নসীব_পার্ট_৪
আরবি_আরভী
বাবার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।। চোখ বেয়ে অনাবরত পানি পরছে।। যাক আজ থেকে আমি পিউর এতিম হয়ে গেলাম ।। এই পৃথিবীতে সম্পুর্ণ একা একজন।।
বাবাকে কবর দিয়ে যখন সবাই ফিরে এলো তখন বাবার কবরের পাশে বসে খুব কান্না করেছিলাম।। বারে বারে চিৎকার করে বলছিলাম আমাকে একা রেখে কেন চলে গেলেন আমাকেও কেন উনার সাথে নিয়ে গেলেন না।। আজ আমার জন্য বাবার এই অবস্থা।। আমার পাপের মাশুল আমার বাবা দিলেন।।আমি বাবাকে ফেলেছি।। আমি আসল খুনি আমার ফাসি হওয়া চাই।।
বাবার মৃত্যুর পর আমি আমার এক দূর সম্পর্কের মামার বাড়ি চলে যাই।।মামা প্রচুর বায়না করেন।।আজ নাকি তিনি প্রতিষ্ঠিত কেবল বাবার জন্যই হতে পেরেছেন।।এক কালে বাবা উনাকে আর্থিক সাহায্য করে বাচার পথ দেখিয়েছিলেন প্রতিদানে কিচ্ছু চাননি।। এখন আমাকে উনার বাড়িতে নিজের মেয়ের মতো রাখতে পারলে নাকি বাবার কিছুটা ঋণ শোধ করার সুযোগ পাবেন ,।।
ও বাড়িতে গেলে মামানি আমাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন ওখানে থাকলে চাইলে আমাকে বাজার এনে দিতে হবে রান্না করতে হবে ঘর পরিষ্কার সহ নানা সাংসারিক কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে।। আমি তার এক কথায় সব মেনে নেই।। আমার ভাগ্যে হয়তো এটাই লেখা ছিল সবাই তো আর সারাজীবন মা বাবার দোলালি হয়ে থাকতে পারে না।। তাদের মধ্যে হয়তো আমিও একজন অভাগী।।
দিন যাচ্ছিল বাড়ির সব কাজ একলা হাতে সামলিয়ে খুব ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে আছি হঠাৎ রিনকি এসে আমাকে ডেকে তুলে আমার কাছে টাকা আছে কি না তা জানতে চাইলে আমি আবিরের দেয়া টাকাগুলোর কথা ভেবে বলতে থাকি,,
-হ্যা আছে কিন্তু এই টাকা আমি খরচ করতে পারব না ,,
-আপু আগামীকাল আমার একটা ফ্রেন্ডের বার্ডে অনেক দামী কিছু গিফট করতে হবে প্লিজ হেল্প,,,
-ঠিক আছে তুমি ১০-২০ হাজার নিয়ে নাও,,
-না না আপু এতে কিচ্ছু হবে না প্লিজ বুঝ,,
-তাহলে কত,,
-তুমি আমাকে ১ লাখ দাও আমি জানি তোমার কাছে এর থেকেও বেশি আছে প্লিজ প্লিজ আপু না করো না,,
-হ্যা আছে কিন্তু এই টাকা আমার না যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি যার টাকা তাকে ফিরিয়ে দিব,,, তুমি বুঝ প্লিজ,,
-ঠিক আছে লাগবে না তোমার টাকা ,হূম,, (মুখ বিকিয়ে চলে গেলো)
পরের দিন ঘরের বাজার নিয়ে বাসায় ফিরে দেখি রিংকি দৌড়ে আমার রুম থেকে পালিয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা বুঝতে রুমে গিয়ে রুমের সব জিনিসপত্র এলোমেলো আবিষ্কার করি সবকিছু অগোছালো।। টাকার ড্রয়ারটাও খালি হয়ে পড়ে আছে ।। এ কাজ রিংকি ছাড়া কেউ করেনি সেই আমার টাকাগুলো চুরি করেছে তা মামানি কে জানালে উনি উল্টো আমাকে দোষী সাব্যস্ত করেন।। সেদিন দু মায়ে মেয়ে মিলে খুব নির্যাতন চালায় আমার ওপর ।।তখন মা বাবার কথা খুব মনে পরছিল।। আজ যদি উনারা বেচে থাকতেন।।
আমি যদি সেই বাড়িতে থাকি তাহলে নাকি রিংকি অন্য কোথাও চলে যাবে।। কারো সুখের সংসার ভাঙতে চাই না বলে নিজেই বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় পাড়ি জমালাম।। গভীর রাত রাস্তার দুপাশে ল্যাম্পপোষ্ট নিস্তব্ধ পরিবেশ আমি হাতদুটো এক মুঠো করে একটা গাছের নিচে শুয়ে আছি।। হঠাৎ কে যেন আমার হাতটা স্পর্শ করল।। চোখ খুলে দেখি একটা মাতাল আবোলতাবোল বকছে আর আমার কাছে আসার চেষ্টা করছে।। খুব ভয় পেয়েছিলাম ।।হাতে থাকা ব্যাগ টা দিয়ে তাকে আঘাত করে কোনোরকমে নিজে বাঁচিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাই ।।
বড় রাস্তার মুড়ে এসে আমি ক্রমাগত বমি করতে থাকি।। প্রেগ্ন্যাসি অবস্থায় যা হয় আরকি।। সাহায্য করার মত কেউ নেই আমার।। ভাগ্যবশত নিপা সেখান দিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ আমাকে দেখতে পেয়ে রিকশা থামিয়ে বলতে লাগলেন,,
-নিলা ম্যম আপনে এখানে,, কি হয়েছে একি অবস্থা আপনার,,,
আমি তাকে দেখে যেন স্বস্তি ফিরে পেলাম।।চোখ বেয়ে পানি পরতে শুরু করল।। কিছু বলব তার আগেই মাথা ঘুরে পড়ে যাই।। চোখ খুললে নিজেকে আবিরের বাসায় খুজে পাই।।বেডের পাশেই চিন্তিত চেহারায় নিপা আমার দিকে তাকিয়ে আছে খালামনি কিছুটা দূরে দাড়িয়ে রাগি লুক নিয়ে গম্ভীর হয়ে বলছেন,,,
– তোমার বাবা যা করেছেন তা কি কম ছিল যে এখন বারে বারে তুমি ফিরে এসে জ্বালাতন শুরু করলে,,,,তোমার বাবা কেন বুঝতে চাইছেন না তোমাকে এভাবে আমাদের পেছনে লেলিয়ে দিয়ে কোনো লাভ নেই,,,আমরা তোমাদের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাই না।।গিয়ে হীনমন্যতা সম্পন্ন লোভী বাবাকে বলে দিবে উনার থেকে ভালো কাপড় আমাদের পোষা কুকুরটি পড়ে বুঝেছ ,,,, সামনে আবিরের এনগেজমেন্টে এর মধ্যে আমি তোমাদের কোনো ঝামেলা চাই না,,,,
আবির অফিস থেকে আসার সময় হয়ে গেছে তোমাকে এখানে দেখলে ভীষণ রাগ করবে,,, দেখ তোমার সামনে হাত জোড় করছি তুমি প্লিজ চলে যাও আর কখনো আসবে না,,,,
চলবে,,,,