গল্পঃ #নিশ্বাসে_তুমি ( ১ম পর্ব )
লেখকঃ নিলয় আহমেদ।
সাদিয়াকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু খেতেই সাদিয়া লাফিয়ে উঠে বসে বালিশের নিচ থেকে চাকু বের করে নিলয়ের গলায় ধরে বললো– ঐ আপনি রোজ রাতে চুমু খান, আমাকে জড়িয়ে ধরেন, হাত পা রাখেন আমার গায়ে কেন হুম? আমি কি আপনার কোলবালিশ।
নিলয় ফিসফিস করে বললো– কোলবালিশ কেন তুমি তো আমার বউ। কোলবালিশের চেয়ে হাজারগুন বেশি আরামদায়ক।
সাদিয়া বললো– বউ হলেই ঘুমের মধ্যে জড়িয়ে ধরতে হবে? গায়ে হাত পা রাখতে হবে? অসহ্য একেবারে।
নিলয় বললো– বউকে জড়িয়ে ধরবোনা তো কাকে জড়িয়ে ধরবো শুনি।
সাদিয়া খচমচ করে বললো– যাকে ইচ্ছা তাকে ধরেন গিয়ে, আমাকে না বলে দিলাম কিন্তু।
নিলয় হেসে ফেলে বললো– জীবনে এই প্রথম কোনো বউ তার স্বামীকে অনুমতি দিলো যাকে ইচ্ছা তাকে জড়িয়ে ধরার, আমি তো ভাগ্যবান হা হা হা। কিন্তু নিজের বউ রেখে অন্য কাউকে ধরা ছাড়ার ইচ্ছে নেই আমার বুঝলে?
সাদিয়া বললো– হুম বুঝলাম, কিন্তু এরপর যদি আমার গায়ে সামান্য স্পর্শ করারও চেষ্টা করেন তাহলে কিন্তু কিক মেরে খাটের বাইরে ফেলে দিবো বলে দিলাম।
তারপর নিলয়কে ঠেলে সরিয়ে দুজনের মাঝখানে একটা কোলবালিশ রেখে বর্ডার তৈরি করে সাদিয়া বললো– রাতে যদি দুজনের মাঝখান থেকে কোলবালিশ গায়ের হয়ে যায়, তাহলে আপনাকেও দুনিয়া থেকে গায়েব করে দিবো বলে দিলাম।
নিলয় মিনমিন করে বললো– ভারত পাকিস্তানের বর্ডারেও তো এত কড়াকড়ি নেই মনে হয়। বাবারে বাবা কপালে এমন বউ জুটবে জানলে আজীবন চিরকুমার থেকে যেতাম।
সাদিয়া ফসফস করে বললো– কুমার থাকেন বা লাউ, যা বলেছি সেটা মনে থাকে যেন।
নিলয় উপুড় হয়ে বালিশে মুখ চেপে বিড়বিড় করে বললো– ক্ষুদার্ত অসহায় ব্যক্তির সামনে বিরিয়ানির প্লেট অথচ ছুঁইলে প্রাণনাশের রিস্ক, এমন পোড়া কপালে বউ থাকার কি দরকার ছিল।
সাদিয়া আড়চোখে নিলয়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঘুমিয়ে পড়লো।
সাদিয়ার এবং নিলয়ের বাবা খুব ভালো বন্ধু। দুজনেই শহরের প্রথম সারির বিজনেসম্যান। সাদিয়ার মা অনেক আগেই মারা যায় হৃদরোগ জনিত সমস্যার কারণে।
এরপরে কিছুদিন আগে সাদিয়ার বাবা গাড়ী এক্সিডেন্ট করে প্রায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসে। এখনও অসুস্থ তিনি। সেই দূর্ঘটনার পরে সাদিয়ার বাবার মনে হয়েছিল আর বেশিদিন বাঁচবেন না তিনি। তখন তার মনে হতে থাকে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার আগে নিজের একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে যেতে পারলে জীবনের সবথেকে বড়ো দায়িত্বটা পালন করার তৃপ্তি নিয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারবেন। সাদিয়া ইন্টারে পড়ে হিউম্যানিটি নিয়ে, ওদিকে বন্ধুর ছেলে নিলয় পড়ছে পলিটেকনিকে এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিংএ। দুজনের জন্য দুজন একেবারে পারফেক্ট।
তো একদিন নিলয়ের বাবাকে ডেকে সাদিয়ার বাবা বলেন– বন্ধু আমার একটা শেষ ইচ্ছে পূর্ণ করবি তুই? এর পরে আর কোনো চাওয়া থাকবেনা আমার।
নিলয়ের বাবা সাদিয়ার বাবার হাতে হাত রেখে বলে– তোর একটা ইচ্ছে নয়, হাজারটা ইচ্ছে পূর্ণ করবো বন্ধু, বল আমাকে কি ইচ্ছা তোর।
সাদিয়ার বাবা বললেন– আমার একমাত্র মেয়েটা আমি মারা যাবার পরে একেবারে এতিম হয়ে যাবে বন্ধু। ওর সৎ মায়ের সঙ্গে ওর সম্পর্ক ভালো যাচ্ছেনা। দ্বিতীয় বার বিয়ে করাটাই আমার ভুল ছিল। যা-ই হোক আমার তো কোনো ছেলেও নেই। আমি চাই নিলয়ের সঙ্গে সাদিয়ার বিয়ে হোক। সাদিয়ার খেয়াল রাখবে আর একজন দায়িত্ববান ছেলের মতোই তোর সাথে সাথে আমার ব্যাবসারও হাল ধরবে। নিলয়ের মা সাদিয়ারও খুব প্রিয়। সাদিয়া নিজেই বলে আন্টির কাছে থাকলে তার আদর মমতায় মায়ের অনুভূতি অনুভব হয়।
এই কারনেই চাইছি ওদের বিয়ে হোক।
নিলয়ের বাবা সাদিয়ার বাবার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো– ঠিক আছে তুই যা চাইছিস তাই হবে বন্ধু।
বাবার অবস্থা দেখে সাদিয়া আর দ্বিমত করেনি, তার ওপর রক্তের সম্পর্কের বাইরের কেউ তার ওপর অতিরিক্ত শাসন দেখাবে এটা তার পছন্দ নয়। বিয়ের পরে অন্তত সৎ মায়ের সঙ্গে থাকতে হবেনা নিলয়ের মায়ের কাছে থাকতে পারবে এটা ভেবে এক কথায় রাজি হয়ে যায় সাদিয়া।
এরপর একদিন দিনক্ষণ দেখে বিয়ে হয় নিলয় সাদিয়ার।
সাদিয়ার খুব স্বপ্ন লেখাপড়া শেষে নামকরা বিজনেস উইমেন হবার, সেই লক্ষ্য বরাবর পৌঁছাতে পড়ালেখায় দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে সে।
দুজনেই এডাল্ট–
সাদিয়া কেবল আঠারো ছুঁয়েছে।
বাসর রাত থেকেই নিলয় প্রমাণ পেয়েছিল দুজনের মধ্যে রোমান্টিক সিনের বদলে স্ক্রিপ্টে একশন সিন বেশি রেখেছে বিধাতা।
সাদিয়া লাল বেনারসি শাড়ি পড়ে চুপচাপ বসে ছিল খাটে। নিলয় এসে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই সাদিয়া বললো– ঐ রুমে আপনি আসলেই হবে আর কিছু আসার দরকার নেই?
নিলয় ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললো– আমাদের বাসর ঘরে আর কি আসবে শুনি।
সাদিয়া ভেংচি কেটে বললো– শুধু আপনি আসলেই তো হচ্ছেনা, হাওয়া আসতে দেন গরম লাগে তো।
নিলয় তবুও দরজা বন্ধ করে চুপচাপ এসে সাদিয়ার পাশে বসে বললো– বাসর ঘরে স্বামী স্ত্রী দুজন দুজনের হাওয়া বাতাস সব, বাইরের কিছু আসতে নেই।
সাদিয়া ঘোমটা তুলে বললো– এই যে মনের মধ্যে কোনো দুষ্ট বাসনা থাকলে অপূর্ণতায় বিসর্জন দিয়ে মন সাফ করেন, নয়তো বাসর রাতে বউয়ের ধোলাই খেয়ে আধমরা হবেন মিস্টার।
নিলয়ের অবুঝ মন হায়হায় করে উঠে বললো– সবাই বাসর রাতে খায় বউয়ের আদরের মালাই, আর আমি কিনা খাবো ধোলাই।
সাদিয়া আচানক নিলয়ের ঠ্যাং দুটো ধরে খাটের ওপর তুলে সালাম করে বললো– বাসর রাতে নাকি স্বামীকে সালাম করতে হয়।
নিলয় ভীষণ চমকে গিয়ে বুকে থুতু ছিটিয়ে বললো– এইভাবে সালাম করলে তো হার্টফেল করবে বেচারা স্বামী, যেমন আমি।
শাড়ী খুলতে খুলতে সাদিয়া বললো– এত কথা বলতে কে বলেছে হুম? বেশি বকবক না করে আশীর্বাদ দিন জলদি।
নিলয় ফ্যালফ্যাল করে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো– বেঁচে থাকো বউ বেঁচে থাকো। দিলাম আশীর্বাদ।
শাড়িটা খুলে নিলয়ের হাতে দিয়ে সাদিয়া বললো– শাড়িটি ভাজ করে শোকেসে রেখে লাগেজ থেকে আমার প্লাজু আর টিশার্ট নিয়ে আসেন জলদি।
সাদিয়ার বুকে ব্লাউজ আর পরনে ছায়া। সৌন্দর্য যেন ঠিকরে বেরিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে নিলয়ের। সাদিয়ার শরীরের ঐ অনাবৃত অঙ্গের সৌন্দর্য যেকোনো পুরুষের মাথা ঘুরিয়ে দিবে তাতে সন্দেহ নেই। নিলয় ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সাদিয়ার দিকে।
সাদিয়া বললো– এই যে শুধু শুধু লালা ঝরিয়ে লালার অপচয় করে লাভ নেই, যেটা বলেছি সেটা করেন।
নিলয় উঠে শোকেসের কাছে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বললো– অনাহারীর চোখের সামনে আহারের গোডাউন খুলে দিয়ে বলছো লালা যেন না ঝরে। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য স্বচক্ষে দেখার আগে ঘুমিয়ে পড়া ভালো ছিল।
নিলয়ের কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসছে সাদিয়া।
লাগেজ থেকে প্লাজু আর টিশার্ট এনে খাটের ওপর রাখলো নিলয়।
ছায়ায় ভেতর দিয়ে প্লাজু পরে ছায়াটা নিলয়ের মাথার ওপর রেখে নিলয়ের চোখ মুখ ঢেকে ফেললো সাদিয়া। তারপর বললো– এই যে, আমি না বলা পর্যন্ত ছায়া যেন সরানো না হয়।
নিলয় অসহায়ের মতো বললো– কিন্তু কেন?
সাদিয়া বললো– কারণ ব্লাউজ খুলে টিশার্ট পরবো তাই।
নিলয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো– এখন মনে বারবার একটা প্রশ্নই আসছে সাদিয়া, তুমি কি আসলেই আমার আপন বউ?
নিলয়ের কথা শুনে সাদিয়া হেসে ফেলে বললো– আপন বউ হলেও আমার ইচ্ছে না হওয়া পর্যন্ত কিচ্ছু হবেনা মনে রাখবেন সাহেব।
ব্লাউজ খুলে টিশার্ট পরে নিলয়ের মাথার ওপর থেকে ছায়াটা তুলে ব্লাউজ ও ছায়া নিলয়ের হাতে দিয়ে সাদিয়া বললো– এবার লক্ষী জামাইয়ের মতো এগুলো ভাজ করে শোকেসে রেখে আসুন।
নিলয় উঠে ছায়া ব্লাউজ ভাজ করে শোকেসে রেখে এসে সাদিয়ার পাশে শুয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
তাই দেখে সাদিয়া বললো– কি ব্যাপার খুব কষ্ট হচ্ছে নাকি কিউট জামাইটার?
নিলয় বললো– কত আশা ছিল মনে, বাসর রাতে বিড়াল মারবো তোমার সনে। এখন দেখছি বিড়াল মারতে না পারার হতাশায় নিজেকেই মরতে হবে।
নিলয়ের কথায় সাদিয়া হা হা করে হেসে উঠে বললো– আহারে কি কষ্ট আমার জামাই সাহেবের। খুব সখ নাকি বিড়াল মারার?
নিলয়ের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।
তাই দেখে সাদিয়া বললো– বিড়াল মারতে তো শক্তির প্রয়োজন আগে দুধ খেয়ে শক্তি অর্জন করুন সাহেব।
নিলয় লাফিয়ে উঠে সাদিয়ার দিকে রোমান্টিক দৃস্টিতে তাকালো।
সাদিয়া বললো– এদিকে নয় দুধ ঐ যে ওদিকে, টেবিলের ওপর রাখা।
নিলয় লাফিয়ে খাট থেকে নেমে নাচতে নাচতে টেবিলের কাছে গিয়ে এক নিশ্বাসে ঢকঢক করে এক গ্লাস দুধ খেয়ে ফেললো।
সাদিয়ার মুখে রহস্যময় হাসি, এবার নিলয় বুঝবে মজা…
চলবে।