নিভৃতে তেজস্বিনী পর্ব-১৯+২০

0
443

#নিভৃতে_তেজস্বিনী
#পর্ব_১৯
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

লাইভ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রচুর মানুষ দেখতে শুরু করে। সিরাত লাইভের ক্যাপশন দিয়েছে,

“পর’কীয়ার সাইড এফেক্ট!”

একদিকে তো নিমু ব্যথায় ছটফট করছে, অন্যদিকে মাহতাব নিজের চুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে চেয়ারে বসে আছে। সিরাত রাফিকে নিজের পাশে দাঁড়াতে বলে কথা শুরু করে।

“আমাদের চারপাশে হাজারো মানুষ আজ পর’কীয়ায় জড়িয়ে আছে। পর’কীয়া শব্দটা যেন আমাদের ব্যক্তি জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিটা পরিবারে একটা করে এমন পর’কীয়ার ঘটনা লুকিয়ে থাকে। কেউ তা প্রকাশ করে, কেউ আবার সম্মানের ভয়ে প্রকাশ করে না। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? আমরা কেন চুপ করে বসে আছি? আমাদের চোখের সামনে এত বড়ো অন্যায় হচ্ছে, অথচ আমরা নিশ্চুপ? নাহ্, আমাদের আর চুপ করে থাকলে চলবে না। এবার আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।”

একজনের মন্তব্য দেখে সিরাত চুপ হয়ে যায়৷ কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে মন্তব্য পড়ে সিরাত মুচকি হেসে উত্তর দেয়,

“কেউ একজন লিখেছেন, আজকালকার মেয়েরা বড্ড বেহায়া হয়ে গিয়েছে। ছেলেদের চার বিয়ে সুন্নত। সেখানে অন্য বউকে এভাবে নি*র্যাতন করা অন্যায়। বাহ্! আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা কত ভালো। তারা চার বিয়ে সুন্নত এটা জানে। কিন্তু কীভাবে সুন্নত? সেটা জানে না। আচ্ছা, আপনারা যে এত ফরজ, সুন্নত মানেন তো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করেন কয়জন? ভাই, বিয়ের কথাটা ঠিকই মস্তিষ্কে গেঁথে থাকে আপনাদের। কিন্তু আসল ফরজ কাজগুলো আপনারা ভুল করেও মানেন না। যে ছেলেদের একজনে হয় না, তাদের মতো অত্যন্ত কুৎসিত মস্তিষ্কের মানুষের সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে বাঁধে। তাই বলব, আমার এই লাইভ আপনাদের জন্য নয়। আর যে এই মন্তব্য করেছেন তাকে সামনে পেলে আমি বুঝিয়ে দিব, সুন্নত কত প্রকার আর কী কী!”

পাশ থেকে রাফি সিরাতকে শান্ত হতে বলে। এখন রেগে গিয়ে কিছু বললে ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি হবে।

“সিরাত রাগ করে কিছু বলবেন না। এখন যদি আপনি রেগে যান তাহলে আপনার লাইভ করার আসল কারণটা অজানা থেকে যাবে।”

রাফির কথা শুনে সিরাত লম্বা শ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে,

“আমি এমন একজন মেয়ে যে তার স্বামীর যোগ্য বউ হওয়ার জন্য সবকিছু করেছে। বিয়ের আগের জীবন বিসর্জন দিয়ে আমি আমার স্বামীর মনের মতো হয়ে ওঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে বিয়ের পাঁচ বছরের মাঝেই দ্বিতীয় বিয়ে করে নিয়ে আসে নিমু নামক এই মেয়েকে। অবশ্য আমার বাচ্চা হওয়ার আগে থেকেই তার অন্য মেয়েদের প্রতি আসক্তি আমি টের পেয়েছিলাম৷ কিন্তু কিচ্ছু বলিনি। বললে হয়তো আজকের এই দিনটা আসত না। সে তখন লুকিয়ে সম্পর্কে চালিয়ে যেত। কখনো আমার সামনে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে আসার সাহস হতো না তার।”

সিরাতের এহেন কথা শুনে মাহতাব অদ্ভুত চোখে তাকায় তার দিকে। কণ্ঠে জড়তা রেখে প্রশ্ন করে,

“তুমি আগে থেকেই সব জানতে?”

“হ্যা জানতাম। আমি আগে থেকেই সবকিছু জানতাম। কিন্তু তোমাকে কিছু বলিনি। আমি তোমাকে এসব নিয়ে কথা শোনালে তুমি লুকিয়ে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে। এখন আমি জনসম্মুখে সবকিছু বলতে পারছি। তখন সেটা পারতাম না। তোমার কী মনে হয়? তুমি আমার অগোচরে অন্য কারোর সাথে সম্পর্ক রাখবে আর সেটা আমি বুঝতে পারব না? তাহলে এটা তোমার বোঝার ভুল। আমি মুমতাহিনা ইসলাম সিরাত এত বোকা নই। তোমার এই সম্পর্কের কথা আমি যেমন আগে থেকেই জানতাম, তেমনই তোমাদের বিয়ের কথাও আমি আগে থেকেই জানতাম। চাইলেই আমি তোমাদের বিয়ে আটকাতে পারতাম৷ কিন্তু সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছি আমি। তুমি যেমন আমার সাথে অভিনয় করেছ আমিও তেমন অভিনয় করেছি।”

এসবের জন্য যেন মাহতাব মোটেই প্রস্তুত ছিল না। তার পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে এমন অনুভূতি হচ্ছে। সিরাত নির্দ্বিধায় সব কথা বলছে। তার মধ্যে কোনো কষ্ট দেখতে পাচ্ছে না মাহতাব। এসব দেখে তার মনে প্রশ্ন জাগে, মেয়েরা কী তবে এমনই হয়?

সিরাত হয়তো বুঝতে পারে মাহতাবের মনের কথা। খানিকটা হেসে তাই উত্তর দেয়,

“ব্যক্তিগত মানুষটা আর ব্যক্তিগত না থাকলে মেয়েরা বড্ড কঠিন হয়ে যায়। মেয়েদের নরম মনে তখন পাথরের পাহাড় তৈরি হয়। শত কষ্ট তাদের মনকে আর আঘাত করতে পারে না। পাষাণ চেনো পাষাণ? শখের পুরুষ ঘৃণার পুরুষে পরিণত হলে মেয়েরা পাষাণ হয়ে যায়।”

যথারীতি এমন চমকপ্রদ লাইভে লাখ লাখ মানুষ যুক্ত হয়। এক লাখ সাত হাজার মানুষ যুক্ত হয়ে যায় মাত্র একুশ মিনিটে। এতজনকে যুক্ত হতে দেখে সিরাত ধন্যবাদ জানিয়ে বলে,

“ধন্যবাদ আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য। এখন তাহলে আসল কথায় আসি। আমার স্বামী যে পর’কীয়ায় জড়িত সেটা আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম। তবুও চুপচাপ সব মেনে নিয়ে সংসার করেছি। আমাদের কিন্তু সাড়ে তিন বছর বয়সী একটা ছোট্ট পুতুল আছে। আমাদের মেয়েটা পুতুলের মতোই সুন্দর। কিন্তু ওর সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা নিয়ে মা হিসেবে আমি ভীষণ সন্দিহান। আমার মেয়েটা আজও জানে না তার বাবা অন্য একজনকে ভালোবেসে তার মাকে অবহেলা করেছে। আমি সেই মেয়ে যার সামনে কেউ কখনো অন্যায় করে রেহাই পায়নি। আমি সেই মেয়ে যে নোংরা মানসিকতার মানুষদের জীবনের চেয়েও বেশি ঘৃণা করে। আজ সেই আমিই দীর্ঘদিন ধরে নিজের স্বামীর অন্যায় চুপচাপ সহ্য করেছি। না, ছেড়ে দেওয়ার জন্য নয়। আমি এতদিন নিজেকে তৈরি করেছি তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য।”

সিরাতের সব বন্ধুরা এই লাইভ দেখছে। পাশাপাশি তাকে শক্ত থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। মাওয়ার একটা মন্তব্য দেখে চোখ আটকে যায় সিরাতের। সে লিখেছে,

“যে মানুষ ভালোবাসাকে সম্মান করতে পারে না তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। হোক সে নারী কিংবা পুরুষ। অপরাধের শাস্তি সকলের জন্যই সমান হওয়া উচিত। তোর মতো লড়াকু মেয়েকে দেখে যেন এই সমাজে আরো হাজার খানেক সিরাত জন্ম নেয় আমি মন থেকে সেটাই চাই।”

সিরাত মাওয়ার মন্তব্য পড়ে উত্তর দেয়,

“সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে এমন বহু মাহতাবকে মেয়েরা ছেড়ে দেয়। তবে এতে কি কোনো লাভ হয়? যে পুরুষ নিজের স্ত্রী এবং সন্তানের কথা না ভেবে অন্য নারীতে আসক্ত হয় সেই পুরুষ তো আদর্শ বাবা হতে পারে না। তবে কেন আমরা সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে চুপ করে থাকব? এতে করে যে এমন মাহতাবেরা আরো বেশি অন্যায় করার সাহস পেয়ে যায়। সন্তানকে যখন আমাদের একাই মানুষ করতে হবে তাহলে এমন পুরুষদের তো ছেড়ে দেওয়া যাবে না।”

রুমি হাসান নামের একজন মন্তব্য করেছে,

“আমার স্বামী পর’কীয়ায় আসক্ত। শুধু তাই নয়, সে যখনতখন আমার গায়ে হাত তোলে। আমার চার বছর বয়সী মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে চুপচাপ সহ্য করছি এসব। মাঝেমধ্যে মনে হয়, বেঁচে থেকে কোনো লাভ নেই। এই জীবনটা আমার কাছে এখন অভিশাপের মতো।”

“কেন আপু? আপনি কেন বাঁচতে চান না? আপনাকে বাঁচতে হবে৷ যে বা যারা আপনার সাথে অন্যায় করেছে ম*রলে তারা ম*রবে।”

আরেকজনের মন্তব্য দেখে সিরাত বেশ খুশি হয়। সে লিখেছে,

“আপনার মতো মেয়েদেরই প্রয়োজন এই সমাজে। তাহলে আর কেউ এমন নোংরা কাজ করার সাহস পাবে না।”

আরো বেশ কিছু মন্তব্য পড়ে নেয় সিরাত। কেউ তার এমন কাজের জন্য তাকে বাহবা দিচ্ছে। কেউ আবার গালি দিচ্ছে। সবকিছু উপেক্ষা করে সিরাত বলে,

“আমি যখন আমার স্বামীর বিরুদ্ধে সব প্রমাণ হাতে পেলাম সেদিনই ঠিক করে নিয়েছিলাম তাকে আমি শান্তিতে বাঁচতে দিব না। এজন্য তার প্রেমিকাকে প্রয়োজন ছিল আমার। যে মেয়েটা এখন মাটিতে শুয়ে ছটফট করছে সে আমার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী। এই মেয়ে আমার সংসার ভাঙার জন্য নিজের সন্তানকে পর্যন্ত পৃথিবীর আলো দেখতে দেয়নি। এমন মেয়েদের কি সত্যিই বেঁচে থাকার অধিকার আছে? যারা স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রীকে দেখে নিজের সংসার ছেড়ে চলে যান তারা চরম বোকা। ছেড়ে যদি যেতেই হয় সবকিছু শেষ করে তারপর যান। আমি পড়াশোনায় খুব বেশি ভালো ছিলাম না কখনোই। কিন্তু আমি কারোর বোঝা হয়ে থাকতে চাইনি। তাই নিজের স্বল্প মেধাকে কাজে লাগিয়ে কলেজ জীবনেই শুরু করেছিলাম ছোট্ট একটা ব্যবসা। মাত্র চার হাজার টাকা দিয়ে আমি পাঁচটা জামা বানিয়ে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করি। প্রথম প্রথম তেমন ভালোভাবে সবকিছু করতে পারছিলাম না। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। টানা এক বছর পরিশ্রম করে আমি নিজের ব্যবসা দাঁড় করিয়েছি। আমার এই কাজের কথা কেউ জানত না। কেবল আমার মা জানত। আজ সবার সামনে আমি নিজের জীবনের গল্প বলছি। মাত্র চার টাকা পুঁজি করে যে ব্যবসা আমি শুরু করেছিলাম আজ সেই ব্যবসা থেকে আমি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করি। এটা কিন্তু একদিনে সম্ভব হয়নি। ছয়/সাত বছরের পরিশ্রমের ফল এটা। নিজে ডিজাইন তৈরি করে সেলাই মেশিনে সেলাই করে আমি আমার ছোট্ট ব্যবসা শুরু করেছিলাম। আজ সেখানে শত-শত মেয়ে আমার আন্ডারে কাজ করে। বাংলাদেশের নামকরা এক ফ্যাশন আইকনের নাম নীলাদ্রি। কে সেই নীলাদ্রি তা কি আপনারা জানেন? সকলের আড়ালে থাকা সেই মেয়েটা আমি নিজে। এই যে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করেছি আমি, এর ফলে আমাকে কারোর উপর নির্ভর করে বাঁচতে হবে না। আমি প্রতিটা মেয়েকে বলব, আগে নিজের পায়ের তলার জমিন শক্ত করুন। তার নতুন জীবনে পা রাখুন। যেন বিশ্বস্ত মানুষটা হারিয়ে গেলেও আপনি বাঁচতে পারেন। বাঁচার মতো করে বাঁচতে পারেন।”

এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থেমে যায় সিরাত। ‘নীলাদ্রি’ একটা ব্র্যান্ড এর নাম। যেখানে চোখ ধাঁধানো সব সুন্দর সুন্দর জামার রাজ্য রয়েছে। সবাই জানে এটার মালিক একজন মেয়ে। কিন্তু সেই মেয়ে কখনো কারোর সামনে আসেনি। সিরাত বরাবরই চেয়েছে সাধারণ একজন হয়ে বাঁচতে। এতদিন সকলের অগোচরে ব্যবসা সামলেছে সে। তবে আজ সবাইকে সবটা বলার দরকার ছিল। মেয়েরা যেন আবেগের বশবর্তী হয়ে বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ না হয় তার জন্যই নিজের এই গল্পটা বলা।

“সিরাত থেকে নীলাদ্রি হওয়ার গল্পটা কিন্তু সহজ ছিল না আমার জন্য। কঠোর পরিশ্রম করে আমি সিরাত থেকে এই নীলাদ্রি হতে পেরেছি বলেই আমার সন্তানকে নিয়ে আমার চিন্তা নেই। তাকে একা হাতে বড়ো করে তোলার জন্য আমি প্রস্তুত। প্রত্যেক মাকে বলব এভাবে প্রস্তুত হওয়ার জন্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণ জ্ঞান দিয়েছেন। সেই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। বাবা-মা, স্বামী, সন্তান কারোর উপর যেন আমাদের মেয়েদের নির্ভরশীল হতে না হয়। আমরা যেন নিজেদের পরগাছা মনে না করি। নতুবা বেঁচে থাকার আসল মানে আমরা কখনোই বুঝতে পারব না। আমরা এক বুক কষ্ট নিয়েই মৃ*ত্যুর কোলে ঢলে পড়ব। এভাবে তো মেয়েদের হেরে যাওয়া যাবে না।”

সিরাত মাহতাবের সামনে চলে যায়। আপাদমস্তক তাকে দেখে নিয়ে বলে,

“এই মানুষটা দীর্ঘ পাঁচ বছর আমার সাথে ভালো থাকার অভিনয় করেছে। নিঃসন্দেহে তাকে পাক্কা অভিনেতা বলা যায়। আচ্ছা সে যে আমাকে আর আমার সন্তানকে এত কষ্ট দিল তাকে কি এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যায়? উহু, যায় না তো। আমিও তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিইনি। প্রথমে তার ব্যবসা কেঁড়ে নিয়েছি। এরপর তাকে পথে বসিয়েছি। তার সম্মান নিয়ে আমি খেলেছি বটে। এখন তার কাছে কিছুই নেই। পথের ভিখারি বললেও ভুল হবে না। আমার শ্বশুর মশাই আমাকে খুব ভালোবাসে। তাকে বলে আমি এমন একটা উইল করিয়েছি যেখানে লেখা আছে, মাহতাব কখনো আমাকে ডিভোর্স দিলে সে তার বাবার সমস্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে। আর আমি ঠিক সেটাই করব। এক সময় সে রাজা ছিল। আজ সে ফকির। এর পেছনে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমার। কেবল তো তাকে পথে বসিয়েছি। এরপর জেলের ভেতরেও ঢোকাব। বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের জন্য এটুকু শাস্তি তো প্রাপ্য তাই না?”

কথাগুলো বলে সিরাত গা কাঁপিয়ে হাসে। মাহতাব অপলক তাকে দেখে যাচ্ছে। নিজের জীবনের শেষ সময়টা কতটা করুণ হবে তা যেন এখন থেকেই সে উপলব্ধি করতে পারছে।

এক পা, দুই পা করে নিমুর দিকে এগিয়ে যায় সিরাত। তার পাশে বসে চোখের কোণে কিঞ্চিৎ পানি এনে বলে,

“সমাজের আরেক কীট এই নিমুর মতো মেয়েরা। হাসিখুশি একটা পরিবারকে নিমিষেই ধ্বংস করে দিতে পারে এরা। এদের শাস্তি আরো গভীর হওয়া উচিত। আমি আমার সতিনের জন্য কি কি করেছি এখন সেটা বলি। প্রথমে তার মা হওয়ার রাস্তা বন্ধ করেছি। যে মেয়ে অন্য পুরুষের সাথে রাত কাটানোর জন্য নিজের সন্তানকে নষ্ট করতে দু’বার ভাবে না তার তো মা হওয়ার অধিকার নেই। তাই আমি পরম যত্নে তার মাতৃত্ব নষ্ট করেছি। আর এই মেয়ে শুধু নিজের সন্তানকে নষ্ট করেনি। আমার সন্তানকে মা*রার চেষ্টাও করেছে। সেইসব প্রমাণ আমার কাছে আছে। সুতরাং নিমুর জেলে যাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। এখানেই শেষ নয়। তার পরবর্তী জীবনে যেন এক ফোঁটা সুখ না থাকে সেটাও নিশ্চিত করেছি আমি।”

কথাটা বলে রাফির হাতে মোবাইল দিয়ে এবার ক্যামেরার সামনে আসে সিরাত। দুই হাতে চুনকালি মাখিয়ে নিমুর সমস্ত মুখে লেপ্টে দেয় সে। ধীরে ধীরে নিমুর চুলগুলো কাঁচির সাহায্যে কাটতে কাটতে ঘাড়ে এনে ফেলে। তারপর এক হাতে নিমুর গাল ধরে বলে,

“বাহ্যিক সৌন্দর্যের মাধ্যমে ছেলেদের আকৃষ্ট করে তাদের সংসার ভেঙে দেওয়া মেয়েদের মূলে যে সৌন্দর্য আছে সেটা শেষ করে দেওয়া উচিত। নতুবা এমন মেয়েরা কখনো ভালো হবে না।”

চলবে??

#নিভৃতে_তেজস্বিনী
#পর্ব_২০
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

“এই ডিভোর্স পেপারে সই করে দাও মাহতাব!”

বুকের মাঝে অসীম কষ্ট চাপা রেখে বাইরে থেকে নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত রেখে আজ নিজের নামের পাশে ডিভোর্সি তকমা লাগাতে চলেছে সিরাত। মেয়েকে কোলের মাঝে আগলে নিয়ে সোফার এক কোণে বসে আছে সে। গতকাল সেই লাইভের পর সবাই এক এক করে সিরাতের বাসায় এসে হাজির হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ তাকে স্বান্তনার বাণী কিংবা বাহবা দিলেও মাহতাবের মা, বোন আসার পর থেকে সিরাতকে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। অন্য সময় হলে হয়তো সে জবাব দিত। তবে আজ বাড়তি একটা কথা বলার মতো ধৈর্য অবশিষ্ট নেই সিরাতের মাঝে। ইতোমধ্যে সিরাতের পরিবারের লোকজন, বন্ধুবান্ধব সবাই চলে এসেছে। বাসার মধ্যে ছোটখাটো ল*ড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে দুই পক্ষের মাঝে। সবাইকে শান্ত হতে বলে সিরাত মাহতাবের কাছে এগিয়ে যায়।

“আমি আর কোনো ঝামেলা চাই না। আমাদের দীর্ঘদিনের সংসারের ইতি টানার সময় এসে গিয়েছে মাহতাব। দয়া করে আর কোনো তর্ক করো না। বিনাবাক্যে ডিভোর্স পেপারে সই করে দাও।”

মাহতাব লজ্জায় মা*থা নিচু করে বসে আছে। গতকাল থেকে সকলের তিক্ত কথা শুনতে শুনতে সে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এখন সবাই জেনে গিয়েছে, মাহতাব ছেলেটা বাজে, ভীষণ বাজে!

“সিরাত নতুন করে কি সব ঠিক করা যায় না? আমি জানি, আমি ভুল করেছি। কিন্তু আমাদের মেয়ের কথা ভেবে সবকিছু নতুন করে শুরু করা যায় না? জীবনকে তো দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া উচিত বলো?”

সিরাতের ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠে। অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে সে উত্তর দেয়,

“মেয়ের কথা ভাবলে কি আর তুমি এমন কিছু করতে পারতে? তবে আজ কেন মেয়ের বাহানা দিচ্ছ? আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। ডিভোর্সি কথাটা সহ্য করে নিতে পারব। কিন্তু এতকিছুর পরে তোমার স্ত্রী হয়ে আমি থাকতে পারব না। আর আমাদের মেয়ে তো বড়ো হয়ে সবকিছু জানবে৷ তখন ওর সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিব। মেয়ে যদি চায় তাহলে আমি কথা দিচ্ছি ওকে তোমার কাছে দিয়ে যাব। যতদিন না নাবিহা বড়ো হচ্ছে ততদিন অবধি ওও আমার কাছেই থাকবে।”

সিরাতের শাশুড়ী মারজিয়া শেখ রাগে গজগজ করতে করতে বলেন,

“আমার ছেলের মানসম্মান তো সব শেষ করে দিয়েছ। তারপরেও যে মাহতাব তোমাকে রাখতে চাইছে এটা তো তোমার সৌভাগ্য। ছেলেদের এমন একটুআধটু সমস্যা থাকেই। তাই বলে কি সংসার ভাঙতে হবে?”

“আরে মা আমার তো মনে হয় সিরাতের অন্য কোথাও সম্পর্ক আছে৷ নাহলে আমার ভাইয়ের পেছনে এভাবে লাগত নাকি?”

মাহতাবের বড়ো বোন তিশার কথা শুনে সিরাতের শরীর কেঁপে ওঠে রাগে। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে সে বলে,

“আপু আপনি যদি বয়সে আমার থেকে ছোট হতেন না? তাহলে এখানে সবার সামনে আপনার দুই গালে আমি চারটে থা*প্পড় লাগিয়ে বুঝিয়ে দিতাম কোথায় কীভাবে কথা বলতে হয়। আপনার মা আপনাকে নূন্যতম সুশিক্ষায় বড়ো করতে পারেনি। তার প্রমাণ আজ নিজেই দিয়ে দিলেন আপনি।”

“সিরাত!”

“চিৎকার করবেন না। নতুবা আমি ভুলে যাব আপনি আমার স্বামীর বড়ো বোন৷”

এতক্ষণ যাবত সবকিছু চুপচাপ দেখে যাচ্ছিল নজরুল শেখ। অবশেষে তিনি নিজের সমস্ত নিরবতা ভেঙে বলেন,

“সিরাত তোমার মতো মেয়েকে নিজের বউমা হিসেবে পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম মা। কিন্তু আমার নির্বোধ ছেলেটা আসল হিরা চিনতে পারল না৷ হিরা ভেবে এতদিন কাঁচের পেছনে ছুটেছে বলেই আজ ক্ষ*তবিক্ষ*ত হয়ে গিয়েছে। আমার তোমাকে এই সংসারে থেকে যাওয়ার কথা বলার সাহস নেই। তুমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছ তাতে আমি দ্বিমত পোষণ করব না। এমন কুলাঙ্গার ছেলের সাথে থাকার থেকে সারাজীবন একা থাকা ভালো। তুমি নতুন করে তোমার জীবন শুরু করো মা।”

এই একজনের উপর সিরাত কখনো রাগ করে থাকতে পারেনি। মানুষটা যে তাকে বড্ড ভালোবাসে। নিজের মেয়ের মতো করে এতদিন সিরাতকে ভালোবেসেছে নজরুল শেখ। কথাগুলো বলার সময় তার চোখে পানি চিকচিক করছিল তা সিরাতের দৃষ্টিগোচর হয়নি।

“বাবা এই পরিবারের আর কারোর সাথে সম্পর্ক না রাখলেও আমি আপনার সাথে যোগাযোগ রাখব। আপনার মতো শ্বশুর খুব ভাগ্য করে পাওয়া যায়। আপনি কখনো আমাকে বাবার অভাব বুঝতে দেননি শ্বশুর বাড়িতে। ধন্যবাদ বাবা আমাকে এভাবে ভালোবাসার জন্য।”

সিরাতকে জড়িয়ে ধরে নজরুল শেখ কাঁদেন। তার মতো শক্ত মানুষটাও কাঁদছে ভেবে অবাক হয় সবাই। মেয়েটার কষ্ট তিনি অনুভব করতে পারছেন। ফলস্বরূপ একটু একটু করে নিজের ছেলের উপর ঘৃণা তৈরি হচ্ছে তার।

“কাঁদবেন না বাবা। আমার ভাগ্যে যা ছিল সেটাই হয়েছে। এতে আমার কোনো দুঃখ নেই। আপনি দয়া করে নিজেকে অপরাধী ভাববেন না। যা হয়েছে তাতে আপনার কোনো দোষ নেই।”

চোখের পানি মুছে নজরুল শেখ নিজের ছেলের কাছে এগিয়ে যায়। ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন,

“তোর শরীরে আমাদের শেখ বংশের র*ক্ত বইছে সেটা ভাবতেও আমার লজ্জা হচ্ছে। আমাদের পরিবারের মানসম্মান কিচ্ছু রাখলি না তুই। তোর মতো ছেলের বাবা হওয়ার থেকে সারাজীবন নিঃসন্তান থাকা ভালো ছিল।”

“বাবা!”

“বাবা বলে ডাকবি না তুই আমাকে। তোর বাবা ম*রে গিয়েছে। আমাকে বাবা বলে ডাকবি না একদম।”

শাহেদ ইসলাম মেয়ের কাছে এসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেয়। একমাত্র মেয়ে হওয়ায় জন্মের পর থেকে ভীষণ আদর করে বড়ো করেছেন তিনি মেয়েকে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও মেয়ের গায়ে অভাবের আঁচ আসতে দেয়নি কখনো। সেই মেয়ের বুকভরা কষ্ট নিজের চোখে দেখতে পারছেন না তিনি।

বাবার বুকে মা*থা রেখে সিরাত বলে,

“তুমি কষ্ট পেয়ো না বাবা। আমি ঠিক আছি। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আমি ঠিক আমার মেয়েকে একা হাতে সামলাতে পারব। ওকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব দেখে নিয়ো তুমি।”

“আমি জানি আমার মেয়ে একটা রত্ন। আমার মেয়ে সাহসী, উদ্যমী, পরিশ্রমী। তোমার উপর আমার ভরসা আছে মা। কিন্তু আমি যদি আর একটু ভাবতাম তোমার বিয়ে নিয়ে তাহলে হয়তো তোমার জীবনটা এমন হতো না।”

“ওহ্ বাবা এসব একদম ভাববে না তুমি। যা হবে সব ভালো হবে।”

মেয়েকে নিজের দিকে এগিয়ে নিয়ে ইতি ইসলাম কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলেন,

“আমি সত্যিই রত্নগর্ভা রে মা। তোর মতো মেয়েকে জন্ম দিয়েছি বলেই হয়তো আমি পৃথিবীর সেরা মা। এমন সাহসী আর বুদ্ধিমতী মেয়ে কয়জনের হয় বল? তুই পারবি, এই সমাজে মা*থা উঁচু করে ঠিক বাঁচতে পারবি।”

“হ্যা মা আমি পারব। আমাকে পারতেই হবে। শুধু মেয়ের জন্য নয়, আমাকে নিজের জন্যেও পারতে হবে।”

দীর্ঘ আলাপের পর অবশেষে সেই সময় চলেই আসে। প্রথমে সিরাত নিজেই ডিভোর্স পেপারে সই করে দেয়। এরপর সকলের চাপে মাহতাব বাধ্য হয়ে নিজেও সই করে দেয়। তারিন সেখানেই উপস্থিত ছিল। দু’জন সই করে দেওয়ার পর কাগজটা একটা ফাইলে ঢুকিয়ে নেয় সে।

নিমুকে গতকাল রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা বিশেষ ভালো না। মজার বিষয় হলো সিরাতের তেমন কিছু করতে হয়নি৷ যা করার নিমুর প্রাক্তন স্বামী আর বর্তমান স্বামীই করেছে।

সবশেষে চলে যাওয়ার সময় আসে। দীর্ঘদিনের সংসার জীবনের ইতি ঘটিয়ে নিজের হাতে গড়ে তোলা সংসার ছেড়ে আজ চলে যেতে হবে সিরাতকে। বাসার প্রতিটা দেওয়ালে পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দেয় সিরাত। তার বুকের ভেতর ভীষণ ব্যথা অনুভব করছে সে। চোখ উপচে পানি গড়িয়ে পড়ছে অনর্গল। চিৎকার করে কাঁদতে চেয়েও সে চিৎকার করতে পারে না। চুপচাপ কান্নাগুলোকে গিলে নেয়। নিজের ঘরে গিয়ে বেলকনিতে রাখা গাছগুলোতে হাত বুলিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে সিরাত। আজ তার চোখের পানি বাঁধ মানছে না। এইতো সেই ঘর, সেই বেলকনি যা সে খুব যত্নে সাজিয়ে তুলেছিল। এইতো সেই গাছগুলোর চারা, যেগুলোকে ভালোবেসে বড়ো করে তুলেছিল সে। আজ সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে তাকে।

বাসার প্রতিটা দেওয়াল যেন আজ সিরাতকে বলছে,

“আমাদের ছেড়ে যেও না। তুমি আমাদের ছেড়ে গেলে যে আমরা অযত্নে, অবহেলায় রয়ে যাব। তোমার মতো করে আমাদেরকে আর কেউ ভালোবাসবে না। থেকে যাও তুমি, আমাদের সাথে রয়ে যাও!”

ঘরের প্রতিটা কোণা যেন সিরাতকে দেখে হাহাকার করে ওঠে৷ গভীর রাতে সিরাতের কান্নার সাক্ষী যে এরা!

ঘরের এক কোণে অবহেলায় পড়ে থাকা ছোট্ট পুতুলটাও যেন বলে,

“তুমি ভালো থেকো মেয়ে৷ তোমার জীবনের সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে যাক৷ জীবনের নতুন অধ্যায়ে তুমি ভালো থেকো তোমার জীবন্ত পুতুলটাকে নিয়ে।”

এক পা, দুই পা করে ধীরে ধীরে ঘরের দেওয়ালগুলোতে হাত বুলিয়ে, পুরো বাসায় নিজের পায়ের চিহ্ন ফেলে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসে সিরাত। সদর দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় তার পা যেন আর চলতে চাইছিল না। পেছন ফিরে পুরো বাসাটা একবার দেখে নেয় সে। এটাই যে শেষ দেখা!

চলে যেতে যেতে সিরাতের মন চিৎকার করে করে বলে ওঠে,

“যখন থেকে এখানে আর আমার পায়ের চিহ্ন পড়বে না সেদিন তোমরা বুঝে নিয়ো, তোমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া এই আমার কাছে মৃ*ত্যু যন্ত্রণার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। ও বাড়ি, তুমি মনে রেখো আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি। তিল তিল করে গড়ে তোলা আমার সোনার সংসার, তুমি জেনে রেখো তোমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কষ্টে আমার বুক ফেটেছে বারংবার। আমার কান্নার সাক্ষী হয়ে থাকা দেওয়াল, তোমরা কখনো আমাকে ভুলে যেয়ো না। তোমাদের ছেড়ে বহুদূরে চলে যেতে আমার যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। আমার বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। কান্নারা চিৎকার করে বলতে চাইছে, আমি তোমাদের ছেড়ে যেতে চাই না। আমার নিয়তি বাধ্য করেছে তোমাদের ছেড়ে যেতে। তোমরা মনে রেখো, আমি তোমাদের নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। তোমরা যে আমার নিজের চেয়েও বেশি প্রিয়, আপন!”

শেষ বারের মতো বাইরে থেকে দেওয়ালগুলোকে ছুঁয়ে দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে সিরাত। যেতে যেতে পেছন ফিরে সবকিছু দেখে নেয়। যতক্ষণ না সবকিছু দৃষ্টিগোচর হয় ততক্ষণ পর্যন্ত গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে থাকে সিরাত।

একটা সংসার গড়তে যতটা কষ্ট হয় তার থেকেও বহুগুণ বেশি কষ্ট হয় সেই সংসার ছেড়ে চলে যেতে। প্রতিটা মেয়ের জন্যই হয়তো এই কষ্টটা মৃ*ত্যু সমতুল্য!

চলবে??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে