নিশি কাব্য পর্ব-২২

0
1087

নিশি কাব্য পর্ব-২২
(রোমান্টিক সংসারে গল্প)
লেখা- Rudro Khan Himu

“ব্যতিব্যস্ত হয়ে সে বললো,
–না না লাইন কেটো না, শোন বলছি, ‘‘তখন আমি এসএসসি পরীক্ষা দিবো। পরীক্ষার মাসখানেক পূর্বে স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে গান গাই। সেদিন রাতে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে রাকিব আম্মুর মোবাইলে ফোন করে আমাকে চায়। বিষয়টি আমি ভালোভাবে নেই নি। কিন্তু লক্ষ করলাম আম্মু মহাখুশী। আম্মুর ভাবখানা এমন যেন তিনি আকাশের চাঁদ হাতের মুঠোয় পেয়েছেন। আমার সাথে কৌশলাদি বিনিময়ের পর সে বললো,
— তোমার কন্ঠ তো ভারী মজা! এতো সুন্দর গাইতে পারো? আর তুমি নিজেও কিন্তু খুব সুন্দরী ইত্যাদি ইত্যাদি। কথা পৃষ্ঠে কথা না বলে আমি শুধু তার দোয়া চেয়ে আম্মুর কাছে মোবাইলটা দিয়ে দেই। আম্মু তাকে বাসায় আসার জন্য দাওয়াত দেন।
এরপর থেকে সে মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসতো এবং বিভিন্ন উপলক্ষে আমাকে দামি দামি উপহার দিতো। ইতোমধ্যে আম্মুর লাইফ ইস্টাইলও পরিবর্তন হয়ে যায়। কেউ না জানলেও আমি জানি তার অর্থের উৎস কোথায়। বিষয়টি আমার বেসরকারী চাকুরীজীবী আব্বু ভালোভাবে নেন নি। এ নিয়ে আম্মুর সাথে আব্বুর প্রায়ই ঝগড়া হতো। তবে আম্মুর সাথে আব্বু পেরে উঠতেন না। এদিকে আম্মু পারে তো এখনই আমাকে রাকিবের হাতে তুলে দেয়! আম্মুর যেন তর সয়ছিল না। রাকিব এ এলাকার সবচেয়ে বড়লোকের ছেলে। তাছাড়া সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আমাদের বিষয় সম্পত্তি না থাকলেও আম্মু আমার সৌন্দর্য নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। আমার নয়নকারা রূপই ছিল আম্মুর আশার বাতি ঘর!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



“রাকিব বাসায় আসলে আমাদের দু’জনকে রেখে আম্মু বাইরে বেরিয়ে যেতেন। অনেকটা নিরাপদ অভিসারের সুযোগ করে দেওয়া আর কি! সে আমার সাথে নানান বিষয়ে গল্প করতো। সাত আসমান ভরা স্বপ্ন দেখাতো। সে বলতো তুমি এক আসাধারণ মেয়ে! কিন্তু আমি তো জানি আমি এক সাধারণ মেয়ে। ওদের পরিবারের কাছে আমি কিছুই না। কাতর হয়ে ভিখেরীর মতো প্রেম নিবেদন করতো। নির্জনতার সুযোগে মাঝে মাঝে মধ্য রাতের চোরের মতো সিঁধ কাটার চেষ্টা করতো। কখনো সুযোগ বুঝে প্রেম ভিখেরী থেকে ডাকাত সেজে আমার ‘কুমারী দূর্গে’ হানা দিয়ে অহংকার লুটে নেয়ার চেষ্টা করতো। কিন্ত আমি অনেক কষ্টে আগলে রেখেছি আমার অহংকার। আবেগে আপ্লুত হয়ে তার কাছে নিজেকে সঁপে দেয় নি।

“রাকিবের দেখানো স্বপ্নের ভেলায় চড়ে আমিও যে স্বপ্ন দেখিনি তা কিন্তু নয়। অবশেষে ‘সব হারিয়ে’ যাতে পস্তাতে না হয় সে জন্যে ”

আমি একটু সতর্ক ছিলাম। শুধু একটি শব্দ ‘কবুল’ এর প্রতীক্ষায় প্রহর গুণেছি। কিন্তু দু’বছর পর সে যখন মহাসমারোহে আমাদের কলেজের এক স্যারের ডাক্তার মেয়েকে বিয়ে করলো তখন আমার চেয়ে আমার আম্মু বেশী কষ্ট পেলেন। মনোযাতনায় মুষড়ে পড়লেন। বিষন্ন আম্মু বিড়বিড় করে বলতো, ‘আমি নিজের হাতে আমার মেয়ের সর্বনাশ করলাম! খাল কেটে কুমির ডেকে এনেছিলাম! সে আমার পারুলকে এভাবে ধোঁকা দিতে পারলো? আম্মুর হাঁড়ি মুখ দেখে আমার হাসি আসতো। মনে মনে বলতাম ‘অতি আশা বাঘের বাসা’ বুঝ এবার মজা!’’

–তন্ময় হয়ে মেয়েটির কথা শুনছিলাম। আমি লাইনে নেই ভেবে মেয়েটি হ্যালো বলে সংযোগ আছে কিনা যাচাই করে নিলো। আমার সাড়া পেয়ে বললো,
–‘‘জানো আমরা মেয়েরা সহজেই ছেলেদেরকে বিশ্বাস করে ফেলি। এটা আমাদের দুর্বলতা। রাকিবের বিয়ের পর আমি যখন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি হয়ে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছি তখন আমার সহপাঠী ‘সোহান’ সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। কখন যে তার মায়ার জালে জড়িয়ে পড়ি তা টেরই পাইনি। সোহানেরর ভালবাসা পেয়ে আমার মাঝে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয়। আবারো রঙ্গিণ স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। হোঁচট না খাওয়া পর্যন্ত আমি বুঝতেই পারি নি যে সোহান রাকিবের চেয়েও ধূর্ত এবং চতুর আমার সব কিছু উপভোগ করে চলে যায়!

এর পর থেকে ছেলেদের প্রতি আমি প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠি এবং মোবাইলে প্রেমের মিথ্যা ।

অভিনয় করে প্রতিশোধ নিতে শুরু করি। আজ অসময়ে তোমাকে ফোন করলাম একটি সুখবর দেওয়ার জন্য।’’ আমি বললাম,
— ভালো কথা, সুখবর দেয়া এবং শুনা দুটোই সুখের। এবার বলো তো তোমার সুখবরটা কি? সে খুশী হয়ে বললো,
–‘‘জানো আমি ভয়ংকর এ নেশা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভাবছি আবারো পড়াশুনায় মন দিবো। জিদ করে, অভিমান করে জীবনটাকে নষ্ট করা চরম বোকামী। দিশেহারা-গতিহারা জীবনকে নতুনভাবে সাজাবো।’

ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম,
— এটা তো একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত! মেয়েটি সিরিয়াস হয়ে বললো,
— তুমি কি আমার সাথে মশকরা করছো? দ্রুত বললাম, –না না মশকরা করবো কেন? আচ্ছা একটি কথা বলো তো তোমার এ সিদ্ধান্তের কথা আমাকে জানাচ্ছ কেন? কাতর স্বরে মেয়েটি বললো,
–‘‘বিশ্বাস করো তোমাকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখছি! তুমি সে দিন ভোরে বলেছিলে, ‘ম্যাইনে তুজকো দিল দিয়া হ্যায়, তুনে মুজকে কিয়া দিয়া/তেজী ছুরি হাত মে লে কার পারা পারা কর দিয়া।’ সেদিন তোমার ভাবাবেগ, মোহাড়ষ্ট কণ্ঠ শুনে মনে হলো সত্যিই তুমি আমাকে ভালোবাসো! আমি তোমাকে অন্য ছেলেদের মতো পরিচয় না দিয়ে। ধরা দেই দেই করে ধরা না দিয়ে কতো কষ্ট দিয়েছি। প্লিজ, তুমি কিছু মনে করো না।’’

চলবে ?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে