‘নানান রঙের মেলা’ পর্ব-১
লেখনীতে– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।
পাত্রপক্ষ এসে বসে আছে হল রুমে। নিয়ন এসে তার বোনদের খবরটা দিতেই সবাই ভীষণরকম অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। সবার অপ্রস্তুত হওয়ার পেছনে যথাযথ কারণ আছে। কারণটা হলো, পাত্রপক্ষ কোন মেয়েকে দেখতে এসেছেন তা বলতে পারছেন না। বাড়িতে সাতটি বিবাহ যোগ্য মেয়ে আছে। আর প্রত্যেকেই সুন্দরী এবং শিক্ষিতা। এখন পাত্রপক্ষ যদি নির্ধারিত একজনকে দেখার জন্য এসে থাকে তবে তো এই একজনকেই সামনে উপস্থিত করানো হবে। কিন্তু তাদের মুখের কথা শুনে সবাই বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতি পড়েছে। বোনদের খবর দিয়েই নিয়ন ছুটল নিচ তলায়। মূলত মেজো চাচার হুকুমে বোনদের স’ত’র্ক করে দিয়ে গেল কেউ যেন উপর থেকে ভুলেও নিচে না নামে।
নিচ তলায় হল রুমে শাফকাত খান, সালাম খান, ইমরোজ খান, রহমত খান আর তাদের মা হোসনে আরা বেগম বসে আছেন পাত্রপক্ষের সামনে। হোসনে আরা বেগম ভীষণ হাসি খুশি মুখ করে পাত্রের মা, খালার সাথে নিজেদের দেশের বাড়ির আলাপ চালিয়ে দিয়েছেন এতক্ষণে। মাকে এমন করতে দেখে শাফকাত খান বললেন,
-‘আম্মা! আপনি একটু এসব কথা রাখেন। তারা আমাদের বাড়িতে একটা দরকারে এসেছে। এখন সেই দরকারি কাজটা মিটমাট না করে তো আমরা অন্য আলাপে যেতে পারি না।’
হোসনে আরা বেগম নড়ে চড়ে বসলেন ছেলের কথা শুনে। পাত্রের মাকে বললেন,
-‘তয় আপনারা আমার কোন নাতিনরে দেখবার চান সেইটা তো বলেন নাই এহনও!’
পাত্রপক্ষের সাথে আসা মহিলা ঘটক পাত্রের মাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই বলতে লাগলেন,
-‘বড় মেয়েকে দেখতে আসছি।’
নিয়ন পাশ থেকে বলে উঠল,
-‘বড় আপু? তার তো এক ঠ্যাং নাই। সত্যিই আপুকে দেখতে আসছেন?’
নিয়নের এতবড় মি’থ্যা শুনে তার বাপ চাচা সবাই তার মুখের দিকে অ’গ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। সেই দৃষ্টিকে নিয়ন পাত্তা দিলো না। তার বাবা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেই ঘটক মাথা নেড়ে বলল,
-‘না না। বড় মেয়ে না। মেজো মেয়েরে দেখতে আসছি।’
খান বাড়ির কাজের মহিলা তখন ট্রেতে করে খাবার রাখতে আসে। মেজো মেয়েকে দেখতে আসছে কথাটা সে শুনে ফেলে। ট্রে টা রেখেই সে হুড়মুড় করে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল। স্বভাব মতো পাশের বাড়ির বউটাকে খবরটা দিতে চলে গেল সে।
এদিকে মেজো মেয়েকে দেখতে এসেছে শুনে বাড়ির সবাই তব্দা খেয়ে মহিলার দিকে তাকিয়ে রইল। মাত্রই তো বলল বড় মেয়েকে দেখতে এসেছে। নিয়নও মহিলাকে কিছুক্ষণ পরখ করে বলল,
-‘মেজো আপু? সে তো এক চোখে দেখে না, রীতিমতো অন্ধ বলা চলে। তাকেই দেখতে এসেছেন?’
মহিলা বিষম খেল কথাটা শুনে। তাড়াতাড়ি মাথা নেড়ে বলল,
-‘আরে না না। সেজো মেয়েরে দেখতে আসছি।’
খান বাড়িতে দুধ দিতে আসে একটা পনেরো বছরের একটা ছেলে। দুধের কলস দরজার সামনে রেখে যাওয়ার সময় কথাটা সে শুনে ফেলল। শুনেই দৌঁড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। খবরটা একজনকে না দিলেই নয়!
খান বাড়ির সকলে এতক্ষণে বুঝে গেছে এরা নির্দিষ্ট কাউকে দেখতেই আসেনি। বাড়িতে যে অনেকগুলো বিবাহযোগ্য মেয়ে আছে সেটা জেনেই এসেছে। তারা ভেবেছে ঘরের মেয়েকে পণ্যের মতো পছন্দ করবে। এটা না ওটা! এভাবে নিবে। বাড়ির সবচেয়ে ক’ঠো’র পুরুষ সালাম খান নিয়নকে চোখ দিয়ে ইশারা দিতেই সে সা’হ’স পেলো। চাচার ইশারা সে বুঝতে পেরেছে।
-‘সেজো আপার তো একটা হাতই অকেজো। সত্যিই সেজো আপাকে দেখতে এসেছেন?’
মহিলার এবার কপাল বেয়ে ঘাম ছুটে গেল। আসলে তিনি খবর পেয়েছেন এই বাড়িতে বিয়ের উপযুক্ত সুন্দরী মেয়ে আছে অনেক গুলো। সবাইকে দেখে যাবে এই ফ’ন্দিই এঁটে এসেছিল। কিন্তু এসব শুনে তার নিজেরই মাথা ঘুরছে। মহিলা ইতস্তত দৃষ্টিতে পাত্রের মা আর খালার দিকে তাকালেন। তারাও বেশ বিব্রতবোধ করছেন মহিলার কাজে। তাদের তো বলা হয়েছিল মেয়ে একটা দেখতে যাবে, সব ঠিক করা আছে। তারা দুজনেই বেশ ল’জ্জায় পড়ে গেলেন। পাত্রের খালা খুব রে’গেও গেলেন মহিলার এমন কাজে। ধ’ম’কে উঠে বললেন,
-‘আপনি কি মশকরা পেয়েছেন? আপনি এতজনের কথা কেন বলছেন? আপনি আসলে একজনকে ঠিক করে দেখাতে এনেছেন তো আমাদের!’
পাত্রের খালার কথা শুনে খান বাড়ির সকলে বুঝল সমস্যাটা এই ঘটক লাগিয়েছেন। তাই শাফকাত আলম মহিলার উদ্দেশ্যে বললেন,
-‘আপনি আসলে আমাদের বাড়ির কোন মেয়ের জন্য প্রস্তাবটা এনেছেন?’
মহিলা ভ্যাবলার মতো বলল,
-‘আপনার বাড়িতে মেয়ে কয়টা?’
সালাম সাহেব এমন কথা শুনে গর্জে উঠলেন। বললেন,
-‘আমাদের বাড়িতে মেয়ে কয়টা বলতে আপনি কি বোঝাতে চাইছেন? আমাদের বাড়িতে যদি এখন দশটা মেয়ে থাকে তবে কি আপনি দশজনকেই দেখবেন নাকি?’
-‘জ্বি দেখলে ভালো হয়।’
কথাটা বলেই মহিলা দাঁত দিয়ে জিহ্বা কা’টে। ইশ! ভুল কথা বলে ফেলেছে ভুল জায়গায়।
নিয়ন হাসছে মিটমিট করে। তার বেশ মজা লাগছে। এমন মজার ঘটনার সাক্ষী সে এই প্রথম হলো।
পাত্রের মা এবার মুখ খুললেন। বেশ ল’জ্জিত গলায় বললেন,
-‘ভাই সাহেব! আমরা আসলে জানতাম না এমন কিছু হবে। আমাদের তো বলা হয়েছিল একটা পাত্রীকে দেখতে যাচ্ছি। সবই ঠিকঠাক। এমন কিছু যে হবে আমরা সত্যিই জানতাম না। আসলে এত কিছু ভাবার আর দেখার সময় পাইনি। অনেক বলার পর ছেলেকে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছি। মন যেন না ঘুরে যায় তাই খুব দ্রুত সবকিছুর ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম এমন যে হবে ভাবিনি। আমরা সত্যিই ভীষণ দুঃখিত।’
শাফকাত সাহেব বললেন,
-‘দেখুন! আমাদের তো মেয়ে দেখানোতে আপত্তি নেই। বিবাহ যোগ্য মেয়ে আমাদের আছে। আর তাদের সুপাত্রে দান করতেই আমরা চাই। এখন আপনারা যদি সঠিক ভাবে একজনকে দেখতে চাইতেন বা সেই মনোবাসনা নিয়ে আসতেন তবে আমাদের আপত্তি ছিল না।’
-‘আমাদের আসলেই আরেকটু খোঁজ নেওয়ার দরকার ছিল। তবে এখন যদি আপনাদের বড় মেয়েকে একটু দেখাতেন! না আসলে, বাড়ির বড় মেয়ে যখন অবিবাহিত আছে তখন তাকেই দেখি।’
নিয়ন বলে উঠল,
-‘বড় আপু তো!’
-‘থাক বাবা। যেমনই হোক। দেখে যাই। ঠ্যাং নাই, পা তো আছে।’
নিয়ন সহ সবাই চুপ করে গেল। নিয়নের মজা ঘটক না বুঝলেও পাত্রের মা ঠিকই বুঝেছেন। সালাম খান সহ বাকি সবাই তাদের বড় ভাইয়ের দিকে তাকাতেই তিনিও মাথা নাড়েন। ইমরোজ খান নিয়নকে বললেন,
-‘যাও। তোমার বড় আপুকে বলো তৈরি হয়ে নিচে আসতে।’
নিয়ন ছুটে গেল উপরে। বোনেরা সবাই তখন দোতলায় সেজো জন অর্থাৎ সুজানার রুমে ছিল। নিয়ন এসে বলল,
-‘বড় আপুকে দেখতে চাইছে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিচে যেতে বলল।’
বাড়ির বড় মেয়ে অরোরা তখন সুজানার চুলে তেল মালিশ করে দিচ্ছিল। ছোট ভাইয়ের কথা শুনে বি’র’ক্ত হলো। বলল,
-‘ছেলে এসেছে?’
-‘না।’
-‘এখন তাহলে আমি বুঝব কি করে ছেলে কতটা হাইজিন মেইনটেইন করে?’
নিয়ন বড় বোনের দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এই বড় আপুর বিয়ে করা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো এক জায়গায়। ছেলে কতটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেইনটেইন করে সেটা নিয়েই তার মাথা ব্যথা। বেশ কয়েকটা পাত্রকে রিজেক্ট করেছে সে হাইজিন মেইনটেইন না করার জন্য। এই যেমন গতবারের পাত্রটার কথা বলা যায়। গতবার একজন বিজনেসম্যান এসেছিল। বেশ বড়লোক, বংশ বড়। বড় আপুর সেসব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। সে ছেলেকে দেখল, দেখতে সুন্দর, কথা সুন্দর। সব ঠিকই ছিল। যখন দেখল ছেলেটা নাক খুঁটে চায়ের কাপে হাত দিয়েছে তখনই তার গা ঘৃ’ণায় রি রি করে উঠল। ছেলেটা ওয়াশরুমে যেতে চাইলে অরোরা ছোট্ট একটা পরীক্ষা করার জন্য নিয়নকে আর রিজভীকে বলে ওয়াশরুমের হ্যান্ডওয়াশ যা ছিল সব সরিয়ে ফেলে, ছেলেটা ওয়াশরুম গিয়ে মলমূত্র ত্যাগ করে বেরিয়ে এসে ওভাবেই খেতে বসেছিল পরে। অরোরা কি বলবে! নিয়ন আর রিজভীই তো ঘে’ন্নায় বমি করে দিতে চাইল সেখানে। পরে ছেলের আনহাইজেনিক কাজ কর্ম তুলে ধরে অরোরা যখন বিয়ে ভাঙে তখন তার দাদী তো রা’গ করে তাকে উপাধি দেয় শু’চি’বা’ই রো’গী। কিন্তু ব্যাপারটা তেমন নয়। অরোরার ও’সি’ডি নেই। সে একটা মানুষ থেকে মিনিমাম ততটুকু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আশা করে যতটুকু দরকার। এই ভদ্র সমাজে অনেকেই আছে যারা উপরে খুবই ফিটফাট কিন্তু ভেতরে ভীষণ নোংরা। অরোরা সেসকল লোকের সংস্পর্শে যেতে চায় না শুধু। পাত্র দেখতে যেমনই হোক, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা যদি তার মধ্যে থাকে অরোরা নিশ্চিন্তে কোনো কথা না বলে তাকে বিয়ে করে নিবে। আ’ফ’সোস! এখন পর্যন্ত মন মতো কাউকে পায়নি সে। যার ফলে বিয়েটাও করা হয়ে ওঠেনি। বয়স সাতাশে গিয়ে ঠেকেছে। প্রেম ভালোবাসাও এই কারণেই তার দ্বারা হয়নি।
অরোরাকে দেখবে শুনেই সবাই ছুটোছুটি শুরু করে দিলো। অরোরা একটা সুন্দর জাম রঙা শাড়ি পরে নিলো। যদিও সে শাড়িই পরা ছিল কিন্তু সেটা ঘরে পরার। বাহিরের কারো সামনে তো আর সেই সাজ পোশাকে যাওয়া যায় না, আর যদি হয় পাত্রপক্ষ তাহলে তো কথা নেই। অরোরা চুলে বেণী করতে করতে এরিনার দিকে তাকালো। বলল,
-‘টুনি এসেছে?’
এরিনা হলো বাড়ির চতুর্থ কন্যা। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছে। অরোরার আপন বোন। দেখতে অরোরার মতোই অনেকটা। এতক্ষণ সে বোনকে সাজিয়ে দিচ্ছিল। বোনের প্রশ্ন শুনে বলল,
-‘না। কলেজ তো দুইটায় ছুটি হওয়ার কথা।’
-‘ওহ। ভাইরা কেউ বাড়ি নেই?’
-‘নিয়ন আছে। রিজভী তো স্কুলে। আর বড় ভাইয়ারা সব তো অফিসে।’
অরোরা একবার রুমে থাকা সব বোনের দিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। মেজো বোন মেহনাজ বিছানায় অর্ধশোয়া অবস্থায় ফোনে বেকিং ভিডিও দেখছে। আর সেজো বোন সুজানা তাদের পঞ্চম আর ষষ্ঠতম বোন ক্যামেলিয়া আর কামিনীর সাথে গল্প করছে বড় বোনের বিয়ে নিয়ে। ক্যামেলিয়া আর কামিনী খুবই উচ্ছাসিত দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অরোরা একটু হাসল। এই জমজ দুটোকে এত ভালো লাগে তার! পুরো একরকম চেহারা। একটুও তফাৎ নেই। এখন পর্যন্ত তার বাবা মাও তাদের মাঝেমধ্যে ঠিক চিনে উঠতে পারে না। তবে অরোরা পারে, তাদের বড় ভাইয়াও পারে। অরোরা মাঝে মাঝে এটা ভেবে অবাক হয় বড় ভাইয়া কি করে বোঝে! সে নাহয় একসাথে থাকে, বোনদের গোপন কথাগুলো জানে। তাই চিনে ফেলতে পারে। কিন্তু ভাই তো যোজন যোজন দূরত্ব বজায় রাখে সবার থেকে। তারপরও কীভাবে পারে! অনেকবার জিজ্ঞেস করতে চেয়েও সে জিজ্ঞেস করতে পারেনি। ভাইয়ের চোখের দিকে তাকাতেই তার ভ’য় হয় এখনও।
আজমাইন বসের রুমে ফাইল জমা দিতে ঢুকেছে থেকেই বাড়ি থেকে একের পর এক কল আসছে। এতবার কল আসায় সে দু’শ্চি’ন্তায় পড়ে যায়। এদিকে বস কি মনে করবে সেই ভেবে কল রিসিভ করছে না। তার পাংশুটে মুখ দেখে তার বস নিবরাস চৌধুরী বলে উঠলেন,
-‘আপনি কলটা রিসিভ করতে পারেন মি. আজমাইন।’
আজমাইন তাড়াতাড়ি কলটা রিসিভ করতেই তার ছোট চাচী জানালেন অরোরাকে দেখতে এসেছে পাত্রপক্ষ। সে যেন বাড়িতে ফেরে তাড়াতাড়ি। আজমাইন কলটা কা’টার পর ইতস্তত করে বলল,
-‘স্যার! আমার এখন একটু ছুটি প্রয়োজন। ইটস্ আর্জেন্ট স্যার। আমার ছোট বোনকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে।’
কথাটা শুনেই নিবরাসের স্তব্ধ হয়ে গেল। আজমাইনের ছোট বোনকে দেখতে আসছে মানে! সে বলল,
-‘আপনারা ওকে এখনিই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন?’
-‘স্যার বাবা, চাচারা দিচ্ছেন বিয়ে। আর তাছাড়া ওর মত আছে।’
-‘ওর মত কি করে থাকতে পারে? ও এখনও ছোট!’
-‘না স্যার। বিয়ের বয়স তো হয়েছেই। স্যার? ছুটি টা যদি!’
নিবরাস কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে দম নেয়। তারপর বলে,
-‘চলুন। আমি আপনার সাথে যাই। আপনার চাচা বলছিলেন একবার যেতে। কি দরকারে ডেকেছেন সেটা জেনে আসি। আজকে সময় আছে, পরে সময় নাও থাকতে পারে।’
মেহনাজ সবে মাত্র মোবাইল চার্জে লাগিয়ে বিছানা ছাড়তে নেয় ওমনি একটা বিদেশি নাম্বার থেকে কল আসে তার ফোনে। রিসিভ করতেই একজন গর্জে উঠে বলল,
-‘শুনছি পাত্রপক্ষ এসেছে তোকে দেখতে। খবরদার মেহু! পাত্রপক্ষের সামনে গেলে আমি তোকে মে’রে ফেলব। একেবারে জানে মে’রে দিব। আমি ছাড়া আর কারো সামনে তুই যাবি না।’
মেহনাজের চোয়াল রা’গে শক্ত হয়ে এলো। সে থমথমে গলায় বলল,
-‘ তুই কে এত কথা বলার? আমি পাত্রপক্ষের সামনে যাব, বিয়েও করব। দরকার পড়লে আজই বিয়ে করব। তুই এখনও চিনস নাই আমাকে। শোন, ফুপাতো ভাই, ফুপাতো ভাইয়ের মতো থাক। বেশি বাড়াবাড়ি করতে আসিস না।’
যাবির যেন আরো বেশি তেঁতে উঠল কথাটা শুনে। বলল,
-‘বেশি শখ না তোর বিয়ের! দাঁড়া, আসছি আমি। তোর বিয়ের শখ ভালো ভাবে মিটাবো।’
যাবির কলটা কে’টে দিতেই মেহনাজ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করল। এই বে’য়া’দ’বটার সাথে কথা বললেই তার রা’গে গা কাঁপে।
কামিনী ফুরফুরে মন নিয়ে দোতলার করিডোর বেয়ে হাঁটছিল। তখনই দেখা মিলল বাড়ির বড় ছেলে আবইয়াজের। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিল সে। তাকে দেখে কামিনী হাঁটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। তার বুকের ভেতর বাদ্যযন্ত্র বাজতে লাগল সবসময়ের মতো। ফর্মাল স্যুট পরা, গম্ভীর, সুদর্শন, দীর্ঘ গড়নের এই আবইয়াজকে দেখলে কামিনীর সবসময় এমনই হয়।
আবইয়াজ কামিনীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে একবার তাকিয়ে দেখল শুধু। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর পুরুষালি পারফিউমের ঘ্রাণে কামিনী বেসামাল হয়ে পড়ল। দৃষ্টি নত করে সামনে এগোতেই শুনতে পেল ভরাট পুরুষালি কন্ঠস্বরটা।
-‘নিচে কোথায় যাচ্ছো তুমি?’
কামিনী কেঁপে উঠল আরো একবার। পেছন ফিরে আবইয়াজের দিকে তাকালো। আবইয়াজের দৃষ্টি তার দিকেই ছিল। আর সেই দৃষ্টিতে চোখ তুলে তাকানোর সা’হ’স কামিনীর নেই। তাই সে বলল,
-‘মায়ের কাছে যাচ্ছিলাম।’
-‘যাবে না। নিচে গেস্ট আছে, তারা যাওয়ার পরই নিচে নামবে। যাও নিজের রুমে যাও।’
কামিনী গেল না। আবইয়াজ ধ’ম’কে উঠল,
-‘কি বলেছি শুনতে পাও নি তুমি?’
কামিনীর পি’লে চমকে উঠল। সে তাড়াতাড়ি তিনতলার সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলল,
-‘যাচ্ছি তো। সবসময় এত বকাবকি করার কি আছে? আদর করে বললে কি হয়?’
আবইয়াজ শুনল কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। কামিনীর কার্যকলাপ তার ভালো লাগে না। লাগবেই বা কেন? একুশের যুবতী সতেরো বছরের কিশোরীর মতো আচরণ করলে কার ভালো লাগে!
#চলবে।