নিঝুমপুর পর্ব-৯+১০

0
144

নিঝুমপুর -৯

ছবি পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে আমাকে খুঁজে বের করল।
কেমন হলো পরীক্ষা – জিজ্ঞেস করতেই মুচকি হেসে বলল, ভালোই।

ভালোই?- ভালো না?

মনে হয় ভালো হইছে। আমাদের কোচিংয়ের এমসিকিউ গোল্লা ভরতে দেয় না। টিক দিতে হয়। টিকের নিচে আবার কোনটা টিক দিলো, কেন দিলো সেটা এক লাইনে লিখতে হয়। আমার কাজ ছিল স্ক্রিপ্টগুলো চেক করা। এই দেড় দুই মাসে স্ক্রিপ্ট চেক করতে করতে আমার সমস্ত বই মুখস্থ হয়ে গেছে। যা আসছে, সবই পারছি।

বলো কি! তাইলে তো তুমি চান্স পেয়ে যাবে!

চান্স পাওয়া না পাওয়া আসলে কপাল আপা। আপনে আমার জন্য অনেক করছেন। আমি সারা জীবন আপনার কাছে ঋণী থাকব। আজকে বিকালে আমি বাড়ি চলে যাব।

ঢাকা ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিতে চাও না!

ছবি কিছু না বলে হাঁটতে শুরু করল।

★★★

শেষ দুপুরের দিকে সেঁজুতি আপা টেনে তুলল। এই নিঝু, ওঠ তো!

কেন আপা?

চল এক জায়গায় যাব।

কোথায়?

আমার বাপের বউকে দেখে আসি।

এভাবে বলছ কেন!

তাহলে কিভাবে বলব?

তাই তো, কিভাবেই বা বলবে, এত ছোট অবস্থায় মেয়েটাকে রেখে চলে গেছেন মামী!

মামী ভর্তি আছে পান্থপথের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। আমরা বাসা থেকে বের হয়ে থানার সামনে হেঁটে গেলাম। আপা সিএনজি খুঁজছিল না। হঠাৎই একটি গাড়ি এসে থামল। আবুল হাসান সাহেব ড্রাইভিং করছেন!
আমি ফিসফিস করে জিগ্যেস করলাম৷ উনি কি ড্রাইভার? নাকি পার্টটাইম উবার চালান?

আরে গাধা৷ গাড়িটা ওর! – আপা হাসল হাসান সাহেবকে দেখে।

আচ্ছা আপা….

পরে জিজ্ঞেস করিস। এখন চল। – আপা থামিয়ে দিলো আমাকে।

আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম।

হাসপাতালে আমাদের বেশি সমস্যা পোহাতে হলো না। সেদিনকার লোকটি আপাকে দেখে চিনতে পারলেন এবং আপাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন।

আপা বেশিক্ষণ থাকল না। দশ মিনিটের মধ্যেই বের হয়ে এলো। সেই লোকটি বললেন, আবার এসো মা। তোমার যখন খুশি, মায়ের কাছে এসো।

আপা উত্তর দিলো না। আমরা আবার হাসান সাহেবের গাড়িতে উঠে বসলাম। তবে বাসায় গেলাম না। পান্থপথ থেকে বের হয়ে ভুতের গলির অলিগলির ভেতরে একটা বাড়ির ভেতরে এসে ঢুকলাম।

আপা ডাকল, আয়। এটা আমাদের বাসা।

আমার চমকানোর হয়তো আরো অনেক বাকি ছিল।
লিফটে করে যে ফ্ল্যাটে আমরা গেলাম, সেখানে একজন বয়স্ক মহিলা দরজা খুলে দিলেন। তিন বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে এসে আপাকে জড়িয়ে ধরল, মামাম এসেছে! মামাম!

চলবে

নিঝুমপুর -১০

ছোট বাচ্চাটাকে সেঁজুতি আপা কোলে নিয়ে আদর করল।
আপার কাঁধে হাত রেখে বললাম, বিয়ে করেছ?

নাহ, বিয়ে করব বলেই হাসানকে আগে বাড়িতে নিলাম। ওকে বলেছিলাম, তোমার মত আমি এত সাজানো গোছানো পরিবেশে বড় হই নি। আগে দেখে এসো।

-সেটা তো প্রস্তাব দিলেই জানতে পারতো।

-পুরোটা পারতো না। আমি আরশিয়াকে খুব ভালোবাসি। ওর কাছে চলে আসতে চাই। কিন্তু হাসানের বাচ্চা আছে জানলে আব্বা কী বিয়ে দিতে চাইবেন!

-সহজ বিষয়টা জটিল করে ফেলেছ আপা!

হাসান সাহেব একটু হাসার চেষ্টা করে বললেন, নিঝুম অনেক ম্যাচিউরড। তোমার মত ছেলেমানুষি করে না!

হাসান সাহেব আর আপার বয়সের পার্থক্য ১৪/১৫ বছর হতে পারে। অনেক কিছু জানা হয়ে গেল আজ!

এক ছুটির দিনে আরশিয়াকে নিয়ে চুল কাটাতে পার্লারে গিয়েছিলেন হাসান সাহেব। সেঁজুতি আপা তার কোনো বান্ধবীর সাথে গিয়ে অপেক্ষা করছিল ওয়েটিং রুমে।
আরশিয়া কিছুতেই পার্লারের মেয়েটার সাথে যাবে না। হাসান সাহেব অসহায় বোধ করলেন।
সেঁজুতি আপা বললেন, মায়ের সাথে পাঠাতেন!

হাসান সাহেব ঈষৎ হেসে বললেন, ওর মা নেই!

সেঁজুতি আপা তখন আরশিয়াকে কোলে নিয়ে ভেতরে গেল। ওর চুল কেটে নিয়ে বের হলো যখন, আরশিয়া আর বাবার কোলে যাবে না!

আপাকে যেতে হলো হাসান সাহেবের বাসায়।
আরশিয়া খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া অবধি অপেক্ষা করতে হলো। হাসান সাহেব আপাকে পৌঁছে দিয়ে গেলেন সেদিন। মাঝে মাঝেই আপা আরশিয়াকে দেখতে যেত আর এভাবেই দুজনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হলো!
আরো জানতে পারলাম আরশিয়ার মা আরশিয়াকে রেখে চলে গেছে নিজের প্রেমিকের সাথে।

বাসায় ফিরলাম হাসান সাহেবের সাথেই। আরো কিছুদিন পরে বাবার কাছে প্রস্তাব দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওরা। বাড়িতে শুধু আমিই জানলাম।

রাতে আপাকে বললাম, আপা, আমার মনে হয় তুই হাসান সাহেবকে ভালোবাসিস না। মামী তোকে ফেলে চলে গেছেন আর আরশিয়াকে ফেলে চলে গেছে ওর মা! তুই একটা চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছিস!
বিয়ে করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করে নিস!

আপা কিছু বলল না উত্তরে। একটা নিঃশ্বাস ফেলল। হয়তো আমি সত্য না। অথবা আমিই সত্য! কে জানে কোনটা মিথ্যা!

রাত বাড়ছে। মোকলেস আলী আজ রাতেও আমাদের সাথে খেয়েছে৷ সাবলেট আন্টি অফিস ট্যুরে গাজীপুরে গিয়েছে, ফিরতে রাত হবে।
সে আমাদের সাথে বসে খাচ্ছে এটাই এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেছে। মা বা নানীবু তার জন্য তারকারি বাটিতে রেখে দেয়।
ছবির চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে যায় নি। রাত করে ফিরেছে। খাবার টেবিলে তাকে দেখা গেল। ছবি, ধলু মামা, মোকলেস আলী একত্রে খায়৷ খাওয়া শেষে ছবি আবুল হাসান সাহেবের খাবার নিয়ে দিয়ে আসে।

সে রাতে সাবলেট আন্টি বাসায় ফিরল না। মোকলেস আলী গভীররাত অবধি গেটের সামনে চেয়ারে বসে রইল।

সকালে আপা আমাকে ডেকে তুলল।

এই নিঝু ওঠ তো!

কেন আপা?

দেখ এই নিউজটা, এটা সাবলেট আন্টি না?

জাতীয় দৈনিকের ফেসবুক পেজে খবর আপডেট – রাজধানীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে মাদক সহ ভ্রাম্যমান দেহব্যবসায়ী আটক!

রোজিনা আন্টির চোখ মুখ ঢাকা হলেও তাকে চিনতে অসুবিধা হচ্ছে না।

চলবে

শানজানা আলম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে