সাব্বিরুল_হক
অফিসের বস ঝাপটে ধরেছিল নীলাকে।ধস্তাধস্তির পর কোনোরকমে ছাড়িয়ে নিয়ে বেরুতে পেরেছে।কাজের অজুহাতে রাত করে ওকে আটকে রেখেছিল বসই।দ্রুত রাস্তায় নেমে দেখতে পেলো একটা বাস যাচ্ছে।
চড়ে বসলো তাতেই।মগবাজার মোড়ে যেতে পারলেই হলো।দিলু রোড হেঁটে যেতে পারবে সহজে।সীট না পেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে।একটু পরে টের পেলো পেছন থেকে একটা হাত এসে চাপ দিচ্ছে গায়ে!নীলাকে নিরব দেখে সাহস বাড়ছে হাতটার।
না থাকতে পেরে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো সে।
মাথায় টুপি পড়া মোল্লামতো একটা লোক দাঁত বের করে হাসছে।
কিছুই বলতে পারলো না সে।মগবাজার এসে নেমে দেখে রাত এগারোটা বেজে গেছে।
দিলু রোডের দিকে হেঁটে চললো পা চালিয়ে।বাসা পযর্ন্ত যাওয়াই জরুরি।কিন্তু কিছুদিন ধরে টিজিং করছে যে ছোকরাটা সে ওৎ পেতে ছিল দেয়ালের পাশে।
নীলাকে হেঁটে আসতে দেখে শিষ দিলো একটা।চলে যাচ্ছে দেখে দামদস্তুর করলো,’হাই বেবি।রেইট কতো পার নাইট?’
সাবলেট বাসায় পৌছে দেখতে পেলো কেয়ারটেকার দাড়িয়ে।গেট খুলে অর্থপূর্ণ হাসি দিচ্ছে ওর দিকে।বললো,’রাত্রে কি অনেক কাজ আফা!’
সাবলেট ফ্যামিলির নিজের রুমে ঢুকে শ্বাস ফেললো সে।চাকরি স্থায়ী না হওয়া তক থাকতে হবে এখানেই।
রাতে শুয়ে স্বপ্ন দেখলো নীলা।চাকরি কনফার্ম হয়েছে।পুরো একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মা আর ছোট ভাইটাকে নিয়ে এসেছে ঢাকায়।ডায়াবেটিস আক্রান্ত মায়ের চিকিত্সার ত্রুটি হচ্ছে না আর।
মাঝরাতে কে একজনের নড়াচড়া টের পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেল।তাড়াহুড়োতে দরজা লাগায়নি।অন্ধকারে সাবলেট বাসার পুরুষটাকে দেখে ঘাবড়ালো সে।
লোকটা ঠোঁটে আঙুল চেপে বললো,’ভাড়ার টাকা দিতে হবে না।আমি আছি।আসবো?’
নীলা ঘৃণায় শ্বাস ফেলছিল ঘন ঘন।দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে বুঝলো।হিসহিস করে উঠলো,’ভাবিকে ডাকবো?’
ওর ঘুরে দাড়ানো দেখে ভয়ে পালালো লোকটা।কিন্তু নীলার মনে হলো যায়নি।ঘাপটি মেরে আছে কোথাও, সুযোগের অপেক্ষায়।
সকালে উঠে বাথরুমে ঢুকলো সে।কিন্ত প্রতিদিনকার মতো গোসল সেরে বেরোনোর আগে হঠাৎ করে চোখে পড়ল দরজার ফুটো দিয়ে কে যেনো তাকিয়ে আছে।
বুঝতে পারলো কে দেখছে।এটাও ধারণা করলো ফুটোটা কেনো মেরামত করা হয়নি এখনো।
লাজ ঘৃণায় সাতসকালে গুরুতর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো সে।এসবের শেষ দেখবে।স্রেফ একটা মেয়ে এই জন্য এতো লালসা,এতোটা পুরুষ-আক্রমণ মেনে নিতে হবে কেনো তার?এভাবে তো চলতে পারে না।হিসেব করে দেখলো জীবনের সাতাশটা বছরই কেটে গেছে ভয়ের ভীতি মনে নিয়ে!সারা জনম পুরুষের হামলার ভয়ে কাটবে কী কারণে?
এদেশে সবাই নারীলোলুপ হায়েনা নাকি?তাহলে পশ্চিম পাকিস্তানীদের সঙ্গে এদের পার্থক্য কোথায়!
তখনই বাড়ি থেকে একটা ফোন আসলো ওর!
ফোন ধরতেই ওপাশে মা কান্নাজড়ানো গলায় বললো, ‘নীলা আমার ওষুধ শেষ রে মা।এদিকে তোর ভাইয়ের কলেজে ভর্তির টাকা লাগবে।মাত্র সাতদিন সময় আছে…
নীলা দ্রুত কাপড়চোপড় পালটালো।সাবলেট বাসার মহিলাকে কিছুই বললো না।ড্রয়ার থেকে ব্ল্যাকটেপ বের করে ভালোমতো আটকিয়ে বুঁজে দিলো বাথরুমের দরজার ফুটো।
আজকে একটা যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে বাইরে বেরুলো সে।ভ্যানিটি ব্যাগে ভরে নিয়েছে প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র।
বাসে চড়লো।
সীট পেয়েও দাড়িয়ে রইলো বাসে,বসলো না।কারো সঙ্গে ধাক্কা লাগলে সমস্যা নেই।কিন্তু আজকে তার ওই হাতটা চাই।যে হাত সুযোগ পেলেই খামচে ধরে মেয়েমানুষের শরীর।
বেশিক্ষণ গেল না ভিড়ের মধ্য থেকে একটা হাত এসে ছোবল মারলো বুকের পাশটায়।যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো নীলার।
চুলে গুঁজে রাখা লম্বা কাঁটা খুলে নিলো পেছনে হাত নিয়ে।আবারও হিংস্র হাতটা কাছে আসতেই চালিয়ে দিলো কাঁটাটা।
‘ওরে বাবা রে…’ বলে কাতরে উঠলো কেউ।
বাস থেমেছে।গুঁতো খাওয়া মুখ না দেখেই নেমে পড়লো সে।
অফিসে গিয়ে মাসের বেতনটা অগ্রিম চাইলো।বস রাজি হলো, তবে অফিস আওয়ার শেষে দেখা করে যেতে শর্ত দিয়ে জানালো বিশেষ কথা আছে নাকি।
সবাই চলে গেলে নীলাকে ডেকে পাঠালো বস।
রুমে ঢুকতেই বাড়িয়ে ধরলো এক বান্ডিল টাকা।ইশারা দিয়ে বললো,’টাকাইতো দরকার তাই না?এই নাও।পরে আরো পাবে…
বলতে বলতে এগিয়ে আসছিল সে।
ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে টাকার তোড়া ভেতরে ঢুকানোর ফাঁকে প্রস্তুত হয়ে নিলো নীলা।লোকটা তাকে ঝাপটে ধরতে যেতেই সজোরে বসিয়ে দিলো নেইল কাটারের সুচালো ছুরি।
তারপর একছুটে বেরিয়ে এলো ব্যইরে।
উঠে পড়লো পাবলিক বাসে।হাতের তলায় লুকিয়ে রেখেছে তীক্ষ্ণ সেফটি পিন।
সেফটি পিনটা এক অসভ্যর গায়ে সেঁধিয়ে দিয়ে বাস থেকে নেমে নীলা ঠিক করলো এবার দেখে নেবে ইভটিজারকে।
দিলু রোডের ভেতরে আসতেই শীষ এবং উল্লাস শুনতে পেলো সে।এগিয়ে আসছে ছোকরা।আসতে দিলো নীলা ।মুখে ক্রুর হাসি নিয়ে চেয়ে রইলো।
ছোকরা জিনসের প্যান্টের পকেট থেকে নোট বের করে আনলো কতগুলো।নীলা হাত বাড়িয়ে টাকাগুলো নিলো।কিন্তু তার পরপরই ডান পায়ের জুতোজোড়া খুলে নিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঠাশ ঠাশ করে পেটাতে শুরু করলো ছোকরার নাকে মুখে।
গোটা দুই বুটপিন আটকে রেখেছিল জুতোর সামনে।বাড়ি লেগে রক্ত বেরিয়ে এলো ছোড়ার চোখেমুখে।হাউমাউ করে চিৎকার দিয়ে ওঠে ছুটে পালালো সে।
পেছনে জুতো হাতে নীলা তখন চেঁচিয়ে বলছে, ‘বেজন্মার বাচ্চা আর আসবি এদিকে?’
সাবলেট বাসায় ফিরে গিয়ে দরজা খোলা রেখেই রুমে শুয়ে পড়লো সে।জানে রাত গভীর হলে ঘরে ঢুকবে এক আততায়ী।
নীলা ঠিক করলো আজকে আসতে দেবে সে পুরুষ লোকটাকে।বালিশের নিচে রাখা ক্ষুরের মতো ব্লেডটা প্রস্তুত করেই রেখেছে ওর জন্য।
ঘরে বউ থাকতে যে লোক পৌরুষ মেটাতে চায় অন্য নারীর সঙ্গে, তার সমস্যা তো পুরুষ-অঙ্গটা!একই কারণে আরো অনেক মেয়েকে হতে হবে ওর শিকার।
ধারালো ব্লেড হাতে অপেক্ষারত নীলা ভাবলো অগুনতি মেয়ের সম্ভ্রম হারানোর তুলনায় এক বেয়াড়া পুরুষের অঙ্গহানি সমাজের জন্য কী এমন ক্ষতির!
আর পুরুষ যদি অসহায় দুর্বল মনে করে অহরহ মেয়েদের আক্রমণ করতে পারে,এটা তো স্বাধীন দেশ,তাহলে মেয়েরা কেনো দেখাতে পারবে না যে তারও একটা শক্তি আছে!
=০=