নিশি_কাব্য ২য় পর্ব-
লেখা- Rudro Khan Himu
সেই ঘটনার পর আমি পুরোপুরি মানসিকভাবে ভেঙ্গে গেলাম।নিদারুণ কষ্টে কাটতে লাগল আমার একেকটা দিন।কোন কাজই করতে পারতাম না।মনে হত জীবন অর্থহীন।নিজেকে খুব ফালতু মনে হত।
১ বছর নিজের আবেগের সাথে যুদ্ধ করতে করতে আমি একসময় অন্যরকম এক মানুষ হয়ে গেলাম।শিখে গেলাম কেন আগে মেয়েরা আমাকে পছন্দ করত না,তারা কি চায়,আমাকে কি কি পরিবর্তন আনতে হবে নিজের মাঝে ইত্যাদি। কি অদ্ভূত আর কষ্টকর ছিল সেইসব শেখার অভিজ্ঞতা।নিজের সত্যিকার আবেগ,মূল্যবোধ,বিশ্বাস সব পরিবর্তন করার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হল।কিন্তু বদলে যাওয়ার যুদ্ধে একসময় আমি সফল হলাম।
মেয়েদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া,ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা বলা, গিফট উপহার দেয়া,মেয়েদের হাত ধরা, তাদেরকে ছোট-খাটো তাক লাগিয়ে দেয়া, হাসাতে হাসাতে চোখে পানি নিয়ে আসা- সব আমি এখন পারি। সবচে বড় কথা – মেয়েদেরকে দুর্বল করে কিভাবে তাদের আবেগকে নিয়ে খেলতে হয়- সেটাও আমি শিখেছি।কিছু করার নেই। এটাই পৃথিবীর নিয়ম।সবাই এমনি করছে। এ ছাড়া আমি আধুনিক যুগের সাথে তাল মিয়ে চলতে পারব না।
ঠিক এমন সময়ে নিশির (যার সাথে ১ বছর আগে আমার বিয়ে ভেঙ্গে যায়) আবার আমাকে ফোন করে।
-কেমন আছেন?
আমি খানিকক্ষণ একদম বজ্রাহতের মত চুপ করে থাকি।
-কি হল? কথা বলছেন না কেন?আপনার সাথে আমার একটু দেখা করা দরকার।সময় হবে?
-কেন চাইছেন?
আমার কণ্ঠে বিরক্তির সুর।
-প্লিজ।
কিছুক্ষন চলে চুপ থাকাথাকির খেলা।
আমার মাথায় হঠাৎ শয়তানি বুদ্ধি খেলে যায়।
-আচ্ছা ঠিক আছে।তবে শর্ত আছে।
-কি শর্ত?
কথার স্বরে মনে হয় যেন না শুনেই রাজি হয়ে যাবে।
-শাড়ি পড়ে আসতে হবে।
-আমি আসব।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
দুইজনে বসে আছি সবুজেঘেরা একটা মাঠের পাশে। পরিবেশ টা চমৎকার বাতাস বইছে। আমিই লোকেশন ও সময় ঠিক করলাম। একটা মেয়েকে মুগ্ধ করার জন্য সব কিছু প্ল্যান মত হওয়া চাই ।
-তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
শুনে একটু হাসল।
-আপনাকে দেখে দুর থেকে চিনতে পারিনি।অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছেন।
-তাই নাকি?তা আমার পাশে বসে থাকা অপরিসীম সুন্দরী রমনীর পছন্দের পাত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো কি আমার মাঝে এখন কিছুটা দৃশ্যমান হচ্ছে?
আমার বলার ভংগিতে নিশি খিল খিল করে হেসে উঠল।
-শুনুন,সেদিন আমি বুঝতে পারিনি-আপনি এত মজার মানুষ।
এনিওয়ে, আপনি চাইলে এই অপরিসীম সুন্দরী রমনীর হাতটা ধরতে পারেন।
এরপর হাসি-ঠাট্টা চলতেই লাগল। নিশি ঘুনাক্ষরেও বুজতে পারল না ।সবই ছিল আমার অভিনয়।এরপর থেকে নিশিকে নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতাম,বেশিরভাগ সময় তার হাত থাকত আমার হাতে।
আমার বুদ্ধিদীপ্ত আচরন, মজা করা, বিভিন্ন আবেগীয় কথা-বার্তা,গল্প বলা, ম্যাজিক দেখানো,চমকে দেয়ার মত কাজ করা, মাঝে মাঝে নিজের দোষ এর সহজ সরল স্বীকারোক্তি -সব কিছু তাকে এক অন্য কল্পনার জগতে নিয়ে যেত। নিশি তখনো জানত না-আমি আর সেই আগের সহজ-সরল আবেগময় একজন মানুষ নেই,আমি এখন পরিবর্তিত এক মানুষ যার কাছে ভালবাসা নামক সস্তা আবেগের কোন মূল্য নেই। নিশি সেটা এখুনি জেনে গেলে তার জন্য বোধহয় খুবই ভাল হত,আফসোস!!!
রাত ৩.৩৩
ভন ভন ভন (মোবাইলের ভাইব্রেশন এর আওয়াজ)
ঘুম ঘুম চোখে ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে দেখি নিশির ফোন
-হ্যালো
= ঘুমাচ্ছিলে?
– হুমম
=কয়টার দিকে ঘুমিয়েছ?
-১২ টা। তা তুমি এত রাতে, কি মনে করে?
-কেন, তোমাকে আমি কি এত রাতে কল করতে পারি না?
-আরে বাবা, তা না। কখনও তো কর না, তাই জানতে চাওয়া
=তোমার সাথে এমনিতে তো প্রায় সময়ই কথা হয়। কিন্তু কখনও এত রাতে কথা বলিনি। তাই ভাবলাম আজ একবার কথা বলি
– হু.উ.উ.উ [হাইয়ের শব্দ]
=তোমার কি বিরক্ত লাগছে?
-আর না কি বল?
-আসলে তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল……..। তাই এতো রাতে বিরক্ত করলাম।
-আমি একদম কিছু মনে করে নাই। আজকে সারাদিন তোমার কথা আমার ও অনেক বার মনে পড়েছে।
=থ্যাকং ইউ সাব্বির!
-একটা প্রশ্ন করি?
=কর
-সত্যি বলবে তো?
=আমি তোমার সাথে কখনও মিথ্যা বলেছি?
– তা অবশ্য বলনি। আচ্ছা সেই ফুচকার দোকানটায় প্রথম দেখা ও কথার পরে যে একবছর পরে তুমি হঠাৎ করে আমার সাথে যোগাযোগ করলে তার কারণটা জানতে পারি?
=হঠাৎ করে এই প্রশ্ন?
-না তেমন কোন কারণ নেই। মনের স্বাভাবিক কৌতুহল আর কি!
=কারণটা বলতেই হবে?
-বলতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই, এটা তোমার ব্যাপার। আমরা একে অপরের সাথে যেহেতু সারাজীবন থাকব তাই আমাদের সব বিষয়ে ক্লিয়ার থাকা ভাল না? অবশ্য ক্লিয়ার-টিলিয়ার কিছু না। আমার হঠাৎ এমনি মনে হল তাই জিজ্ঞেস করলাম
=আচ্ছা তো শোন, তোমার সাথে আমার প্রথম দেখার কয়েদিন পরই আমি ঢাকায় চলে যাই পড়ালেখার জন্য। কিন্তু ওখানে একটা সমস্যার কারণে আবার চলে আসি। আসার প্রায় এক সপ্তাহ পর আমি হঠাৎ করে তোমাকে শপিং কমপ্লেক্সে দেখি। শার্ট কিনছিলে তুমি। আমি তোমাকে দেখে প্রথমে ঠিক চিনতে পারিনি। মনে হচ্ছিল কেমন যেন চেনা চেনা লাগে। ইচ্ছে হচ্ছিল একবার গিয়ে জিজ্ঞেস করি। বাসায় গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম। কিন্তু কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিলাম না যে শপিং কমপ্লেক্সে যাকে আমি দেখেছি সে কে? তার সাথে কি আমার আগে পরিচয় ছিল? এরপর আবার ৩ দিন পরে আমি আবার ঐ শপিং কমপ্লেক্সটার সামনে দিয়েই রিকশা করে যাচ্ছিলাম আর তুমি ডাচ-বাংলার এটিএম বুথ থেকে বেরুচ্ছিলে। এবার ঠিক ঠিক চিনতে পারলাম। এরপরই আমি তোমাকে কল করি।
-আমাকে দেখলে, আর কল করে ফেললে?
=হুম
-তা দেখার সময়ই কি ভালোবেসে ফেলেছিলে?
=[লজ্জিত কন্ঠে] জানিনা
-অনেকটা মুভির টাইপের ঘটনা, তাইনা?
=হয়তো। তবে গল্প-উপন্যাস যাই হোক না কেন আমি অনেক খুশী।
-তাহলে এক কাজ করি, দুজনে মিলে একটা উপন্যাস লিখে ফেলি। লেখকের নাম থাকবে তোমার আর আমার নামের সংমিশ্রণে।
=তুমি শুধু দুষ্টুমি কর
-দুষ্টুমি তো আমি শুধু আমার লক্ষী জানের সাথে করি। অন্য কারও সাথে না
=জান, আমি না যা চাই তার থেকে অনেক বেশী পাই। আমি না কোনদিন ভাবতে পারিনি একটা ছেলে আমাকে এতটা ভালোবাসবে। আচ্ছা তোমার সাথে আমার আরও আগে পরিচয় হল না কেন?
-[চুপ]
=কথা বলছ না কেন?
-কি বলব? আসলে তোমার কথা শুনতে শুনতে আমি নিজেকে তোমার মাঝে হারিয়ে ফেলি। তখন কি বলব বুঝে উঠতে পারি না।
=এত ভালোবাসো আমাকে?
-ভালোবাসি কিনা তা জানি না। তবে তোমার কথা আমার প্রতিমূহুর্তেই মনে হয়। তোমাকে ছাড়া একটা দিন কিভাবে কাটাব তা ভাবলেই আমি শিহরণ বোধ করি। আর এটাকে যদি ভালোবাসা বলে তবে তোমাকে আমি ভালোবাসি। আচ্ছা একটা গান শোনাও তো
=এত রাতে?
-এত রাত কোথায়?
=না এখন না
-প্লিজ
=আমি কিন্তু বেশী শোনাতে পারব না
-আচ্ছা
”
.
ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে,
আমার পরানে যে গান বাজিছে তাহার তাল টি শিখো তোমার চরনমঞ্জীরে॥
ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে আমার মুখের পাখি তোমার প্রাসাদপ্রাঙ্গণে,
মনে করে সখী বাঁধিয়া রাখিয়ো আমার হাতের রাখী তোমার কনকঙ্কণে॥
আমার লতার একটি মুকুল ভুলিয়া তুলিয়া রেখো তোমার অলকবন্ধনে,
আমার স্মরন শুভ সিন্দুরে একটি বিন্দু এঁকো তোমার ললাটচন্দনে॥
আমার মনের মোহর মাধুরী মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো তোমার অঙ্গসৌরভে,
আমার আকুল জীবন মরন টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো তোমার অতুল গৌরবে॥
…………………………………………
…………………………………………
=হ্যালো
-[চুপ]
=ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?
-[চুপ]
=এটা কোন কাজ করলে তুমি? গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে……….. [কল করার জন্য আপনার অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকার কারণে আপনার সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে] টুট টুট টুট।
চলবে ?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/