নসীব পার্ট_১৩
#আরবি_আরভী
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি।। তাহলে সবকিছু মিথ্যে নাটক ছিল।। আসলে ওঁরা কেউ নীলয়ের পরিবারের সদস্য নয়।। এতটা বোকা আমি।। বিশ্বাস অর্জন করতে নীলয় এমটা করেছে আমার সাথে।।
যে করেই হোক না কেন আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে।। কথাগুলো ভেবে আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করলাম পালানোর পথ খুজতে লাগলাম।। হঠাৎ কিছু লোক আমার পথ আটকিয়ে দাড়ালো।। আমি ঘাবড়ে যাই।।পেছন থেকে নীলয় বলতে থাকেন,,,
-এখনো বুঝতে পারোনি তুমি আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবে না,,
আমি করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে উনাকে ইশারায় মিনতি করলাম আমাকে যেতে দিতে কিন্তু নিষ্টুর জানোয়ারটা আমাকে জোর করে গাড়িতে তোলে নিল।।রাস্তায় ডক্টর কাকুর সাথে দেখা,,,,,জলদি করে আমার পাশে থাকা দুটো লোক আমার মুখ চেপে ধরে যেন চিৎকার চেচাঁমেচি করতে না পারি।।
-এই দাঁড়াও দাঁড়াও তুমি নীলয় না?
নীলয় আমতা আমতা করতে করতে হ্যা তাড়াতাড়ি বলুন কি বলবেন,,,,
-তোমার স্ত্রীর রিপোর্ট গুলো নিয়ে যেও ঠিক আছে,,
-ওগুলো আপনি রেখে দিন,,
-কিছু বললে বাবা
-না কিছু না,, নিয়ে যাব
-তা তোমার স্ত্রীর শরীর ভালো তো ঔষধগুলো খাচ্ছে তো ঠিকভাবে,,
-হ্যা একদম,, আজকে আসি তাহলে,,
-হ্যা যাও
মাঝ পথে গাড়িটা বন্ধ হয়ে যায়।। নীলয় বাহিরে এসে বিরক্তির ভাব নিয়ে গাড়ি ঠিক করতে লাগে।। আবির তার গাড়ি থেকে নীলয়কে দেখে কার ব্যাক করে।। চোখ থেকে চশমাটা খুলে গাড়ি থেকে নেমে নীলয়কে জিজ্ঞাসা করে বলেন,,,
-নীলয় এনি প্রব্লেম,, কোথায় যাচ্ছ
-হুমম গাড়িটার যে কি হল,,,
-কেমন আছ,, নীলা কেমন আছে,,
-খুব ভালো ইনফেক্ট আমার বউটা তো সেই কখন থেকে কল করেই যাচ্ছে আজ নাকি আমার পছন্দের খাবার রান্না করেছে,,,,,
-বউ?? তোমরা বিয়ে করেছ??
-হ্যা সরি দাওয়াত দিতে পারিনি আসলে হুট করে হয়ে গেল তো তাই,,,
-ওও ন্যাভার মাইন্ড,, ভালো থেকো,,
আমার মুখ বাধা থাকায় আমি খুব জোরে জোরে চিৎকার করছি কিন্তু আবির কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না।।হাত দুটোও বেঁধে রেখেছে নীলয়।।
আবির চলেই যাচ্ছিলেন হঠাৎ আবার পিছ মোড়ে বলতে লাগলেন,,,
-আগামী মাসে তরীর সাথে আমার ওয়েডিং আশা করছি তুমি আর নীলা আসবে,,
-হ্যা হ্যা অবশ্যই যাব,,
-ওকে
কথাটা শোনার পর আমি আস্তে করে নেতিয়ে পড়লাম।। যাক আমি দূরে থাকায় কারো তো ভালো হল।।আমি আর নায়বা গেলাম উনার দুনিয়ায়।।
ভুতুড়ে বাড়িটায় এনে নীলয় আমাকে ইচ্ছেমত মারতে থাকে।। কাল সকালেই নাকি আমাকে এই দেশ থেকে ট্রান্সফার করে দিবেন।।
রাতের অন্ধকারে রক্তাক্ত শরীর নিয়ে শুয়ে আছি।।কাল সব শেষ হয়ে যাবে ওয়ালিফার চিঠিগুলো পড়তে খুব ইচ্ছে করছে তাই চলে গেলাম ঐ ঘরটায়।। হাতে নিলাম কিছু চিঠি আর মনোযোগ দিয়ে পড়তে লাগলাম।।রাত ১২ টা।। চিঠি পড়তে পড়তে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।। চিঠিতে ওয়ালিফা তার কলিগকে এই বাড়ির দ্বিতীয় দরজার কথা বলেছিল আর তাতে সব ডিরেকশনও দেয়া আছে।। বিশ্বাস করতে পাছি না আমি এখান থেকে মুক্ত হতে পারি।।
আর দেরী না করে সেই ডিরেকশন অনুযায়ী হাটতে লাগলাম।। অনেক ময়লা জমে আছে রাস্তাগুলোতে।। হাটতে হাটতে আমি ফাইনালি মুক্ত হলাম।। অন্ধকার চারদিক কিন্তু ভয় থেকে বেশি খুশি লাগলছিল।। দৌড়ে মেইন রোড থেকে একটা টেক্সি নিয়ে সোজা পুলিশ ইস্টেশন চলে যাই।।
নীলয়ের সব অপকর্মের বিষয়ে তাদের জানিয়ে দিলে উনারা সাথে সাথে একশন নিয়ে আমার কথামত নীলয়ের ছেলেপুলেগুলোকে ধরে আনেন এবং খুব তাড়াতাড়ি নীলয়কে এরেস্ট করবেন বলে জানান।।
সব ফরমালিটিস শেষ করতে গভীর রাত হয়ে যায়।। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই ।। রাস্তায় হাটতে হাটতে হঠাৎ মাথাটা চকর কাটতে শুরু করলে রেস্তোরাঁর কাছে এক জাটকায় আমি বসে পড়ি।।কিছুক্ষন পর একটি ছেলে বাইক থেকে নেমে ফোনে কথা বলতে বলতে রেস্তোরাঁর ঢুকে যান।।ফিরে আমার সামনে এক প্যাকেট খাবার রেখে দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন ।।আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছি।। বেশ লম্বা কাধে কলেজ ব্যাক কালো টিশার্টটের উপর লাল শার্ট পড়ে আছেন।। চেহারা ভালো করে দেখতে পারছিনা।। সে আমার অবস্থা দেখে বলতে থাকে,,,
-আপনি ঠিক আছেন?
আমি কিছু বলতে পারছিনা ।।ছেলেটা আমাকে সাহায্য করবে বলে হাত বাড়াচ্ছে ইতস্তত করে আবার হাতটা সরিয়ে নিচ্ছে।। তারপর পথের একজন মহিলার সাহায্য নিয়ে আমার মুখে পানির ছিটকে দিতে থাকেন,,,।।কিছুটা স্বাভাবিক হলে উনি বলতে থাকেন,,,
-এখন তো কোনো ডক্টর পাবো না,,,,আমার বাড়ি কাছেই আমার বাবা ডক্টর আপনি আমার সাথে চলুন,,,
-পরোক্ষনেই আমার নীলয়ের কথা মনে পড়ে গেল আমি তাকে বাধা দিচ্ছি তখনই আবার অজ্ঞান হয়ে যাই,,
চোখগুলো খুলে ডক্টর কাকুকে দেখতে পাই।। ছেলেটা দরজায় দাড়িয়ে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।
-,,,সিয়াম তোমাকে এখানে এনে খুব ভালো করেছে,,,এখন কেমন আছ,,
-হ্যা ভালো কাকু
আমি উঠে বসতে চাইলে পাশ থেকে একজন মহিলা এসে আমাকে থামিয়ে দেয়,,
-শুয়ে থাক মা,, তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন,,
-আমি,,,
ডক্টর কাকু বলেন,,,,,
-সব কথা সকালে হবে তুমি এখন ঘুমাও,,,
-না মানে কাকু,,,
-ঘুমুতে বলেছি,,,
-না আমি,,
-কোনো কথা না,,
-আন্টি আমি কিছু খাব আমার খিদে পেয়েছে,,
মহিলা ডক্টর কাকুর দিকে ভেবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে।। পরিবেশটা খুব সুন্দর।। কোনো হৈচৈ নেই।।
চলবে,,,,,