গল্পঃ #নিশ্বাসে_তুমি ( ৪র্থ পর্ব )
–মা আপনার ছেলে কিসব উল্টাপাল্টা বলে যাচ্ছে তখন থেকে– বললো সাদিয়া।
পরিস্থিতি খারাপ দেখে ভেগে যাবার উদ্দেশ্যে নিলয় পা বাড়াতেই মা হাত টেনে ধরে বললো– পালাচ্ছিস কোথায় বাছাধন, এখানে চুপচাপ দাড়িয়ে থাক।
সাদিয়া মুচকি মুচকি হাসছে।
মা সাদিয়াকে বললো– কি বলেছে নিলয় তোকে উল্টাপাল্টা বল এবার।
সাদিয়া বললো– মা আমি হিউম্যানিটির ছাত্রী, আপনার ছেলে আমাকে জোরজবরদস্তি বায়োলজির ক্লাস করাতে চাচ্ছে।
মা বললো– বাহ! বাহ! নিলয়ের এত উন্নতি, মাশা-আল্লাহ। আগে তো ওকে কত লড়াই করে পড়তে বসাতে হতো, সেই নিলয় এখন তোমাকে পড়াতে চায়। শুনে ভালো লাগলো।
নিলয় দাঁত বের করে হিহি করে হেসে বললো– আমি তোমার গর্বিত সন্তান মা জননী।
নিলয়ের হাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে সাদিয়ার।
বিড়বিড় করে সাদিয়া বললো– সন্তান নয় শয়তান একটা।
মা সাদিয়াকে বললো– পড়াতে চাইছে যখন পড়, শেখার কোনো শেষ নেই মা।
সাদিয়ার নিজের মাথা দেয়ালের সাথে আঘাত করে ফাটাতে ইচ্ছে করছে। মাকে কীভাবে বোঝাবে যে তার ছেলে কোন বায়োলজির ক্লাস করানোর কথা বলছে।
সাদিয়া হাসির বাহানা করে মাকে বললো– মা আমি হিউম্যানিটির ছাত্র, বায়োলজি ক্লাস করে সময় কেন নষ্ট করবো? আর আপনার ছেলেই বা কোন ইউনিভার্সিটি থেকে বায়োলজির ডিগ্রি অর্জন করেছে, সে তো এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং এর ছাত্র।
মা বললো– হুম তা-ও তো ঠিক।
নিলয় বললো– কিসের ঠিক, সর্ববিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা ভালো।
সাদিয়া মুখ চেপে হাসছে।
মা বললো– তোদের নিয়ে আর পারিনা, যা ইচ্ছে কর তোরা।
কথা শেষে মা চলে গেল।
সাদিয়া এগিয়ে এসে নিলয়ের শার্টের কলার ধরে বললো– খুব সাহস বাড়ছে তাইনা?
নিলয় খব করে সাদিয়াকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে সাদিয়ার ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো– এত মিষ্টি বউ যার, তার সবকিছুই বাড়ে দিনদিন। পিরিয়ড শেষ হোক বায়োলজি ক্লাস করিয়েই ছাড়বো হুহ।
সাদিয়া থ মেরে দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ হলো কি নিলয়ের, নিলয়ের কাঁধে আবার রোমান্টিক জ্বীন ভূত চাপেনাই তো।
সাদিয়াকে পাজাকোলা করে কোলে নিয়ে এসে খাটে শুইয়ে দিয়ে সাদিয়ার ওপর ঝুকে পড়ে নিলয় বললো– কেবল তো ট্রেলার দেখলে বউ, পুরো সিনেমা দেখা এখনও বাকি।
নিলয়কে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে সাদিয়া বললো– সুস্থ হয়ে উঠতে দেন মিস্টার জামাই, পুরো সিনেমাহল সহ গায়েব করে দিবো হু।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সাদিয়ার পিরিয়ডের ব্যাথাটা ক্রমে ক্রমে অসহ্য হয়ে উঠছে।
খাবার টেবিলে সবাই উপস্থিত সাদিয়া ছাড়া। মা এসে ডাকতেই সাদিয়া বললো– মা আমার ক্ষুধা নেই পরে খেয়ে নেবো প্লিজ।
শুধু মাকে ফিরে আসতে দেখে নিলয় বললো– সাদিয়া আসেনি মা?
মা বললো– ওর নাকি ক্ষুধা নেই পরে খাবে।
নিলয় উঠে বললো– ঠিক আছে আমি দেখছি, তোমরা খেয়ে নাও মা।
নিলয় রুমে চলে গেল।
দাদি মুচকি হেসে বললো– বাপরে কি মহব্বত।
মা হেসে বললো– পাগলা পাগলি মিলছে দারুণ।
নিলয় রুমে এসে দেখলো সাদিয়া জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে।
আস্তে করে সাদিয়ার মাথায় হাত রেখে নিলয় বললো– চলো খেতে চলো, না খেলে শরীর দূর্বল হয়ে যাবে যে।
সাদিয়া বললো– আমার ইচ্ছে নেই আপনি খেয়ে নিন যান।
– ওঠো, তুমি না খেলে আমিও খাবোনা কিন্তু, তোমার কারণে না খেয়ে একটা নিষ্পাপ প্রাণ কষ্ট পেলে পরপারে কি জবাব দেবে বউ?– বলে সাদিয়ার হাত ধরতেই এক ঝটকায় নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে রেগেমেগে সাদিয়া বললো– এত আলগা পিরত কিন্তু আমার ভাল্লাগেনা, ইচ্ছে হলে খান নয়তো না খান। আমাকে বিরক্ত করবেন না।
নিলয় কোনকিছু না বলে সোজা ডাইনিং রুমে এসে প্লেটে ভাত তরকারি নিয়ে নিজের হাতে মেখে আবার রুমে এসে সাদিয়ার পাশে বসে বললো– নাও কষ্ট করে খেতে হবেনা, খাইয়ে দিচ্ছি। ওঠো জলদি।
পিরিয়ডের ব্যাথায় এমনিতেই সাদিয়ার মেজাজ হট হয়ে আছে, তার ওপর নিলয়ের এরকম বারবার জোর করায় পুরো ক্ষেপে গিয়ে উঠে বসে বললো– তোকে বারণ করেছিনা আবার কোন সাহসে আসছিস হ্যা, ন্যাকামি অন্যখানে গিয়ে কর যায়। নয়তো মাথা খারাপ হলে খুন করে ফেলবো।
একটু দূরেই টেবিলের ওপর সাদিয়ার চাকুটা রাখা। নিলয় উঠে গিয়ে চাকুটা এনে সাদিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো– নে এই তোর চাকু তোর হাতে দিলাম। এবার হয়তো খাবি নয়তো আমাকে খুন করবি। দুটোর একটা করতে হবে।
সাদিয়া ভীষণ অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে।
এই সুযোগে নিলয় সাদিয়ার হা করা মুখে ভাত ঢুকিয়ে দিয়ে বললো– খেয়ে নাও বউ, সেই স্বাদ।
নিলয়ের অবস্থা দেখে সাদিয়া হাসবে নাকি কাঁদবে সেটা ভেবে কোমায় যাবার অবস্থা। তবুও নিলয়কে এতটা প্রশ্রয় দেয়া যাবেনা ভেবে রাগের ভঙ্গিতে সাদিয়া বললো– আমার মাথা কিন্তু এবার সত্যি সত্যি গরম হয়ে যাচ্ছে নিলয়।
আরও এক নলা ভাত সাদিয়ার মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে হে হে করে হেসে নিলয় বললো– মেজাজ গরম করে লাভ নাই বউ, গরম গরম ভাত খেয়ে নিলে লাভ আছে।
নিলয়ের কথা শুনে এবার না হেসে থাকতে পারলোনা সাদিয়া।
সাদিয়ার মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। মা বেঁচে থাকতে এভাবেই জোর করে হলেও খাইয়ে দিতো। কখনোই খালি পেটে থাকতে দিতনা।
আর কিছু না বলে সাদিয়া চুপচাপ খাবার খেয়ে নিলো।
সাদিয়ার মুখ মুছে দিয়ে আবার ডাইনিং রুমে এসে সেই প্লেটে ভাত তরকারি নিয়ে খেতে বসলো নিলয়।
খাওয়াদাওয়া শেষে রুমে এসে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়লো নিলয়।
সাদিয়া ঘুরে শুয়ে চোখ রাঙিয়ে নিলয়কে বললো– এই যে মিস্টার, আমি অসুস্থ বলে খুব বাহাদুরি দেখাচ্ছেন সুযোগ পেয়ে, কিন্তু খবরদার রাতে যদি গায়ে হাত পা দেন তাহলে কিন্তু সত্যি উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলবো। সুতরাং সাবধান।
নিলয় মিষ্টি হেসে বললো– না তেমন কিছুই হবেনা, আমার উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে গেলে আমার বউটার খেয়াল রাখবে কে হুম।
সাদিয়া ঠোঁট বেঁকিয়ে– ঢং যত – বলে আবার উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো।
রাত গভীর কিন্তু পিরিয়ডের ব্যাথায় সাদিয়ার চোখে ঘুম নেই। তবুও ঘুমের ভান করে পড়ে আছে।
অনেক রাতে নিলয় উঠে কিচেনে গিয়ে সম্ভবত চা বানিয়ে খেয়ে অনেক সময় পরে আবার ফিরে এসে শুয়ে পড়লো।
আরও অনেক সময় পরে সাদিয়ার চোখে ঘুম ঘুম ভাব চলে এসেছে এমন সময় সাদিয়া খেয়াল করলো নিলয় সাদিয়ার কোমরের কাছ থেকে কাপড় টেনে সরাচ্ছে, সাদিয়া খপ করে নিলয়ের হাত ধরেই…
চলবে…
লেখকঃ নিলয় আহমেদ।