#নিভৃতে_তেজস্বিনী
#পর্ব_২৮
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা
অন্ধকারাচ্ছন্ন বদ্ধ কুটিরে হিমশীতল এক স্থানে বেঁধে রাখা হয়েছে দু’জনকে। ঠাণ্ডায় জমে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে তাদের। একে তো ঠাণ্ডার মাঝে টেকা মুশকিল, তার উপর হাত, পা বাঁধা। চিৎকার করার উপায়টুকু নেই। মুখ যে বাঁধা কালো কাপড়ে। দীর্ঘ দুই ঘন্টা যাবত এখানে বন্দী হয়ে আছে মাহতাব আর তুরাগ। কখনো ঠাণ্ডার পরিমাণ কমে গিয়ে তাদের স্বস্তি দিচ্ছে তো কখনো পরিমাণ বেড়ে গিয়ে তাদের মা*রতে উদ্যত হচ্ছে। কথা বলার শক্তিটুকুও যেন হারিয়ে ফেলেছে তারা।
ঘরের দরজা খুলে ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করে এক মানবী। চোখেমুখে তার উপচে পড়া রাগ লক্ষণীয়। চোখ বাঁধা না থাকায় তাদের দু’জনের বুঝতে একটুও অসুবিধা হলো না যে এটা সিরাত। তুরাগ তো আগে থেকেই জানত এবার সিরাতের হাতে পড়লে তার আর রক্ষা নেই। কিন্তু মাহতাব! সে তো তার প্রাক্তন স্ত্রীর কঠিন রূপ আজও নিজ চোখে দেখেনি।
সিরাতের পাশাপাশি ঘরে প্রবেশ করে তার বন্ধুমহলের সবাই। শেষে ফারহান এসে দরজা আটকে দেয় ভেতর থেকে। নাবিলের হাতে একটা ব্যাগ দেখে তুরাগের নিঃশ্বাস যেন আটকে আসে।
সিরাত হাসিমুখে তাদের কাছে এগিয়ে যায়। দুজনকে বরফের মাঝে আটকে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পুরো ঘরে এয়ার কুলার আর হিটার সেট করা।
একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে সিরাত। আজ তাকে চিনতে খানিকটা বেগ পেতে হয়েছে মাহতাবের। কারণ স্ত্রীকে এমন রূপে আগে কখনো সে দেখেনি। গায়ে একখানা কালো রঙের হুডি জড়ানো। চুলগুলো উঁচু করে বাঁধা। হাতে একটা ঘড়ি। আর পায়ে কালো রঙের জুতা। যেন সে মা*রামা*রি করার জন্য একদম প্রস্তুত হয়ে এসেছে।
“কী? অবাক হয়ে যাচ্ছ আমাকে দেখে? ভেবেছিলে আমাকে মে*রে মাটির নিচে রেখে আসবে। কিন্তু ভাগ্যের কি খেলা দেখো। আমি দিব্যি সুস্থ হয়ে তোমাদের সামনে বসে আছি। আর তোমরা বন্দী অবস্থায় ছটফট করছ আমার সামনে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে আমি তোমাদের জায়গায় চলে এসেছি। আর তোমরা আমার জায়গায় চলে এসেছ। ব্যাপারটা সুন্দর না?”
হাসিমুখে কথাগুলো বলে সিরাত দু’জনের মুখের বাঁধন খুলে দেয়। এতক্ষণে যেন দু’জন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়তে সক্ষম হলো।
“তোমাদের জন্য এত সুন্দর ঠাণ্ডা একটা জায়গা কেন নির্ধারণ করেছি জানো? কারণ তোমাদের শরীরে অনেক তেজ। মা*থা সব সময় গরম হয়ে থাকে। এখন একটু ঠাণ্ডা হাওয়া দরকার তোমাদের। পায়ের নিচে বরফ থাকায় আমার পাচ্ছ না? দাঁড়াও, তোমাদের আরাম আরেকটু বাড়িয়ে দিচ্ছি।”
কথাটা বলে সিরাত মাওয়াকে ইশারা করে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিতে। তাদের প্রত্যেকের গায়ে শীতবস্ত্র রয়েছে। কেবল মাহতাব আর তুরাগের শরীরে একটা প্যান্ট এবং টিশার্ট জড়ানো। ঠাণ্ডার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মাহতাব কাঁপতে কাঁপতে বলে,
“দয়া করে এসব বন্ধ করো। অনেক ঠাণ্ডা লাগছে। সহ্য করতে পারছি না আমরা।”
“এটা কোনো কথা হলো? এত অল্পতেই তোমাদের শরীরে তেজ সব গায়েব হয়ে হলো? কেমন পুরুষ মানুষ তোমরা হ্যা?”
সিরাতের কথায় অভি মুচকি হেসে বলে,
“আরে কা*পুরুষ বল। এদের পুরুষ বলে আমাদের পুরুষ জাতিকে অপমান করিস না।”
“হুম সেটাও ঠিক। আচ্ছা এদের দু’জনের সাথে কী কী করা যায় বল তো? একে তো এরা দু’জন মিলে আমার আর মাওয়ার জীবন নষ্ট করেছে। আমার মেয়েটা এদের জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছে। আমার সবচেয়ে কাছের একজনের শরীর থেকে এরা র*ক্ত ঝরিয়েছে। বাকি রইলাম আমি। আমাকে যে কষ্ট এরা দিয়েছে এটা তো ম*রার আগ পর্যন্ত আমি ভুলব না। এত এত অন্যায়ের শাস্তি তো সেরকমই হওয়া উচিত তাই না?”
পাশ হতে তারিন আর উর্মি একত্রে বলে ওঠে,
“অবশ্যই।”
“আজকে যা যা হবে সেটাও কী লাইভে দেখাব?”
ইভান কিছু একটা ভেবে উত্তর দেয়,
“না, আজকের এসব লাইভে দেখানোর দরকার নেই। পরবর্তীতে থানা, পুলিশ হতে পারে। আজকে যা যা হবে তা শুধু আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।”
“আচ্ছা। তাহলে এক কাজ করি আমরা। উর্মি আর তামান্না ভিডিয়ো করবি। বাকিরা আমাকে সাহায্য করবি।”
সবাই সিরাতের কথায় সম্মতি দিলে সিরাত নাবিলকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“নাবিল ব্যাগ থেকে ব্লে*ড আর লবণের প্যাকেট বের কর।”
ব্যাগ থেকে এসব বের করে সিরাতের হাতে দিলে সিরাত প্রথমে তুরাগের কাছে এগিয়ে যায়৷ তুরাগের মা*থার চুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে একটু জোরে টান দিয়ে বলে,
“তোমার মা*থা তো সব সময় গরম থাকে তাই না? ঠাণ্ডা করার ব্যবস্থা করছি।”
কথাটা বলে আলতো হাতে তুরাগের মা*থার চুলগুলো কেটে ফেলে সিরাত। শেষে গিয়ে কয়েক জায়গায় ইচ্ছাকৃতভাবে কেটে ফেলে। ফলস্বরূপ মা*থার বিভিন্ন জায়গা থেকে র*ক্ত ঝরতে শুরু করে। এর মাঝে মুঠোভরতি লবণ নিয়ে সযত্নে তুরাগের সম্পূর্ণ মা*থায় লবণ মাখিয়ে দেয়। তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করে তুরাগ। সিরাতের এমন রূপ দেখে আত্মা শুকিয়ে যায় মাহতাবের। ভয়ার্ত চোখে সে তার প্রাক্তন স্ত্রীর দিকে তাকালে সিরাত হেসে বলে,
“দীর্ঘ পাঁচ বছর একসাথে সংসার করেছি আমরা। তোমার মনে আছে? তোমার সিল্কি চুলগুলো আমার ভীষণ প্রিয় ছিল। চলো, এখন তোমাকে একটু ভালোবেসে কাছে টেনে নিই।”
মাহতাবের কাছে গিয়ে তার চুলে আলতো হাতে বিলি কেটে দেয় সিরাত। অন্য সময় হলে মাহতাব সময়টা উপভোগ করত। কিন্তু আজ তার ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। সে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,
“সিরাত আমার সাথে এমন করো না। আমি আর কখনো তোমার কোনো ক্ষ*তি করব না। দয়া করে আমাকে ছেড়ে দাও। আর তোমাকে মা*রার পরিকল্পনা আমার ছিল না। এসব তুরাগের পরিকল্পনা ছিল।”
“আহারে আমার নিরীহ স্বামী! তুমি তো দুধে ধোয়া তুলশী পাতা। তুমি তো কোনো অন্যায় করতেই পারো না তাই না?”
কথাটা বলে মাহতাবের চুলগুলো খুব শক্ত করে আঁকড়ে ধরে সিরাত। ব্যথায় আহ্ শব্দ করে চোখ বন্ধ করে নেয় মাহতাব। সিরাত একইভাবে মাহতাবের চুলগুলো কেটে সম্পূর্ণ মা*থায় লবণ মাখিয়ে দেয়।
তামান্না কৌতুহলী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“তুই কি ওদের জানে মা*রবি?”
“আরে না। ওদেরকে মা*রব কেন আমি? আমি কি খু*নি নাকি?”
“তাহলে কী করবি? আমাদের তো তুই আগে থেকে কিছুই জানালি না।”
ফারহানের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয় না সিরাত। কেবল মুচকি হেসে এগিয়ে যায় নাবিলের দিকে।
“এই ব্যাগে সবকিছু আছে তো?”
“হ্যা, তুই যা যা আনতে বলেছিলি সবকিছু এনেছি আমি।”
সিরাত পুনরায় মাহতাবের কাছে ফিরে যায়। হাসিমুখে বলে,
“আমি তোমাদের ছেড়ে দিব। তবে এমনভাবে ছাড়ব যেন আজীবন তোমরা আমাকে মনে রাখতে পারো।”
ঠোঁটের কোণে হাসি থাকলেও সিরাতের চোখে ভয়ং*কর রাগ খেলা করছে। ব্যাগ থেকে সার্জিক্যাল কিছু জিনিস বের করে সিরাত বাকিদের বলে,
“মেয়েরা বের হয়ে যা। আমার সাথে শুধু ইভান আর অভি থাকবে। নাবিল তুই ফারহানকে নিয়ে মেয়েদের সামলাবি।”
সিরাতের কথায় উর্মি অবাক হয়ে বলে,
“কী করতে চাইছিস তুই?”
“এখন কোনো প্রশ্ন করিস না। অভির হাতে তোর ফোন দিয়ে বের হয়ে যা।”
সবাই ভয়ে ভয়ে বের হয়ে যায়। ইভান সিরাতের পরবর্তী পরিকল্পনা বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে,
“এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে না?”
“আর কোনো মেয়ের জীবন যেন নষ্ট না হয় তার জন্য এটুকু তো আমাকে করতেই হবে।”
ইভান আর কিছু বলে না। কিন্তু অভি জিজ্ঞেস করে,
“জানি তুই কী করতে চাইছিস। কিন্তু তুরাগ তো আগে থেকেই,”
অভিকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে সিরাত নিজেই বলে,
“আমি কেবল মাহতাবের সাথে এমনটা করব। তুরাগের সাথে নয়। ওর জন্য অন্য ব্যবস্থা করেছি আমি।”
কথাটা বলে চোখের ইশারায় ইভানকে মাহতাবের কাছে এগিয়ে যেতে বলে সিরাত। ইভান মাহতাবের কাছে গিয়ে পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে পাশের একটা জায়গায় শুইয়ে দেয়। এরপর পুনরায় পা বেঁধে দেয়। পরবর্তীতে মাহতাবের প্যান্ট খুলতে গেলে মাহতাব চিৎকার করে ওঠে। নিজের বিপদ বুঝতে পেরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“সিরাত দয়া করে আমার সাথে এমন করো না। আমি তোমার স্বামী সিরাত। তোমার সন্তানের বাবা আমি। আমাকে মাফ করে দাও। দয়া করো আমার উপর।”
সিরাতের চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। তার বুকের ভেতর অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে। কিন্তু এটা যে তাকে করতেই হবে। অন্য সবকিছু বাদ, এই শাস্তিটা কেবল পর*কীয়ার জন্য।
একটু একটু করে মাহতাবের কাছে এগিয়ে যায় সিরাত। তার সম্পূর্ণ শরীর কাঁপছে। চোখ বন্ধ করে সে বলে,
“আমাকে আপনি মাফ করে দিন আল্লাহ। এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই। কারোর জীবন নেওয়ার অধিকার আমার নেই। কিন্তু এদের ছেড়ে দিলে সমাজের বাকি পুরুষেরা সাহস পেয়ে যাবে। মেয়েদের কষ্ট কখনো ফুরাবে না। যার জন্য পুরুষ মানুষ বহু নারীতে আসক্ত হয় সেটাই যদি না থাকে তাহলে তারা কীভাবে ঠকাবে তাদের স্ত্রীদের? আর শুধু পুরুষ নয়। কোনো মেয়েও যদি এমন করে তার সাথেও একই কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি।”
নিজ মনে কথাগুলো বলে মনে একরাশ সাহস সঞ্চার করে চোখ বন্ধ করে নিজের কাজ করে নেয় সিরাত। মাহতাবের চিৎকারে কেঁপে ওঠে সবাই। তুরাগ ভয়ে আৎকে ওঠে সিরাতের এমন কাজে। বাকিরা দৌড়ে ভেতরে এসে সিরাতের র*ক্তাক্ত হাত দেখে চমকে ওঠে। মেয়েরা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নেয়। মাহতাবকে গলা কা*টা মুরগির মতো ছটফট করতে দেখে সিরাত দূরে সরে যায়। কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ে সে। ইভান মাহতাবের শরীরের উপর একটা চাদর দিয়ে দেয়।
পরিবেশ একদম শান্ত। কেবল ক্ষণে ক্ষণে ভেসে আসছে মাহতাবের আর্তনাদের স্বর। সিরাত নিজেকে সামলে নিয়ে ইভানকে বলে,
“ওকে এখন এখান থেকে নিয়ে যা। অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে রাখ।”
“আচ্ছা।”
অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর এবার পালা আসে তুরাগের। তুরাগ সিরাতের দিকে তাকিয়ে একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে। তার গলা দিয়ে আজ কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। সিরাত মাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“ওকে তুই নিজ হাতে শাস্তি দিবি।”
“আমি?”
“হুম, তুই শাস্তি দিবি ওকে।”
কথাটা বলে ব্যাগ থেকে একটা ইনজেকশন বের করে মাওয়ার হাতে তুলে দেয় সিরাত।
“কীসের ইনজেকশন এটা?”
“তুরাগ বাঁচবে। কিন্তু এমনভাবে বাঁচবে যেন আর কখনো কারোর ক্ষতি করতে না পারে।”
“মানে?”
“এই ইনজেকশন ওর শরীরে পুশ করার ফলে তুরাগ প্যারালাইজ্ড হয়ে যাবে।”
“হ্যা?”
“হুম। আর কিছু ভাবিস না। যা পুশ করে দে।”
মাওয়া ভয়ে ভয়ে তুরাগের কাছে এগিয়ে যায়। তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“জীবনে প্রথম তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারোনি৷ এরপরেও তোমাকে বাঁচার একটা সুযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি কী করলে? নিজ হাতে নিজের বিপদ ডেকে আনলে। মাফ করে দিয়ো আমায়। তোমার জন্য এটুকু শাস্তি তো প্রাপ্য।”
লম্বা একটা শ্বাস ছেড়ে তুরাগের হাতে ইনজেকশন পুশ করে দেয় মাওয়া। তুরাগের চিৎকারে চোখ বন্ধ করে নিলে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে মাওয়ার চোখ থেকে।
সিরাত নিজের র*ক্তাক্ত হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি ভালো থাকতে চেয়েছিলাম। খুব বেশি চাওয়া তো আমার ছিল না। সুখে, শান্তিতে স্বামী আর সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি এটা কী করলে মাহতাব? আমার সাথে যা করেছ সেসব মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমার মেয়েকে নিয়ে তুমি যে পরিকল্পনা করছিলে সেটা কিছুতেই মানতে পারতাম না আমি। আমার কাছ থেকে তুমি আমার মেয়েকে কেঁড়ে নিতে চাইছিলে। হাসপাতালে থাকাকালীন তোমার পরিকল্পনার বিষয়ে সবকিছু জেনে গিয়েছিলাম আমি। তাই তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। বাকিটা জীবন তুমি কষ্টে কাটাবে। তোমার পাপের ফল এটা!”
কিছু মুহূর্তের মধ্যে সবাই নীরব হয়ে যায়। নির্বাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে মেঝের উপর পড়ে থাকা সিরাতের দিকে।
চলবে??
#নিভৃতে_তেজস্বিনী
#পর্ব_২৯
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা
হুইলচেয়ারে নিজের ছেলেকে বসে থাকতে দেখে মারজিয়া শেখ অবাক নয়নে সদর দরজার পানে তাকিয়ে থাকে। আজ মাহতাবের মুখে কোনো কথা নেই। চোখে কোনো রাগ নেই। কেমন যেন নিষ্প্রাণ হয়ে গিয়েছে সে। সিরাত মাহতাবকে নিয়ে মারজিয়া শেখের সামনে এসে দাঁড়ায়। তন্মধ্যে নজরুল শেখ ও এসে হাজির হয়। তিনি ছেলের এমন অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করেন,
“কী হয়েছে আমার ছেলের?”
সিরাত নির্লিপ্ত কণ্ঠে জবাব দেয়,
“পাপের শাস্তি পেয়েছে।”
“মানে?”
সিরাত কিছু বলার আগেই মাহতাব হুইলচেয়ার ঠেলে নিজের ঘরের দিকে অগ্রসর হয়। নীরব থাকার দীর্ঘ এক বিরতির পর সিরাত সবকিছু বিস্তারিত বলে তাদের। মারজিয়া শেখ ছেলের এমন দশা মেনে নিতে পারেন না। মা*থা ঘুরে পড়ে যান মেঝের উপর। যে মানুষটা সিরাতকে নিজের মেয়ের মতো দেখত সেই মানুষটা আজ এমন একটা কাজ করে বসে যার জন্য সিরাত কখনোই প্রস্তুত ছিল না। সিরাতের গালে ক*ষে এক থা*প্পড় বসিয়ে দিয়ে নজরুল শেখ হুংকার দিয়ে ওঠেন।
“কী করেছ এটা তুমি? তোমার করা সবকিছু মেনে নিয়েছিলাম আমি। কিন্তু এটা? তুমি কি মানুষ!”
সিরাত কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে একই জায়গায়। তার মনের ভেতর যে কোন ঝড় বইছে তা কেউ হয়তো কখনো কল্পনা করতেও পারবে না।
“তুমি আমাকে আমার শত্রুদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সেই ঋণ তো আমি কখনো ভুলে যাইনি। সেদিন যদি তুমি সঠিক সময়ে পৌঁছে সবার সাথে ল*ড়াই করে আমাকে না বাঁচাতে তাহলে হয়তো আজ আমি বেঁচে থাকতাম না। সেটা হলেই বোধহয় ভালো হতো। নিজ চোখে আমার সন্তানের এই সর্বনা*শ দেখতে হতো না।”
সিরাতকে এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি পুনরায় বলেন,
“এই মুহূর্তে তুমি বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে। আর কখনো যেন আমি তোমার মুখ না দেখি।”
সিরাত নির্বাক দৃষ্টিতে তার দিকে এক পলক তাকিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে পেছন থেকে ডেকে ওঠে মাহতাব।
“সিরাত দাঁড়াও!”
পেছন ফিরে তাকায় সে। মাহতাব তাকে ঘরে আসতে বলে। সাথে এটাও বলে,
“ওকে কেউ কিছু বলবে না। যা বলার আমি বলব।”
নজরুল শেখ কিছু বলতে যেয়েও ছেলের এহেন কথায় চুপ করে যায়।
রোবটের মতো সিরাত সেই ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় যেটা এক সময় তার ঘর ছিল। আজ সেসব শুধুই অতীত!
মাহতাব কাঁপা কাঁপা গলায় সিরাতকে প্রশ্ন করে,
“তুমি অর্ষার কথা সব জানতে?”
সিরাত নিষ্পলক চেয়ে থাকে মাহতাবের দিকে। তার দিক থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে মাহতাব পুনরায় বলে,
“সবটা জানতে তুমি?”
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মুখ খোলে সিরাত। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া বাঁধ ভাঙা পানিকে উপেক্ষা করে সে উত্তর দেয়,
“হাসপাতালে থাকাকালীন সময়ে ভেবেছিলাম তোমাকে ছেড়ে দিব। আর কত যুদ্ধ করব? হাজার হোক, একটা সময় তো তোমাকে ভালোবেসে তোমার হাত ধরে সংসার জীবন শুরু করেছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দেখ, বাড়ি ফেরার দুই দিনের মধ্যে একটা অচেনা কল আসে আমার নাম্বারে। কল রিসিভ করলে একজন মেয়ে আমাকে বলে, আপনার লাইভ আমি দেখেছি। এতদিন আমি চুপ করে ছিলাম। কারণ গরীবের পক্ষে তো আইন রায় দেয় না। কিন্তু আজ আমার মনে হচ্ছে আপনি পারবেন আমাকে উপযুক্ত বিচার দিতে। মেয়েটার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সদ্য হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে শরীরটাও তেমন ভালো ছিল না। তাই তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এসব বলার মানে কী? তখন সেই মেয়ের উত্তর কী ছিল বলতে পারবে? জীবনের সবচেয়ে বড়ো ধাক্কা তো আমি তখন খেলাম যখন জানতে পারলাম আমি এতদিন একজন ধ*র্ষকের সাথে সংসার করেছি। ঐ মুহূর্তে আমার ম*রে যেতে ইচ্ছা করছিল। আমার বুক ফেটে যাচ্ছিল কষ্টে। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এই দেখ না, এখনও কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার!”
সিরাতকে অস্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে দেখেও মাহতাব কিছু বলতে পারে না। সে সবকিছু বলার ভাষা একেবারেই হারিয়ে ফেলেছে। সিরাত লম্বা শ্বাস টেনে বলে,
“মেয়েটা নিজের নাম বলল, অর্ষা। একই কলেজে পড়াশোনা করতে তোমরা। গ্রাম থেকে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে শহরে আসা মেয়েটা তখনও শহুরে আদবকায়দার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি। এই অচেনা শহরে তার কোনো বন্ধু ছিল না। সহজসরল মেয়েটার বন্ধু হয়ে ওঠার চেষ্টা করলে তুমি। বন্ধুদের সাথে বাজি ধরেছিলে, ওই মেয়েকে নিজের বিছানায় নিয়ে যাবে তুমি। নতুবা মেনে নেবে, তুমি ব্যর্থ এক পুরুষ। কী সুন্দর তাই না? সহজসরল মেয়েটার প্রথমে বন্ধু হয়ে উঠলে। তারপর নিজের প্রেমের জালে খুব সূক্ষ্মভাবে আটকে নিলে তাকে। জীবনের প্রথম প্রেমের স্বাদ পেয়ে মেয়েটাও তখন আনন্দিত। কিন্তু সে কখনো তোমার কাছাকাছি আসতে চায়নি। তার হাত ধরাটাও বারণ ছিল তোমার। মেয়েটা যখন তোমাকে মনেপ্রাণে ভালোবেসে ফেলেছে তখনও তোমার মনে একটাই চাওয়া। তাকে বিছানা অবধি নিয়ে যেতে হবে। বন্ধুদের সামনে নিজের পুরুষত্ব দেখাতে হবে। একদিন সেই কাজে সফল হয়েও গেলে তুমি। নিজের জন্মদিনের কথা বলে তাকে এক বন্ধুর বাড়ি নিয়ে গিয়ে সফট ড্রিংকস বলে ম*দ খাওয়ালে। আর তারপর!”
মেঝের উপর বসে পড়ে সিরাত। তার মা*থা ঘুরছে ভীষণ। চোখের সামনে সব অন্ধকার লাগছে। তবুও তার কথা বলা থামে না।
“মেয়েটার সর্বস্ব লু*টে নিয়ে তার গোপন ভিডিয়ো ধারণ করে ভয় দেখালে। গ্রামের মেয়ে হওয়ায় সম্মানের ভয় বড্ড বেশিই ছিল তার। তবুও মনে সাহস জুগিয়ে সে থানায় গেল। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হলো না। তোমার বাবা নিজের অর্থের প্রভাব দেখিয়ে ছাড়িয়ে নিল তোমাকে। মেয়েটার সুন্দর জীবন নিমিষেই কালো আঁধারে ছেয়ে গেল। লোকে বলতে লাগল, সে ধ*র্ষিতা! পরিবার, আত্মীয়স্বজন, পাড়াপড়শি কেউ তার পাশে দাঁড়াল না। বরং তার বেঁচে থাকার ইচ্ছাকে সযত্নে মে*রে ফেলতে লাগল। তবুও মেয়েটা এখনও বেঁচে আছে। কেন বেঁচে আছে জানো? যেন সে ম*রার আগে তার ধ*র্ষকের শাস্তি নিজ চোখে দেখে যেতে পারে। একা একা বাঁচার লড়াই সে এখনো লড়ে যাচ্ছে। বদ্ধ ঘরে এক কঠিন জীবনযাপন করছে সে। মেয়েটা ভালো নেই। অবশেষে সে আমাকে বলল,”
থেমে যায় সিরাত। তার নিঃশ্বাস আটকে আসছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন তার গলা খুব শক্ত করে চেপে ধরেছে।
“সমাজে একজন ধ*র্ষিতা নারী যখন বদ্ধ ঘরে বন্দী তখন ধ*র্ষক বুক ফুলিয়ে হেঁটে চলে বাংলার রাজপথে। তাদের কোনো শাস্তি হয় না। কারণ তারা তো ছেলে। তারা স্বভাবতই একটুআধটু দুষ্টুমি করে। এতে তাদের কোনো পাপ হয় না। তারা তো মুক্ত, স্বাধীন। সব শাস্তি তো কেবল মেয়েদের জন্য। তাই তো কিছু না করেও আমার মতো মেয়েদের নামের পাশে যুক্ত হয় ধ*র্ষিতা শব্দ। তাদের জন্য বেঁচে থাকাটাই যেন এক মহান যুদ্ধ!”
মেঝের উপর দাঁড়িয়ে টালমাটাল পায়ে সিরাত এগিয়ে যায় মাহতাবের কাছে৷ তার সামনে দুই হাঁটু মুড়ে বসে বলে,
“শেষে মেয়েটা আমায় বলল, আপনিও তো এক কন্যা সন্তানের মা। আপনার মেয়ের সাথে যদি কেউ এমন করে তবে আপনি কি তাকে ছেড়ে দেবেন? আপনাকে সবাই তেজস্বিনী বলে ডাকে। তেজস্বিনীরা কি কেবল নিজের স্বার্থে তেজস্বী হয়? আপু আপনি পারবেন আমার সাথে যে অন্যায় করেছে তাকে শাস্তি দিতে? বলুন না, পারবেন? আমি যে এই আশাতেই আজও বেঁচে আছি। আমার বেঁচে থাকাটা স্বার্থক করবেন আপনি? তার এহেন প্রশ্নে আমি তখন নির্বাক ছিলাম। কী বলতাম আমি? আমি যে কিছু বলার মতো অবস্থাতেই ছিলাম না। আমার দুনিয়াটা তখন আমার চোখের সামনে উল্টে যাচ্ছিল। আমাদের মেয়ের দিকে তাকিয়ে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। পুরো একটা রাত আমার দমবন্ধ অবস্থায় কাটল। অবশেষে ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম একজন স্ত্রী হিসেবে নয়, বরং একজন নারী হিসেবে আমি সেই মানুষটাকে শাস্তি দিব যার জন্য একটা জীবন্ত ফুল ফোটার আগেই ঝরে গিয়েছে।”
মাহতাবের পায়ের কাছে বসে অঝোরে কাঁদে সিরাত। কাঁদতে কাঁদতে জামার একাংশ খামচে ধরে বলে,
“আমি একজন স্ত্রী হিসেবে এমন কাজের জন্য অনুতপ্ত। কিন্তু একজন নারী হিসেবে এমন কাজের জন্য আমি গর্বিত। ধ*র্ষণ, পরকীয়া, বহু নারীতে আসক্ত হওয়া, এসবের ফলে যে একজন মেয়ের জীবনে কতটা বিরূপ প্রভাব পড়ে তা কি তোমরা জানো? একজন স্ত্রী হিসেবে আমি তোমার কাছে মাফ চাইছি। তবে একজন নারী হিসেবে তোমার প্রতি আমার আজন্ম ঘৃণা জন্মেছে। তা আর কখনো মিটবার নয়। আমি এখন সবার চোখে দোষী। কারণ তারা আসল কারণটা জানে না। চিন্তা করো না। তোমার এই অতীত আর কেউ জানবে না। তার জন্য আমি না হয় হলাম সকলের চোখে অপরাধী।”
ঠোঁট কাম*ড়ে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা করে সিরাত উঠে দাঁড়ায়। এক পা, দুই পা করে এগিয়ে যায় দরজার দিকে। শেষবারের মতো পেছন ফিরে তাকালে সে লক্ষ্য করে মাহতাব নিষ্পলক চেয়ে আছে তার দিকে। যাওয়ার আগে সিরাত শেষবারের মতো বলে,
“তোমার সাথে আমি যা করেছি তার জন্য যদি তুমি আমায় শাস্তি দিতে চাও তাহলে থানায় যেতে পারো। আমি সবকিছুর জন্য প্রস্তুত। আর রইল আমাদের মেয়ের কথা। নাবিহা আমার মেয়ে। তেজস্বিনীর মেয়ে কখনো ভেঙে পড়তে পারে না। পুরো পৃথিবীর সাথে লড়াই করে সে ঠিক বাঁচতে পারবে। আসি!”
ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে যায় সিরাত। মাহতাব চেয়েও কিচ্ছু বলতে পারে না।
বাইরে বেরিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে সিরাত। সবাই গাড়িতে বসে তার জন্য অপেক্ষা করছিল।
“চল।”
পথিমধ্যে অনেকে অনেক প্রশ্ন করলেও তার কোনো জবাব দেয় না সিরাত। একটা ফাঁকা মাঠের পাশ দিয়ে গাড়ি গেলে সিরাত আচানক বলে ওঠে,
“গাড়ি থামা। ইভান তোর সাথে আমার কথা আছে। তুই আমার সাথে এখানে থাক। বাকিরা চলে যা।”
সিরাতের মানসিক অবস্থা খানিকটা বুঝতে পেরে আর কেউ কোনো প্রশ্ন করে না। নাবিল কিছু বলতে চাইলেও অথৈ তার হাত ধরে থামিয়ে দেয় তাকে। সিরাত আর ইভানকে রেখে বাকিরা চলে যায়।
পড়ন্ত বিকেলে খোলা মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে ইভান প্রশ্ন করে,
“কী বলবি আমাকে?”
মাঠের একপাশে ঘাসের উপর বসে সিরাত বলে,
“আমাকে যখন তোর বাবা দেখল তখন পছন্দ করেছিল ঠিকই, কিন্তু আমার পরিবার মধ্যবিত্ত শুনে তোর বাবা আর চাচ্চু আমার বাবাকে যে অপমান করেছিল তা প্রাপ্য ছিল না আমাদের। তোর চাচি যখন আমাকে সুযোগসন্ধানী বলল তখনও তুই ছিলি একেবারেই নীরব। আচ্ছা একটিবার কি তাদের কথার প্রতিবাদ করা যেত না ইভান?”
ইভান মা*থা নত রেখে জবাব দেয়,
“ঐ মুহূর্তে বাবার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস আমার ছিল না।”
কথাটা শুনে সিরাতের মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠে।
“অথচ এখন তোর ভয়ে বাড়ির সবাই তটস্থ থাকে তাই না?”
“তোকে হারানোর পর অনেকটা পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম আমি। আমাকে সামলানো কঠিন হয়ে গিয়েছিল। পড়াশোনার বাইরে আর কোনোকিছুর প্রতিই আগ্রহ ছিল না আমার। কারণ তুই আমাকে বলেছিলি, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মানুষের কথার জবাব দিতে হয়। আজ আমি সফল একজন মানুষ। কিন্তু আফসোস! সফল হয়েও শখের নারীকে পাওয়া হলো না আমার।”
“আজও বিয়ে করিসনি কেন? আমার অপেক্ষায় আছিস?”
“যদি বলি, হ্যা!”
“যে পুরুষ তার শখের নারীকে যোগ্য সম্মান দিয়ে নিজের করে নিতে পারে না তার প্রতি আমার এক জন্ম ঘৃণা জন্মাক!”
“সিরাত!”
“অনেক তো হলো এসব। এবার একটু শান্তি চাই আমি। নিজের বাবা-মা আর সন্তানকে নিয়ে শান্তিতে বাঁচতে চাই। যদি আমার অপেক্ষায় থাকিস তাহলে বলব এই অপেক্ষা নিরর্থক। আমাকে ভুলে অন্য কাউকে আপন করে নে।”
“যদি সেটা না পারি?”
“তাহলে আজীবন চিরকুমার হয়ে থাক। ভাবিস না আমি ডিভোর্সি বলে আমাকে পাওয়ার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিস তুই। হয়তো তুই এখন সুপুরুষ। কিন্তু আমার চোখে কা*পুরুষ হয়েই থেকে যাবি সব সময়। আমি আর যাইহোক, কোনো কা*পুরুষের সাথে জীবন শুরু করতে পারব না।”
নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষটার চোখে নিজের জন্য এক আকাশ সমান ঘৃণা দেখে ইভানের হৃদয়ে আঘাত লাগে। মেয়েটাকে কিছু বলেও তো লাভ নেই। দোষটা যে তার নিজেরই। নিজের ভুলেই সে তার শখের নারীকে হারিয়েছে চিরতরে।
হঠাৎ ফোনের কাঁপা-কাঁপি দেখে সিরাত ফোন হাতে তুলে নেয়। কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে ভেসে আসে তার মায়ের ভয়ার্ত কণ্ঠস্বর,
“সিরাত নাবিহাকে নিয়ে তোমার বাবা একটু বাইরে গিয়েছিল। সেই সময় নাবিহাকে কেউ একজন নিয়ে গিয়েছে। ওকে কোত্থাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!”
আপনাআপনি ফোনটা তার হাত থেকে পড়ে যায়। পাথরের মতো শক্ত হয়ে সিরাতকে বসে থাকতে ফোনটা তুলে নিজের কানে নেয় ইভান। সবটা শুনে বাকরূদ্ধ অবস্থায় ইভান ভাবে,
“আর কত?”
চলবে??