গল্পঃ #নিশ্বাসে_তুমি ( ৩য় পর্ব )
বিছানায় র*ক্ত দেখে ভয়ে নিলয় খু*ন খু*ন বলে চিৎকার করে উঠতেই ওয়াশরুম থেকে সাদিয়া দৌড়ে এসে নিলয়ের মুখ চেপে ধরে বললো– বলদ এটা আমার পিরিয়ডের ব্লাড, রাতে ঘুমের মধ্যে শুরু হয়েছিল বলে এমন হইছে।
নিলয় বোকা বনে গেল, আসলেই তো, এটা মাথায় আসলোনা কেন।
ওদিকে নিলয়ের খু*ন খু*ন বলে চিৎকার শুনে নিলয়ের মা ও দাদী দৌড়ে নিলয়ের রুমে আসতেই চোখের পলকে সাদিয়া বিছানায় রক্ত লেগে থাকা স্থান কম্বল দিয়ে ঢেকে ফেললো।
নিলয়ের মা ও দাদী হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো– কিরে কে খু*ন হলো? কিসের খু*ন?
নিলয় কি বলবে ভেবে না পেয়ে সাদিয়ার দিকে তাকালো। সাদিয়া নিলয়কে চোখ গরম দিয়ে তারপর ঘুরে দাড়িয়ে মা ও দাদীকে বললো– আজকাল নিলয় খুব হিন্দি ছবি দেখে তো, স্বপ্নে মনে হয় ফাইটিং দৃশ্যে রক্ত ঝরতে দেখে খু*ন খু*ন বলে চেচিয়ে উঠেছে, আসলে রক্তকে হিন্দিতে বলে খুন।
নিলয়ের মা বললো– বাবা আমরা তো ভয় পেয়ে গেছিলাম, আর শোন নিলয়, ছবি যা দেখার সজাগ থাকতে মোবাইলে বা ল্যাপটপে দেখে নিবি। স্বপ্নে ছবি দেখে আমাদের পেরেশান করবিনা একদম বলে দিলাম।
দাদী বললো– স্বপ্নে ছবি না দেখে ভালো কিছু দেখিস হতচ্ছাড়া, ছবি দেখা পাপ।
মা ও দাদীর কথা শুনে সাদিয়া মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো মুখ চেপে।
নিলয় মুখটা সেন্টি ইমোজির মতো করে বসে আছে।
মা ও দাদী রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল।
সাদিয়া দাঁতে দাঁত চেপে নিলয়কে বললো– মাথায় বুদ্ধি সুদ্ধি কিছু নেই না-কি? আগে ভালো করে বুঝবেন তারপর চিল্লাবেন বলে দিলাম।
নিলয় বললো– প্রথম বিয়ে তো তাই এসব বিষয়ে এক্সপেরিয়েন্স কম, এর জন্যই বুঝিনি।
সাদিয়া বললো– আচ্ছা ওঠেন, বেডসিট চেঞ্জ করতে হবে।
সাদিয়ার মুখটা কেমন মলিন দেখাচ্ছে আজ, চোখেমুখে ক্লান্তির ছাঁপ স্পষ্ট, আর মেজাজটাও কেমন খিটখিটে।
নিলয় বললো– তুমি চেঞ্জ করবে মানে, আমি আছি কি করতে হুম, সরো সাইডে যাও।
নিলয়ের কথা শুনে অবাক সাদিয়া।
নিলয় বেডসিট চেঞ্জ করে সাদিয়ার হাত ধরে টেনে এনে খাটে বসিয়ে বললো– তুমি আরাম করো লক্ষী বউ।
সাদিয়া চোখ লাল করে বললো– উহু ধরাছোঁয়া যাবেনা, নো টাচিং।
নিলয় দাঁত বের করে হেসে সাদিয়ার নাক টিপে দিয়ে বললো– টাচ ফোন আর বউ, কোনটাই টাচ ছাড়া চলেনা সোনা, সুতরাং উল্টাপাল্টা না বকে চুপ করে শুয়ে আরাম করো।
কথা শেষ করে নিলয় ফার্স্ট মোশনে গিয়ে কিচেনে ঢুকলো।
সাদিয়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে– হঠাৎ করে নিলয়ের মনে এত সাহসের উৎপত্তি কীভাবে হলো, নাকি সকাল সকাল উল্টাপাল্টা কিছু খেয়েছে!
একটু পরেই নিলয় এক হাতে এক কাপ চা অন্য হাতে বিস্কুট নিয়ে এসে সাদিয়ার সামনে রেখে বললো– জলদি করে খেয়ে নাও বউ।
তারপর নিলয় আবারও কিচেনে গিয়ে একটা প্লেটে করে একটা ডিমের অমলেট এনে সাদিয়ার সামনে রাখলো।
সাদিয়া অবাক হয়ে বললো– আবার ডিম কেন?
নিলয় হেসে বললো– তোমার এনার্জি বৃদ্ধির জন্য বউ, এনার্জি ডাউন হয়ে গেলে আমার বউটা আমার সাথে ফাইটিং করবে কীভাবে।
নিলয়ের কথা শুনে সাদিয়া হেসে ফেললো।
আর আজকে নিলয়ের হাবভাব দেখে “আই এম তো অবাক ” এরকম অবস্থা সাদিয়ার।
সাদিয়া নিলয়কে ডেকে বললো– এই যে মিস্টার আপনার মুখটা আমার মুখের কাছে আনেন তো।
সাদিয়া ইমোশনাল হয়ে কিস করবে ভেবে নিলয় তো আহ্লাদে গদগদ। নিলয়ের অবস্থা দেখে সাদিয়া বললো– দিবাস্বপ্ন দেখে লাভ নেই জামাই, ওরকম কিছু হবেনা, মুখটা আমার মুখের সামনে আনেন।
নিলয় সাদিয়ার মুখের সামনে মুখ আনলো।
সাদিয়া বললো– এবার হা করেন।
নিলয় হা করলো, সাদিয়া নিলয়ের মুখের ঘ্রাণ শুকে মনে মনে বললো– না সেরকম কিছু খেয়েছে বলে তো মনে হচ্ছেনা, তাহলে আজ এত কথা বের হচ্ছেটা কীভাবে।
নিলয়ের আজকের হাবভাব দেখে সাদিয়া নিজেই টেনশনে পড়ে গেল।
সাদিয়া বললো– ঠিক আছে এবার যান।
নিলয় হা বন্ধ করে বললো– খালি মুখেই ফিরে যাবো নাকি কিসমিস কিছু দেবে।
সাদিয়া বললো– এই যে, পিপিলিকার পাখা গজায় কিন্তু স্বর্গে যাবার আগে আগে, আপনারও তেমন পাখা গজিয়েছে মনে হচ্ছে। সাবধান কিন্তু।
যত বেলা গড়াচ্ছে পিরিয়ডের ব্যাথা ততই বাড়ছে সাদিয়ার, মুখটা ব্যাথায় একেবারে ফ্যাকাসে হয়ে আছে।
নিলয় এসে সাদিয়ার পাশে বসে বললো– ওষুধ নিয়ে আসি ফার্মেসী থেকে, টেনশন করোনা ব্যথা কমে যাবে।
সাদিয়া বললো– না আমি ওষুধ খাবোনা।
: কেন খাবেনা?
: ওষুধ খেলে নাকি গর্ভধারণে সমস্যা হয়।
: যুদ্ধের মাঠেই তো নামতে দিচ্ছনা গর্ভধারণের বিষয় তো সিলেবাসের বাইরে।
: এই যে সাবধান।
: কিসের সাবধান হুম, দিনের পরে দিন তলোয়ার রেডি করে বসে আছি, যুদ্ধের ময়দানে তোমার কোনো উপস্থিতি নেই।
: বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
: হয় হোক, কোথায় তোমাকে রোজ রাতে বায়োলজি ক্লাস করাবো তা না করে তুমি ক্লাস ফাকি দিচ্ছো।
: কোনো দরকার নেই মিস্টার, আমি হিউম্যানিটি বিভাগের ছাত্রী।
: আরে সেই মানবিকতার হিসাবে হলেও তো স্বামী হিসেবে আমার কাছে তোমার বায়োলজি ক্লাস করা উচিৎ।
: দাড়াও তোমার বায়োলজি বের করছি।
সাদিয়া একটা বালিশ টেনে নিলয়ের গায়ে ছুড়ে মারতেই নিলয় ধরে ফেললো, এরমধ্যে নিলয়ের মা এসে এসব দেখে বললো– কিরে তোদের আবার কি হলো দুজনের।
সাদিয়া বললো– মা আপনার ছেলে পাগল হয়ে গেছে।
নিলয় তো ভয়ে শেষ সাদিয়া আবার কি বলে, অবস্থা খারাপ দেখলে ভাগতে হবে।
মা বললো কেন কি হইছে?
সাদিয়া বলেই ফেললো– মা আপনার ছেলে…
চলবে…
লেখকঃ নিলয় আহমেদ।