নাক ডাকা স্বামী
“উফফ!! এভাবে কেউ নাক ডাকে?? ঘুমাতেই পারছি না।” কথাটা বিরক্তি নিয়ে একজন স্ত্রী বলল। স্ত্রী তার স্বামীর কাছে গিয়ে বলল,”এই এভাবে নাক ডাকছো কেন?? নাক কিন্তু ঘুষি দিয়ে ফাঁটিয়ে দিব৷ বন্ধ করো।” এদিকে স্বামীর কোনো খবরই নাই। সে পুরো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। যেন সে এ দুনিয়াতেই নেই। স্ত্রী এবার উঠে আসন করে বসে স্বামীর দিকে তাকিয়ে রাগী ভাবে বলে,” নাহ আজ এর একটা বিহিত করতেই হবে। প্রতিদিন আর এই ঘুমের কষ্ট সহ্য হয় না।”
এতক্ষণ কথা হচ্ছিলো রুমি আর রানার। দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসে। তাদের বিয়েটা সম্পূর্ণ পারিবারিক ভাবেই হয়েছে। মানে এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। কিন্তু বিয়ের পর দুজনে চুটিয়ে প্রেম করে। রানা খুবই শান্ত প্রকৃতির একটা ছেলে। আর রুমি?? উপরের কথা শুনে হয়তো ধারণা হয়ে গিয়েছে রুমি কেমন। জি রুমি একটু রাগী স্বভাবের। তাই রানাকে প্রায়ই রুমির বকা খেতে হয়। আর এই বকাটা শুধুমাত্র রানার নাক ডাকার জন্যই খেতে হয়। বিয়ের দু’বছর হয়েছে তাদের। সেদিন বাসর রাতে রুমি যে কি ভয়টাই না পেয়েছিল তা বলার বাইরে। ঘুমানোর কিছুক্ষণ পরই ভয়ংকর এক আওয়াজ রুমির কানে ভেসে আসে। আওয়াজটা এতোটাই ভয়ংকর যে রুমি ভয়ে চোখই খুলতে পারছিল না। রানাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আল্লাহকে ডাকছিল। রুমি কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলো আওয়াজটা রানার কাছ থেকেই আসছে। এবং খুবই ভয়াবহ ভাবে। রুমি আস্তে করে মাথা তুলে উপরে তাকিয়ে দেখে তার মাত্র বিয়ে করা স্বামী সমানে নাক ডাকছে। রুমি কি করবে বুঝতে পারছে না। কিছু যে বলবে তাও পারছে না। আর রানা যেভাবে নাক ডাকছে রুমির ভয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সেদিন থেকেই রুমির রাতের ঘুমের কষ্ট শুরু হয়। জীবনে যা শোনে নি তা এখন স্বামীর ঘরে এসে শোনতে হচ্ছে। মানে নাক ডাকা আরকি। প্রতিদিন রানার এই নাক ডাকা শুনতে শুনতেই রুমির ঘুমাতে হয়।
“আমার ঘুম শেষ করে নিজে ঘুমাচ্ছো না। দাঁড়াও। অাজ দেখাচ্ছি মজা।” রুমি রানার দিকে তাকিয়ে বলছে। রুমি এবার শুরু করে রানাকে জ্বালানো। প্রথমে রানার নাক চেঁপে ধরে আঙুল দিয়ে। সাথে সাথেই রানার নাক ডাকা বন্ধ। বেঁচারা শ্বাস নিতে পারছে না। এদিকে রুমি বলছে,”আহ!! কি শান্তি। কোনো শব্দ নাই।” অন্যদিকে রানা মুখ দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে। তাও ঘুম থেকে উঠছে না। আসলে সারাদিন অফিস করে এসে বড্ডো ক্লান্ত ছেলেটা। তাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু তার মধুর ঘুম যে কারো বিষ হয়ে দাঁড়িয়েছে সে খবর তার নেই। রুমির খারাপ লাগছে রানাকে এভাবে দেখে। তাই নাকটা ছেড়ে দেয়। “যাক এখন আর নাক ডাকছে না। এই সুযোগে একটু ঘুমাই।” এটা বলেই যেই না বালিশে মাথা রেখেছে অমনি আবার নাক ডাকা শুরু। রুমির মাথা এবার গরম হয়ে যায়। রাত ২ টার সময় এমনটা ওর মোটেও ভালো লাগছে না। রাগের মাথায় জোরে চিৎকার করে রানাকে ডাক দেয়। “রানাআআ” রানা এমন ডাক শুনে ঠাস করে লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠে বলে,
– “কি হয়েছে কি হয়েছে??” (অস্থির ভাবে)
– “কি হয়েছে না?? এভাবে নাক ডাকলে আমি ঘুমাবো কীভাবে??” (চিৎকার করে)
– “আস্তে বলো। সবাই ঘুমাচ্ছে।”
– “আমি তো ঘুমাতে পারছি না। আমার ঘুমের কি হবে??” (রাগী কণ্ঠে)
– “দেখ, কতো ডাক্তার কত কিছুই তো করলাম। এখন না বন্ধ হলে আমি কি করবো বলো??” (অসহায় ভাবে)
– “নাহ!! আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
– “কিসের সিদ্ধান্ত??” (ভীতু কণ্ঠে)
– “তুমি এই মুহুর্তে বাইরে সোফায় গিয়ে ঘুমাবা।”
– “কি বলছো এসব?? তোমাকে ছাড়া আমি ঘুমাতে পারি নাকি??” (অবাক হয়ে)
– “আর একটা কথাও আমি শুনবো না। চুপচাপ বাইরে গিয়ে ঘুমাবা। আমি ঘুমাতে না পারলে সকালে কাজ করতে পারবো না। যাও।”
– “প্লিজ আর এমন হবে না।” (অসহায় ভাবে)
– “আমি যেতে বলছি কিন্তু।” (গম্ভীর ভাবে)
– “আচ্ছা। কি আর করার চলে যাচ্ছি আমি। তুমি ঘুমাও শান্তিতে।”
– “একদম ন্যাকামি করবা না। তাড়াতাড়ি যাওতো।”
রানা দ্রুত বউয়ের ধমক খেয়ে বাইরে এসে সোফায় শুয়ে পরে। আসার সময় একটা বালিশ আর কাঁথা নিয়ে এসেছিল। সেটা গায়ে দিয়েই বেঁচারা ঘুমিয়ে পড়ে। রানা মনে মনে বলে,”বেটা নাক, আজ তোর জন্য অামি বউ ছাড়া হলাম।” এরপর সে ঘুমিয়ে পড়ে।
অন্যদিকে রুমিতো বেশ খুশী। রুমটা এখন বেশ শান্ত। কোনো শব্দ নাই। একটা পিন পরলেও নিশ্চিত স্পষ্ট শোনা যাবে। রুমি আরাম করে শোয়। কিন্তু একি ২০ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পরও তার ঘুম আসছে না। এপাশ ওপাশ করছে। নাহ কোনো ভাবেই রুমির ঘুম আসছে না। কি যেন একটা নেই। আর কেমন জানি এক থমথমে পরিবেশ রুমের মধ্যে। রুমির তো এখন ভূতের ভয়ই করছে। রুমি মনে মনে বলে,
– “নাহ, বড় ঝামেলায় পড়লাম তো। ও থাকতে যা একটু ঘুমিয়েছি। এখন তো ঘুমই আসছে না। প্রতিদিন ওর নাক ডাকা শুনে ঘুমাই। বিরক্ত লাগে। কিন্তু এখন তো কিচ্ছু নাই। তারপরও কেন ঘুম আসছে না?? তার মানে কি ওর নাক ডাকা না শুনলে এখন আমার আর ঘুমই হবে না?? ধুর এ কেমন অভ্যাস হলো আমার। এখন কি করি?? ওকে তো বেরই করে দিলাম রুম থেকে।”
রুমি কি করবে বুঝতে পারছে না। যে স্বামীর নাক ডাকার জন্য ওর ঘুমে সমস্যা হয়, আজ তার নাক ডাকা নেই বলেই ওর ঘুম আসছে না। এই দু’বছরে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে ওর। এরপরও রুমি অনেক চেষ্টা করলো ঘুমানোর কিন্তু নাহ কোনো ভাবেই ঘুম আসছে না। রুমি আর না পেরে রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে রানার কাছে যায়। আমাদের সুপুরুষ সেই আরামছে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। রুমির মনে যেন স্বস্তি ফিরে আসলো স্বামীর নাক ডাকা শুনে। রুমি রানার কাছে গিয়ে ওকে ডাক দিল,
– “রানা..এই রানা..উঠো।” (আহ্লাদী কণ্ঠে)
রানা গভীর ঘুমে অতল। তাই রুমি আবার জোর গলায় ডাক দিলো।
– “এই রানাআআআ।”
রানা এবার উঠে একলাফে দাঁড়িয়ে রুমির কাছে অসহায় ভাবে মিনতি করে বলছে,
– “প্লিজ এই রাতে আমাকে ঘর থেকে বের করে দিও না। আমি কই যাবো বলো?? প্লিজ তোমার দোহাই লাগে আমাকে বের করে দিও না। এই যে কান ধরছি আমি আর নাক ডাকবো না। আমি আর ঘুমাবোই না। প্লিজ আমাকে বের করে দিও না।” (অসহায় ভাবে)
রুমির প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে রানার অবস্থা দেখে। তাও নিজেকে সামলে ভাব নিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
– “রুমে আসো। আর নাক ডেকেই ঘুমাবা বুঝলা। নাহলে সত্যিই কিন্তু বাসা থেকে বের করে দিবো। আসো। হাহা।”
রানা রুমির কথা শুনে একদম বোকা হয়ে যায়। আর রুমির পিছনে পিছনে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে। রুমিও তার প্রাণ প্রিয় নাক ডাকা স্বামীকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে। রানাতো কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে এসব। কিছুক্ষণ পর রানা ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলে আবার নাক ডাকা স্বামীর নাক ডাকা শুরু হয়। এবার রুমি একটা হাসি দিয়ে রানাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সেও ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়।
—> আমাদের দেশের স্ত্রীরা স্বামীর যতই বদ অভ্যাস থাকুক না কেন সে কখনোই তাকে ছাড়া ঘুমাতেও পারে না বা থাকতেও পারে না। এরাই হলো বাঙালি স্ত্রী। সব পরিবেশে নিজেকে ঠিকই মানিয়ে নেয়। এমন সব স্ত্রীদের আমার তরফ থেকে অবিরাম ভালোবাসা।
– সমাপ্ত।
#নাক_ডাকা_স্বামী
© আবির খান।