নিভৃত রজনী পর্ব-২৮+২৯

0
174

নিভৃত রজনী
| ২৮ | (১৪৮০+ শব্দ)
[প্রাপ্তবয়স্ক সতর্কতা]

ইদানিং ব্যাবসার কাজে কিছুটা ঘনঘন ঢাকা যেতে হচ্ছে তানিমকে। গতকাল সকালেও ঢাকা গিয়েছিল ও। ফিরল তার পরেরদিন বিকেলে।

নম্রতা তখন নায়লা আর পাশের বাড়ির মেয়েটির সাথে ঘরের সামনের সিঁড়িতে বসে চালতা মাখা খেতে খেতে আড্ডায় মেতে উঠেছিল। তানিম ওদের পাশ কাটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে নম্রতার দিকে একপলক তাকিয়ে বলল, “নম্রতা, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। টেবিলে খাবার দাও।”

নম্রতা সাথে সাথে উঠে দাড়াল।

“এক্ষুনি যাচ্ছি।” বলে তানিমের পিছু পিছু রওয়ানা দিল বাড়ির মধ্যে৷

সাধারনত নববিবাহিত দম্পতিরা বেশিরভাগ সময়ই চার দেয়ালের মধ্যে নিজেদের মতো করে সময় কাটাতে চায়। কিন্তু নম্রতার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয় উলটো। ওর ইচ্ছে করে সারাদিন, সারারাত তানিমকে নিয়ে বেডরুমের বাইরে সবার সামনে বসে থাকতে। কারন শুধু সবার সামনে থাকলেই তানিম ওর সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলে। তখন তানিমকে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এই মানুষটি বদ্ধ ঘরে কথা তো দূর, নম্রতার দিকে ফিরে পর্যন্ত তাকায় না। তানিমের সাথে একই ঘরে যতক্ষন থাকে ততক্ষন নিজেকে জেলখানায় বন্দি দাগী আসামী বলে মনে হয়। ছটফট করতে করতে কাটে পুরোটা সময়। নম্রতা হাজারটা উপায় বের করে তানিমের সাথে কথা বলার। কিন্তু গুরুগম্ভীর মুখটার দিকে তাকিয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করার মতো সাহস পায় না।

টেবিলে খাবার দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল নম্রতা। তানিম গোসল সেরে এসে সাথে সাথেই খেতে বসল। নম্রতা একের পর এক খাবার আইটেম দক্ষ হাতে তুলে দিল তানিমের প্লেটে। এতদিনে তানিমের দৈনন্দিন জীবনের সকল পছন্দ-অপছন্দ বেশ ভালোভাবেই বুঝে নিয়েছে নম্রতা। তবুও যদি তার মনে জমে থাকা শীতল বরফ একটু গলে। কিন্তু শেষপর্যন্ত পুরোটাই উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর মতো হয়ে যায়।

তানিম খেয়ে উঠে গেল। নম্রতা খাবারগুলো তুলে রেখে রুমে গিয়ে দেখল, তানিম আবার রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। নম্রতাকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত নেমে গেল ও।

নম্রতা জানে, এখন তানিম গঞ্জের বাজারে যাচ্ছে। বিশেষ কোনো কাজ না থাকলে রাত ন’টার মধ্যে বাসায় ফিরবে। তানিমের ডেইলি রুটিন এখন নম্রতার নখদর্পনে।

ছাদ থেকে নিয়ে আসা শুকনো কাপরগুলো ভাজ করতে করতে নম্রতা ঘড়ির দিকে তাকাল। রাত পৌনে নয়টা বাজে। তারমানে তার আসার সময় হয়ে গেছে। নম্রতা জলদি করে কাপর ভাজ করল। যদিও তানিম ওর দিকে ফিরেও তাকায় না, তবুও তানিমের ফেরার সময়টাতে ও যথাসম্ভব পরিপাটি হয়ে থাকার চেষ্টা করে।

নম্রতা চুল আঁচরে সুন্দর করে খোঁপা করে ফেলল, ঠোঁটে ন্যুড কালারের লিপস্টিক লাগাল খুব হালকা করে। ড্রেসিং টেবিল থেকে মুক্তা পাথরের ছোট্ট একজোড়া কানের টপ তুলে নিল পড়ার জন্য। একটা দুল তাড়াহুড়ায় কানে পড়তে গিয়ে অন্যটা হাত পিছলে পড়ে গড়িয়ে একেবারে দরজা কাছে গিয়ে থেমে গেল। নম্রতা দরজার সামনে গিয়ে নিচু হলো দুলটা তোলার জন্য। ঠিক তখনই দরজার অপর পাশে পা দুটো এসে থামল। হঠাৎ করেই তানিম এসে পড়ায় কিছুক্ষনের জন্য হতবুদ্ধি হয়ে গেল নম্রতা। উঠে দাঁড়াতেও ভুলে গেল তাই।

তানিম ফোন স্ক্রল করতে রুমে ঢুকতে যাচ্ছিল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মাটিতে বসে থাকা একটা অবয়ব দেখে মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকাল সেদিকে। পরিচিত মুখের দিকে তাকিয়ে ঠিক তার পরের সেকেন্ডেই তানিমের চোখ চলে গেল অন্য কোথাও।

নম্রতার জামার গলাটা একটু বেশিই বড় ছিল, তারপর আবার সামনের দিকে ঝুঁকে ছিল ও অনেকটাই। গলার সাথে লেগে থাকা চকচকে গোল্ড চেইন, তার অনেকটা নিচে কুচকুচে কালো তিল, গাঢ় বাদামি রঙের অন্তর্বাস। আর তাকিয়ে দেখতে পারল না তানিম। হঠাৎ করে হেঁচকি উঠে গেল ওর। নম্রতা সাথে সাথে উঠে দাঁড়াল। জলদি করে টেবিলে ঢেকে রাখা পানিভর্তি গ্লাসটা এগিয়ে ধরল তানিমের দিকে। তানিমের মনে হলো, ওর শরীরে বৈদ্যুতিক শক লেগে গেছে। নম্রতার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানিটা খেয়ে ফেলল।

নম্রতা অবাক হয়ে তাকাল। গত সপ্তাহেও যে নাভিদকে বোঝাল যে পানি সবসময় বসে খেতে হয়। সেই নিয়ম মেনে চলা মানুষটা আজ দাঁড়িয়েই পানি খেয়ে ফেলল।

তানিম পানি খেয়ে গ্লাসটা নম্রতার হাতে দিল। নম্রতা গ্লাসটা রাখতে গেল আবার। তানিম ওকে ডেকে উঠল পেছন থেকে,
“শোনো।”
“বলুন।”
“বিয়ের পরে তোমাকে যে স্যালোয়ার কামিজগুলো কিনে দিয়েছিলাম, সেগুলো সব দর্জির থেকে বানিয়ে এনেছ?”

বিয়ের আগে স্যালোয়ার কামিজ নম্রতা তেমন পড়ত না বললেই চলে। কিন্তু শ্বশুড়বাড়িতে ওসব জিন্স, টপস আর কুর্তি চলবে না বলে তানিম নিজেই ওকে কিছু স্যালোয়ার কামিজ আর সুতি কাপর কিনে দিয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর কথা আজ হঠাৎ করে জিজ্ঞাসা কেন করছে সেটাই বুঝতে পারল না নম্রতা।

“হ্যা। এনেছি।”
“এখন যেটা পড়ে আছ, প্রত্যেকটা জামা কি এভাবেই বানিয়েছ?”
আজকে যেন নম্রতার অবাক হওয়ার দিন। তানিম পরপর এতগুলো কথা বলছে ওর সাথে। নম্রতা আবারও জবাব দিল,
“হ্যা।”
“ওগুলো কাল থেকে আর পরতে হবে না। আমি আবার জামা কিনে দেব, নায়লা ভাবির সাথে গিয়ে সেগুলো বানাতে দিয়ে আসবে। আর শোনো, প্রত্যেকটা জামার গলা এখনকারগুলোর চেয়ে আরও ছোট করে দেবে। আরও একটা কথা প্রত্যেকটা জামার লেন্থ যেন হাঁটুর নিচ অব্দি হয়।”

নম্রতা মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বোঝার চেষ্টা করল হঠাৎ করে তানিমের এই কথাগুলো বলার কারন। কিছুক্ষনের মধ্যে পুরো ঘটনাটা বুঝেও গেল ও। ঝুঁকে কানের দুলটা নেওয়ার সময় তানিমের সামনে এসে দাঁড়ানো, হেচকি উঠে যাওয়া, কিছুদিন আগেই বানানো সালোয়ার কামিজগুলো পড়তে বারণ করা।

তারমানে তানিম অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু দেখে ফেলেছে! ঠিক কতটা দেখেছে? লজ্জায় নম্রতার মাটি দুভাগ করে ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করল।

উল্টোদিকে ঘুরে তড়িঘড়ি করে টেবিলে গ্লাসটা রাখতে গেল ও। কিন্তু ওর হাত ফসকে পড়ে গেল সেটা। স্টিলের গ্লাস বলে না ভেঙে ঝনঝন শব্দ করে উঠল। নম্রতা তাড়াহুড়ো করে সেটা আবার তুলে রাখল। কাঁপা গলায় কোনোরকমে বলল, “খেতে আসুন। আমি খাবার ঘরে যাচ্ছি।”

তারপরে একছুটে বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে। তানিম সেদিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষন।

নম্রতা কিছুক্ষন সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে এনেছিল অনেকটাই। খাবার ঘরে সবার সামনে নায়লা আবারও অজান্তেই অপ্রস্তুত করে তুলল ওকে।
“একি নম্রতা। তুমি এক কানে দুল পড়ে আছ কেন?”

নম্রতা চমকে উঠল। দুল! এই দুলের জন্যই তো আজ এতবড় ঘটনাটা ঘটে গেল।

নম্রতা চমকে ওঠার সাথে সাথেই তানিম শব্দ করে কেশে উঠল। নম্রতা ওর সামনে রাখা গ্লাসে পানি ঢেলে দিল।

রাতে নম্রতার পাশে ঘুমতে গিয়ে এই প্রথমবার তানিম হাঁসফাঁস করে উঠল। এতদিন কঠিন একটা সংকল্প করেছিল ও। নম্রতার ওকে প্রথমদিন সেই করা অপমানের শিক্ষা দেওয়ার জন্য ওকে স্পর্শ করবে না কখনও। অন্তত কয়েকটা মাস নম্রতাকে অনুশোচনায় দগ্ধ করবে। কিন্তু আজ আর নিজের সংকল্পে অটল থাকতে পারছে না ও। কেন জানি মনে হচ্ছে ভুল কিছু হয়ে যাবে হয়তো।

পুরো রাত তানিম তাই আর ঘুমাতেই পাড়ল না। এপাশ ওপাশ করেই রাত কাটিয়ে দিল। নম্রতাও উলটো দিকে মুখ করে বিছানার চাদর খামচে পড়ে থাকল। তানিমের দিকে তাকানোর জন্য ওর মধ্যে বিন্দুমাত্র সাহসও আর নেই।

৪৫.
চাঁদনী যেদিন থেকে ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে, সেদিন থেকেই শুনে এসেছে যে ডাক্তারি পড়া খুব কঠিন। এমবিবিএস জার্নিটা শুরু করার পর থেকে চাঁদনী বুঝতে পেরেছে যে ওরা কেউ ভুল বলত না।

একটানা অনেকক্ষন পড়ে চেয়ারে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল চাঁদনী। কয়েকমিনিট এভাবে থেকে চোখে তন্দ্রাভাব আসছিল খানিকটা। কপালে কারও হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকাল চাঁদনী। নওয়াজ হাসিমুখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। একহাত চাঁদনীর কপালে আর অন্য হাতে কফিমগ। স্টাডি টেবিলের পাশে কফিমগটা রেখে নওয়াজ বলল, “অনেকক্ষন যাবত পড়ছ, প্রেসার যাচ্ছে নিশ্চই খুব। কফিটা খেয়ে মিনিট দশেকের একটা ব্রেক নিয়ে আবার পড়া শুরু করো। রিল্যাক্সড লাগবে তাহলে।”

চাঁদনীর সত্যি এখন এককাপ চা কিংবা কফির খুব দরকার ছিল। এমনকি হলে থাকাবস্থায় মাঝে মাঝে চাঁদনীর মনে হতো, ইশ! কেউ যদি থাকত এককাপ চা বানিয়ে দেওয়ার জন্য।

চাঁদনী কফিমগটা হাতে নিয়ে প্রশ্ন করল নওয়াজকে
“আপনি এখন কী করবেন?”

“অফিসের কিছু ফাইল আছে। ওগুলো নিয়ে বসব। তুমি কফিটা খেয়ে নাও, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

চাঁদনী মাথা নেড়ে কফিতে চুমুক দিল। নওয়াজ আর চাঁদনীর সম্পর্কটা আজকাল অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। নওয়াজ ওর কথা রেখেছে। চাঁদনীর পড়ায় কখনও এতটুকু বাঁধাও সৃষ্টি করে না ও। বরং স্ত্রীর সুবিধা অসুবিধার খেয়াল রাখে খুব করে। সত্যিই হাজবেন্ড ওয়াইফ একে অপরকে বুঝলে বিবাহিত লাইফটা অনেক বেশি সুন্দর হয়ে ওঠে।

চাঁদনী এই বাড়িতে এসেছে প্রায় একমাস হতে চলল। এখানে আসায় নওয়াজ খুশি হয়েছিল প্রচন্ড। শুধু নওয়াজ কেন। চাঁদনীর শ্বাশুড়ি মরিয়ম খাতুনও খুব খুশি হয়েছিলেন।

এখন চাঁদনী বোঝে, চাঁদনীর কথা মেনে নিয়ে ওকে হলে থাকার অনুমতি দিলেও তিনি মনে মনে চাইতেন চাঁদনী বাড়িতে থেকেই পড়ুক।

চাঁদনীর মাঝেমাঝেই মনে পড়ে সেই প্রথমদিকের কথা। বিশেষ করে যেদিন সাখাওয়াত আর তানিমকে নিয়ে চাঁদনী প্রথমবার এসেছিল মরিয়ম ভ্যালিতে। তখন ও জানত না যে একদিন এই বাড়ির পুত্রবধু হয়েই থাকতে হবে ওকে।

তারপর নওয়াজ যখন জানাল যে চাঁদনীর প্রতি ওর কোনো অনুভূতি নেই। তারপর থেকে চাঁদনী শুধু দিন গুনত। কবে অ্যাডমিশন টেস্ট শেষ হবে আর কবে এই বাড়ি থেকে ও চলে যেতে পারবে। সিদ্ধান্ত নিয়েছিল খুব প্রয়োজন ছাড়া কখনও এই বাড়িতেই আর পা রাখবে না। অথচ সময়ের ব্যাবধানে সবকিছু কেমন বদলে গেল।

চাঁদনী চেয়ারটা ঘুরিয়ে নওয়াজের মুখোমুখি বসে ওর দিকে তাকিয়ে থাকল। নওয়াজ ফাইলে চোখ বোলাতে বোলাতেই প্রশ্ন করল, “এভাবে কী দেখছ চাঁদনী?”
“আপনাকে দেখছি।” জড়তাহীন উত্তর দিল চাঁদনী।

হাসল নওয়াজ। চাঁদনী মুগ্ধ চোখে সেই হাসির দিকে তাকিয়ে বলল, “এভাবে হাসবেন না। নজর লেগে যাবে।”

নওয়াজ বলল, “এখানে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই চাঁদনী।”

“মনে হচ্ছে, আমার নজরই লাগবে শেষ পর্যন্ত।”

” লাগুক নজর। ছাদে যাবে চাঁদনী?”
“এত রাতে?”
“হ্যা। তুমি যদি আরও ঘন্টাখানিক পরে আবার পড়তে বসো, তাহলে কি তোমার পড়ার খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে?”
“একদমই না।”
“চলো তাহলে।”
মধ্যেরাতে নিস্তব্ধ নিরিবিলি ছাদের ঝিরিঝিরি বাতাসে নওয়াজের কাঁধে মাথা রেখে পাশাপাশি বসল চাঁদনী। নওয়াজ চাঁদনীর একটা হাত টেনে নিল নিজের কোলের মধ্যে। চাঁদনীর মনে হলো, উপভোগ করতে জানলে খুব সাধারন মোমেন্টগুলোও অনন্য হয়ে উঠতে পারে।

৪৬.
অনেকদিন পর বাইরের মুক্ত বাতাস পেয়ে নম্রতার ভালো লাগল বেশ। পাশের বাড়ির আমিনার সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে ও এগিয়ে চলল গ্রামের মেঠো পথ ধরে। গ্রামের এদিকটা একেবারে চোখ ধাধানো সুন্দর। দেখে মনে হয় ক্যানভাসে রঙতুলির আঁচরে নিঁখুতভাবে আঁকা কোনো চিত্রশিল্পীর চিত্রকর্ম।

পথে যেতে যেতে আশেপাশের বাড়ির মেয়ে বউরা আড়চোখে দেখছিল নম্রতাকে। তালুকদার বাড়ির ছেলে শহুরে বড়লোক মেয়ে বিয়ে করেছে বলে তাদের আগ্রহটা একটু বেশিই ছিল।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

নিভৃত রজনী
| ২৯ | (১৬৭০+ শব্দ)

পথে যেতে যেতে আশেপাশের বাড়ির মেয়ে বউরা আড়চোখে দেখছিল নম্রতাকে। তালুকদার বাড়ির ছেলে শহুরে বড়লোক মেয়ে বিয়ে করেছে বলে তাদের আগ্রহটা একটু বেশিই ছিল।

কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করে ফেরার পথে যার সাথে দেখা হলো, এই সময়ে তাকে অন্তত আশা করেনি নম্রতা।

বয়সে নম্রতার চেয়ে বছরখানেকের ছোট হবে বোধহয় মেয়েটা। ওদের দেখে হাসতে হাসতে এগিয়ে এলো। তারপর আমিনাকে জিজ্ঞাসা করল, “এইটা কে রে?”
“তানিম ভাইয়ের বউ।” আমিনা সরু চোখে তাকিয়ে জবাব দিল।
“ও তাহলে তো পরিচিত হওয়া দরকার। আমি মুক্তা। ভালো আছেন ভাবি?”
“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।” জবাব দিল নম্রতা। মেয়েটার কথা বলার ধরন কেন জানি একটু অন্যরকম লাগছিল ওর।
“ভাবী মনেহয় এখনও আমাকে চিনতে পারেননি। আমি পাশের গ্রামের চেয়ারম্যানের মেয়ে। তানিম ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল।”

নম্রতা চমকে উঠল মেয়েটার কথা শুনে। এতক্ষনে মেয়েটার এভাবে কথা বলার কারনটাও কিছুটা পরিস্কার হলো।
নম্রতা পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলল, “তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগল।”

“শেষ পর্যন্ত আপনিই পেয়ে গেলেন তানিম ভাইকে। চাঁদনীর জন্যই অবশ্য ব্যাপারটা ঘটেছে। আমাদের বিয়েটা তো প্রায় পাকাপাকিই হয়ে গিয়েছিল। তানিম ভাইও আমাকে দেখে মত দিয়েছিল। কিন্তু চাঁদনী আপনাকে পছন্দ করল বলে তানিম ভাইয়ের বাধ্য হয়ে আপনাকেই বিয়ে করতে হলো শেষপর্যন্ত। আসলে চাঁদনী খুব আদরের বোন তো, তাই বোনের কথা ফেলতে পারেনি।”

নম্রতার গালে অদৃশ্য চপেটাঘাত পড়ল যেন। মেয়েটা আকারে-ইঙ্গিতে এটাই বুঝিয়ে দিল যে নম্রতাকে বিয়ে করতে রাজি হলেও মনে মনে তানিম বিয়েতে রাজি ছিল না একদমই।

আমিনা পাশ থেকে বলে উঠল, “এইসব আপনি কী বলছেন?”
“তুই থাম তো। যেটা সত্যি সেটাই বলেছি আমি। সত্যিই তো তানিম ভাই মন থেকে করেনি বিয়েটা। আর তাছাড়া তানিম ভাই যেমন মানুষ তাতে শহুরে আধুনিক কোনো মেয়েকে পছন্দ করার কথাও না তার। চাঁদনীটা জোর করে অপছন্দের জিনিসটা চাপিয়ে দিল বেচারার ঘাড়ে। আহারে!”

খোঁচাগুলো নম্রতার দুকান দিয়ে ঢুকে ভেতরটা ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছিল। এজন্যই কি তাহলে তানিম এমন দুরত্ব বজায় রেখে চলে ওর সাথে। নম্রতার পৃথিবীটা হঠাৎ করেই দুলে উঠল।

আমিনা এবার আর মুক্তার সাথে কথা বলল না। নম্রতাকে বলল, “ভাবি, চলেন তো এখান থেকে। এইসব আজেবাজে কথা শোনার দরকার নেই।”

নম্রতা তবুও নড়ল না। আমিনা জোর করে হাত টেনে ধরে নিয়ে গেল নম্রতাকে। যেতে যেতে নম্রতা আরেকবার পিছু ফিরে তাকাল। মুক্তার তাচ্ছিল্য মাখা হাসিটা ওর মনের রক্তক্ষরণ বাড়িয়ে দিল আরও।

রাতে বাজার থেকে ফেরার পথে সামনের উঠতি বয়সী ছেলেগুলোর কথোপকথন কানে আসছিল তানিমের। একপর্যায়ে ওদের মুখে নিজের নাম শুনে পায়ের গতি শ্লথ হয়ে এলো ওর। কানদুটো সজাগ হয়ে গেল।

দলের মধ্যে একটা ছেলে তখন বলে চলেছে, “আজ প্রথমই দেখলাম বুঝেছিস। যেমন চেহারা তেমন ফিগার। তানিম তালুকদার বউ একটা পেয়েছে…।”

তানিম এগিয়ে গেল দলটার দিকে। ছেলেদের দলটা ওকে অপ্রত্যাশিতভাবে দেখে ভরকে গেল। যেই ছেলেটা কিছুক্ষন আগে কথাগুলো বলছিল, তার মুখমন্ডল লক্ষ্য করে তানিম এলোপাতাড়ি ঘুষি বসাল অনেকগুলো। ছেলেটা শেষমেষ ওর পা ধরে বসে পড়ল, “আমার ভুল হয়ে গেছে ভাই। আর এমন হবে না জীবনেও।”
তানিম বলল, “আরেকদিন গ্রামের কোনো মেয়ে-বউদের দিকে তাকাতে দেখলে ওখানেই চোখদুটো উপড়ে ফেলব। আমার নজর এখন থেকে তোর উপরেই থাকবে। মনে রাখিস।”
ছেলেগুলো মাফ চেয়ে বিদায় নিল অবশেষে।

তানিম যে ঠিক কীভাবে বাড়ি ফিরল সেটা ও নিজেও জানে না। নম্রতাকে এসে বসার ঘরেই পেল ও। নাভিদকে পড়াচ্ছিল নম্রতা।

তানিম এসে ওর হাত ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে রুমে নিয়ে গেল। শক্ত করে ধরায় নম্রতার হাত ব্যাথায় টনটন করে উঠল। শরীরের ব্যাথা আর মনের ব্যাথা মিলেমিশে একাকার হয়ে দলা পাকানো কান্না হয়ে উঠে আসতে চাইছিল। তানিম রুমের মধ্যে ঢুকে ওর হাত ছাড়ল। তারপর দরজা বন্ধ করে দাতে দাত চেপে প্রশ্ন করল, “আজ বিকেলে তুমি কোথায় গিয়েছিলে?”

নম্রতা তানিমের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠল। রাগে আপাদমস্তক কাঁপছিল তানিম। নম্রতা ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল, “আমিনাদের বাড়ির ওদিকে…।”
“সাথে কে ছিল?” প্রথম প্রশ্নের উত্তর সম্পূর্ণ না শুনেই পরের প্রশ্ন করল তানিম।
“আমিনা।”
“আমাদের বাড়ির আশেপাশে এত জায়গা থাকতে বাইরে কেন গেলে তুমি?”
“আসলে আমি, মানে, আমিনা…।” নম্রতার কথাগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল ক্রমশ।
“স্পষ্ট করে কথা বলো। আমার থেকে অনুমতি না নিয়ে বাইরে যাওয়ার সাহসটা তোমার হলো কী করে?”
সামান্য বাড়ির বাইরে যাওয়ায় অনুমতি নিতে হবে? তাছাড়া আমিনাদের বাড়িটা ওদের বাড়ির পাশাপাশিই। এতটুকু যাওয়ার স্বাধীনতাও কি নেই নম্রতার! এতটুকু আদৌ কি রেগে যাওয়ার মতো কারন! বহু প্রশ্ন উঁকি দিল নম্রতার মনে। সাথে একটা খচখচানি। নম্রতাকে সহ্য করতে পারে না বলেই কি এমন আচরণ তানিমের। ওর জায়গায় যদি মুক্তা থাকত, তাহলে কি তানিম এমন করে বলত?

বিকেল থেকে বহু চেষ্টার পর মুক্তার বলা কথাগুলো কিছুটা ভুলে গিয়েছিল নম্রতা। এখন সেগুলো মনে পড়তেই পুরো ক্ষত তাজা হলো আবার। তানিমের পরবর্তী কথাগুলো কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিল যেন।

” কথার উত্তর দাও৷ আমাকে না বলে বাইরে কেন গিয়েছিলে? আমার অ্যাটেনশন পাচ্ছ না বলে শরীরের সুন্দর কার্ভগুলো বাইরের লোককে দেখাতে গিয়েছিলে?”
নম্রতার কানে যেন গরম সীসা ঢেলে দিল কেউ৷ সামান্য একটা বিষয়ের জন্য তানিম ওর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলল? এই কথাটা সত্যিই তানিমের মুখ থেকে বের হয়েছে। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে নম্রতা ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়ল। স্থান, কাল, পাত্র ভুলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল ও।

ততক্ষনে তানিমও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। একজনের রাগ অন্যজনের উপর দেখানো কোনোকালেই তানিমের অভ্যাস ছিল না। কিন্তু আজ সেই কাজটাই হয়ে গেল ওকে দিয়ে।

ছেলেগুলোর উপরে যে রাগটা জমেছিল, সেটা ঝাড়ল আজ নম্রতার উপরে। শেষের কথাটুকু যে বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে, সেটাও বুঝতে পারল তানিম। এখানে থাকলে হয়তো আরও বেফাঁস কথা বের হয়ে যাবে মুখ থেকে৷ সেজন্য আর দাঁড়াল না তানিম। ঝড়ের বেগে রুম থেকে বের হয়ে একেবারে বাড়ির বাইরে চলে গেল। ফিরল অনেক রাত করে।

অন্যান্য দিনগুলোতে তানিম ফিরতে দেরি করলে নম্রতা বসার ঘরে অপেক্ষা করে তানিমের জন্য। দুজনের কথা তেমন হয় না বললেই চলে। কিন্তু তবুও তানিম রাতের খাবার খাওয়ার পুরোটা সময় নম্রতা ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। আজ বসার ঘরে নম্রতার বদলে বসে আছে ওর মা দেলোয়ারা বেগম, ঠিক যেমনটা তানিমের বিয়ের আগে থাকত। তানিমকে দেখে বললেন, “এসেছিস। আয়,খেতে আয়।”

তানিম খেতে বসেই প্রশ্ন করল, “নম্রতা কোথায় মা?”
“মেয়েটার যে হঠাৎ কী হলো। রাতে খাবার সময় ডাকতে গিয়ে দেখলাম রুমের লাইট নিভিয়ে শুয়ে আছে। জিজ্ঞাসা করলে বলল, মাথা ধরেছে নাকি খুব। রাতের খাবারটাও খেল না।”

তানিমের ভাত খাওয়ার গতিও কমে গেল। নম্রতাটাকে কথাটা বলে বাইরে বের হয়ে যাওয়ার পর পুরোটা সময় ভীষণ এক অপরাধবোধ আর আত্মগ্লানিতে ভুগেছে ও। তানিম জানে, নম্রতা ছোটবেলা থেকে বিলাসবহুল পরিবেশ আর আহ্লাদে বেড়ে ওঠা একটা বদমেজাজি মেয়ে। কিন্তু ক্যারেক্টারলেস মেয়ে নয় ও। তাহলে নিশ্চই চাঁদনী তাকে নিজের ভাইয়ের বউ হিসেবে নির্বাচন করত না। এখন তো নম্রতাকে বদমেজাজিও বলা যায় না আর। পুরোনো নম্রতাকে ভেঙেচুড়ে একেবারে নতুন করে নিজেকে গড়ে তুলেছে ও৷ তানিম কখনও ভাবেনি, এই বাড়ির লোকগুলোর সাথে এত সুন্দরভাবে মানিয়ে নিতে পারবে নম্রতা৷

তানিম কোনোরকমে খেয়ে উঠে দাঁড়াল। ওর জন্য না খেয়ে আছে নম্রতা৷ তানিম মাকে বলল, “একটা প্লেটে ভাত দাও তো মা। আমি খাবারটা রুমে নিয়ে যাই নম্রতার জন্য।”

তানিম রুমে ঢুকল নিঃশব্দে। ডিম লাইটের মৃদু আলোতে ও দেখল, খাটের উপর দেয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে নম্রতা হেঁচকি তুলে কাঁদছে তখনও। খাবারের প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে লাইট অন করল তানিম। ওপাশে কান্না আটকানোর প্রাণপণ চেষ্টা চলছে তখন। কান্না চেপে রাখার জন্য শরীরটা মৃদু কেঁপে উঠছিল ক্ষনে ক্ষনে।

তানিম খাটের একপাশে বসে বলল, “নম্রতা, তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। উঠে খেয়ে নাও।”

নম্রতা কোনোরকম রেসপন্স করল না। তানিম বুঝল, শুধু মুখে বলে কোনো কাজ হবে না। ও আরেকটু এগিয়ে নম্রতার কাছাকাছি গিয়ে বসল। তারপর নম্রতার হাতের বাহু ধরে টেনে তুলল।

নম্রতা বিনাবাক্য ব্যয়ে উঠে বসল। ওর দিকে তাকিয়ে এবার খুব অনুশোচনা হলো তানিমের। ক্রমাগত কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে লাল হয়ে গেছে। পুরো মুখমন্ডল বিধ্বস্ত। তানিম নরম স্বরে আবার বলল, “নম্রতা খেয়ে নাও।”

ওর দিকে একপলক তাকাল নম্রতা। তারপর নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল।

নম্রতার পুরো রাত কাটল নির্ঘুম। তানিম মুখ থেকে উচ্চারিত একটা লাইন বিরতিহীনভাবে ওর মস্তিষ্কে বেজে চলল৷ তার সাথে মুক্তার বলা কথাগুলো।

তানিমও নির্ঘুম ছিল সেরাতে। পাশাপাশি শুয়ে নম্রতার ছটফটানি টের পাচ্ছিল। নম্রতাকে নিজের কাছে টেনে দুরত্ব কমানোর ইচ্ছেটা খুব কষ্টে দমিয়ে রাখল তানিম। বুঝল, নিদেনপক্ষে একটা স্যরি অন্তত বলা উচিৎ মেয়েটাকে। কিন্তু মুখ থেকে একটা অক্ষরও উচ্চারণ করতে পারল না।

নম্রতা শেষরাতের দিকে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও তানিমের ঘুম হলো না আর। নম্রতা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ওই আদুরে মুখটাকে নির্নিমেষ দেখতে থাকল তানিম। এভাবেই তানিমের বাকি রাত কাটল। ফজরের আজান শুনে নামাজ পড়ে কিছুক্ষন বাইরে হাঁটাহাঁটি করে এসে নাস্তা করল ও। তারপর রান্নাঘরে নায়লার কাছে গিয়ে বলল “ভাবি, একটু এদিকে এসো তো। তোমার সাথে কথা আছে।”

নায়লা ওর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, “কী বলবে বলো।”
“গতকাল নম্রতার সাথে একটু রাগারাগি হয়েছিল। রাতে খাবার খায়নি। সারারাত ঘুমায়নি। এখন একটু ঘুমাক। একটু পরে ঘুম থেকে তুলে জোর করে হলেও সকালের নাস্তাটা খাইয়ে দিও। আর আমি এখন ঢাকা যাব। আজ আর ফিরব না, ওকে বলে দিও।”
“এসব কী তানিম? এত শান্ত একটা মেয়ে। তার সাথে তুমি ঝগড়া করেছ? কেন?”
“তেমন কিছু না৷ বাদ দাও। আমি এখন আসছি।”

তানিম বাড়িতে ফিরল পরেরদিন দুপুরে। অভ্যাসবশত হাতঘড়িটা রাখতে গিয়ে টেবিলের উপরে ব্রাউন পেপারের ব্যাগটা দেখতে পেল ও। ব্যাগটা ওর খুব পরিচিত বলে মনে হলো। ব্যাগের ভেতরে হাত দিয়ে মোবাইলের বক্সটা বের করে আনল ও। সবকিছু মনে পড়ে গেল ওর। ঠিক একই রকম আছে ব্যাগটা এখনও। এমনকি বক্সের মধ্যে মোবাইলটাও এখনও আন-ইউজড। ব্যাগের নিচেই ভাজ করে রাখা ছিল চিঠি। তানিম পড়তে শুরু করল,
“শুধুমাত্র বোনের ইচ্ছে রাখতে নিজের এতবড় ক্ষতিটা না করলেও পারতেন। আমিও বোকা, ভেবেছিলাম সময়ের সাথে সাথে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। যাইহোক, গত তিনমাসে আমার সাথে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যে দিনগুলো কাটিয়েছেন, সেগুলোকে দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাবেন আশা করি৷ আর সেপারেশনের প্রসিডিওরগুলো আমার সেভাবে জানা নেই। তাই আপনাকেই ব্যবস্থাটা করতে হবে। আপনি ডিভোর্স লেটার পাঠালে আমি সাইন করে দেব।
আপনার এবং মুক্তার ফিউচার লাইফ খুব ভালো কাটুক। বেস্ট অফ লাক।
-নম্রতা।”

চিঠিটা পড়েই তানিম আগে নায়লার রুমে গেল। সরাসরি প্রশ্ন করল, “নম্রতা কোথায় ভাবি?”
“ওদের বাসায় গেছে। ঢাকা আরকি।”
“কার সাথে? কখন গেল?”
“গতকাল তুমি যাওয়ার কিছুক্ষন পরেই। ঘুম থেকে উঠে তোমার ভাইজানের কাছে এসে প্রায় কেঁদে বলল, মায়ের কথা মনে পড়ছে হঠাৎ। ওকে যেন একটু দিয়ে আসে তোমার ভাইজান। তারপর সকালেই রওয়ানা হয়ে গেল। আমি নাস্তা করানোর জন্য কত জোড়াজুড়ি করলাম, কিন্তু কিছুই খেল না। মেয়েটার চেহারা একরাতের মধ্যে ভেঙ্গে গেছে একবারে। কী নিয়ে এত রাগারাগি করলে ভাই? ও খুব কষ্ট পেয়েছে মনেহয়।”
তানিম কোনো জবাব না দিয়ে চলে গেল। একটা ব্যাপার মাথায় খচখচ করছে। নম্রতা ওর কথায় রাগ কিংবা অভিমান করে চলে গেছে। এইপর্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু চিঠিতে মুক্তার নাম মেনশন করল কেন? মুক্তাকে চিনলই বা কী করে? আমিনা বলেছে?

তানিম নিজের রুমে না গিয়ে আমিনাদের বাড়ির দিকে গেল। চোখে তখনও স্ত্রীর কান্নাভেজা মুখটা ভেসে উঠছিল বারবার। নিজেদের মধ্যে দুরত্ব আরও বাড়তে দিলে সেটা দুজনের কারোর জন্যই ভালো হবে না বোধহয়। অনেক হয়েছে ওকে শিক্ষা দেওয়া৷ এবার যতদ্রুত সম্ভব পৌঁছাতে হবে তার কাছে।

৪৭.
নম্রতা বাসায় পৌঁছেই মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল। সাখাওয়াত, চাঁদনী আর মরিয়ম খাতুন তিনজনে হতভম্ব হয়ে গেল নম্রতার এমন আচরণে।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে