নসীব পার্ট_১৪
#আরবি_আরভী
মহিলা ডক্টর কাকুর দিকে ভেবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে।। পরিবেশটা খুব সুন্দর।। কোনো হৈচৈ নেই।।
সকালে ডক্টর কাকুর কাছে নীলয়ের সব অপরাধের কথা খুলে বললাম।। কিভাবে আমি আবিরের বাড়িতে এসেছি নীলয়ের সাথে পরিচয় সবকিছু। বলতে গিয়ে অনেকবার থেমে গিয়েছি চোখের পানি মুছেছি।।
কাকু বললেন আবিরের মত ছেলেদের নাকি পুলিশে দেয়া উচিত।। পাশে থাকা ভদ্র মহিলা শাড়ির আচলে চোখ মুছে আমাকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন।। আর উনাদের বাড়িতে এসেছি বলে উনি খুব খুশি হয়েছেন।।
ডক্টর কাকু বললেন উনি নাকি আমার বাবার ক্লাসমেট ছিলেন।। বাবা নাকি খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিলেন সামান্য বদমেজাজি কিন্তু পরীক্ষার হলে সবাইকে হেল্প করতেন।।কাকু বাবার মৃত্যুর কথা শুনে খুব দুঃখ প্রকাশ করেছেন।। উনি ভাবতেও পারেননি কোনোদিন আমার সাথে উনি দেখা করতে পারবেন ।। যেহেতু আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই তাই উনারা সবাই চাচ্ছেন আমি যেন ওনাদের সাথে এক বাড়িতে থেকে যাই। আমি ইতস্তত করে বললাম,,,,
-তা কি করে হয়,, অযথা আমার জন্য আপনাদের কষ্ট হবে,, আমি চলে যাওয়াটাই ভালো,,
সিয়ামের মা,,
-তুমি তো আমার মেয়ে মীনার মতোই,,, আমাদের কোনো কষ্ট হবে না,, তাছাড়া এ সময় তোমার একটা পরিবারের দরকার,,,, তুমি না করো না,,
-কিন্তু,,,
কাকু আমাকে থামিয়ে বললেন,,,
-কোনো কিন্তু নয়,,,,এই দুনিয়াটা খুব কঠিন মা তুমি একা লড়াই করে পেরে উঠতে পারবে না,,, তোমারও নিশ্চিত ভবিষ্যতের অধিকার আছে তাই আমি ঠিক করেছি তুমি মীনার সাথে কলেজে যাবে ব্যাস,,
উনার এভাবে অনুরোধ করলেন আমি আর উনাদের বারন করতে পারলাম না।।
সিয়াম মীনার কাছে এসে ফিসফিস করে বলতে থাকেন,,,
-মিনি প্যাকেট তোর আবার হিংসা হচ্ছে নাতো দেখ দেখ তোর রাজত্ব কিন্তু বাবা-মা অন্যকারো হাতে তোলে দিচ্ছে।।
মীনা সিয়ামের কান টেনে বলে,,
-তোকে আমার কথা ভাবতে হবে না,,, তোর রাজত্ব গেল বুঝেছিস,, আমি তো একটা বেস্ট ফ্রেন্ড পেয়েছি,,তাই না আপু,, (দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে)
এখন আমিও এ বাড়ির একজন মেম্বার।।মাথার উপর একটা ছাদ খুজে পেয়েছি বটে।। মাঝে মাঝে বাবার কবর যিয়ারত করে আসি।। সিয়াম আমাকে নিয়ে যায়।। ছেলেটা সম্পূর্ণ আলাদা।। একদম অন্যরকম।। খুব স্টাইলিশ কিন্তু সময়মত নামাজ আদায় করেন।। মানুষের বিপদে এগিয়ে আসেন।। মেয়েদের থেকে সবসময় যথারীতি দূরত্ব বজায় রাখেন।।
দিন যেতে লাগল আমরা অন্য শহরে চলে যাই।। সেখানে ডক্টর কাকুর নতুন চেম্বার ।। পরিবারটা মধ্যবিত্ত হলেও খুব সুখী।। আমি হাজার খুশি ওদের সাথে আমার দেখা হয়েছে বলে।।
চা হাতে ছাদে দাড়িয়ে আছি সিয়াম কানের কাছে এসে এক বিকট শব্দ করলে আমি ভয়ে ছাদ থেকে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলাম কিন্তু উনি আমার হাতটা ধরে ফেলেন,,,,
– ভয় পাইয়ে দিয়েছেন একদম,,
-আপনি এমন করলেন কেন,,
-সরি সরি,,
-হুমম
আমার দিকে কাঠ গোলাপ এগিয়ে দিয়ে,,,
-আপনার জন্য,,
-Wow,,,আপনি কিভাবে জানলেন আমার কাঠ গোলাপ পছন্দ,,
-আমার ভালো লাগে তাই ভাবলাম আপনারও,,,
-আপনার পছন্দ তাই আমারও পছন্দ হবে,, এমনটা কেন ভাবলেন,,,??
সিয়াম আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেল,, পেছন থেকে মীনা এসে আমাকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে,,,
-ভাইয়া কিন্তু আজ পর্যন্ত আমার জন্য গাছের পাতাও আনে নাই,,,
-তাহলে তুমি রেখে দাও,,
-না ভাবী তুমিই রাখ,,
-কি??
-অপ্স সরি,, হা হা হা
খুব হ্যাপি ছিলাম।। কিন্তু এ সুখ আমার কপালে বেশি দিন সইল না।। একদিন আন্টি বাজার থেকে এসে বিরক্তির লুক নিয়ে সোফায় বসে বলতে লাগলেন,,,,
-সব আত্মীয় স্বজনদের মুখে শুধু একটাই কথা আমার বাড়িতে মেয়েটি কে? কি তার পরিচয়? কেউ কেউ তো বলছে,,,,,,, আমার ছেলেকে নিয়ে বাজে কথা বলার সাহস পায় কোথায় ,,, উফফ কিছুই ভাবতে পারছি না,,,
মীনার সাথে বসে লুডু খেলছিলাম কিন্তু আন্টির চেঁচামেচিয়ে উঠে আসি,,,
-কি হয়েছে আন্টি,,
-নাহ নাহ কিছু নাতো,,,, দেখ তোর পছন্দের মাছ এনেছি,,, চল আমাকে সাহায্য করবি অনেক কাজ,,,
-হুমম
রাতে শুয়ে আছি।। আন্টির কথাগুলো ভাবছি।।সেই আবারও আমার জন্য একটা সুখী সংসারে আগুন লাগছে।।উনারা ভালো মানুষ তাই আমাকে কিছু বলছেন না।। আচ্ছা আমি এত অপয়া কেন।।এখানে আর থাকতে পারব না।। আমি চলে যাব।। এতেই সমার ভালো।।
সকালে এ বিষয়ে কাকু জানালে উনি খুব রেগে যান,,
-অসম্ভব,,, তুই আমার মেয়ে এই ঘরের একজন,, তোর কাছ থেকে এটা আশা করিনি মা,,
-কিন্তু কাকু আমি এখানে থাকলে আপনারা অনেক প্রব্লেমে পড়ে যাবেন অনেকে অনেক কথা শুনাবে আমি এটা সহ্য করতে পারব না তাই,,,
-মানুষের কাজই কথা বলা,,,, তাই বলে কি আমরা থেমে যাব,,,
-না কাকু কিন্তু,,,
আন্টি এসে বলে উঠেন,,,,
-একটা উপায় আছে মানুষের মুখ বন্ধ রাখার,,,
-কি উপায়
-যদি নীলাকে আমি আমার পুত্র বধূর স্বীকৃতি দেই,,,, নীলার মধ্যে সেইসব গুণ আমি পেয়েছি যা আমার বৌমার হবে বলে আশা করেছিলাম।। নীলা তুই আর না করিস না,,,
-তা বেশ তো আজকেই হয়ে যাক তাহলে কি বলিস নীলা মা,,
পাশ থেকে মীনা বলতে লাগল,,
-কিন্তু বাবা ভাইয়া কি মেনে নিবে,,,না মানে নীলার আপুর প্রেগন্যান্সি,,,,
আন্টি নীলাকে থামিয়ে দিয়ে,,,
-তুই চুপ কর আমি সিয়ামের চোখে নীলার জন্য গভীর অনুভূতি দেখেছি,, কয়েক মাস পরে নাতি/ নাত্নীর মুখ দেখতে পারব এর থেকে খুশির আর কিছু হয় নাকি,,,কি বল তুমি,,,
-হ্যা গো,,, তাই ভালো হবে,,
সবকিছুই সপ্নের মত লাগছে।। আমি নিচের দুকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে লাগলে আন্টি এসে আমার সামনে হাত জোড় করে করুন কন্ঠে বলতে লাগলেন,,
-দেখ সবাই কত খুশি প্লিজ রাজি হয়ে যা,,,
চলবে,,,,,,,