নিষিদ্ধ প্রেম।পর্ব_৩
তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
আমি চিৎকার করে কাঁদছি।
আর ভাবছি,
কি করবো আমি?
সাফিনের কাছে নিজের শরীর বিলাতে যাবো?
নাকি বাবা মায়ের জন্য কাফনের কাপড় কেনার জন্য তৈরী হবো।
কারণ যদি এই ছবি ভাইরাল হয় আর তারা যদি জানে এ কথা তবে আম্মু আব্বু মরেই যাবে।
সারারাত ঘুমোতে পারিনি।
ভাবছিলাম, এ রাত টা যেন কোন দিন শেষ না হয়।কিন্তু তা কি হবে?
সকাল হলো,১০ টা বাজার ১০ মিনিট বাকি।
আমি আমতলা উপস্থিত হই,
দেখি সাফিন দাঁড়িয়ে আছে।
-এসেছো?
-চলো চলো তাড়াতাড়ি চলো।
-সরি,আমি তোমার সাথে যেতে আসিনি।
-তাহলে?
-আমি তোমাকে বলতে এসেছি,আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ।আজ থেকে আমরা দুজন দুই পথের পথিক।একজন ধর্ষকের সাথে আমার কোন সম্পর্ক থাকতে পারেনা।
-হা হা হা!তুমি হয়তো কিছু ভুলে যাচ্ছো।তুমি যে আমার কাছে বন্দি সেটা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?
-তোমার যা ইচ্ছে তুমি তাই করতে পারো।
-শিউর?
-একদম।
-ওয়েট এখনি ফেসবুকে চলে যাবে ছবি গুলো।
এই বলে সাফিন মোবাইলটা হাতে নিলো।
মোবাইলটা ওপেন করতেই সাফিনের হাসি ভরা মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।
-কি হলো?করো আপলোড ফেসবুকে।করেছো?দেখাও দেখি।
-ছবি গুলো কই গেলো ধ্যাত।মেমোরি,
আমার মেমোরি কই গেলো।
-আসি মিঃ সাফিন সাহেব।ভালো থাকবেন।আমাদের সাথ এ পর্যন্তই এক সাথে ছিলো।আজকের পর আর কোন দিন আমার সাথে কোন রকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না।নয়তো আমি থানায় জানাতে বাধ্য হবো।
গুড বাই।
-দাঁড়াও দাঁড়াও, উফ কই গেলো আমার মেমোরি।
আমি হাসতে হাসতে বাসায় চলে এলাম।
রাইমানের বাসা থেকে আম্মু আব্বুকে বার বার ফোন দিচ্ছে,
তারা আসতে চাচ্ছে আমাকে দেখতে।
আম্মু আব্বু আবারো আমাকে বোঝালো।
রাইমান আমাকে ছাড়া কাউকে নাকি বিয়েই করবেনা।
শানু আন্টি আম্মুর নাম্বারে ফোন দিয়ে আমাকে চাইলো।
সালাম দিয়ে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই বল্লো,রাইমানকে বিয়ে করে আমার বাড়ীর লক্ষী হয়ে চলে আয় না মা।
আমার রাইমান তোকে খুব ভালো রাখবে।
ও নাকি তোকে অনেক আগে থেকেই মনে মনে পছন্দ করে।কিন্তু কখনো বলেনি।
এখন যখন আমরা সবাই রাজি,
তখন তুই না করছিস।
আমরা কি তোকে ভালো রাখবোনা?
আমি মোবাইল টা আম্মুর হাতে দিয়ে বললাম,শানু আন্টিকে বলে দাও আমি তাকে মা ডাকতে রাজি আছি।
এই বলে আমি রুমে চলে গেলাম।
আম্মু আব্বু রাইমানের পরিবার সবাই মহা খুশি।
আমাকে দেখতে এলো তারা,তারপর একটা ডেট ফিক্সড করলো।
আর হয়ে গেলো রাইমান আর আমার বিয়ে।
আমি বাসর ঘরে বঁধু বেসে বসে আছি।
রাইমান দরজায় নক করতেই সারা শরীর কেঁপে উঠলো।
ও আসলো,আমি বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ওকে সালাম করলাম।ও আমার মাথায় হাত রেখে দোয়া করলো,
দোয়া করি সারাজীবন তোমার স্বামীকে ভালবাসো।আগলে রাখো এ সংসার টাকে।
আমি মুচকি হাসলাম।
ও আমাকে হাত ধরে নিয়ে খাটে বসিয়ে দিলো।
-আজ তো আমাদের বাসর রাত তাইনা?আমাদের জীবনের সব থেকে সুন্দর রাত।
এই রাতে তোমার কাছে আমি দুইটা জিনিষই চাইবো।
-কি?
-এক হচ্ছে,তুমি আমাকে সারাজীবন ভালবেসো।
-আর দুই?
-দুই হচ্ছে আমার বাবা মাকে নিজের বাবা মায়ের মত আগলে রেখো।বাসবেনা আমাকে ভাল?রাখবেনা তাদের আগলে?
-হুম।
-আর আজ থেকে তোমার সমস্ত দায়িত্ব আমার।আজ থেকে আমিই তোমার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ।
তাই অতীত ভুলে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়েই আজ থেকে ভাব্বে তুমি।ঠিক আছে?
-হুম।
-আর একটা কথা।
-জ্বী বলুন,
-তুমি যখন ক্লাস এইটে পড়ো তখন থেকেই আমি তোমাকে পছন্দ করি।
-তাই?
-হ্যাঁ তাই। আর এখন কি করি জানো?
-কি?
-ভালবাসি।
আমি ওর কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম।
-এই পাগলী,এত চিন্তা করতে হবেনা। বলতে হবেনা তোমার এখনই।যেদিন ভালবাসতে পারবে ঠিক সেইদিন ই বলো রাইমান,আই লাভ ইউ।
সারাদিন অনেক ধকল গেছে তোমার উপর,অনেক টায়ার্ড তুমি।কথা বলার জন্য তো সারাজীবনই পরে আছে।
আজ ঘুমাও।
আমিও ঘুমাবো।
তারপর আমরা দুজনই ঘুমিয়ে পড়ি।পরের দিন আমাদের বাসায় যাই,
বাবা মা আমাদের দেখে খুব খুশি হয়।
রাইমান আমার বাবা মাকে অনেক সম্মান করে,তাদের অনেক খেয়াল রাখে।
আমিও ওর বাবা মাকে নিজের মা বাবার মত সম্মান করি,স্নেহ করি।সেবা করি।
চলছে আমাদের সংসার।
রাইমান অনেক ভালো একটা ছেলে,নামাজী,ভদ্র,কেয়ারিং।সবার খেয়াল রাখে।
আজ আমাদের বিয়ের দু মাস পূর্ণ হলো,তাই রাইমান আমাকে আজ শপিং করতে নিয়ে এসেছে,শাড়ী কিনে দিবে বলে।
আমি রাইমানের জন্য একটা শার্ট দেখছি আর তখনি সাফিন এসে আমাকে বল্লো,তোর নাকি বাচ্চা পেটে?ওই বাচ্চা টা কার?ওর না আমার?ওই **(গালি)
বাচ্চা টা তো আমার।
সাফিন কথা গুলো বলতে বলতে রাইমান পেছন ফিরে ঘুরে তাকালো।
চোখে চোখ পড়লো সাফিন আর রাইমানের।
-রাইমান তুই?তুই এখানে?(সাফিন)
-হ্যাঁ আমি।তিতিশ্মার হাজবেন্ড রাইমান আহমেদ।
এই বলে রাইমান আমাকে এক হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
আমার হাত পা,সারা শরীর কাঁপছে।
আমি রাইমানের চোখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম।
আর ভাবতে লাগলাম,
তবে কি রাইমান আর সাফিন পূর্ব পরিচিত?
চলবে?