নিঝুমপুর -১৪
মা সেন্স হারিয়েছে৷ বড়মামা, মোকলেস আলী মাকে নিয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে গেল। নানীবুকে নিয়ে গেলাম আমি। মায়ের কি হয়েছে ডাক্তার কিছু বললেন না তবে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হলো। সব কিছু এত দ্রুত ঘটে গেল, কেউ কিছু বোঝার আগেই।
বড় মামা আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন।
চিন্তা করিস না নিঝু, সব ঠিক হয়ে যাবে। সকালে মাকে নিয়ে যাব আমরা।
আমি শান্ত স্বরে বললাম, আমি চিন্তা করছি না মামা।
রাত বাড়ছে। নানীবুর শরীর ভালো না, দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাকে রেখে আসতে বড় মামা বাড়িতে চলে গেলেন। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম একাকী। কিছুক্ষণ পরে
আমার ছবি এসে পাশে দাঁড়ালো নিঃশব্দে।
আমি একটু হাসার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করলাম, কখন এসেছ?
-এই তো!
-বসো।
ছবি আমার পাশে বসল।
-কি হয়েছিল জানো?
না।
আজ একটা লোক এসেছিল। সম্ভবত এই লোকের সাথে মা পালিয়ে গিয়েছিলেন!
ও আচ্ছা।
এটাই শেষ কথা না। আরো আছে।
ছবি জানতে চাইল কিনা বুঝতে পারছি না। তবে আমার বলতে ইচ্ছে করছে।
-তুমি ভাবছ, এই লোক আমার বাবা, তাই তো? সেটা ঠিক না। এই লোকটি মাকে নিয়ে গিয়ে একটা ঘরে আটকে রেখেছিল। সেখানে দিনের পর দিন অনেক পুরুষকে পাঠিয়েছে। আমার বাবা কে, সেটা মা জানে না। এই সত্য আমি জেনে যাব, সেটা ভেবে মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সেঁজুতি আপুর মা, মানে আমাদের বড়মামী কে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, মায়ের এসব কথা জানাজানি হওয়ার পরে। এই সব কথাই আমি আর সেঁজুতি আপা দুজনেই জানি।
আশেপাশের লোকজন কানাকানি করত, বড়মামা তাই সবাইকে নিয়ে মেহেন্দীগন্জ থেকে ঢাকায় চলে এসেছিলেন।
ছবি কোন কথা বলল না আর।
-মায়ের কি দোষ বলো তো ছবি ? একটা অমানুষকে বিশ্বাস করেছিল, এটাই?
একজন নার্স এসে ডাকছেন। আইসিইউ নম্বর সাত, কে আছেন, স্যারের সাথে দেখা করুন। পেশেন্টের অবস্থা ভালো না।
-ছবি, এটা মায়ের বেড নম্বর। আমি যাব না। তুমি যাও।
একটা নিঝুমপুর ছেড়ে মা অন্য এক অচিনপুরে চলে যাচ্ছে। ছবি আমার একটা হাত ধরল। আমি কাঁদছি না। কাঁদার মত কিছু হয় নি। আমি কখনো কাঁদব না।
শেষ
শানজানা আলম