নিশ্চুপ_ছেলে
পার্ট_১
Written by Avantika Anha
প্রতিদিনের মতো ছেলেটি ফেসবুক এ ঘুরাঘুরি করছিল । ছেলেটির নাম হলো নীল মাহমুদ আপন। ভার্চুয়াল জীবন টাকে একটু বেশিই আপন করে ফেলেছে সে । কেনই বা করবে না । যার আশেপাশের মানুষগুলো কখনো তার খোঁজ নেয় না । সে ছিল চুপচাপ ছোট বেলায় মা মারা যায় তার । তারপর থেকেই একা হয়ে যায় সে । তার বাবা থাকতো ঠিক ই কিন্তু নিজের অফিস নিয়েই ব্যাস্ত । ছেলেটির মনে মাঝে মাঝে একটা প্রশ্ন জাগে । আচ্ছা সে কি এই পরের জীবনে আখিরাতে নিজের সাথী পাবে । ছেলেটাকে তার বাবা আরও বেশি দূর করে কারণ ছেলেটাকে বাঁচাতে গিয়েই তার স্ত্রী এর মৃত্যু হয় ।
.
তারপর থেকে কষ্টের শুরু । ছেলেটা চুপচাপ হয়ে পড়ে যায় ।
.
জীবনে চলার পথে ভার্চুয়াল টাকেই সে আপন করে নেয় । মাঝে মাঝে মন ভুলাতে গান করে । গানের গলা বেশ ভালোই কিন্তু তার গান স্থান পায় শুধুই ভার্চুয়াল লাইভে ।
.
হঠাৎ একটা মেয়ের আইডি রিকোয়েস্ট পায় সে । যদিও ভুলে রিকোয়েস্ট টা গেছিল । মেয়েটার আইডি টার প্রতি কেন যেন এক আকর্ষণ পড়ে যায় ।এক্সেপ্ট করে নেয় ।
.
প্রথম মেসেজ ছেলেটার
ছেলেটি : আমি কি আপনাকে চিনি
মেয়েটি : এমা সরি ভুলে মনে হয় রিকোয়েস্ট গেছে
ছেলেটি : ও ব্যাপার না বাই
মেয়েটি : আপনি বিজি নাকি হিহি নাকি ভাপি ডাকে
ছেলেটি : বিজি না আর ভাপি কি জিনিস
মেয়েটি : হিহি আই মিন আপনার গফ
ছেলেটি : নাই
মেয়েটি : ওওওও চকলেট খাইবেন
ছেলেটি : নাহ
মেয়েটি : এমা কিনু
ছেলেটি : মিষ্টি খাই না
মেয়েটি : কেন আন্টি কি মিষ্টি খেতে দেয় না
ছেলেটি : নেই আম্মু
মেয়েটি : কই গেছে
ছেলেটি : বেঁচে নেই ( কথাটি বলতেই ছেলেটির কান্না চলে আসে )
মেয়েটি : সরি এভাবে বলতে চাই নি আমি একটু বেশি মজা করি তাই আর কি
ছেলেটি : আচ্ছা
মেয়েটি : আমি আনহা আপনি
ছেলেটি : আপন
মেয়েটি : এমা কে আপনার আপন
ছেলেটি : আমি আপন
আনহা : এমা আপনি কার আপন
আপন : আরে আমার নাম আপন ( রাগ ইমোজি )
আনহা : হিহি
আপন : (রাগ ইমোজি )
আনহা : হিহি রাগেন কেন
আপন : দুরররররররর
আনহা : কোনদিক দুর হবো
আপন : ওই আপনি ভাগবেন
আনহা : না
আপন : হায় আল্লাহ এ কি মেয়ে
.
এই মেসেজ দিয়ে ছেলেটি অফলাইন হয়ে গেল ।
.
পরেরদিন
আনহা : গিট্টু
আপন : গিট্টু কি
আনহা : গিট্টু হলো গিট্টির ভাই
আপন : গিট্টি কি
আনহা : গিট্টুর বোন গিট্টি
আপন : গিট্টু আর গিট্টি কি
আনহা : ভাই বোন
আপন : ওই আপনি আমার মাথা খান কেন
আনহা : কইইইইইই আমি তো কিটক্যাট খাচ্ছি
আপন : হায়রে
.
পরবর্তী চ্যাট এ
আনহা : ইয়ো ইয়ো আপনি কই থাকেন
আপন : ঢাকা আপনি
আনহা : দিনাজপুর
আপন : ওহ
আনহা : কিটক্যাট খাইবেন মিস্টার
আপন : না
আনহা : বুইরা
আপন : পিচ্চি
আনহা : আপনি বিল্লি
আপন : আপনি গরু
আনহা : টিকটিকি
আপন : ছাগল
.
এভাবেই ধীরে ধীরে আনহার পিচ্চি বিহেভ গুলোর অভ্যাস হতে থাকে ছেলেটির ।
.
এভাবেই কথা হতে থাকে । সময় পেরুতে থাকে ।
.
মজার ব্যাপার ছেলেটি এখনো মেয়েটিকে দেখে নি
.
আসলে আমি ছিলাম ছেলেটার কাজিন । ছেলেটির এই একা থাকা দুর করতেই সে ছেলেটির সাথে যোগাযোগ করেছিল । ছেলেটি জানতো তার কাজিন দের নাম ।কিন্তু কখনো দেখে নি ওতো কারো সাথে । আমাকেও অনেক আগে দেখছিল ।
.
মেয়েটি ছেলেটিকে ভালোবেসে ফেলে । হয়তো ছেলেটিও কিন্তু ছেলেটি তো তার মনের কথাও বুঝে না ।
.
আমি ঘুরতে যাই ওর বাড়িতে । যদিও কারণ শুধুই ওকে ভার্চুয়াল থেকে টেনে আনা । তাই ভার্চুয়াল আর রিয়েল সব দিকেই আমি থাকবো ওর । হিহি দেখি ফাজিল আনহা পারে কি না ভালো করতে ।
.
ইয়ো ইয়ো আইসা পড়ছি । জানি না ওই পোলা কোনহানে ।
আমি : কেমন আছেন ফুপা
ফুপা : এইতো ভালো মা তুমি
আমি : ভালো নীল কই ( আপনের ই নাম নীল )
ফুপা : জানি না
.
( গম্ভীর ভাবে চলে গেলেন । এই গম্ভীরতার মানে যদিও আমি জানি । কিন্তু এসব আমি ভালো করবোই )
.
গম্ভীর টা এখনো ঘুমাচ্ছে
.
.
আমি : নীল ওই
নীল : কি হইছে আর আপনি কে
আমি : আমি তোর বউ
নীল : আজে বাজে কথা বলবেন না বের হয়ে যান আমার রুম থেকে
আমি : ওই আমি আনহা
নীল : ওহ
আমি : এখনো গম্ভীর আছিস হিহি
নীল : যাবা তুমি ( ও তুমি ই বলে )
আমি : না
নীল : যাও বলছি
আমি : না না না
উঠ তুইইইই
নীল রেগে আমার হাত জোরে ধরে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে নিল
আমি : এমা কি করবো আসছি একে মানুষ করতে আমি ই না ভুত হয়ে যাই
নীল : আমি একা থাকতে চাই
আমি : ওরে বাবারে এতো রাগ
.
কাতুকুতু দিয়ে ভাগছি
.
নীল : একটু হেসেই ফেলল আবার আনহার পালানো দেখে
কিন্তু আবার গম্ভীর হয়ে বলে না আমি একাই থাকবো ।
.
…………….খাবার টেবিলে……………..
আমি , ফুপা আর নীল । ফুপা আর নীল কেউ কারো সাথে কথা বলে না । নীল অনেক ভালোবাসে ফুপা কে কিন্তু ফুপা বুঝে না ।
আমাকেই কিছু করতে হবে ।
আমি : ফুপা দিনদিন তো ভালোই দেখতে হচ্ছ কয়টা মেয়ে ফিদা হচ্ছে
ফুপা : এরকম আর হয় মা
আমি : নীল আর তোমাকে দেখলে তো এখন ছেলে বাপ না ভাই মনে হবে
ফুপা : নিশ্চুপ
আমি : নীল এতো কম খাস কেন
নীল : এমনি
আমি : তোর তো শক্তি ই হবে না
নীল : ভালো
.
………আবার সব নিশ্চুপ
টেবিলের নিচে নীল কে গুতাচ্ছি কথা কয় না এই জন্য ।
.
এমা এমা রাগে উঠে পালাইলো ।
.
আমি ই ঠিক করবো আগে ফুপা কে বলি কিছু কথা ।
আমি : ফুপা একটা কথা বলবো ছোট হয়ে
ফুপা : বলো মা
আমি : জীবন আছে তো মৃত্যু ফুপির মৃত্যু এ নীলের কি দোষ ও তো ছোট ছিল তখন । খেলতে গিয়ে এরকম । তাই কি ওর দোষ । আপনি একবারো ওর কষ্ট দেখছেন । আপনার তো সব আছে । ও সবসময় একা এতোটাই চুপচাপ সে । ও একা শুধু আপনার ভালোবাসা চায় ওর চাহনি বুঝেন না আর কিছু না তো ওকে বুঝুন একটু ওর নিরব কান্না থামান ওর ভালোবাসা বুঝুন ।
.
বলে খাবার নিয়ে চলে এলাম নীলের জন্য ।
.
নীল চুপচাপ বসে ছিল ।
.
আমি : না খেয়ে আসলি কেন আমি তো মজা করছিলাম
নীল : নিশ্চুপ
আমি : ওই হারামি কথা বল আর এটা খা
.
নীল রেগে প্লেট ফেলে দিল ।
আমি : ফেলাস কেন হা
নীল আবার রেগে আমাকে দেয়ালের সাথে আটকে নিল
আমি : এবার কি হবে
নীল : এমন কেন করছো কি করছি আমি তোমার । একা থাকতে দাও না কেন আমাকে ।
আমি : চিরকাল একা ছিলি এবার আর না তোকে আমি ভালো করবোই এই নিশ্চুপ থাকা ছাড়াবোই ।
নীল : পারবা না কখনো
.
(আরও শক্ত করে হাত ধরে এবার খুব লেগেছিল তাই চোখে পানি চলে এল । তা দেখে নীল আমাকে ছেড়ে দিল )
ও বাইরে কই যেন চলে গেল
.
আমি : আমি ওকে ভালো করবোই
.
পরের দিন
নীল : আনহা
আনহা : এমা আমাকে ডাকে কেন নিশ্চই বুঝছে যে আমি লুকায় রাখছি
নীল : আনহা…..
আমি : হঁ্যা কিচ্ছে
নীল : প্রব্লেম কি তোমার
আমি : আমার প্রব্লেম তোর এই নিশ্চুপ ভাব
নীল : আমি এমনি থাকবো (একটু চিৎকার দিয়ে)
আমি : ভয় পেয়ে গেলাম
.
সরি
নীল : ফোন দেও
আমি : না দিবো না এতো ফোন টিপা ভালো না
নীল : আমার লাইফ এটা
আমি : হিহি এহন আমি চালাবো
নীল : দূরররর
( চলে গেল জানে যে আমার সাথে পারবে না )
হিহি
.
তারপর এফ বি তে ধুকলাম ,
আমি : কি করেন
নীল : কিছু না
আমি : মন খারাপ নাকি
নীল : হুম এক কাজিন আসছে খালি জ্বালায়
আমি : হিহি মেয়ে নাকি
নীল : জ্বী
আমি : এমা তাইলে প্রেম করুন সেই ভাবি হইবো
নীল : আরে না
আমি : কেন কিউট না নাকি
নীল : না ও অনেক সুন্দর
আমি : মানমে লাড্ডু ফুটা নাকি
নীল : না আচ্ছা পরে কথা বলবো
.
( নীল লজ্জা পেল । কারণ ও কখনো আনহার ব্যাপারে ভাবে নি )
.
দুপুরে দেখলাম রুম এ গেলাম ওর ।
ঘুমোচ্ছিল
আমি মনে মনে : জানি তোমার কষ্ট । জানি আমি তোমাকে ভালোবাসি । তাই আমি ই সব ঠিক করবো । ঘুমালে কত কিউট লাগে গো তোমাকে । ( এমা ওয় ছেলে আমি মেয়ে । কি উল্টা তারিফ হিহি )
.
চলে আসলাম ।
বিকালে ,
ফুপা বসে ছিল এমন সময় নীল আসলো ।
চলবে………
(প্রথম একটু আলাদা গল্প চেষ্টা করতেছি । এই গল্পের পার্ট আমার টাইমলাইনে পাবেন)