#নিভৃতে_তেজস্বিনী
#পর্ব_৪
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা
“সিরাত আমার ডেবিট কার্ড ফ্রিজ কে করে দিয়েছে?”
ঘর গোছাতে গোছাতে সিরাত জবাব দেয়,
“আমি।”
“কীসের জন্য এমন করলে তুমি?”
“আহা তুমি রেগে যাচ্ছ কেন? আমাদের তো ব্যাংক থেকে এখন টাকা তোলার প্রয়োজন নেই। আর আমি শুনলাম, তুমি আজকাল একটু বেশিই টাকা খরচ করছ। আমাদের মেয়ের একটা ভবিষ্যৎ আছে না? এভাবে টাকা খরচ করলে জমাবে কী?”
“তাই বলে তুমি আমাকে না জানিয়ে এমন একটা কাজ করে ফেললে?”
“অযথা কাজে টাকা ব্যয় করা আমার পছন্দ নয় মাহতাব। এই কথাটা তো তুমি আগে থেকেই জানো। যাইহোক, কার্ড যেহেতু আমরা দু’জনই ব্যবহার করতে পারি এবং তুমি আমার নামে ঐ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলে আমাদের বিয়ের পর, তাই আমি চাই টাকাগুলো আমাদের মেয়ের কাজে লাগুক। প্রতি মাসে তোমার হাতে যে টাকা আসে সেখান থেকে কিছু টাকা ব্যাংকে রেখে বাকি টাকা তো তুমিই খরচ করো। আপাতত ব্যাংক থেকে আর কোনো টাকা তোলার দরকার নেই।”
“কিন্তু আজকে আমার কিছু টাকা লাগবে যেটা ব্যাংক থেকেই তুলতে হবে।”
“কত টাকা লাগবে?”
“পঁচিশ হাজার টাকা।”
“এত টাকা কেন লাগবে?”
মাহতাব কিছুক্ষণ থেমে জবাব দেয়,
“নিমুর দরকার ছিল আর কি!”
“ওই মেয়ের জন্য তুমি আমাদের মেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করতে চাও? এমনিতেও তোমাকে ভরসা নেই। কবে না জানি আমাদের মেয়েকেও ভুলে যাও তুমি তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।”
“আমি নাবিহাকে অনেক ভালোবাসি সিরাত। ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমিও যথেষ্ট চিন্তা করি।”
সিরাত তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,
“যদি তাই হতো তাহলে তুমি অন্য নারীতে আসক্ত হতে পারতে না। মেয়ের কথা চিন্তা করে হলেও আমার সাথে সুখে-শান্তিতে সংসার করতে। যে পুরুষ বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যেই অন্য নারীর প্রতি দুর্বল হয়ে যায় সে আর যাইহোক কাউকে মন থেকে ভালোবাসতে পারে না। আমার প্রতি ভালোবাসা তোমার এত দ্রুত শেষ হয়ে গেল? তাহলে তো বলতেই হয়, দুই দিন পর নাবিহাকে ভুলে যেতেও সময় লাগবে না তোমার।”
“তোমার সাথে এসব বিষয়ে আমি এখন কোনো তর্ক করতে চাই না। আচ্ছা শোনো, আজকের মতো টাকা তুলতে দাও সিরাত। নয়তো আরেকটা ঝামেলার সৃষ্টি হবে।”
“ঝামেলা হলে হোক, তাতে আমার সমস্যা নেই। কিন্তু আমি কোনো উটকো ঝামেলার পেছনে তোমাকে এভাবে টাকা খরচ করতে দিতে পারব না।”
“তোমার কি মনে হচ্ছে না তুমি বাড়াবাড়ি করছ?”
“করলে করছি, আমাদের মেয়ের জন্য করছি। আশা করি, এতে তোমার কোনো সমস্যা নেই।”
মাহতাব আর কিছু না বলে বিরক্তিকর চেহারা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। সিরাত সেদিকে তাকিয়েও কিচ্ছু বলে না।
ঘরে এসে নিমুর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় মাহতাবকে।
“টাকা তুলেছ? আমার কিন্তু আজ দুপুরের মধ্যেই টাকাগুলো লাগবে।”
“এতগুলো টাকা তুমি কী করবে?”
“আমার একটু দরকার আছে বলেছি তো।”
“কী দরকার? সেটা তো বলোনি।”
“তুমি আমাকে এত প্রশ্ন কেন করছ? তোমার এত এত টাকার মধ্যে থেকে মাত্র পঁচিশ হাজার টাকা তুমি আমাকে দিতে পারছ না?”
“আজকে আমি টাকা দিতে পারব না তোমাকে।”
“কেন?”
“আমার কাছে এই মুহূর্তে টাকা নেই।”
“ঢাকা শহরে তোমার বাবার দুইটাটা পাঁচ তলা বিল্ডিং আছে। তোমাদের নাম করা একটা রেস্তোরাঁ আছো। প্রতি মাসে সেখান থেকে টাকা তো আসেই। তার উপর তোমার নিজস্ব একটা ফ্যাক্টরি আছে। আমি তো কোনো গরীব, ভিখারিকে বিয়ে করিনি মাহতাব। যেখানে প্রতি মাসে তুমি লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করো, সেখানে আমাকে মাত্র পঁচিশ হাজার টাকা দিতে তোমার হাত কাঁপছে?”
“আমি কি তোমাকে টাকা দিই না? প্রতি মাসে তোমার জন্য আমি ত্রিশ হাজার করে টাকা পাঠিয়েছি। যখন যা চেয়েছ তাই দিয়েছি। কিন্তু দুই/একবার সমস্যা থাকতেই পারে। আমি টাকার মেশিন নই যে তুমি যখন টাকা চাইবে তখনই টাকা দিতে বাধ্য থাকব আমি।”
কথাটা বলে মাহতাব ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা বাইরে চলে যায়। নিমু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বিছানার উপর বসে চাদর খামচে ধরে। সিরাত দূর থেকে এসব দেখে মুচকি হাসে।
“এটা তো কেবল শুরু। এই সিরাত যে তোমাদের সাথে আরো কী কী করবে সেটা ভাবতেও পারবে না তোমরা। আমি ভালোর ভালো, আর খারাপের য*ম!”
“মাম্মি আমার ক্ষুধা লেগেছে।”
মেয়ের পাশে বসে সিরাত কোলে তুলে নেয় তাকে। গালে চুমু দিয়ে বলে,
“তুমি এখানে বসে খেলনা দিয়ে খেলতে থাকো। আমি এক্ষুণি তোমার জন্য খাবার বানিয়ে আনছি।”
ছোট্ট মেয়েটা মায়ের কথায় সম্মতি জানিয়ে খেলতে শুরু করে। মেয়ের মুখে হাসি দেখে সিরাত পরম শান্তি অনুভব করে। মেয়েকে বুকের মাঝে আগলে নেয় সযত্নে।
“তোমার জন্য আমি সব করতে পারি সোনা মা আমার। তুমি যেন সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারো তার জন্য তোমার মা সবকিছু করতে রাজি আছে।”
দুপুরে নিজের মতো রান্না করে খেয়ে ঘরে গিয়ে একটু বিশ্রাম নেয় সিরাত। এমন সময় তৈরি হয়ে নিমু বেরিয়ে পড়ে তুলির সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে। কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে বান্ধবীকে দেখে খুশিতে আলিঙ্গন করে তাকে। এরপর একটা জায়গায় বসে তুলি জিজ্ঞেস করে,
“কী অবস্থা তোর? কেমন আছিস?”
“আর অবস্থা! ওই মেয়ে তো আমাকে জ্বা*লিয়ে মা*রছে।”
“কার কথা বলছিস?”
“মাহতাবের প্রথম স্ত্রী সিরাত।”
“ওই মেয়ে আবার কী করেছে?”
“মাহতাব তো আমাকে বলেছিল ওর স্ত্রী খুব ভালো। ওর সব কথা শোনে। অনেক নাকি ভালোবাসে ওকে। অথচ আমি গিয়ে দেখলাম ওই মেয়েই মাহতাবের উপর ছু*রি ঘোরায়। শুধু হুকুম আর হুকুম!”
“আরে ছাড় তো ওই মেয়ের কথা। তুই যে কারণে মাহতাব ভাইয়াকে বিয়ে করেছিস সেদিকে মনোযোগ দে। আর টাকা এনেছিস?”
“কীভাবে আনব? মাহতাব আমাকে টাকা দেয়নি।”
“টাকা দেয়নি মানে? আমাদের তো টাকার প্রয়োজন ভাই!”
“জানি আমি। এই প্রথম মাহতাব আমাকে একটা টাকাও দিল না। আচ্ছা বাবা-মা কেমন আছে?”
“তারা তো ভালো আছে। কিন্তু তোর ভাই টাকার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে।”
“আমি চেষ্টা করব আগামী সপ্তাহে টাকা পাঠানোর। আমাকে কিছুদিন সময় দে।”
“আমার তো কিছু না ভাই। তোকে তো গতকাল রাতেই কল করে সব বললাম। তোর ভাইয়ের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাকে রাত প্রায় এগারোটার দিকে কল করে বলল, আপুকে বলো আমার জন্য তাড়াতাড়ি টাকা পাঠাতে। তোকে নাকি কল করেছিল?”
“হ্যা গতকাল আমাকে কল করেছিল। আমি রেগে ছিলাম ওই সময়। তাই বলেছিলাম টাকা দিতে পারব না।”
“আচ্ছা এসব বাদ দে। তোর কি রাফির সাথে কথা হয়?”
রাফির কথা শুনে নিমুর মুখ শুকিয়ে যায়। শান্ত কণ্ঠে বলে,
“যোগাযোগ করতে চেয়েছিল। আমি ইচ্ছা করেই যোগাযোগ করিনি।”
“তুই ওর সাথে যা করেছিস, আমার তো মনে হয় না যে রাফি তোকে এত সহজে ছেড়ে দেবে।”
“যা করার করুক। আমি ওকে ভয় পাই না।”
“আচ্ছা শোন, আমাকে এখন যেতে হবে। আমি পরে তোর সাথে কথা বলব ঠিক আছে?”
“আমি কল করব তোকে। দেখা করার প্রয়োজন হলে তারিখ আর সময় জানিয়ে দিব। সাবধানে যা তুই।”
“ভালো থাকিস।”
নিমু হাসিমুখে বান্ধবীকে বিদায় জানিয়ে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িতে ওঠে। রাফির নামটা শোনার পর থেকেই তার বুক কাঁপছে। সে কোনোভাবেই তার অতীত মনে করতে চায় না। তবুও কেন যেন বারংবার তার অতীত কোনো না কোনোভাবে তার সামনে চলে আসে।
চলবে??