নিষিদ্ধ প্রেম।পর্ব ৫

0
6675
নিষিদ্ধ প্রেম।পর্ব ৫ #তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু। -তোর বাচ্চা?কিসের বাচ্চা?আমার পেটে তোর কোন বাচ্চা নেই জানোয়ার। (তিতিশ্মা) -শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না জানেমান।(সাফিন) -তুমি থামো তিতিশ্মা,এবার আমাকে বলতে দাও।(রাইমান) -তোকে কে বলেছে তিতিশ্মার পেটে বাচ্চা? -এখন যতই বাহানা করিস শালা,মিথ্যে দিয়ে সত্য ঢাকতে পারবিনা।ওর পেটের বাচ্চাটা আমার। -তবে শোন আমি তোকে বলছি, আমাদের বিয়ের রাতেই তিতিশ্মার পিরিয়ড হয়ে যায়।আর পিরিয়ড হয়ে গেলে অবশ্যই কোন মেয়ের বাচ্চা পেটে থাকেনা। সো তোর বাচ্চা ওর পেটে থাকার কোন প্রশ্নই উঠেনা। মাথায় ঢুকেছে?ক্লিয়ার? -তবে কি তোর সন্তানের মা হতে চলেছে ও?তা কি করে সম্ভব এত অল্প দিনে? -কে বলেছে তোমাকে আমি প্রেগন্যান্ট? -কয়েক দিন আগে তুমি গাইনি ডাক্তার দেখাতে যাওনি? -হ্যাঁ গিয়েছিলাম,তো? -আমি রিসিভশনিস্ট কে জিজ্ঞেসও করেছি ওই কেবিনের ডাক্তার টা কিসের ডাক্তার?সে বলেছে গাইনী ডাক্তার,প্রেগন্যান্ট মহিলারা উনাকে দেখায়।
-হা হা হা।এই যুগেও তোর মত বোকা ছেলে আছে ভাবতেই অবাক লাগছে আমার।যদিও তুই বোকা না,বোকা রা এত নিকৃষ্ট হতে পারেনা। তুই এই টুকুও জানিস না যে গাইনী ডাক্তার শুধু মাত্র প্রেগন্যান্ট দেরই দেখেন না।বরং মেয়েদের যেকোন সমস্যা হলে দেখেন। তিতিশ্মার পিরিয়ডের সময় পেইন হয় সেই জন্য আমি ওকে গাইনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। আশা করি এবার বুঝতে পেরেছিস, ক্লিয়ার? আর কখনো তুই আমার ওয়াইফকে বিরক্ত করবিনা। ও আর এখন তোর নিষিদ্ধ ভালবাসার প্রেমিকা না। ও এখন মিসেস রাইমান আহমেদ। আর যদি কখনো ওকে বিরক্ত করিস তবে আমি তোর নামে মামলা করতে বাধ্য হবো। শুধু মাত্র তোর বাবা মায়ের কথা ভেবে আমি সেদিন তোর নামে কোন মামলা করিনি। কারণ আমি চাইনি তোর মত কুলাঙ্গারের জন্য তোর মা বাবা এই বয়সে কোন রকম মানসিক আঘাত পাক। কেননা তুই তাদের এক মাত্র সন্তান।তারা সহ্য করতে পারবেনা। তুই পশু হলেতো আমিও তোর মত পশু হতে পারিনা। আমি রাইমানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আর ওর কথা গুলো শুনছি। তোর মত জানোয়ারদের জন্য আজকাল মেয়েরা সুইসাইড করে। অন্যায় করে তোর মত জানোয়ারেরা আর তার ফল ভোগ করতে হয় একাই মেয়েদের। কারণ এ সমাজ শুধু মেয়েদের দোষ দেখে,ছেলেরা ভুল করলেও তারা নির্দোষ,কার‍ণ আমরা ছেলে। চাইলেই যা ইচ্ছে করতে পারি,এই ধারণা টা এখনো আদিম যুগের মত মানুষের মনে ভর করে আছে। আর তোর মত কিছু মানুষ রুপি পশুর জন্য মেয়েরা ভাবে পুরো পুরুষ জাতটাই খারাপ। আর ছেলেরা ভাবে মেয়ে জাতটাই খারাপ। অথচ আমরা এইটুকু বুঝতে চাইনা,ভালো মন্দ নিয়েই এই সমাজ। যেখানে মন্দ লোক আছে সেখানে ভালো মানুষও আছে। আমরা যদি একটা বার ভাবি,পরের মেয়ে গুলোও কারো মা বোন। আমাদের মা বোন দের মতই তারাও কারো খুব আদরের সম্মানের। তবে আর সমাজ টা ধ্বংস হবেনা। এখনো সময় আছে নিজেকে শুধরে মা বাবার স্বপ্ন পূরণ কর। মা বাবার একটা সন্তানকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন থাকে।সেই স্বপ্ন গুলো মাটির সাথে মিশিয়ে দিস না। এটা তোর শেষ সুযোগ।ভালো হয়ে যা,নয়তো এর পরিণাম ভালো হবেনা। এই বলে রাইমান আমাকে ধরে বাসায় নিয়ে আসে। আর রাস্তা দিয়ে আমাকে বলতে বলতে আসে, জানো মা বাবা একটা সন্তানকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখে, যখন কোন দম্পতীর ছেলে না হয়ে মেয়ে সন্তান হয়,তখন তারা সবাইকে তাদের সন্তানকে দেখিয়ে বলে এটা আমার শুধু মেয়ে না,এটা আমার ছেলেও। ছেলেরা মা বাবাকে বৃদ্ধ বয়সে দেখতে পারলে আমার মেয়ে কেন দেখতে পারবেনা?ছেলেরা প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে আমার মেয়ে কেন হতে পারবেনা? সেই জন্য তারা মেয়েদের ছেলেদের থেকে কোন অংশে কম না ভেবে স্কুলে পাঠান,সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলেন।স্বপ্ন দেখেন একদিন তাদের মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে,জব করবে।নাম করবে। আর একটা সময় তারা তাদের মেয়েকে তাদের পছন্দ মত একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিবে। কিন্তু এই মেয়েরা যখন মা বাবার মনে দুঃখ দিয়ে দু দিনের পরিচিত একটা ছেলের সাথে নিষিদ্ধ ভালবাসায় লিপ্ত হয়। দুদিনের ভালবাসায় ঘর ছেড়ে পালায় কিংবা কলংকিত হয়। তখন মা বাবা মনে করেন,এর থেকে তাদের মরে যাওয়াও ভালো। আর মা বাবাকে দুঃখ দিয়ে কেউ কোন দিন সুখী হতে পারেনা। সাফিন কে বলা কথা গুলো,আর তোমাকে বলা কথা গুলো যদি সবাই বুঝতো তবে আর সমাজে কোন অশান্তি থাকতোনা,অন্তত এই ভালবাসা নামক টপিক টা নিয়ে। আমি বলছিনা ভালবেসোনা,যদি বাসতেই হয় তবে এমন পাত্রকে, বা এমন পাত্রীকে যাকে তোমার আমার পরিবার মেনে নিবে। আর এমন দেখেই ভালবাসা উচিৎ। আর তারপর তাদের ইচ্ছেয় অনুষ্ঠান করে বিয়ে করো। ঝামেলা শেষ। জানি সব কিছু এত ইজি না। তবে ইজি করে দেখলে সবই ইজি। তারপরও ভাগ্য বলে একটা কথা আছে,যার সাথে যার বিয়ে হবার কথা ভাগ্যে লিখা আছে।তার সাথেই তার বিয়ে হবে। সেই জন্য সব থেকে ভালো,বিয়ের পর নিজের স্বামী/স্ত্রীকেই ভালবাসা। আর যত ইচ্ছে চুটিয়ে প্রেম করো স্বামী/স্ত্রীর সাথে।এতে কোন ধর্মেও নিষেধ নেই। আমি ভাগ্যটাকে বিশ্বাস করি,এই দেখোনা,আমার ভাগ্যে তুমি আছো বলে টুপ করে আমার সংসারে চলে এসেছো,চলে এসেছো আমার জীবনে।বেরিয়ে এসেছো নিষিদ্ধ ভালবাসা নামক অধ্যায় টা থেকে। আজ থেকে অতীতের সব কিছু বাদ, আমরা নতুন ভাবে নতুন করে জীবন টাকে সাজিয়ে গুছিয়ে নেবো। ঠিক আছে?
চুপ করে আছো যে?ভয় পেয়েছো?নাকি ঘাবড়ে গেছো? কিচ্ছু হবেনা পাগলী,যত দিন আমি আছি।তত দিন তোমার গায়ে একটা আঁচড়ও লাগতে দেবোনা। তারপর আমরা বাসায় চলে আসি। ও আমাকে খাটে এনে বসায়। -যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি দেখে আসি মা কি করে। রাইমান মায়ের কাছে চলে যায়। আর আমি বসে বসে ভাবতে থাকি,ছেলে মানুষ এত ভালোও হয়? অথচ রাইমান আমার জীবনে না এলে আমার সারাজীবন মনে হতো পুরুষ মানুষ বুঝি সাফিনের মতই হয়। রাইমানের কথা ভাবতে ভাবতে আমার চোখের কোনে জল অনুভব করলাম। মানুষ টা আমাকে বাসর রাতেই একটা প্যাডের প্যাকেট হাতে দিয়ে বলেছিলো, যেদিন তুমি আমাকে ভালবাসতে পারবে, যেদিন তুমি আমাকে তোমার মন থেকে স্বামীর অধিকার দিতে পারবে।ঠিক সেদিনই আমি তোমার কাছে স্বামীর অধিকারের দাবী নিয়ে আসবো।এর আগে নয়। ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ রাইমানের ডাক… -কি হলো এখনো ফ্রেশ হওনি? মা খাবার রেডি করছেন। তাড়াতাড়ি তোমাকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলছে। আমিও ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছি। এ কথা বলেই রাইমান ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে যাচ্ছিলো আর আমি ওর হাত টা টেনে ধরে বল্লাম… চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে