#নিষিদ্ধ প্রেম
#জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
|৩|
~
রাইমা ফোন রাখতেই তার রুমে তার মা এলেন। রুফাইদা খানম হাতে কিছু গয়না নিয়ে এসে বিছানার এক কোণে বসলেন। তারপর রাইমা কে ইশারা দিয়ে তার পাশে বসতে বললেন। রাইমাও বসলো। রুফাইদা খানম একে একে গয়না গুলো আলাদা করে সুন্দর করে রাখলেন। তারপর তারমধ্য থেকে একটা মোটা চেইন আর এক জোড়া দুল রাইমার হাতে দিয়ে বললেন,
‘এইগুলো তোকে দিলাম মা। মা’র স্মৃতি হিসেবে তোর কাছে রেখে দিস।’
রাইমা তার হাতের গয়নাগুলোর দিকে তাকাল তারপর আবার চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকাল। বিষন্ন হেসে বললো,
‘মা, তুমি আমার কাছে অমূল্য সম্পদ। তোমাকে মনে রাখার জন্য আমার কোনো জিনিসের প্রয়োজন নেই। আমার মনে, প্রাণে, মস্তিষ্কে আজীবন তুমি আর বাবা থাকবে। তোমাদের মনে রাখার জন্য আমার এসবের প্রয়োজন নেই মা।’
রাইমা মৃদু হাসলেন। মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,
‘তা আমি জানি মা। কিন্তু আমি তো তোর মা, মা হয়ে মেয়েকে তার বিয়েতে কিছু দিব না? আমার আহামরি কিছু নেই রে মা। এই যে এই গয়নাগুলো তোকে দিলাম, আর বাকি দুইটা চেইন আমি আমার নাতি নাতনিদের জন্য রেখে দিলাম; ভবিষ্যতে ওদের দিতে হবে না।’
কথাগুলো বলতেই উনার মুখে যেন অন্যরকম একটা হাসি ফুটে উঠল। মায়ের ঐ হাসি মুখখানা দেখে রাইমার মন ধক করে উঠল। এইটুকু সময়ে নাতি নাতনি কে নিয়েও ভেবে ফেলেছেন তিনি অথচ তার মা জানেও না তার মনে কি চলছে। তার সাথে কি হয়েছে, সে কিভাবে দিন কাটাচ্ছ?
রাইমা কিছু বললো না। কিছু মিথ্যে স্বপ্ন দেখে যদি কারো মনে সুখ আসে তবে থাকুক না সেই সুখ টা। কি দরকার সত্য বলে সেটাকে বিগড়ে দেওয়ার?
‘যা এইগুলো আলমারি তে রেখে আয়। তারপর গোসল করে খেয়ে দেয়ে রেডি হো, বাইরে যেতে হবে।’
আলমারি খুলতে খুলতে রাইমা জিগ্যেস করলো,
‘কোথায় যাবে মা?’
‘ওমা মার্কেটে যেতে হবে না। কয়দিন পর বিয়ে, কিছুই তো শপিং করা হয়নি।’
রাইমা ঘুরে তাকাল। আলমারিটা বন্ধ করে আবারও এসে মায়ের পাশে বসলো। মায়ের হাত দুটো জড়িয়ে ধরে অপরাধি কন্ঠে বললো,
‘আচ্ছা মা, আমি তো আজ পর্যন্ত তোমার কাছ থেকে কিচ্ছু লুকাই নি। যখন যা করেছি সব বলেছি তোমায়। তুমিও আমাকে সবসময় সাপোর্ট করেছ। যদি কোনোদিন শুনো আমি তোমার কাছ থেকে কিছু লুকিয়েছি আর সেটা খুব বড়ো কিছু, তাহলে আমাকে ক্ষমা করতে পারবে?’
রুফাইদা খানমের কপালে এবার ভাজ পড়ল। মেয়ের গালে হাত রেখে চিন্তিত কন্ঠে তিনি বললেন,
‘কি হয়েছে মা তোর? কোনো সমস্যা? কি লুকানোর কথা বলছিস?’
রাইমার বুকটা কাঁপছে। আর পারছে না যেন। নিজের সাথে ঘটে যাওয়া সেই ভয়ংকর ঘটনা টা চিৎকার করে মা কে বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারছে না। মা যে সহ্য করতে পারবে না। হাই প্রেশারের রোগী, স্ট্রোক করবে সঙ্গে সঙ্গে। কিন্তু এতকিছু মনে চেপে রেখেও থাকতে পারছে না। কষ্ট হচ্ছে খুব।
রাইমা কোনো জবাব না দিয়ে মা কে জড়িয়ে ধরল। রুফাইদা খানম যেন এতে আরো অবাক হলেন। কিন্তু তিনি এখনই কিছু বললেন না। মেয়ে কে তিনি বিশ্বাস করেন, ভরসা করেন। তাই এখন আর এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তিনি বললেন,
‘আমি জানি তুই এমন কিছু করবি না যার জন্য আমি তোকে ক্ষমা করতে পারবো না। তোর প্রতি আমাদের সেই আস্থা আছে। এখন এসব বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি গোসল করে আয়, আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি।’
মা কে ছেড়ে মুচকি হেসে রাইমা মাথা নাড়াল। তারপর মা চলে যেতেই বিষন্ন দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে ঢুকল গোসল করতে।
.
.
‘মা আমি শপিং এ যেতে পারবো না আমার কাজ আছে।’
‘একটা দিব ধরে। তোমার কাজ মানেই তো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া। চুপচাপ রেডি হও। রাইমারাও বেরিয়েছে। ওদের সাথেই আমরা শপিং করবো।’
‘কিহহ!’
চেঁচিয়ে উঠল অরিক। নাক মুখ কুঁচকে বললো,
‘ইম্পসিবল! ওদের সাথে আমি কিছুতেই শপিং করবো না।’
লিমা সোবহান এবার রেগে গেলেন। বললেন,
‘আমার হাতে মার খেয়ো না কিন্তু। তুমি এখন যথেষ্ঠ বড়ো হয়েছো, এই বয়সে মা’র হাতে মার খাওয়াটা শোভা পায় না। তাই ভালো ভালো বলছি রেডি হয়ে গাড়ি বের করো আমি আর নিরা নিচে নামছি।’
কথাটা বলে তিনি সোজা বেরিয়ে গেলেন। এদিকে অরিক রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে। আবার ঐ মেয়েকে দেখতে হবে। আবার এর কথা শুনতে হবে। উফফ, পারছে না নিজের চুল নিজে ছিড়ে ফেলতে। রাগে কোনোরকমে রেডি হয়ে অরিক নিচে গ্যারেজে চলে গেল গাড়ি বের করতে। তারপর সে গাড়িটা বাইরে বের করে নিরব কে একটা কল লাগাল,
‘কই আছিস?’
‘বাসায়, কেন?’
‘আমার সাথে একটু বেরুতে হবে।’
‘কোথায় যাবি?’
‘মা আর নিরা কে নিয়ে একটু শপিং এ যাবো।’
‘ওহহ, বিয়ের শপিং করবি নাকি? তাহলে এক কাজ করিস তোর আর আমার জন্য কাফনের কাপড় টাও কিনে রাখিস। কারণ তোর বিয়ের পরপরই তো এটা আমাদের লাগবে, তাই না?’
বিদ্রুপের সুরে কথা টা বলে নিরব। অরিক ক্ষেপে গিয়ে বলে,
‘লাথি খাবি শালা। কথা কম বলে তাড়াতাড়ি বাড়ির সামনে আয়।’
‘তা না হয় এলাম। কিন্তু এটা বলতো ঐ মেয়ে আবার তোদের সাথে শপিং করবে না তো?’
অরিক জানে নিরব কে সত্যি টা বললে ও জীবনেও তার সাথে যাবে না। তাই সে মিথ্যে বললো,
‘আরে না ও যাবে না। আমি, মা আর নিরা যাব শুধু।’
‘তাহলে ঠিক আছে। আমি আসছি।’
ফোনটা পকেটে রেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে অরিক। বন্ধু পাশে থাকলে কিছুটা হলেও ভয় কম লাগবে তার। নয়তো ঐ মেয়ের কথা আর তাকানোর ধরন দেখলেই বুক কেঁপে উঠে যেন। উফফ, সাংঘাতিক একটা মেয়ে। সেদিন যেভাবে ওকে ছেড়ে এসেছিল, বাঁচবে না বলেই তো মনে হয়েছিল। অথচ সে এখন দিব্যি বেঁচে আছে। শুধু বেঁচে আছে বললে ভুল হবে, তাকে জ্বালিয়ে মারছে। কথাগুলো ভেবেই ভীষণ রকম বিরক্ত হলো অরিক। গাড়িতে উঠে ঠাস করে দরজা টা লাগিয়ে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর অরিকের মা আর বোন এসে গাড়িতে বসতেই সে গাড়ি স্টার্ট দিল। কিছুটা পথ গিয়ে মাঝ রাস্তা থেকে নিরব কেও পিক করে নিল।
প্রায় আধ ঘন্টার রাস্তা পেরিয়ে তারা মার্কেটে এসে পৌঁছাল।
নিরব ফার্স্টে গাড়ি থেকে নেমে লুকিং গ্লাস দিয়ে চুলগুলো একটু ঠিক করে সোজা হয়ে দাঁড়াল। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে সামনের বিশাল শপিং মলটার দিকে তাকাতেই তার যেন হুশ উড়ে গেল। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকেই উল্টো দিকে হাঁটা দিতেই অরিক এসে পেছন থেকে কলার টেনে ধরলো।
‘কই যাস বেটা?’
নিরব পেছনে ঘুরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘তুই না বললি এই মেয়ে আসবে না। তাহলে ঐটা কে?’
‘ঐটা যেই হোক না কেন তোকে এত পাত্তা দিতে হবে না। তুই শুধু আমার সাথে সাথে থাকবি এইটুকুই তোর কাজ।’
নিরব অসহায়ের মতো অরিকের দিকে তাকাল, যেন এখনি কান্না করে দিবে। এই মুহূর্তে তার ইচ্ছে করছে এই ছেলেটাকে এক্ষুণি খুন করে দিতে। শালা নিজে তো মরবে মরবে সাথে তাকেও মারবে।
.
চলবে..