আয়।’
‘ঠিক আছে, রাখ। আমি আসছি।’
অরিক কলটা কেটে দিয়ে নিরবের বলা পথে চলতে লাগল। ডানের রাস্তা ধরে বেশ কিছুটা হাঁটার পর সে সেই বিল্ডিংটা দেখতে পেল। ভেতরে ঢুকল সে। ডান বামে দুটো করে রুম। আর মাঝখান দিয়ে একটা সিড়ি উপরে উঠে গিয়েছে। অরিক এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখল কেউ নেই। সে এবার নিরবের নাম ধরে ডাকল,,
‘নিরব, নিরব! কোথায় তুই?’
নিরব বেরিয়ে এল। ঠোঁটের কোণে লেগে আছে তার বিশ্ব জয়ের হাসি। তাকে দেখা মাত্রই অরিক কপাল কুঁচকাল। বিচলিত হয়ে বললো,
‘রাইমা কোথায়?’
নিরব বিদ্রুপের সুরে বললো,
‘বাবা অরিক, কি ব্যাপার বলতো? তুই তো দেখছি ঐ মেয়ের জন্য দেওয়ানা হয়ে উঠেছিস। দুদিন আগেও না তুই ওকে সহ্য করতে পারতি না। তাহলে হঠাৎ এত প্রেম!’
অরিক রেগে যায়। ধমকে উঠে বলে,
‘দেখ নিরব, এমনিতেই মাথা গরম হয়ে আছে। আর রাগাস না আমাকে। রাইমা কই সেটা বল? আর তুই ওকে এখানে কেন নিয়ে এসেছিস? আমি বলেছি তোকে এমন কিছু করতে? অতিরিক্ত পন্ডিতি না করলে হয় না, না?’
নিরব হতাশ হয়ে বললো,
‘যাহ বাবা! যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর। এই জন্যই কারোর ভালো করতে নেই। যাকগে সেসব তোর হবু বউ ঐ রুমে আছে। এখনও ড্রাগ পুষ করেনি। তুই যখন এসে গেছিস তখন তুই’ই কর।’
অরিক বাঁকা চোখে নিরবের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে ভেতরে চলে গেল। রুমে ঢুকেই চমকে গেল সে। রাইমাকে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার মাথা ঝুঁকে আছে নিচের দিকে। বড়ো বড়ো চুলগুলো সব মুখের সামনে পড়ে আছে। কোনরূপ নড়া চড়া করছে না। তবে কি ওর জ্ঞান নেই?
অরিক ছুটে গেল তার কাছে। দুহাত দিয়ে রাইমার মুখের সামনে থেকে চুলগুলো সরিয়ে মুখটা উপরে তুললো। চোখ বুজা। তার মানে সত্যিই জ্ঞান নেই ওর। অরিক রাগে নিরবের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘এই তুই কি করেছিস ওর সাথে? ওর জ্ঞান নেই কেন?’
‘আরে ব্রো চিল। আনার সময় রুমাল চেপে সেন্সল্যাস করেছিলাম। তাই এখনও ওর জ্ঞান ফেরেনি। এতে করে ভালোই হয়েছে। জ্ঞান থাকলে কি আর ওকে এভাবে আটকে রাখা যেত? যে মেয়ে, বাবা রে বাবা!’
অরিকের রাগটা যেন আরো বেড়ে গেল। সে জোরে চেঁচিয়ে উঠল,
‘তোকে বলেছি আমি এত কিছু করতে? শালা, সব সময় অতিরিক্ত করিস। ঐদিকে ওর মা বাবার কি অবস্থা জানিস? এখন ওর জ্ঞান ফিরবে কখন কে জানে?’
অরিকের এহেন ব্যবহার নিরবের মোটেও ভালো লাগেনি। সে তো ভেবেছিল তার এই কাজে অরিক খুব খুশি হবে, কারণ সে তো চেয়েছিল’ই বিয়েটা না করার জন্য। তাহলে এখন আবার এভাবে রিয়েক্ট করছে কেন? নিরব কিছুক্ষণ বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর সে তার পকেট থেকে একটা ইনজেকশন বের করে অরিকের কাছে গিয়ে বললো,
‘নে দোস্ত, এটা ওর শরীরে পুষ কর। মাইয়াটা মরে গেলেই শান্তি। তোর আর আমার দুজনের বিপদ’ই শেষ।’
‘ব*ল শেষ হবে। এমনিতেই এক ঝামেলায় ফেঁসে আছি। তুমি এখন আসছো আরেক ঝামেলা লাগাতে। এতদিন ছিলাম ধর্ষক এখন আবার খুনি হবো। শালা, যা ভাগ এখান থেকে।’
অরিক ক্রোধ নিয়ে কথাগুলো বললো। নিরব কিছুটা রাগি গলায় বললো,
‘আরে তুই বুঝতে পারছিস না কেন? এই মেয়ে বেঁচে থাকলেও আমাদের মরতে হবে। তোর কি মনে হয় এই মেয়ে আমাদের ফাঁসিতে না ঝুলিয়ে ছাড়বে, জীবনেও ছাড়বে না। তাই সময় থাকতে মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করে ফেল। আর তুই যদি না পারিস সর তবে, আমিই ওকে ইনজেকশন টা দিয়ে দিচ্ছি।’
নিরব এগিয়ে আসতেই অরিক তার থেকে থেকে টান মেরে ইনজেকশন টা নিয়ে দূরে ছুড়ে মারে। নিরব এতে খুব রেগে যায়,,
‘কি করলি তুই এটা? তুই জানিস ঐ ড্রাগটার দাম কত?’
‘না জানি না। আর জানতেও চাই না। আমি না করার পরেও তুই কোন সাহসে ওকে ইনজেকশন দিতে যাচ্ছিলি? আমি না করেছি মানে না। খবরদার আমার কথার উপরে যাবি তো।’
অরিকের কথায় নিরব এবার অনেক বেশি ক্ষেপে গেল। কড়া গলায় বললো,
‘হ্যাঁ, সবসময় আমাকেই তোর কথা শুনে চলতে হবে। আর তুই জীবনেও আমার কথা শুনবি না। সেদিন আমি না করেছিলাম না এই মেয়েটার সাথে এমন করিস না। সেদিনও তুই আমার কথা শুনিস নি। তোর যা মন চেয়েছে তুই তাই করেছিস। আর তোর ভুলে আজ আমিও ফেঁসে গেছি। এখন আমাকেও তোর পাপের ভার নিতে হবে। কেন, সবসময় আমি কেন তোর কথা শুনবো? তুই তো আমার কথা কোনোদিন শুনিস না। তাই আমিও তোর কথা শুনবো না। এই মেয়ে এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবে না। আমি তোর জন্য ফাঁসতে পারবো না। আমি ওকে মেরেই ছাড়ব।’
এই বলে নিরব এদিক ওদিক তাকিয়ে সামনে পড়ে থাকা একটা বিশাল ইটের টুকরা নিয়ে ছুটে এল রাইমার মাথায় আঘাত করবে বলে। কিন্তু সে আঘাত করার আগেই অরিক তাকে ধরে ফেলে। হাত থেকে ইট’টা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। তার বুকটা হঠাৎ কেঁপে উঠে। চিৎকার দিয়ে উঠে সে। বলে,
‘কি করছিলি তুই? পাগল হয়ে গিয়েছিস? কেন এসব করছিস? তোর সাথে কিছু হবে না। অন্যায় করেছি আমি, শাস্তি পেলে আমি পাবো। তুই কেন এত ভয় পাচ্ছিস? আমি তোর কিছু হতে দিব না। কিন্তু তাই বলে তুই এখন এইভাবে মেয়েটাকে মারতে চাইছিস? এই ইট দিয়ে আঘাত করলে কি হতো বুঝতে পারছিস?’
‘হ্যাঁ বুঝতে পারছি। আর বুঝতে পারছি বলেই এমনটা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই আমাকে কেন আটকাচ্ছিস? তুই কি ওকে ভালোবেসে ফেলেছিস নাকি? বল আমায়? ইতিমধ্যেই এই মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলি?’
তপ্ত কন্ঠে কথাগুলো বললো নিরব। অরিক নিজেও বুঝতে পারছে না তার কি হয়েছে। কিছুক্ষণ আগেও যে মেয়েটাকে সে সহ্য করতে পারতো না এখন সেই মেয়েটার জন্যই তার মায়া হচ্ছে। আর এটা কেন হচ্ছে সেটা সে বুঝতে পারছে না। অরিক জিভ দিয়ে তার শুকনো ঠোঁট জোড়া ভেজাল। তারপর নরম গলায় বললো,
‘না, আমি ওর প্রেমে পড়েনি। কিছুক্ষণ আগে আমিও ওর খারাপ চেয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস কর, ওর নিখোঁজ হওয়ার খবরটা ওর মা বাবার কানে যাওয়ার পর থেকেই উনারা খুব ভেঙে পড়েছেন। উনাদের অবস্থা দেখে আমার নিজেরই খুব মায়া লাগছিল। রাইমার আম্মু হাউ মাউ করে কাঁদছিলেন। আশে পাশের মানুষগুলো যায় নয় তাই বলেছেন। এতকিছুর মাঝে থেকে আমার বারবার তখন মনে পড়ছিল আজ যদি রাইমার জায়গায় নিরা থাকতো। তবে আমার আর মায়ের অবস্থাটাও ঠিক এরকম হতো। আমি জানি ও বেঁচে থাকলে আমার’ই ক্ষতি। কিন্তু ও মারা গেলে ওর পুরো পরিবারে ক্ষতি। ওকে ছাড়া ওর পরিবার নিঃস্ব। যেমন আমরা আমাদের নিরাকে ছাড়া। তাই আমি এখন পারছি না রে। নিজের একটা ভুলকে ঢাকতে এখন আমি একসাথে এতগুলো প্রাণ নিতে পারবো না। প্লীজ দোস্ত ছেড়ে দে মেয়েটাকে। আমি তোকে প্রমিস করছি, তোর কিছু হবে না। আমি আমার ঘাড়ে সব দোষ তুলে নিব। আর রাইমাকেও আমি বুঝাবো। কিন্তু এখন আপাতত তুই একটু বোঝ, প্লীজ!’
অনেক বোঝানোর পর নিরব বুঝলো। মনের ভেতর বিশাল ক্রোধ নিয়েই সে রাইমার বাঁধন খুলে দিল। মেয়েটার এখনও জ্ঞান ফেরেনি। আর কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে অরিক তাকে কোলে তুলে নিল। তারপর আস্তে করে গাড়িতে গিয়ে বসাল। গাড়ির ভেতরে থাকা একটা পানির বোতল থেকে কিছুটা পানি নিয়ে তার চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিল। তারপর সে গিয়ে বসলো ড্রাইভিং সিটে। নিরবকেও অনেক বুঝিয়ে তাদের সাথে নিল। সে গাড়ি স্টার্ট দেয়ার আগেই তার ফোনটা বেজে উঠল। হাতে নিয়ে দেখল তার মা কল দিচ্ছে। কলটা রিসিভ করলো সে।
তার মা তখন উৎকণ্ঠা নিয়ে বললো,
‘তুমি আবার কোথায় গিয়েছ অরিক? তোমাকে না পেয়ে তো এখানে সবার টেনশন আরো বেড়েছে।’
সে মৃদু হেসে বললো,
‘আর টেনশন করতে হবে না মা। সবাই কে বলে দাও রাইমাকে পাওয়া গিয়েছে। ও এখন আমার সাথেই আছে। আমরা বাসায় আসছি।’
.
.
চলবে..