নিশি_কাব্য শেষ পর্ব

0
1903

নিশি_কাব্য শেষ পর্ব
(রোমান্টিক সংসারে গল্প)
লেখা- Rudro khan Himu

“মেয়েটার কথা শুনে খুব মায়া লাগছে। কিন্তু এখন তো আবার ভুল করেছে! আমাকে নাকি ভালোবাসে ফিলছে।
এটা অসম্ভব। কিন্তু আমি কেন বলতে পারছি না এই সহজ কথা টা । খুব চিন্তা হচ্ছে কি করবো আমি। ”
.
.
নিশি ঘুমিয়ে আছে ঘুমের ঘোরে বলছে “পিচ্চি বর আমাকে ছাড়া যাওয়া না””
চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ঘুমের মধ্যে নিশি কান্না করছে”” ।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


মেয়েটা হ্যালো হ্যালো বলছে ফোনের ওপাশ থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম ” তুমি যায় ভাবছো এটা কখনো আমি বিবাহিত। আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
এটা বলে ফোন কেটে দিলাম। মেয়েটার মায়ার গভীরে হারিয়ে যাওয়া ভয়ে আর কখনো কথা বলার চেষ্টা করি নেই। সিমকার্ড চেঞ্জ করে ফেলেছি। পুতুল বউ যায়ে আমার সবটুকু জোরে আছে । আমার পৃথিবী আমার পুতুল বউ । নিশির কপালে চুমু দিতে যায়ে আমার চোখের জল গড়িয়ে পুতুল বউ চোখে পরলো আর ঘুম ভেঙ্গে গেল ।
“ঐ সাব্বির কান্না করছে কেন?
– তোমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি আমি। নিজের কাছে খুব লজ্জা লাগছে। আসলে সত্যি ঐ মেয়েটাকে আমি চিনি না। প্লিজ বিশ্বাস কর পুতুল বউ। মেয়েটার পরিচয় নিয়ে জন্য কথা বলছিলাম। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও পুতুল বউ।
— আরে পাগল তোমাকে অনেক আগেই আমি ক্ষমা করে দিছি। আর আমি জানি তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসাও ।
— আমার পৃথিবী তুমি।
নিশিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।
— এই পিচ্চি বর ছেলেদের কান্না করতে হয় না। কান্না করলে মেয়ে মেয়ে লাগে।

এটা বলতে বলতে আমার ঠোঁটে নিশি আমাদের জীবনের দীর্ঘতম চুম্বনটা করলো।
বাবারে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। পাগলী একটা বউ আমার।

ঐ শুন তোমার সাথে ঝগড়া না করলে আমার একদমই ভালো লাগে না। আমরা কিন্তু মাঝে মাঝে ঝগড়া করবো।
— পাগল একটা বর। কাছে এসো। পুতুল বউরে চোখে রোমান্টিকতা সৃষ্টির মত পরছে।
নিশি আমার নাকে একটা কামড় বসিয়ে দিল।
দাও মজা বুঝাছি………। নিশি কে জরিয়ে ধরে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আস্তে আস্তে গালে স্পর্শ করালাম…..
চুল গুলো এলোমেলো করে দিলাম। তারপর গভীর রোমান্টিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাছে যাচ্ছি…. দুষ্টুমি করে নিশির কানে কামড় বসিয়ে দিলাম। আর কানে কানে বললাম হবে নাকি পাগলামী ?।
–যায়ে দুষ্টু।
অনেক গল্প কিল ঘুশি দিলো। তারপর কিছু বলবো না আপনারা বুঝে নেন ?।

.
.
সকালে নিশি ভেজা চুল দিয়ে মুখে স্পর্শ করলো।

— এই তুমি ঘুম থেকে উঠবা???
প্লিজ রাক্ষুসী একটু ঘুমাতে
দেও নাহ,,, আজকে তো
শুক্র বার,,,অফিস ও নেই,,,প্লিজ
_ আচ্ছা কাজ করতে হবে নাহ,,,
তুমি উঠো,,,আর দেখ আমি
তোমার জন্য কি রান্না করেছি।
— আর একটু ঘুমিয়ে নিয়ে গো তোমার কাজ শেষ হলে তুমি ও এসো একটু ঘুমিয়ে নাও।
— মাথায় সবসময় দুষ্টু চিন্তা ভরা তাই না।

পুতুল বউয়ের সাথে ব্রেকফাস্ট করলাম মাত্র। সকাল বাজে দশটা, অফ ডে থাকায় আজ দেরিতে উঠেছি ঘুম থেকে। ব্রেকফাস্ট শেষে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে পত্রিকাটা হাতে নিয়েছি মাত্র আর তখনই পুতুল বউ বলছে, ‘এই শোনো। এই…, আমার দিকে তাকাও না।’

আমি কিছুটা রাগত ভাব নিয়ে বললাম, ‘আমি বয়রা না বাবা, কান আমার খোলাই আছে। কী বলতে চাও বলে ফেলো।’

‘এমন করো কেন? আচ্ছা, শোনো না, আমি ইদানীং চোখে একটু ঝাপসা দেখছি, বিশেষ করে সমস্যাটা হয় কিছু পড়ার সময়। অনেক কিছুই ভালোভাবে বুঝতে না পারায় পড়তে পারি না। একটা চোখের ডাক্তার দেখানো উচিৎ, চশমা নিতে হবে বোধহয়।’

‘এদিকে আসো, আমার সাথে এদিকে আসো।’ এটা বলতে বলতে আমি পুতুল বউকে জানালার কাছে নিয়ে গেলাম।

–‘এখানে নিয়ে আসলে কেন? কী হয়েছে?’

–‘ঐ যে দেখতে পাচ্ছো ওটা কী বলতো?’

–‘কেন, সূর্য।’

–‘হারামজাদি হাজার মাইল দূরের সূর্যরে দেখে চিনতে পারস আর চোখের সামনে লেখা দেখে চিনতে পারস না?’

–‘কী!!! তুমি আমারে হারামজাদি ডাকলা!!! তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ!’

–‘বাহ! এতো দেখছি মেঘ না চাইতেই জল। এমনিতেই কথা বলতে বলতে অসহ্য, তারমধ্যে নিজেই কথা বলা বাদ দিয়ে দিলে, ভালোই হলো। এবার আরামসে দিনাতিপাত করতে পারবো। খালি খাবো, দাবো আর ঘুমাবো।’

–‘তোমার খাওয়াও বন্ধ।’

–‘সমস্যা নাই, হোটেল থেকে খেয়ে নিব।’ এই বলে আমি পুতুল বউকে পাত্তা না দিয়ে আবার পত্রিকা পড়ায় মনোনিবেশ করলাম। পুতুল বউকে দেখলাম বেডরুমের দিকে চলে গেলো।

“এভাবে ঝগড়া দিয়েই আমাদের বেশিরভাগ দিন অতিবাহিত হয়। সবসময় আমি ইচ্ছা করেই ঝগড়া বাধাই। এর পেছনে কারণও আছে। প্রতিটা ঝগড়ার সমাপ্তিই অনেক কিউট আর রোমান্টিকভাবে হয়। এটাই ভালো লাগে আমার। কেমন কিউট আর রোমান্টিক সমাপ্তি হয় তা ঝগড়ার পরের অংশ বললেই বুঝতে পারবেন।

যথারীতি আমি পত্রিকা পড়া শেষ করে টিভি দেখতে লাগলাম। বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়ে এলো। এবার উঠে গোসল সেরে বেডরুমে গিয়ে শোলাম। একটু পর দেখলাম পুতুল বউ রান্নাঘর থেকে আসলো। এসে ফ্যানের নিচে একটু জিরিয়ে বাথরুমে গোসল করতে ঢুকার আগে দেখি আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে, –‘খাবার ভুলে বেশি রান্না করা হয়ে গেছে। কেউ না খেলে পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে যাবে। খাবার নষ্ট করতে না চাইলে খেয়ে ফেলাই ভালো হবে। অবশ্য কেউ যদি অনেক দয়াবান হয় তাহলে বাইরে থেকে কোনো ফকির-মিসকিনকে ঢেকে এনে খাইয়ে দিতে পারবে। যাকগে, সেটা যার যার পারসোনাল ব্যাপার।’

এটা শুনে আমি মনে মনে হাসতে হাসতে বললাম, ‘দেখি কতক্ষণ কথা না বলে থাকতে পারো!’

কিছুক্ষণ পর পুতুল বউ গোসল সেরে চুল-টুল আচড়িয়ে খাওয়া-দাওয়া না করেই বিছানার অন্য পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। আমি অবশ্য জানতাম আমাকে রেখে ও কখনো খাবে না, যেমনটা আমিও ওকে রেখে কখনো খাই না। তো কী আর করার, আমিও চুপচাপ শুয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি ও বলছে, ‘আমি মার কাছে চলে যাবো আজ বিকালে। কারো আর কোনো কিছুতে অসহ্য হতে হবে না।’

আমি সাথে সাথে প্রতিউত্তর দিয়ে বললাম, ‘ভ্যান নিয়ে এসে দিবো নাকি শুধু রিকসা হলেই চলবে?’

পুতুল বউ কিছুটা কান্না ও অভিমান জড়িত কণ্ঠে বললো, ‘নিজের ব্যবস্থা আমি নিজেই করে নিব, কাউকে আগ বাড়িয়ে আর সাহায্য করতে হবে না।’

আমি বউকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম, ‘যাক বাবা, বাঁচা গেলো। এ বিকেলটা তবে নিরবচ্ছিন্ন ঘুম দিয়ে কাটানো যাবে। আর উঠে দেখবো আপদ বিদেয়। খালি শান্তি আর শান্তি।’

পাশ থেকে বউয়ের গভীর তবে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ পেলাম। মনে হচ্ছে এবার মারাত্মক রেগে গিয়েছে। আল্লাহই জানে আজ কপালে কী আছে! আসলেই বাপের বাড়ি চলে যায় কিনা কে জানে! তবে আমি তখনো কিছু বললাম না। চুপ করে শুয়েই থাকলাম। ওভাবেই ঘন্টাখানেক পার হয়ে গেলো। হঠাৎ মনে হলো পুতুল বউ আমার ক্ষিদে সহ্য করতে পারে না। সাথে সাথে আমি আর ঠিক থাকতে পারলাম না। এবার পুতুল বউকে যে করেই হোক রাগ ভাঙিয়ে খাওয়াতে হবে। আমি পাশ ফিরে ওকে জড়িয়ে ধরতে গেলাম। ওমা! এ যে দেখি পুরাই হাই ভোল্টেজের বিদ্যুৎ! এমন শক দিয়েছে পুরো খাট সহ কেঁপে উঠেছে। বুঝলাম এ রাগ ভাঙাতে আমার বহুত পরিশ্রম করতে হবে। অবশ্য আমার শর্টকাট টেকনিক জানা আছে। কিন্তু সেটা সবসময় প্রয়োগ করি না। বউয়ের রাগ ভাঙাতে যত পরিশ্রম, তত মজা! কিন্তু এখন মজার দিকে তাকালে চলবে না। বউ আমার ক্ষুধায় কষ্ট করবে আর আমি মজা নিব তা হবে না। শর্টকাট টেকনিকই প্রয়োগ করতে হবে। আমি ওকে কয়েকবার টেনে তুলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু লাভ হলো না, পঞ্চান্ন কেজির দেহকে পঞ্চান্ন হাজার কেজি বলে মনে হলো! এরপর বললাম, ‘দেখো, আমার প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। পেট একদম জ্বলে যাচ্ছে। আর এক মুহূর্তও থাকতে পারছি না। প্লিজ ওঠো লক্ষ্মী বউ আমার।’

–‘থাকতে বলেছে কে? খাবার সব রেডি করে টেবিলে রাখাই আছে, যেয়ে খেয়ে নেন। আর ক্ষুদা লাগলে যে অসহ্য হারামজাদি বউও লক্ষ্মী বউ হয়ে যায় আজ প্রথম শুনলাম।’

–‘ও বউ, তুমি রাগ করছো কেন? ওইটাতো তোমাকে ক্ষেপানোর জন্য বলছি। এবার একটু রাগটা ভাঙো না। আর তুমিতো জানই তোমাকে রেখে আমি এক লোকমাও খাবো না। প্লিজ বাবা, এবার ঊঠোনা। আর পারছি না । না। প্লিজ বাবা, এবার ঊঠোনা। আর পারছি না থাকতে। বিশ্বাস করো খুব কষ্ট হচ্ছে।’

এটা বলে ভাবছি যে পুতুল বউ আর শুয়ে থাকবে না, এবার উঠে আমার সাথে খাবে। কিন্তু এরপর দেখি ও বলতে শুরু করলো, ‘ক্ষুদার কারণে আপনার আবার কবে থেকে কষ্ট হতে শুরু করলো? অফিসে মাঝে মাঝেতো সারাদিন না খেয়ে থেকে অভ্যাস করছেনই। আজতো হঠাৎ কষ্ট হওয়ার কথা না। এটা কি ক্ষুদার কষ্ট নাকি অন্য কিছু?’

‘ক্ষুদার কষ্ট, তোমার ক্ষুদার কষ্ট।’

এই বলে আমি নিশিকে আবার তোলার জন্য টান দিলাম। পুতুল বউ সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমিও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। এরপর কানে কানে বললাম, ‘দাও, সব ক্ষুদা বাড়িয়ে দাও। আজ তোমাকেও খাবো।’

এটা শুনে বউ আদর মিশ্রিত সুরেলা কণ্ঠে বললো, ‘খেও। এখন আগে চলো ভাত খেয়ে আসি।’

আমাদের মান-অভিমান চলতে থাকবে।

২৫ বছর পর
আজ আমাদের মেয়ের বিয়ে । জীবনের এতো গুলো বসন্ত চলে গেল কিন্তু আমাদের ভালোবাসার একটুও কমেনি। আরোও বরং দিন দিন বাড়ছে।

জয় ভালোবাসার জয়।
জয় রোমান্টিক মূহুর্তের জয়।

সমাপ্ত

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে