নিভৃত রজনী পর্ব-০১

0
234

নিভৃত রজনী
| ১ | (প্রারম্ভিকা) (১৬০০+ শব্দ)

১.

গ্রামের নাম হলুদিয়া। সেই গ্রামের গা ঘেসেই বয়ে চলেছে ছোট্ট একটা নদী। পাখির কলতান আর নদীর কলকল ধ্বনিতে মুখরিত গ্রামটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া এখনও তেমনভাবে লাগেনি বললেই চলে। গ্রামে বিদ্যুৎ এসে পৌঁছেছে সবেমাত্র কিছুদিন। বিদ্যুৎ আসার পরে গ্রামের সাথে লাগোয়া গঞ্জের বাজার আগের চেয়ে অনেকটাই জমজমাট হয়েছে। গঞ্জের সেই বাজারের সাথেই মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে প্রশস্ত পিচঢালা পথ ধরে মিনিট দশেক এগিয়ে গেলেই গ্রামের মূল সৌন্দর্য চোখে পড়ে।

গ্রামের ঠিক মাঝামাঝি স্থানেই রয়েছে প্রকান্ড এক বাড়ি। বাড়ির নাম “তালুকদার মঞ্জিল”। মূল বাড়ি, বৈঠকখানা, দিঘি, বাগান সব মিলিয়ে মোট দুই বিঘা জায়গা নিয়ে অবস্থিত এই বাড়িটি। শুধু হলুদিয়া গ্রাম নয়, আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের মধ্যেও তালুকদারদের মতো এরকম প্রতাপশালী পরিবার দ্বিতীয়টি নেই।

বাড়ির প্রধান কর্তা অর্থাৎ বড় ছেলের নাম এনায়েত তালুকদার। তালুকদার মঞ্জিলের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সিদ্ধান্তগুলোও তাকে ছাড়া নেওয়া হয় না কখনও। এনায়েত তালুকদারের ছোট ভাইয়ের নাম বেলায়েত তালুকদার। মূলত এই দুই ভাই তাদের পরিবার নিয়ে থাকে তালুকদার মঞ্জিলে।

মে মাসের মাঝামাঝি সময় এখন। আজ সকাল থেকেই দলে দলে লোক এসে ভীর করছে তালুকদার বাড়িতে। আজ দুপুরে মহাভোজের আয়োজন করা হয়েছে এখানে। এই আয়োজনের পিছনে অবশ্য বিশেষ একটি কারণ রয়েছে। আজ এই বাড়ির একমাত্র মেয়ে চাঁদনীর জন্মদিন। প্রত্যেকবছরই চাঁদনীর জন্মদিনে গ্রামের খেটে খাওয়া চাষাভুষা শ্রেণির মানুষগুলোকে পেটপুরে খাওয়ানো হয় তালুকদার মঞ্জিলে। মুসাফির বা ভিক্ষুকরাও বাদ যায় না। এবছরও সেই একই ধারা অব্যাহত আছে। চাঁদনী এবাড়ির বড় ছেলে এনায়েত তালুকদারের সর্বকনিষ্ঠা কন্যা। শুধু তাই নয়, পাঁচটি ভাইয়ের একমাত্র বোন হলো চাঁদনী।

ভাইদের বয়সের ধারাবাহিকতায় সবার প্রথমেই রয়েছে এনায়েত তালুকদারের বড় ছেলে সাখাওয়াত তালুকদার, তারপরে বেলায়েত তালুকদারের বড় ছেলে তামজীদ তালুকদার। তারপর আবার ঠিক একইভাবে এনায়েত তালুকদারের মেজ ছেলে সাদমান তালুকদার এবং বেলায়েত তালুকদারের মেজো ছেলে তানিম তালুকদার ও তুরাগ তালুকদার। তারপরেই রয়েছে এই বাড়ির একমাত্র মেয়ে চাঁদনী। তুরাগের চেয়েও প্রায় ছয় বছরের ছোট চাঁদনী।

এনায়েত তালুকদার এবং বেলায়েত তালুকদার দুই ভাইয়েরই প্রচন্ড শখ ছিল একটা মেয়ের। বেলায়েত তালুকদার পরপর তিনটা ছেলের পর আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এনায়েত তালুকদারের স্ত্রী রেবেকা বেগমও মেজো ছেলে সাদমানের জন্মের পর নানাবিধ শারিরীক জটিলতায় ভুগে সন্তান নিতে পারেননি অনেকবছর। তারপর সবাই যখন আশা একেবারেই ছেড়ে দিল হঠাৎ তখনই সাদমানের জন্মের প্রায় এগারো বছর পর সন্তানসম্ভবা হলেন রেবেকা বেগম। নয়মাস পরে জন্ম দিলেন একটা মেয়ের। মেয়েটির জন্মের পর পরিবারের সকলে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। সেজন্যই চাঁদের মতো সুন্দর মেয়েটির নাম রাখা হলো চাঁদনী। সেই থেকে চাঁদনী হয়ে উঠল বাবা-মা, চাচা-চাচী আর পাঁচ ভাইয়ের নয়নের মণি।

পরিবারের সবার আদর আহ্লাদ পেয়ে বড় হওয়া মেয়েগুলো সাধারনত খুব নরম প্রকৃতির হয়। তবে চাঁদনী এর একেবারেই বিপরীত। বিলের পানিতে ডুব দিয়ে শাপলা তোলা কিংবা গাছের উঁচু ডালে উঠে আম পেড়ে আনা, সবকিছুতেই সিদ্ধহস্ত সে। একইসাথে মেয়েটি প্রচন্ড রকমের বুঝদার। নিজের জীবনের সিদ্ধান্তগুলো খুব ভেবেচিন্তেই নেয় সে এবং একবার কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে সেটা থেকে তাকে টলানো শুধু কঠিনই নয়, প্রায় অসম্ভব।

সাধারনত চাঁদনীর প্রত্যেকটা জন্মদিন কাটে মহা ধুমধামে। দুপুরে মহাভোজের পর পরিবারের সদস্যরা নিজেদের মতো করে নানা আয়োজন করে। প্রত্যেকেই আলাদা আলাদাভাবে উপহার দেয় চাঁদনীকে। এবারও সবই হচ্ছে কিন্তু পরিবারের কারও মুখে হাসি নেই এবার। তার কারন চাঁদনী এবাড়ি ছেড়ে দূরে চলে যেতে চাইছে। কিছুদিন আগেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে চাঁদনীর। তারপর থেকেই সে জেদ ধরেছে শহরে যাবে। ছোটোবেলা থেকেই চাঁদনী স্বপ্ন দেখে এসেছে ডাক্তার হওয়ার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই শহরে যেতে চায় সে। বাড়ির সকলেই চিন্তায় পড়ে গেল৷ এতদূরে শহরে তাদের আদরের মেয়েটি কীভাবে গিয়ে থাকবে? শহরে তাদের তেমন কাছের কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। সবাই গ্রামেই থাকে। বেলায়েত তালুকদারের বড় ছেলে তামজীদ অবশ্য ঢাকার একটি কলেজের লেকচারার হিসাবে আছে। কিন্তু চাঁদনী যেখানে থাকতে চাইছে, সেখান থেকে অনেকটাই দূরে থাকে তামজীদ। তামজীদের কাছে পাঠিয়েও লাভ হবে না কোনো।

তাই চাঁদনী তার ইচ্ছের কথা বাসায় জানানোর পর যথারীতি দ্বিমত পোষণ করল সকলেই। কিন্তু নাছোড়বান্দা চাঁদনীকে কোনোভাবেই বোঝানো গেলো না। সেই থেকেই পরিবারের সকল সদস্য, বিশেষ করে বাবার সাথে তার স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। চাঁদনী যেভাবেই হোক শহরে যাবে, আর এনায়েত তালুকদারও বিশ্বাসযোগ্য কাউকে না পেলে মেয়েকে কিছুতেই ছাড়বেন না।

অনেক চেষ্টার পর একজনের খোঁজ পাওয়া গেল। তামজীদই খোঁজটা দিল। এনায়েত তালুকদারের বাবা মানে চাঁদনীর দাদার স্কুলমাস্টার এক বন্ধু ছিলেন পাশের গ্রামেই। তার মেয়ে ঢাকাতেই থাকে। চাঁদনী যেখানে মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং করতে চায়, তার কাছাকাছিই থাকে সে। কয়েকবছর আগে তামজীদের সাথে হঠাৎ দেখা হয়েছিল তার৷ তামজীদ অবশ্য চিনত না তাকে। তিনি নিজেই সেধে এসে পরিচয় দিলেন। আরও অনেক কিছুই বললেন।

পাশাপাশি গ্রাম হওয়ায় তিনি প্রায়ই নাকি যেতেন তালুকদার মঞ্জিলে। এরপর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ঢাকায় সেটেল হয়েছেন। বিয়ের পরেও নাকি একবার গিয়েছিলেন তালুকদার মঞ্জিলে। তখন তামজীদ ছোট ছিল। কিন্তু তার স্কুলমাস্টার বাবা মারা যাওয়ার পর সেভাবে আর গ্রামে যাওয়া হয়নি। তাই তালুকদার মঞ্জিলের সাথে যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেল।
ছোটবেলার তামজীদের চেহারার সাথে কিছুটা মিল পেয়ে একপ্রকার অনুমান করেই তামজীদের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছেন। ভদ্রমহিলা সেদিন অনেক করে বলেছিলেন তামজীদকে তার বাসায় যেতে। এমনকি নিজের মোবাইল নাম্বারও দিয়ে গিয়েছিলেন। তামজীদ যদিও সৌজন্যতার খাতিরে বলেছে, সময় করে যাবে একদিন। কিন্তু পরে আর যায়নি। এত আগের সম্পর্ক, এখন দাদা বা তার সেই স্কুলমাস্টার বন্ধু কেউই বেঁচে নেই। সেখানে যাওয়ার মতো কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পায়নি আসলে ও। কিন্তু চাঁদনীর জেদের কথা শুনে সে বড়চাচাকে বলল একবার সেই ভদ্রমহিলার সাথে যোগাযোগ করে দেখতে।

তামজীদের মুখে বিস্তারিত শুনেই এনায়েত তালুকদার চিনে ফেলেছিলেন তাকে। মরিয়ম খাতুন। বাবার সেই বন্ধুর মেয়ে। সত্যিই বহুবার তাদের বাড়িতে এসেছে মেয়েটি। এখন বোধহয় আর মেয়ে বলা যাবে না, মহিলা বলতে হবে। অমায়িক ব্যবহার ছিল তার। শেষ ভরসা হিসেবে তাকেই কল করলেন এনায়েত তালুকদার। সব শুনে মরিয়ম খাতুন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। এনায়েত তালুকদারকে বললেন, নিশ্চিন্তে যেন মেয়েকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তার কাছে। আরও বললেন, প্রয়োজনে তিনি নিজে এসে নিয়ে যাবেন চাঁদনীকে। এনায়েত তালুকদার জানালেন, চাঁদনীর ভাই গিয়েই দিয়ে আসবে তাকে।

২.
অবশেষে চাঁদনী তার দুই ভাই সাখাওয়াত আর তানিমকে নিয়ে স্বপ্নপূরণের শহর ঢাকায় পা রাখল। ওর যেন বিশ্বাসই হতে চাইল না সত্যিই ও ঢাকায় এসেছে শেষপর্যন্ত। ঠিকানা খুঁজে খুঁজে শেষপর্যন্ত ওরা এসে পৌঁছাল চূড়ান্ত গন্তব্যে। ঝা চকচকে অট্টালিকাটির নাম ‘মরিয়ম ভ্যালি’। বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সাখাওয়াত কল করল মরিয়ম খাতুনকে।

ভদ্রমহিলা নিজেই নিচে এলেন ওদের এগিয়ে নিতে। ওদের দেখেই আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলেন তিনি। তিনজনেই সালাম দিল তাকে। সালামের জবাব দিয়ে তিনি বললেন, “তোমরা সবাই কত বড় হয়ে গেছ। শেষবার যখন তোমাদের দেখেছিলাম, সবাই অনেক ছোট ছিলে। চাঁদনী তো তখনও পৃথিবীতেই আসেনি।”

আরও নানান কথা বলতে বলতে ওদের নিয়ে গেলেন বাড়ির মধ্যে।

“তোমাদের দাদাজান খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আমাকে ভালোবাসতেন খুব। এনায়েত ভাইজানও নিজের ছোট বোনের মতো স্নেহ করতেন। কতদিন যে তালুকদার মঞ্জিলের কথা মনে পড়েছে। মাঝেমাঝে ইচ্ছে করত, তৎক্ষণাৎ চলে যাই। কিন্তু সময় আর সুযোগের অভাবে যাওয়া হতো না শেষপর্যন্ত।”

মরিয়ম খাতুনের আন্তরিক কথাবার্তায় চিন্তামুক্ত হলো দুই ভাই। একমাত্র বোনটিকে এরকম একটা অজানা অচেনা পরিবেশে রেখে যেতে প্রচন্ড দ্বিধা কাজ করছিল ওদের মধ্যে, ভদ্রমহিলার কথায় সেই দ্বিধা একটু হলেও কেটেছে। সাখাওয়াত আর তানিমের ইচ্ছে ছিল বোনকে এখানে রেখে সাথেসাথেই চলে যাবে। তামজীদ তো ঢাকাতেই আছে, মেডিক্যাল অ্যাডমিশন কোচিং এ সেই ভর্তি করিয়ে দেবে। কিন্তু মরিয়ম খাতুন দুপুরে না খাইয়ে কিছুতেই ওদের যেতে দেবেন না। অগত্যা দুই ভাইয়েরই থেকে যেতে হলো। মরিয়ম খাতুন চাঁদনীকে অন্য একটা রুমে নিয়ে গিয়ে বলল, “আজ থেকে এই রুমে তুমি থাকবে। আশা করছি এখানে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। তবু যদি কোনো সমস্যা হয়, আমাকে জানাবে সাথে সাথে। ওইযে দক্ষিন কর্নারের রুমটা দেখতে পাচ্ছ, ওটাই আমার রুম।”

চাঁদনী আন্তরিক হেসে বলল, “কোনো অসুবিধা হবে না আন্টি। সব ঠিকঠাকই আছে।”

মরিয়ম খাতুন বললেন, “তাহলে এখন চেঞ্জ করে ফেল। সারারাত জার্নি করে এসেছ, ক্লান্ত লাগছে নিশ্চই। বোরখা খুলে ফ্রেশ হয়ে নাও।”

“জ্বি।”

সকালের নাস্তার পর তানিম আর সাখাওয়াতকে গেস্টরুমে পাঠানো হলো বিশ্রামের জন্য৷ সারারাত জেগে থাকার কারনে সাখাওয়াত ঘুমিয়ে পড়ল কিছুক্ষনের মধ্যেই। কিন্তু অপরিচিত জায়গায় তানিমের ঘুম হলো না কিছুতেই। ও ভাবল, বাইরে গিয়ে ঘুরে আসবে কিছুক্ষন। মরিয়ম খাতুনকে জানিয়ে নিচে নেমে এলো ও। বাড়িতে থেকে বের হওয়ার মূল গেটের সামনে এসেই ঘটে গেল অঘটনটা।

মূল গেটের মধ্যেই আবার ছোট একটা পকেট গেট। একজন মানুষ অনায়াসে বের হয়ে যেতে পারবে এমন আকারের। বাড়ির সামনের বিশাল খোলা জায়গার আশেপাশে তাকাতে তাকাতেই হাঁটছিল ও। সামনের দিক থেকে যে একটা মেয়ে ঝড়ের বেগে এগিয়ে আসছে, সেটা খেয়ালও করেনি। মেয়েটিও হাঁটতে হাঁটতে মোবাইলে এমনভাবে ডুবে ছিল যে সামনের মানুষটাকে দেখতেই পায়নি। দুজনের অসাবধানতার কারনেই লেগে গেল ধাক্কাটা। তেমন জোরে লাগেনি ধাক্কাটা। কারন ধাক্কা লাগার পরেও দুজনই দাঁড়িয়ে ছিল বহাল তবিয়তে। কিন্তু অঘটন যেটা ঘটে গেল সেটা হলো, পাশের পানিভর্তি একটা বালতিতে মেয়েটির হাতের স্মার্টফোনটি টুপ করে পড়ে গেল। বাগানের মালী বোধহয় গাছে পানি দিয়েই বালতিটা রেখেছিল ওখানে।

তানিম শুধু একপলক তাকিয়েছিল মেয়েটির দিকে। আঁটসাট টিশার্টের সাথে থ্রি কোয়ার্টার লেগিংস আর পায়ে সাদা কেডস। চুলগুলো পনিটেইল করে বাঁধা। সারামুখ ঘেমে তৈলাক্ত হয়ে আছে। মাত্রই মর্নিং ওয়াক থেকে ফিরেছে সম্ভবত।

কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল তানিম। শহুরে কালচারে এসব পোশাক খুব নরমাল হলেও ওদের জন্য এটা একটু বেমানানই বলা চলে। তানিম নিচের দিকে তাকিয়ে নম্র কন্ঠে বলল, “আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। একদমই খেয়াল করিনি আপনাকে।”

একজনের কন্ঠ ঠিক যতটা নমনীয় আরেকজনের কন্ঠে ঠিক ততটাই তেজ।

“হোয়াট দ্যা ফা**। কী হলো এটা? চোখ কি মাথার পিছনে নিয়ে হাঁটেন? নাকি অন্ধ? রিডিকিউলাস পিপলস। কোথা থেকে যে এসব উদ্ভট লোক আসে! হ্যালো মিস্টার, আপনার স্যরি ধুয়ে কি আমি পানি খাব? নাকি স্যরি এক্সেপ্ট করলে ফোনটা আমার হাতে চলে আসবে। ডু ইয়্যু নো, হাউ মাচ ডাজ ইট কস্ট?”

একনাগাড়ে কথা বলে থামল মেয়েটি। মেয়েটির শেষ প্রশ্নটিতে তীব্রভাবে অপমানিত বোধ করল তানিম। রাগে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে গেল। এখানে কোনো পুরুষ থাকলে হয়তো এতক্ষনে একচোট হয়ে যেত। কিন্তু তার পরিবার তাকে শিক্ষা দিয়েছে, সবসময় মেয়েদের সাথে নম্র ব্যবহার করতে হবে। তানিম তাই কোনো তর্কে গেল না। বরং পানিভর্তি বালতির মধ্যে হাত দিয়ে ফোনটা তুলে উলটেপালটে দেখল কিছুক্ষন। তারপর সেটা মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “আমি আসলেই দেখিনি আপনাকে। নিজের অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি আবারও ক্ষমা চাচ্ছি আপনার কাছে।”

মেয়েটি ছোঁ মেরে ফোনটা তানিমের হাত থেকে নিয়ে নিল। তারপর দ্বিগুন তেজ নিয়ে বলল, “আপনাদের মতো ছেলেদের আমার খুব ভালো করে চেনা আছে। ইচ্ছে করে ধাক্কা দেবেন আবার মাফ চাওয়ার নাটকও করবেন। মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না, তাই তো? শুধু ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে, না? ক্যারেক্টারলেস কোথাকার।”

কথা শেষ করে মেয়েটি আর দাঁড়ানোর প্রয়োজনবোধ করল না৷ দ্রুত পায়ে বাড়ির মধ্যে চলে গেল। তানিম চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকল শুধু৷ আজপর্যন্ত কোনো মেয়ে তানিম তালুকদারের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে কথা বলার সাহস অব্দি পায়নি। বলা যায় সেই সুযোগ তানিম নিজেই কখনও কোনো মেয়েকে দেয়নি। অথচ আজ কিনা অচেনা একটা মেয়ে বিনাদোষে এতগুলো কথা শুনিয়ে গেল। চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলল!

তানিমের শিরা উপশিরা তখন দপদপ করছিল রাগে। ও আরেকবার পিছনে ফিরে তাকাল। তারপর গেটের বাইরে বেরিয়ে এলো।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে