নিভৃত রজনী পর্ব-৪+৫

0
264

নিভৃত রজনী
| ৪ | (১৩০০+ শব্দ)

চাঁদনী শেষমেষ সিদ্ধান্ত নিল দরজা খুলবে। শরীরে এবং মাথায় ভালো করে ওড়না পেঁচিয়ে দরজাটা খুলল ও। সাথে সাথেই এক পশলা দমকা হাওয়া ছুঁয়ে গেল ওর সর্বাঙ্গ। দরজা খুলে ওপাশের মানুষটাকে দেখে ওখানেই থমকে গেল চাঁদনী।

চোখাচোখি হলো চারটি চোখে। দরজার ওপাশে দাঁড়ানো মানুষটির চোখে ক্লান্তি আর বিরক্তি থাকলেও চাঁদনীর চোখে মুগ্ধতা। চাঁদনী খুব করে বুঝতে পারল, কিছু একটা হয়ে গেছে। এই কি তবে সর্বনাশের শুরু?

এভাবে কতক্ষন কেটে গেল কে জানে। বিরক্তি সরে বিষ্ময় ফুটে উঠল দরজার ওপাশে দাঁড়ানো মানুষটার চেহারায়। প্রথমেই সে প্রশ্ন করল, “আপনি কে?”

চাঁদনী বুঝতে পারল না ঠিক কী উত্তর দেবে। ওর নিজের মনের মধ্যেও তো এই একই প্রশ্ন ঘুরছে “কে লোকটা?”

চাঁদনী আমতা আমতা করে কিছু একটা বলতে যাবে, তার আগেই পিছন থেকে কথা বলে উঠল বাড়ির কাজের মহিলা টুলুর মা।

“আপু, আপনি ঘরে যান। আমি দেখছি।”

হঠাৎ বোধোদয় হলো চাঁদনীর। এতক্ষন কিনা একজন অচেনা অজানা পুরুষের সামনে বেহায়ার মতো তাকিয়ে ছিল। ছিহ! এরকম একটা কাজ ও করল কী করে? দ্রুতপায়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেল চাঁদনী। পিছন থেকে ছেলেটি শুধু হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকল সেদিকে।

৭.
অ্যালার্মের শব্দে ঘুমঘুম চোখে উঠে বসল নম্রতা। আজ সকাল নয়টায় একটা ক্লাস আছে। সেজন্যই এত জলদি ওঠা। বালিশের নিচে থেকে ফোন বের করে অ্যালার্মটা বন্ধ করল ও। স্ক্রিনে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, আঠারোটা মিসড কল, টেক্সট ও বেশ কয়েকটা। রোজ রাতে কল আর টেক্সট দিয়ে বিরক্ত করা আতিকের নিত্যদিনের অভ্যাস। আতিকের এই অহেতুক অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য রোজ মোবাইল সাইলেন্ট মোডে রেখে ঘুমাতে হয় নম্রতাকে। কিন্তু আতিক তো এতগুলো কল দেয় না কখনও।

নম্রতা কললিস্টে ঢুকে দেখল আতিকের নাম্বার থেকে আটটা কল এসেছে। আর বাকীগুলো সবই করেছে নওয়াজ। নম্রতা অবাক হলো কিছুটা। ভাবল, নাস্তা করে ভার্সিটি যেতে যেতে কলব্যাক করে নেবে। ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখল ওর বাবা জামশেদ সাহেব ইতোমধ্যে নাস্তা করতে এসে পড়েছেন। কোনার দিকের একটা চেয়ারে বসে চাঁদনী নামের মেয়েটিও খাচ্ছে। নম্রতা একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল, “গুড মর্নিং।”

জামশেদ সাহেব প্রতিউত্তরে বললেন, “গুড মর্নিং।”

চাঁদনী চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। নওয়াজ দোতলা থেকে নামল হাই তুলতে তুলতে।

আসলে সপ্তাহের এই একটা দিনই পরিবারের সব সদস্যরা একসাথে সকালের নাস্তা করে। এইদিনে নওয়াজ আর নম্রতা দুজনেরই প্রায় একই সময়ে ঘুম থেকে উঠতে হয় ভার্সিটির ক্লাস ধরার জন্য। জামশেদ সাহেবকেও ফিক্সড করা উইকলি একটা মিটিংয়ের জন্য জলদি অফিস যেতে হয়।

নওয়াজ নিচে নেমে নম্রতার ঠিক পাশের চেয়ারটাতেই বসল। নম্রতা ওকে দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, “ভাইয়া, তুমি কখন এলে?”

“গতকাল রাতে। এসে আধঘন্টার মত বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাসার সবার হয়েছিল কী কাল? এতবার বেল বাজালাম, অথচ কেউ দরজা খুলল না। তোকে ফোনে অন্তত দশবারের উপরে ট্রাই করেও কোনো রেসপন্স পাইনি। মা নাহয় স্লিপিং পিল নেয় বলে টের পায়নি। কিন্তু তুই টের পেলি না কেন?”

“কানে হেডফোন নিয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। তাই মনেহয় কলিংবেল টের পাইনি। আর ফোনটাও সাইলেন্ট মোডে ছিল। এনিওয়ে, দরজাটা শেষপর্যন্ত খুলল কে?”

কেন জানি হুট করে মিথ্যেটাই বলল নওয়াজ, “টুলুর মা খুলেছে।”

খাবার তুলতে গিয়েও চাঁদনীর হাতটা থেমে গেল কয়েক সেকেন্ডের জন্য। তারপরে আবার খাওয়া শুরু করল ও। গতকাল রাতের ব্যাপারটার জন্য এখনও কিছুটা অপ্রস্তুত লাগছে ওর।

মরিয়ম খাতুন বললেন, “গতকাল সকালে যখন তোর সাথে ফোনে কথা হলো তখন তো বলেছিলি কাল ফিরতে পারবি না। আগে থেকে সব জানা থাকলে টুলুর মাকে জেগে থাকতে বলতাম নাহয়।”

“আসলে হুট করেই আকরামের একটা কাজ পড়ে গিয়েছিল, তাই ভেবেছিলাম ফেরা হবে না। কিন্তু পরে আবার ডিসিশান চেঞ্জ করেছি।”

“ও।”

মরিয়ম খাতুন ছোট্ট একটা জবাব দিয়ে থেমে গেলেন।

নওয়াজ খেতে খেতে চাঁদনীর দিকে ইশারা করে বলল, “আম্মু, এটা কে?”

চাঁদনী কিছুটা নড়েচড়ে বসল। কেন জানি প্রশ্ন করার ধরনটা খুব একটা ভালো লাগল না ওর। চাইলে আরেকটু সুন্দর ভাবেও জিজ্ঞাসা করা যেত কথাটা। পরিচয়ের প্রথম দিন নম্রতাও ঠিক এরকম তাচ্ছিল্যের সুরেই কথা বলেছিল। বুদ্ধিমতী চাঁদনী বুঝে গেল, এদের সাথে খুব একটা প্র‍য়োজন ছাড়া কথা বলা যাবে না। যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে।

মরিয়ম খাতুন বললেন, “আমার এক আত্মীয়ের মেয়ে। মেডিকেল অ্যাডমিশন কোচিং করতে ঢাকায় এসেছে। কিছুদিন এখানেই থাকবে।”

“ও।” কোনোরকমে উত্তর দিল নওয়াজ।

চাঁদনী সবার আগেই খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়াল। তারপর নিঃশব্দে প্রস্থান করল ডাইনিং রুম থেকে।

৮.
কোচিং ক্লাসের প্রথম দিন সকাল বেলাতেই এসে হাজির হলো তামজীদ। নম্রতা তখন কেবল ঘুম থেকে উঠে মর্নিং ওয়াকের জন্য বের হবে। ইদানিং একটু বেশিই স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছে ও। সেজন্যই মর্নিং ওয়াক শুরু করেছে। যদিও বেশিরভাগ দিন, ঘুমের বিসর্জন দিয়ে হাঁটতে যাওয়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু মাঝে মাঝে সব আলস্য ঝেড়ে ও উঠে পড়ে সকাল সকালই।

দোতলা থেকে নামার সময়েই কলিং বেলের শব্দ শুনতে পেল নম্রতা। এগিয়ে এসে দরজা খুলল। লোকটাকে চেনে ও। চাঁদনীর ভাই। কয়েকদিন আগে আরও একবার এসেছিল বাসায়। একবার তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিল লোকটা। নম্রতা ভ্রু কুঁচকে ফেলল। এরা সবগুলো ভাই কি একইরকম? সেদিন তানিম লোকটাও কথা বলছিল নিচের দিকে তাকিয়ে। নম্রতা দরজা থেকে সরে বলল, “ভেতরে আসুন।”

তামজীদ ভেতরে এসে বসল। তারপর নম্রতাকে বলল,”আপু, আপনি প্লিজ একটু চাঁদনীকে ডেকে দিন।”

নম্রতা একবার ভাবল টুলুর মাকে বলবে চাঁদনীকে ডেকে দিতে। তারপর মত বদলে নিজেই আবার ডাকতে গেল। মাথা নিচু করে থাকা একটা লোকের সামনে থাকতে অস্বস্তি লাগছে ওর। আর লোকটার সামনে দিয়ে বাইরেও চলে যাওয়া যাবে না। তাহলে আবার মা রেগে যাবে। মেহমানদের সামনে সামান্য অভদ্রতা করলেও রেগে আগুন হয়ে যায় মা।

চাঁদনীর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নম্রতা নক করল। দরজা খুলে ওকে দেখে খানিকটা অবাক হলো চাঁদনী। নরম গলায় প্রশ্ন করল, “আপু, আপনি? কিছু বলবেন?”

চাঁদনীর গেটাপ দেখে নম্রতার প্রচন্ডরকম হাসি পেয়ে গেল। কালো ঢিলেঢালা একটা বোরখায় নিজেকে পা থেকে মাথা অব্দি ঢেকে রেখেছে। শরীরের অবয়ব বোঝার সামান্য উপায়টুকুও নেই। শুধু মুখটা ঢেকে দিলে আপু নাকি আন্টি সেটা বোঝারও উপায় থাকবে না।

নম্রতা বলল, “তোমার ভাই এসেছে। তোমাকে ডাকছে নিচে।”

“এখনই যাচ্ছি। ধন্যবাদ আপু।”

নম্রতা জবাব না দিয়ে ফিরে যেতে পা বাড়াল। তারপর আবার চাঁদনীর দিকে ফিরে বলল, “কোথায় যাচ্ছ, কোচিং-এ? ”

“হ্যাঁ।”

“আমার মনেহয় তোমার কোচিং করাটা উচিৎ হচ্ছে না। বেটার হবে একজন হুজুর দেখে বিয়ে করে ফেলো।”

নম্রতার চেহারায় কৌতুক। বোরখা পড়ার জন্যই যে খোঁচাটা দেওয়া হয়েছে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হলো না চাঁদনীর। এই খোঁচার উপযুক্ত জবাবও জানা আছে চাঁদনীর। কিন্তু এই বাড়িতে থেকে নম্রতার সাথে লাগতে যাওয়াটা ঠিক বলে মনে হলো না ওর। মুচকি হেসে পাশ কাটিয়ে গেল চাঁদনী। নম্রতাও সাথে সাথে নেমে এসে বেরিয়ে গেল মর্নিং ওয়াকের জন্য।

চাঁদনী নিচে নেমে দেখল তামজীদকে একপ্রকার জোর করেই নাস্তার টেবিলে বসিয়েছেন মরিয়ম খাতুন। তিনি খাবার এগিয়ে দিতে দিতে তামজীদকে প্রশ্ন করলেন,

“আজ তো চাঁদনীর প্রথম ক্লাস। তুমি নিয়ে যাবে ওকে?”

“জি, আন্টি।”

“কিন্তু তোমার জন্য তো অনেকটা দূর হয়ে যাচ্ছে। এভাবে রোজ যাতায়ত করে আবার কলেজের ক্লাস ধরতে পারবে?”

“না, তা তো পারব না। আপাতত সাত দিনের ছুটি নিয়েছি। এই সাতদিন আমি নেওয়া আনা করব, তারপর সাখাওয়াত ভাই আসবেন। তিনি এসে ব্যবস্থা করে দিয়ে যাবেন সব।”

“কী ব্যবস্থা?”

“সাখাওয়াত ভাই ভেবেছেন একটা গাড়ি কিনে ড্রাইভার ঠিক করে দিয়ে যাবেন। যাতে চাঁদনীর যাতায়তে কোনো সমস্যা না হয়।”

“সেকি। আমাদের বাড়িতেই তো তিন তিনটা গাড়ি। তারপরেও ওর চলাচলের জন্য তোমরা আলাদা করে গাড়ি কিনে কেন পাঠাবে? চাঁদনী আমার বাসায় যেহেতু আছে, ওর সুবিধা অসুবিধা দেখাটা তো আমাদেরও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বুঝেছি, তোমরা বোধহয় সেভাবে আমাকে ভরসা করতে পারছ না?”

“ছি ছি! কী বলছেন এসব? আপনাকে ভরসা করি বলেই তো আমাদের আদরের বোনটাকে আপনার এখানে রেখেছি। সত্যি বলতে এরকম বিশ্বাসযোগ্য একজনকে না পেলে কখনোই চাঁদনীকে এতদূরে আসতে দিতাম না আমরা।”

“তাহলে তো হয়েই গেল। চাঁদনী এবাড়ির গাড়িতেই যাতায়ত করবে। প্রয়োজনে আমি নিজে কিছুদিন ওর সাথে যাব।”

তামজীদ আর আপত্তি করল না তেমন। মরিয়ম খাতুনকে বিদায় জানিয়ে চাঁদনীকে নিয়ে বের হয়ে এলো।

প্রথমদিনের ক্লাসে খুব একটা খারাপ লাগল না চাঁদনীর। টুকটাক কথা বলে দুই একজন বন্ধুও জুটে গেল। বেশিরভাগই যদিও একেবারে অন্যরকম। কেমন জানি একটা আত্ম-অহংকার আর দাম্ভিকতা ফুটে ওঠে এদের আচার-আচরণ আর কথাবার্তায়। কে জানে, শহরের মানুষগুলো বোধহয় এমনই হয়।

কোচিং থেকে ফেরার পথে তামজীদকে নিয়ে নার্সারিতে গেল চাঁদনী। বেছে বেছে কয়েকটা ফুলের চারা কিনল ব্যালকনিতে লাগানোর জন্য। গতকাল রাতেই ব্যালকনিতে ফুলের চারা লাগানোর জন্য মরিয়ম খাতুনের থেকে পারমিশন নিয়েছিল ও। তিনি সানন্দেই মত দিয়েছেন।

চাঁদনী বাড়ি ফিরে দেখল মরিয়ম খাতুন মালীকে বলে মাটিভর্তি টব ব্যালকনিতে নিয়ে রেখেছেন আগেই। ওর ভালো লাগল খুব। আসার পর থেকে জামশেদ সাহেব, নওয়াজ আর নম্রতার গা-ছাড়া আর অবজ্ঞাসূচক আচরণে কিছুটা হলেও মন খারাপ হয়েছিল ওর। কিন্তু মরিয়ম খাতুন প্রথম থেকেই অত্যন্ত আন্তরিক ওর সাথে।

এই বাড়িতে অন্তত একজন হলেও ওর সাথে একটু ভালো আচরণ করেছে, এটা ভেবেই খুশি লাগল চাঁদনীর। বোরখা পালটে সাথে সাথেই গাছগুলো টবে লাগাতে শুরু করে দিল ও।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

নিভৃত রজনী
| ৫ | (১৭২০+ শব্দ)

এই বাড়িতে অন্তত একজন হলেও ওর সাথে একটু ভালো আচরণ করেছে, এটা ভেবেই খুশি লাগল চাঁদনীর। বোরখা পালটে সাথে সাথেই গাছগুলো টবে লাগাতে শুরু করে দিল ও।

মরিয়ম খাতুন পিছনে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকলেন প্রাণবন্ত স্বতঃস্ফূর্ত বালিকাটিকে। একটা দীর্ঘশ্বাসও বোধহয় বেরিয়ে এলো তার বুক চিড়ে। তিনিও তো একসময় ঠিক এমনই চঞ্চল ছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেসব কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।

৯.
ট্যুর থেকে ফেরার পর থেকেই নওয়াজের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। একই অবস্থা ওর অন্য চারজন বন্ধুরও। ওরা পাঁচ বন্ধুই বর্তমানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর কোর্সে অধ্যয়নরত। আর কয়েকমাস পরেই ওদের ফাইনাল এক্সাম। সেজন্যই ওরা এখন পড়াশোনা নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ত। ফাইনাল এক্সামের প্রিপারেশন নেওয়ার সময় ব্রেইনের উপরে প্রেসার পরে খুব। তাই রিফ্রেশমেন্ট আর রিল্যাক্সের জন্য কিছুদিন আগের ট্যুরটা দিয়েছিল পাঁচজন মিলে। ট্যুর থেকে ফিরেই আবার নিজেদের পুরোনো ফর্মে ফিরে এসেছে সবাই। ওরা সবাই তুখোড় মেধাবী। সেজন্য নিজেদের সর্বোচ্চটাই চেষ্টা করতে চায়।

নওয়াজ আজকাল বাসা থেকে বের হয় না বললেই চলে। পুরোটা সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখে বইয়ের পাতায়। নওয়াজের খুব পুরোনো একটা অভ্যাস আছে। খুব বেশি পড়াশোনার চাপ থাকলে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ মিনিট অন্তর অন্তরই চা অথবা কফি লাগে ওর।

অনান্য দিন টুলুর মা নিজেই সন্ধ্যার পর একফ্লাস্ক চা অথবা কফি করে দিয়ে যায়। অথচ আজ এখন অব্দি কোনো খবর নেই। অনেকক্ষন অপেক্ষা করে শেষে বই হাতে দোতলা থেকে নেমে এলো নওয়াজ। নিচে নেমেই রান্নাঘরে খুটখাট শব্দ শুনতে পেল। নওয়াজ বইয়ের দিকে তাকাতে তাকাতে এগিয়ে গেল সেদিকে। রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ভেতরে না তাকিয়েই প্রশ্ন করল, “কী ব্যাপার টুলুর মা, এখনও আমার রুমে চা দাওনি কেন?”

কিছুক্ষন অপেক্ষা করে ওপাশ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে চোখ তুলে সামনে তাকাল নওয়াজ এবং তাকিয়েই বেশ বিব্রতবোধ করল। সেদিনের মেয়েটা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। কী যেন একটা নাম বলেছিল মা, হুট করেই মনে করতে পারল না নওয়াজ। নাম দিয়ে অবশ্য দরকারও নেই কোনো। নওয়াজ বলল, “স্যরি। আমি ভেবেছিলাম টুলুর মা এখানে। আসলে এই সময়ে রোজ আমার রুমে চা দেওয়া হয়। সেজন্যই এখানে এসেছিলাম। আমি জানতাম না যে তুমি এখানে আছো।”

নিজের কথা শুনে নিজেই অবাক হয়ে গেল নওয়াজ। শেষ কথাটুকু কি কৈফিয়তের মতো শোনাল? কে জানে? নওয়াজ ফিরে যেতে পা বাড়াল। চাঁদনী কথা বলে উঠল, “আসলে আপা মানে টুলুর মা আজ বিকালেই তার দেশের বাড়িতে গেছেন। ওনার বাবা মারা গেছেন তাই। তিনি রোজ সন্ধ্যায় আমাকেও চা করে দেন। আজ তিনি নেই বলে আমি নিজেই এসেছি চা বানাতে। আমি বেশি করেই বানিয়েছি। ফ্লাস্কে রাখা আছে। আপনার প্রয়োজন হলে এখান থেকে নিতে পারেন।”

মেয়েটির সাথে বেশ কয়েকবার দেখা দেখা হলেও ওর কন্ঠস্বর এই প্রথমবার শুনল নওয়াজ। কথা শুনে কিছুটা অবাকও হয়েছে বটে। প্রথম দর্শনে মেয়েটির বাহ্যিক বেশভূষা দেখে যেরকম মনে হয়েছিল তার সাথে আজকের কথা বলার ধরন মিলাতে পারল না মোটেও।

প্রথম যেদিন ওকে নওয়াজ দেখেছিল সেদিন ফুলহাতা ঢোলাঢালা কামিজ ছিল পড়নে, ওরনাটা এমন আঁটসাঁট করে মাথায় এবং শরীরে প্যাচানো ছিল যে একটা চুল অব্দি দেখা যাচ্ছিল না। সেদিন মেয়েটাকে দেখে একেবারেই আনস্মার্ট বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু আজ তার কথার বলার ধরন দেখে কিছুটা হলেও ধারনা বদলাল নওয়াজের। গ্রাম্য মেয়েরা সাধারনত এত সাবলীলভাবে কথা বলতে পারে না অপরিচিত বা স্বল্পপরিচিত কারও সাথে। কেমন একটা সংকোচ এবং লজ্জাবোধ করে। কিন্তু এই মেয়েটি একদমই তেমন নয়। এমনকি কথায় কোনো গ্রাম্য বা আঞ্চলিক টানও নেই। আরেকটা ব্যাপারও নওয়াজকে বেশ ইমপ্রেস করল। মেয়েটির গলার স্বর৷ এত নীচু স্বরে এর আগে কখনও কাউকে কথা বলতে শোনেনি নওয়াজ। শান্ত নিরিবিলি একটা কন্ঠস্বর। ঠিক যেন গুন গুন করে গান গাইছে কেউ।

মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে এখনও। বোধহয় নওয়াজের উত্তরের অপেক্ষা করছে। নওয়াজ বলল, “আমার তো এককাপ চায়ে হবে না। আমি যদি পুরো ফ্লাস্কটাই নিয়ে যাই, তুমি কি আবার নতুন করে বানাতে পারবে?”

চাঁদনী বলল, “জি, সমস্যা নেই৷ আপনি নিয়ে যান। আমি আবার বানিয়ে নেব।”

“ওকে।”

নওয়াজ নিজেই এগিয়ে এসে ফ্লাস্কটা নিল। দুজনের মধ্যে এক হাতেরও বেশি দুরত্ব। তবুও চাঁদনী অনুভব করল, ও মৃদু কাঁপছে। ব্যাপারটা চোখ এড়াল না নওয়াজেরও। হাসল নওয়াজ। যতই স্বাভাবিকভাবে কথা বলুক, আর পাঁচটা গ্রাম্য মেয়েদের স্বভাবসুলভ বৈশিষ্ট্য কিছুটা এই মেয়েটির মধ্যেও আছে।

নওয়াজ চলে যাওয়ার পর চাঁদনী আবার নতুন করে চা বসাল। তারপর দুটো কাপে চা ঢেলে নিয়ে মরিয়ম খাতুনের রুমের দিকে গেল। তিনি চাঁদনীকে দেখে বললেন, “তুমি চা বানিয়ে নিয়ে এসেছ নাকি? কেন? আমি নিজেইতো এখন যাচ্ছিলাম রান্নাঘরে।”

“আমি বানিয়েছি তো কী হয়েছে? একদিন আমার বানানো চা খেয়ে দেখুন। খুব একটা খারাপ বানাই না আমি।”

চাঁদনী হাসছে। মরিয়ম খাতুন বললেন, “পাগল মেয়ে, আমি কি একবারও বলেছি তুমি খারাপ চা বানাও? আমি তো ভাবছিলাম, তোমার পড়ার ক্ষতি না হয় আবার।”

“কিছুক্ষনের ব্যাপার তো। এতে আর কী এমন ক্ষতি হবে। আপনার সাথে বসে চা-টা শেষ করেই পড়তে যাব।”

মরিয়ম খাতুন হাসলেন। তারপর কী একটা মনে হতেই বললেন, “তুমি বসো। আমার একটু রান্নাঘরে যেতে হবে। আসলে এই সময়টাতে নওয়াজেরও চা লাগে। টুলুর মা তো নেই আজ। আমি গিয়ে চা দিয়ে আসি ওকে।”

“তার দরকার হবে না আন্টি৷ উনি নিজেই নিচে এসেছিলেন চায়ের খোঁজে। আমি ওনাকেও চা করে দিয়েছি।”

মরিয়ম খাতুনের সাথে সময়টা ভালোই কাটল চাঁদনীর। ওখান থেকে রুমে ফিরে দেখল নওয়াজ ওর রুমের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদনী থমকে দাঁড়াল। নওয়াজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। হাতে এখনও বই। চাঁদনী পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও পারল না। কারণ নওয়াজ দাঁড়িয়ে আছে ওর রুমে ঢোকার একেবারে প্রবেশদ্বারেই। শেষে বাধ্য হয়েই প্রশ্ন করল চাঁদনী, “কিছু বলবেন?”

“হ্যাঁ। তোমাকে থ্যাংকস জানাতে এসেছিলাম। তখন এত কষ্ট করে চা বানালে, তাই।”

কথা শেষ করে চাঁদনীর উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে গেল নওয়াজ। চাঁদনী রুমে ঢুকে দরজা আটকে স্বস্তির স্বাস ছাড়ল।

১০.
মধ্যদুপুরের তপ্ত রোদ এখন বাইরে। কিন্তু সেই রোদের সামান্য আঁচটুকুও লাগছে না শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্টুরেন্টের ভেতরে বসা ছেলেমেয়েদের দলটির গায়ে। ওরা মোট সাতজন। চারজন মেয়ে এবং তিনজন ছেলে। সবাই ঢাকার একটা নামকরা প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ছে। ক্লাস শেষ করে কিছুক্ষন আগেই ওরা এখানে এসেছে। আজ এখানেই লাঞ্চ করবে সবাই।

ওদের মধ্যে একজন হলো রিতিমা, যে তার বার্থডে উপলক্ষে একটা ট্রিটের আয়োজন করেছে আজ। খাবার অর্ডার করে সবাই তুমুল আড্ডায় মেতে আছে এখন। শুধু নিকিতা নামের মেয়েটি কোনায় বসে ফোন স্ক্রল করে যাচ্ছে। নম্রতা ছোঁ মেরে ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিল।

“নিকি প্লিজ, সারাক্ষন ফোনটা নিয়ে পড়ে আছিস। আমরা এদিকে কথা বলে যাচ্ছি শুধু। আমাদের সাথে জয়েন কর।”

“মাফ কর ভাই, আমাকে আমার মতো থাকতে দে। তোদের এই বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড সম্পর্কিত জটিল আলোচনায় মনোনিবেশ করা আমার পক্ষে অসম্ভব।”

রিতিমা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল, “কী নিবেশ! এইসব উইয়ার্ড ওয়ার্ড যে তুই কই খুঁজে পাস!”

নিকিতা হাসল, “সেটাই। বিশুদ্ধ বাংলা তোদের কাছে সবসময়েই উইয়ার্ড।”

ছেলেরা ওদের কথা শুনছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে। নম্রতা নিকিতাকে বলল, “তোর মত জিনিস মনেহয় একপিসই আছে। না, ভুল বললাম, আরও একজন এসে জুটেছে আমাদের বাসায়। চাঁদনী না কী যেন নাম।”

কল্লোলকে এবার আগ্রহী মনে হলো। বরাবরই মেয়েদের প্রতি ওর অ্যাট্রাকশন একটু বেশিই। কল্লোল বলল,

“সেটা আবার কে? কিছুদিন আগেও তো গেলাম তোদের বাসায়, তখন তো দেখলাম না”

“কয়েকদিন হয় এসেছে। মায়ের পরিচিত। একেবারে পিওর গাঁইয়া। মন মানসিকতা একেবারে আমাদের নিকিতা ম্যাডামের মতো।”

নিকিতা জানে ওদের কথা বলার ধরনই এমন। ওদের কাছে লাইফ মানে ঘুড়ে বেড়ানো, আড্ডা দেওয়া, এর ওর নামে গসিপ করা, একজনের একাধিক বয়ফ্রেন্ড কিংবা গার্লফ্রেন্ড রাখা। খুব একটা গায়ে মাখল না ও কথাগুলো। হেসে বলল, “তাহলে তো মেয়েটার সাথে একদিন দেখা করতে যেতে হয়।”

নম্রতা আবারও বিরক্ত চোখে তাকাল ওর দিকে। সত্যি এই মেয়েটা ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলে একেবারেই বেমানান। কিন্তু তবুও শুরু থেকেই আছে ওদের সাথে। এটারও একমাত্র কারণ বোধহয় নম্রতা। ভার্সিটির একেবারে প্রথম দিনেই নম্রতার পরিচয় হয়েছিল নিকিতার সাথে। কয়েকদিনের মধ্যেই গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গেল। তারপর আস্তে আস্তে রিতিমা, মিথিলা, কল্লোল, রাজীব আর রঞ্জনের সাথে পরিচয়। শুধু সবার আগে পরিচয় বলেই যে নম্রতার সাথে ও আছে এমনটাও নয়। মুখে স্বীকার না করলেও কোথাও একটা নিজের সাথেও নিকিতার মিল খুঁজে পায় নম্রতা।

এইযে রিতিমা আর মিথিলার কথাই ধরা যাক না। রিতিমার বর্তমানে বয়ফ্রেন্ড তিনটা। আরও দুজন হ্যাঁ এবং না এর মাঝামাঝি ঝুলে আছে। ওদের সাথে অন্তরঙ্গতা ঠিক কতদূর সেটা ওরা কেউ জানে না।

মিথিলা তো আরও একধাপ এগিয়ে। বেহিসাবি বয়ফ্রেন্ডদের সাথে রিলেশন পাট চুকিয়ে গত মাসেই এনগেজড হয়েছে ওদের মতোই এলিট ক্লাসের এক নামকরা ব্যবসায়ীর সাথে। বছরখানেক পরে বিয়ের ডেটও ফিক্সড হয়ে আছে। কিন্তু গতসপ্তাহেই সে রুমডেট করেছে কল্লোলের সাথে। রঞ্জন নিজেই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কল্লোল আর মিথিলা জানে ব্যাপারটা শুধু ওরা দুজন আর রঞ্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু রঞ্জনের কল্যানেই ব্যাপার বাকী চারজনেও জেনে গেছে। কল্লোল নাকি রঞ্জনকে এটাও বলেছে যে এটা মোটেও মিথিলার ফার্স্ট টাইম নয়। কল্লোল এবং মিথিলার অ্যাবসেন্সে এটা নিয়ে একদফা রসালো গসিপও হয়ে গেছে ওদের মধ্যে।

নিকিতা সেদিনের নোংরা আড্ডা শেষ হওয়ার আগেই উঠে পড়েছিল। সম্ভবত ওদের ওই রুমডেট সম্পর্কিত আলোচনায় থাকতে চাচ্ছিল না। নম্রতা উঠে না গেলেও মেনে নিতে পারছিল না এসব। অন্যরা ব্যাপারটাকে খুব স্বাভাবিকভাবে নিলেও নম্রতার পুরোটা নোংরামি ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি। ওদের মতো তথাকথিত রিলেশনেও কখনও যেতে পারেনি নম্রতা। অনেকগুলো প্রপোজাল পেয়েও এগোতে পারেনি সামনে। নিকিতারও একই অবস্থা।

টেবিলে খাবার আসার সাথে সাথে ওদের গসিপ থামল কিছুক্ষনের জন্য। রিতিমা চিকেন ফ্রাইয়ে কামড় দিতে দিতে হঠাৎ প্রশ্ন করল নম্রতাকে, “আতিককে নিয়ে কিছু ভেবেছিস?”

নম্রতা পালটা প্রশ্ন ছুড়ল, “হঠাৎ আতিকের কথা এলো কেন?”

“সেই কবে থেকে তোর পিছনে পড়ে আছে। এবার অন্তত হ্যাঁ বলে দে।”

“তোদের অনেকবার বলেছি, আমি ঠিক যেমনটা চাই, ও সেরকম নয়। তাই হ্যাঁ বলার প্রশ্নই আসে না।”

“রিডিকিউলাস। এই একই কথা শুনতে শুনতে কান পঁচে যাচ্ছে আমার। তুই আসলে ঠিক কেমন চাইছিস?”

“বাদ দে। তোদের সারাদিন বললেও তোরা বুঝবি না। শুধু এতটুকু বলি, আতিকের মধ্যে কোনো আত্মসম্মানবোধ নেই। বারবার রিজেক্ট করার পরেও আবার হ্যাংলামি করতে আসে। তাছাড়া কেমন একটা দাসত্ব প্রবৃত্তিও আছে ওর মধ্যে৷ এরকম মেরুদন্ডহীন ছেলেকে লাইফ পার্টনার হিসেবে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে একদমই সম্ভব না।”

“লাইফ পার্টনার করা বা না করাটা তো পরের ব্যাপার। তোকে তো আর এখনই কেউ বিয়ে করতে বলছে না। আপাতত রিলেশনে যা। বিয়ের ডিসিশান তো পরেও নেওয়া যাবে।”

“স্ট্রেঞ্জ! আমি যদি আগেই বুঝতে পারি যে সে আমার জন্য পারফেক্ট ম্যাচ নয়, তাহলে তার সাথে রিলেশনে যাব কেন?”

“ওহ, কাম অন নম্র। তুই অন্তত আমাদের টিপিক্যাল নিকিতার মতো কথা বলিস না। বিয়ে করবি না বলে রিলেশনে যাওয়া যাবে না, এমন কোনো কথা নেই। হাজবেন্ডের জন্য তো সারাজীবন পড়েই আছে। নিজের জন্য অন্তত একটা রিলেশনে যাওয়া উচিৎ। ইটস অল অ্যাবাউট এনজয়মেন্ট, ডিয়ার। এই বোরিং লাইফ থেকে বেরিয়ে থ্রিলিং কিছু কর এবার।”

নম্রতার মেজাজটা এবার বেশিই খারাপ হলো। একমাত্র নিজের পরিবার ছাড়া বাইরের কেউ নিজের সিদ্ধান্ত ওর উপর চাপিয়ে দিতে চাইলেই ওর রাগ উঠে যায়। রিতিমা যেন ইদানিং সেই কাজটাই করতে চাইছে খুব৷ আতিকের প্রতি ওর কোনো ইন্টারেস্ট না থাকা সত্ত্বেও বারবার ওর সাথেই রিলেশনে যেতে ইনসিস্ট করছে। নম্রতা তাই আর মেজাজ ধরে রাখতে পারল না।

“দেখ রিতি, প্রত্যেকটা মানুষই নিজের মতো করে ডিফ্রেন্ট অ্যাঙ্গেলে লাইফটাকে দেখে। তাই তোর কাছে যেটাকে এনজয়মেন্ট কিংবা থ্রিল বলে মনে হচ্ছে, আমার কাছে সেটা শুধুই ওয়েস্ট অভ টাইম। এখন তুই নিজে চৌদ্দটা বয়ফ্রেন্ড রাখতেই পারিস চাইলে, কিন্তু আমাকে এসব বিষয়ে ইনভলভ করিস না প্লিজ।”

নম্রতার কাটাকাটা কথায় অপমানে রিতিমার মুখ থমথমে হয়ে উঠল। হঠাৎই সবার মধ্যে নিস্তব্ধতা নেমে এলো যেন। শুধু নিকিতা চামচ দিয়ে ফ্রাইড রাইস নাড়তে নাড়তে মুচকি হাসল।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে