নিশি কাব্য পর্ব-২১

0
1451

নিশি কাব্য পর্ব-২১
(রোমান্টিক সংসারে গল্প)
লেখা- Rudro Khan Himu

“মেজাজ চড়তে চড়তে সপ্তম আকাশে গিয়ে ঠেকেছে। চড়া গলায় বললাম, এতো রাতে ফোন করেছেন কেন? সে হাসতে হাসতে বললো, ‘‘আমার ইচ্ছে হলো তাই করলাম!’’ মন চাচ্ছিল এক থাপ্পরে ওর সবকয়টা দাত ফেলে দেই কিন্তু সম্ভব নয় বলে অসহায়ের মতো ফোন বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ি। মোবাইল ফোন যখন ছিল না তখন ঠিকই সূর্য উদয়-অস্ত হয়েছে কিন্তু এখন এ যন্ত্রটি চালু না থাকলে সূর্য যেন নড়তে চায় না। বাধ্য হয়ে সকাল বেলা ফোনটি অন করি। মনে হলো মেয়েটি আমার ফোন অন করার অপেক্ষায় ছিল। হালকা পাতলা গালি দিয়ে লাইনটি কেটে দেই। কাছের কেউ রহস্য করছে ভেবে বাংলা সিনেমার খল নায়কদের মজাদার (!) গালি ইচ্ছে করেই দেই নি।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



বেশ কিছু দিন হয়ে গেল কোনোভাবেই মেয়েটিকে থামানো যাচ্ছে না। এদিকে নিশি’ কিছুটা মুখ ভারি করা শুরু করেছে। একদিন কাকঢাকা ভোরে ফোনটি বেজে উঠে। পাশের মানুষটি ঘুমিয়ে আছে ভেবে মেয়েটির রসালো গল্পে রস ঢালতে শুরু করি। উদ্দেশ্য ছিল আরো ঘনিষ্ট হওয়ার ভান করে তার পরিচয় জানা। এক পর্যায়ে মেয়েটি বলে উঠে, ‘তোমার কি ইচ্ছে করে না আমার কুমারী দূর্গে হানা দিয়ে সবকিছু লুটে নিতে?’

মেয়েটির সম্বোধন এবং আবেদনে আমার আপাদমস্তক বিদ্যুৎতাড়িত হয়ে দুলে দুলে উঠে! মনে শঙ্কা জাগে তাহলে কি আমি কারো ট্রেপে পা দিচ্ছি? কিন্তু ওর যাদুময়ী কন্ঠ, মোহনীয় হাসি সাক্ষ্য দেয় না যে, সে পেশাদার . . .। শত চেষ্টা করেও তার পরিচয় নিতে পারি নি।

সকাল বেলা তাড়াহুড়ো করে অফিসে যাওয়ার দরুন নিশির চেহারার দিকে ভালোভাবে তাকাইনি বা তাকানোর প্রয়োজনবোধ করি নি। কিন্তু রাতে বাসায় ফিরে পুতুল বউয়ের মুখ দেখে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। এ কি দশা তার! জানতে চাইলাম, কি হয়েছে তোমার? কোনো রা নেই। মনে হলো সুপার গ্লু দিয়ে দু’ঠোঁট আটকিয়ে দেয়া হয়েছে। দুমড়ানো-মুচড়ানো চেহারা। উম্মাদ টাইফুনের ভয়াবহ অত্যাচারের পর উপকূলীয় অঞ্চলের যে দশা হয় সে দশা হয়েছে আমার পুতুল বউয়ের! এভাবে চলে একটানা তিনদিন। আমাদের অফুরন্ত সুখ আর উচ্ছল হাসি ঢেকে যায় বিষাদের ছায়ায়। কোনো কিছুতেই মন বসে না। একজন মানুষের মুখ ভারীর কারণে আজ পুরো সংসারটাই একটা নরকে পরিণত হয়েছে। মেয়েটার ও সারাদিন মন মরা হয়ে থাকে।

তিন দিন পর গভীর রাতে অভিমানী পুতুল বউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে একটু আদুরে গলায় বললাম, কি হয়েছে তোমার? আমি এমন কি বেয়াদবি করলাম যে, নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছো? হতাশ এবং ভারাক্রান্ত গলায় বললাম, এতো অশান্তি আর ভালো লাগে না। স্বামীজির আদর পেয়ে বউ আমার ডুকরে কেঁদে উঠে!

“কাঁদতে কাঁদতে বললো, ‘
–সত্যি করে বলো তো মেয়েটির সাথে তোমার কি সম্পর্ক?’ আশ্চর্য হয়ে বললাম,
— কোন মেয়েটি? পুতুল বউ রেগে বললো,
— ‘আহারে হুজুর আমার কিচ্ছু বুঝে না! কেন? যে মেয়েটির সাথে মোবাইলে প্রেম কর সেই মেয়েটি?’ হেসে বললাম আরে বেকুফ,
–ওর সাথে প্রেম করতে যাবো কেন? কণ্ঠের ঝাজ কিছুটা কমিয়ে পুতুল বউ বললো,
–‘কথা লুকানোর একদম চেষ্টা করো না; তুমি কি মনে করছো সেদিন ভোরে তোমাদের প্রেমালাপ কিছুই শুনি নি?’

ভারি কণ্ঠে কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বললাম,
–প্রায় ৬ বছর ঘর সংসার করে আমার সম্পর্কে তোমার এই মূল্যায়ন? এই বিশ্বাস? শ্লেষাত্মক কণ্ঠে নিশি বলেছে‘
–পুরুষ মানুষকে আর বিশ্বাস! বলেই সে পাশ ফিরে ঘুমানোর ভান করে। পুতুল বউকে শান্ত করার জন্য রবি ঠাকুরের দুর্বোধ কবিতার-

‘কিছু আমি করিনি গোপন/যাহা আছে সব আছে তোমার আঁখির কাছে/প্রসারিত অবারিত মন/দিয়েছি সমস্ত মোর করিতে ধারনা/তাই মোরে বুঝিতে পার না? পক্তি কয়টি শুনিয়ে পাশের রোমে চলে যেতে যেতে ক্ষেদোক্তি করলাম, কোথাকার এক ‘নটি’র ফোনে যদি এক যুগের পথ চলা ছন্দ হারিয়ে ফেলে তাহলে এমন অনিশ্চয়তার পথে না চলাই ভালো। অনুযুগের স্বরে বললাম, আমি তো কোন দিন ওকে ফোন করিনি? সে ফোন করলে আমি শুধু পরিচয় জানার চেষ্টা করি।

মেয়েটি সাধারণত রাতের শেষাংশে ফোন করে। কিন্তু এবারই অনেক দিন বিরতির পর এক পড়ন্ত বিকেলে ফোন করলো। আমার হ্যালো শুনেই আশ্চর্য হয়ে বললো,
— ‘‘আচ্ছা তুমি কেমন মানুষ? নিজে থেকে আমাকে একদিনও ফোন করো না? আমাকে নিয়ে তোমার মনে কোনো আগ্রহ নেই? অন্য ছেলেরা পারে তো আমাকে কাঁচা খেয়ে ফেলে!’’
— অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, অন্য ছেলেদেরকেও ফোন করো নাকি? হৃদয়ে ঝড় তুলা সেই হাসি দিয়ে মেয়েটি বললো,
–‘‘আরে একজনকে নাকি? কত ছেলের যে ঘুম হারাম করে দিয়েছি! এটি আমার নেশা। ফোনে মিথ্যা প্রেমাভিনয় করে ছেলেদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলি। আমাকে পাবার জন্য তারা যখন অস্থির হয়ে উঠে, কাতর হয়ে চটপট করতে থাকে তখন আমি সিম পরিবর্তন করে কেটে পড়ি। এভাবে ছেলেদেরকে প্রতারিত করে, কষ্ট দিয়ে আনন্দ পাই।’’

“–এটি তো একটি জঘন্য গর্হিত কাজ। এমন করো কেন? জানতে চাইলাম আমি।
–‘‘কারণ ছাড়া তো আর আমি এমন করছি না। ঠিক না?
’’ –সে কারণটা কি আমি জানতে পারি? সে বললো, ‘‘–হ্যা, ঘটনাটি তোমাকে বলা যায়। কারণ আমি তোমাকে নিয়ে . . .’’ কথা শেষ না করে থেমে যায়। বললাম,
–কী ব্যাপার থেমে গেলে যে? হালকা খাঁকারি দিয়ে সে বললো,
— ‘‘আমার ষষ্ট ইন্দ্রিয় বলছে তুমি ভালো মানুষ তাই তোমাকে বিশ্বাস করা যায়।’’ ঈষৎ বিরক্তির সাথে বললাম,
— আরে বাবা তুমি কি কারণে ছেলেদেরকে প্রতারিত করছো সেটা বলতে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কথা আসছে কেন? সম্ভব হলে বলো নইলে লাইন কেটে দিলাম।
চলবে ?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে