নভেম্বরের শহরে পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
1208

#নভেম্বরের_শহরে
লেখক-এ রহমান
শেষ পর্ব

নিস্তব্ধ প্রহর। দূরে কোথাও দুই একটা কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে। নিয়ন বাতির হলদেটে আলো রাস্তায় গলে গলে পড়ছে। সেদিকেই নির্ঘুম চোখ জোড়া দিয়ে নিস্পলক তাকিয়ে ভাবছে সামিন। সময়ের অমোঘ নিয়মে কেটে গেছে কতোগুলো বছর। স্বাভাবিক জীবনের তাগিদে এগিয়ে গেছে সব কিছু।

–এতো রাত পর্যন্ত এখানে বসে আছেন যে? ঘুমাবেন না?

সামিন পিছনে ঘুরে তাকাল। সদ্য ঘুম থেকে উঠা রমণী এলোমেলো পায়ে এসে দাড়িয়ে আছে তার পিছনে। চোখে মুখে এখনও ঘুম লেগেই আছে। সরু চোখে তাকিয়ে আবার ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল
–কি হয়েছে? কোন কিছু নিয়ে টেনশন করছেন? অফিসে কোন ঝামেলা হয়েছে?

নুহার এতো প্রশ্ন শুনে সামিন মৃদু হাসল। উঠে দাড়িয়ে নুহার হাত ধরে ভেতরে এনে বলল
–এতো প্রশ্ন করলে কোনটার উত্তর দিবো। আর তুমি কেন উঠে গেলে?

নুহা পিটপিট করে তাকাল পাশে। ছেলেটা নড়েচড়ে উঠলো। তার পিঠে এক হাত রেখে বলল
–বাবু উঠে গিয়েছিলো। ওকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে দেখি আপনি নেই। ভাবলাম ওয়াশ রুমে গিয়েছেন মনে হয়। কিন্তু ওয়াশ রুমের তো দরজা খোলা। তাই বারান্দায় গেলাম। কিন্তু আপনি কি নিয়ে এতটা ভাবনায় ডুবে ছিলেন যে আমাকে দেখতেই পান নি।

সামিন হাসল। বলল
–তেমন কিছু না। ভাবছিলাম সময় কত তাড়াতাড়ি পার হয়ে যায় তাই না? নিমেষেই ৫ টা বছর চলে গেলো। কত কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। কত কিছু হারিয়ে গেছে।

বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সে। নুহা নিস্পলক নিচের দিকে তাকিয়ে বলল
–জীবনের নিয়মটাই হয়তো এমন। সব কিছু একসাথে কখনই থাকে না। কিছু থেকে যায়। আর কিছু হারিয়ে যায়।

সামিন তার দিকে তাকাল। নুহা ছলছল চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সামিন তাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরল। নুহা তার বুকে মাথা রেখে চোখের পানি ছেড়ে দিলো। সামিন মাথায় হাত দিয়ে বলল
–শক্ত হও। এভাবে ভেঙ্গে পড়লে সামনে সব কিছু কিভাবে সামলাবে। আরও কত ঝড় আসবে জীবনে। সেসব শক্ত হাতে দমন করতে হবে নুহা।

নুহা কোন কথা বলল না। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে উঠলো। সামিন চুলের ভাঁজে হাত বুলিয়ে বলল
–শুয়ে পড় নুহা। অনেক রাত হয়েছে।

নুহা চোখের পানি মুছে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল। সামিন নুহার পাশে শুয়ে পড়ল।

————

সামিন চোখ খুলে দেখল নুহা পাশে নেই। তার ছেলে শুয়ে আছে। ছেলের কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। বের হয়ে দেখল তার ছেলে শুয়ে একা একা খেলছে। সামিন মুচকি হেসে ছেলেকে কোলে তুলে নিলো। বাইরে বেরিয়ে এলো। নুহা টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। সামিন নাস্তা খেয়ে অফিসে যাবে। তাই তাড়াহুড়া করছে। সামিন কে ছেলেকে কোলে নিয়ে আসতে দেখে নুহা একটু এগিয়ে গিয়ে বলল
–আপনি নাস্তা খেতে বসুন। আমি ওকে খাওয়াচ্ছি। নাহলে আপনার দেরি হয়ে যাবে।

সামিন মুচকি হেসে নুহার কোলে ছেলেকে দিলো। নুহা ছেলেকে নিয়ে তার খাবার রেডি করতে গেলো। ছেলের খাবার রেডি করে টেবিলে বসে খাওয়াতে খাওয়াতে বলল
–আজ একটু মৌয়ের কাছে যেতাম। কাল ফোন করেছিলো। অনেকদিন যাইনি তাই রাগ করেছে।

সামিন খেতে খেতে বলল
–কখন যাবে আমাকে ফোন দিও আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিবো।

নুহা খুশী হয়ে মাথা নাড়াল। সামিন খাওয়া শেষ করে ঘরে গেলো রেডি হতে সে এখন অফিসে যাবে। নুহা ছেলেকে খাইয়ে দোলনায় শুয়ে দিয়ে রেহানার ঘরে গেলো। রেহানা মোটা চশমা চোখে দিয়ে বই পড়ছিল। নুহা ভিতরে ঢুকে বলল
–মা আপনি ঔষধ খেয়েছেন?

রেহানা বই বন্ধ করে বলল
–খেয়েছি। বস।

নুহা বসলো চেয়ারে। রেহানা চোখের চশমাটা খুলে বলল
–তোমার বাবার মৃত্যু বার্ষিকী কাল। আমি ভাবছি কোন এতিম খানার বাচ্চাদের খাইয়ে দিলে হতোনা?

নুহা মৃদু কণ্ঠে বলল
–আপনি ভাববেন না মা। আমি আপনার ছেলেকে বলে সব ব্যাবস্থা করবো।

রেহানা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–৩ বছর হল মানুষটা নেই। তবুও মনে হয় এই তো সেদিন চলে গেলো।

বাইরে থেকে ছেলের কান্নার আওয়াজ পেয়ে নুহা বলল
–মা বাবু কাঁদছে। আমি আসছি।

উঠে দাড়িয়ে আবার একটু থেমে বলল
–মা আমি আজ মৌয়ের কাছে একটু যাব ভাবছি। সন্ধ্যার মধ্যেই চলে আসবো।

রেহানা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল। নুহা বের হয়ে চলে গেলো। রেহানা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ভাবতে লাগলো সেদিনের কথা যেদিন সে আলমারিতে লুকিয়ে রাখা আসিফের রিপোর্ট গুলো হাতে পেয়েছিলো। আসিফের আচরনে দিন দিন কেমন যেন পরিবর্তন দেখা দিয়েছিলো। আচরন নরম হয়ে উঠেছিল। কথা বার্তায় কেমন অসহায়ত্ব। রেহানার বেশ আশ্চর্য লেগেছিল। যে মানুষটা এমন বেপরোয়া সেই মানুষটার এমন পরিবর্তন তার কাছে বেশ অবাক করার মতো মনে হয়েছিলো। একদিন আলমারিতে জরুরী কিছু কাগজ খুঁজতে গিয়ে হাতে পেয়েছিলো আসিফের মেডিকেল রিপোর্টগুলো। যেখানে স্পষ্ট করে লেখা আছে আসিফের ক্যান্সার। সে আর বেশিদিন বাঁচবে না। রেহানা সেদিন প্রথম আসিফের জন্য কেদেছিল। তাকে যখন জিজ্ঞেস করেছিলো তখন আসিফ অসহায় ভাবে বলেছিল
–সৃষ্টিকর্তা আমাকে আমার পাপের শাস্তি দিয়েছে রুহি। আমার সময় শেষ।

রেহানা সেদিন আসিফের বুকে শেষবারের মতো মাথা রেখে কেঁদেছিল। আসিফ বাধা দেয়নি। বরং সেদিন রেহানা কে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছিলো অনেকক্ষণ। তারপর মন খুলে অনেক কথা বলেছিল তাকে। তার কিছুদিন পরেই আসিফ আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ে। রেহানা আর সামিন তার ট্রিটমেন্টের জন্য দেশের বাইরে নিতে চাইলে সে বলে
–আমার হাতে বেশী সময় নেই। আমি এই দেশেই মরতে চাই। বাইরে যাব না।

কেউ তাকে আর জোর করেনি। তবে আসিফের শেষ ইচ্ছা ছিল নুহা আর সামিনের কোলে সন্তান দেখে মরবে। কিন্তু সেই ইচ্ছাটা পুরন হয়নি তার। নুহার সন্তান জন্ম নেয়ার আগেই আসিফ বিদায় নেয়। এই নিয়ে রেহানারও আফসোসের শেষ নাই। যতই হোক স্বামী তো। তার একমাত্র সন্তানের বাবা ছিল আসিফ।

—————

দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমেছে। নুহা নিজের ১ বছর বয়সী ছেলেকে কোলে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। মৌয়ের বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে উঠছে সে। মৌকে জানায়নি তার আসার কথা। সারপ্রাইজ দিবে তাই। গতকাল মৌ ফোন করে খুব কেঁদেছিল। নিজের সন্তান আর সংসারের ব্যস্ততায় মৌয়ের বাড়িতে অনেকদিন আসা হয়নি। তাই মেয়েটা অস্থির হয়ে উঠেছিল বড় বোনকে দেখতে। এই বোন ছাড়া পৃথিবীতে এখন যে তার আর কেউ নেই।

বাবা হারিয়ে যাওয়ার পর মুখ থুবড়ে পড়া সংসারটা সামলে উঠতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো তাদের। এর মাঝেই মার অসুস্থতা। নিজের পড়ালেখা নিয়ে খুব সমস্যায় পড়ে যায় নুহা। সামলে উঠতে তার খুব কষ্ট হয়ে যায়। এদিকে বিয়ের পরেও বাবার বাড়িতে পড়ে থাকা নিয়ে মানুষের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। পরিবেশের চাপে অতিস্ট হয়ে উঠেছিল নুহার জীবন। সামিনের সাথে এসব নিয়ে কথা বললে সামিন সিদ্ধান্ত নেয় খুব তাড়াতাড়ি নুহাকে তার বাসায় নিয়ে যাবে। এর মাঝেই একদিন নুহার বাবার ফোন আসে। নুহা বেশ খুশী হয় এটা ভেবে যে তার বাবা বেঁচে আছে আর ভালো আছে। নুহা বাবার ফোনের কথা মাকে জানাতে চায়। কিন্তু নুহার বাবা কাউকে জানাতে নিষেধ করে। আর তার সাথে একা দেখা করতে চায়। নুহা কোন কিছু না ভেবেই খুশিতে বাবার সাথে দেখা করতে যায়। বাবার দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে যা দেখে তাতে তার পায়ের তলার মাটি সরে যায়। তার বাবার অন্য আরেকটা সংসার। এই সংসারের কথা নুহা তার মা আর বোন না জানলেও তার বাবার বাড়ির আত্মীয় স্বজন সবাই জানতো। কিন্তু কেউ এই বিষয়ে তাদের কিছুই জানায় নি।

নুহার বাবা শহরে আসার পর নুহার মায়ের অগোচরে আরেকটা বিয়ে করে। এই বিষয়ে প্রথমে কেউ না জানলেও পরে তার ভাইয়েরা জানতে পারে। আর নুহার বাবা সেই কথা কাউকে না জানানোর জন্য ভাইদের কাছে অনুরোধ করে। তারা ভাইয়ের অনুরোধ রাখেন। কিন্তু যখন দুইটা সংসার সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন লুকিয়ে থাকার। আর সবার অগোচরে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে গিয়ে থাকেন। সবাই জানতো তিনি হারিয়ে গেছেন। কিন্তু তার ভাইয়েরা ঠিকই জানতো তিনি লুকিয়ে আছেন। তার সব লোণ যখন সামিন শোধ করে দেয়। তখন তিনি নুহার সাথে দেখা করতে চান। আর এই বিয়ের বিষয়টা বুঝিয়ে বলতে চান। কিন্তু সব শোনার পর নুহা তার বাবার এই প্রতারণা মেনে নিতে পারে না। তার বাবার পরিবারের লোকজন তাকে বাবার এই বিষয়টা নিয়ে মাকে বোঝাতে অনুরোধ করে। কিন্তু নুহা এটা কোন ভাবেই মেনে নেয় না। সে কি করবে বুঝতে না পেরে সামিন কে সবটা খুলে বলে। সামিন সব শুনে নুহাকে বলে তার বাবার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে। কিন্তু সমাজের কথা ভেবে নুহা এটা করতে রাজি হয়না ঠিকই। কিন্তু বাবার সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চায় নি। বাবাকে নিজের জীবনের হালে ছেড়ে দিতে চেয়েছে। তার মা সব কিছু শুনে আবারো স্ট্রোক করে আর তারপর তাকে আর বাচানো সম্ভব হয় না। দুই বোনের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। নুহা নাহয় তার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে থাকতে পারবে। কিন্তু মৌ কি করবে? একা এই বাড়িতে কিভাবে থাকবে? সব কিছু ভেবে সামিন সিদ্ধান্ত নেয় তাদের এই বাড়ি ভাড়া দিবে আর মৌকে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিবে। নুহা কোন উপায় না দেখে রাজি হয়ে যায়। মৌয়ের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায় কিন্তু তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে পড়াশুনা করায়। তার পড়ালেখার ইচ্ছাটাকে তারা গুরুত্ব দিয়েছে। নুহা নিজের চোখের পানি মুছে ফেলে কলিং বেল চাপল। খানিকবাদে মৌ এসে দরজা খুলে দিলো। নুহাকে দেখে জড়িয়ে ধরল। উতফুল্য কণ্ঠে বলল
–আপা তুমি এসেছ? আমাকে বলনি কেন তুমি আসবে?

নুহা হেসে বলল
–বললে কি তোকে সারপ্রাইজ দিতে পারতাম?

মৌ পিছনে উকি ঝুকি দিয়ে বলল
–ভাইয়া আসেনি?

–তোর ভাইয়া অফিসে। কাজ শেষ করে আসবে। আমাকে নিয়ে যাবে।

নুহার কথা শেষ হতেই তার ছেলেকে মৌ কোলে নিলো। অনেক আদর করলো। নুহা মুচকি হেসে ভিতরে ঢুকে মৌয়ের শাশুড়িকে দেখে সালাম দিলো। তিনিও নুহার সালামের জবাব দিয়ে বসতে বললেন। অনেক গল্প করলো নুহা। মৌয়ের শাশুড়ি উঠে দাড়িয়ে বলল
–তোমরা গল্প করো আমি একটু আসছি।

শাশুড়ি চলে যেতেই মৌ নুহাকে কাপা কাপা গলায় বলল
–আপা বাবার আর কোন খবর পাওনি?

নুহা চোখ তুলে তাকাল। চোখে পানি ছলছল করছে। কিছুক্ষন পর দৃষ্টি নামিয়ে বলল
–১ মাস হল বাবা মারা গেছেন।

কথাটা শুনে মৌ আতকে উঠলো। মুখে আচল চেপে কেদে উঠলো। নুহা তার মাথায় হাত দিয়ে বলল
–আমি জানতাম না। কিছুদিন আগে তোর ভাইয়াকে বড় আব্বু ফোন করে বলেছে। আমি অসুস্থ ছিলাম তাই তোর ভাইয়া আমাকে জানায় নি। দুইদিন আগে জানতে পেরেছি আমি।

মৌ নিজের মুখ আচলে ঢেকে জোরে কেদে ফেলল। বাবা মা যাই করুক না কেন তারা তো বাবা মাই হয়। সাময়িক রাগ থাকলেও সন্তানের কাছে তাদের মুল্য একই রকম থাকে। মনের জায়গাটা কখনও হারিয়ে যায়না। নুহাও কাঁদছে। শেষ বারের মতো বাবার মুখটা দেখার ভাগ্য হলনা তাদের। এমন ভাগ্য যেন কোন সন্তানের না হয়।

————–

আজ আসিফের মৃত্যুবার্ষিকী। এতিম খানায় খাবার দেয়া হচ্ছে। তার সাথে আশে পাশের পরিচিত লোকজন কে ডাকা হয়েছে। এর মাঝে নুহার বাবার বাড়ি আর মায়ের বাড়ির লোকজনও আছে। বাবার বাড়ির লোকদের প্রতি নুহার অভিমান এতো বছরেও কমেনি। তারা নুহার কাছে ক্ষমা চাইলেও সে মন থেকে তাদের মাফ করতে পারেনি। আগের মতো ভক্তি শ্রদ্ধ্যা আর মন থেকে আসে না। তাই খুব একটা কথাও বলে না নুহা। এই নিয়ে অবশ্য তাদের আক্ষেপের শেষ নেই। কিন্তু নুহা তাদের এসব অনুভুতির কোন গুরুত্ব দেয় না। তারা এতো বড় সত্যটা লুকিয়ে রেখে তাদের সাথে অন্যায় করেছে। সেটা ভাবলেই তার বুকের মাঝে এক রাশ কষ্ট হানা দেয়।

নুহা তার আর তার বোনের সুখের এই পরিবারে আর কোনভাবেই এই কালো ছায়া পড়তে দিবে না। সে নিজেও ভালো থাকবে আর বোন কেও ভালো রাখবে। সামিন অবশ্য এই বিষয়ে নুহাকে যথেষ্ট সাপোর্ট করে। সত্যিই নুহা অনেক ভাগ্যবতী।

সামিন নুহার আর তার পরিবারের এতো খেয়াল রাখে সেটা দেখে রেহানা খুব খুশী। কোথাও না কোথাও এসবের মাঝে সে আসিফের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়। ঠিক যেমন করে সে রেহানার পরিবারের খেয়াল রেখেছিলো। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ভালো না হলেও আসিফ দায়িত্তে কখনও অবহেলা করেনি। সামিন তার বাবার আর মায়ের সব ভালো গুন গুলো পেয়েছে।

নভেম্বর মাস। মোটামুটি শীত পড়েছে। এতো শীতের মাঝে সামিন পাতলা একটা গেঞ্জি গায়ে দিয়ে সোফায় বসে আছে। সারাদিনের খাটা খাটনির পর বেশ ক্লান্ত লাগছে। নুহা ছেলেকে কোলে নিয়ে সামিনের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে দিয়ে বলল
–ঠাণ্ডা লাগছে না? এভাবে শীতের কাপড় না পরে বসে আছেন কেন?

সামিন নুহাকে টেনে বসাল নিজের পাশে। বলল
–তোমার মনে আছে এরকম এক নভেম্বরে তুমি আমাকে নিমন্ত্রন জানিয়েছিলে তোমার নভেম্বরের_শহরে। আর আমি সেখানকার এক মাত্র অতিথি ছিলাম।

নুহা মুগ্ধ চোখে তাকাল। এতবছর পরও সামিন সেদিনের কথা মনে রেখেছে। সামিন নুহাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল
–আজ ১১ ই নভেম্বর। এই তারিখেই তুমি আমাকে নিমন্ত্রন করেছিলে। আর ব্যাপারটা কাকাতালিয় হলেও সত্যি যে এই তারিখেই আমি তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম। সেদিনই মনের মাঝে তুমি জায়গা করে নিয়েছিলে। আর সেদিনের পর থেকেই তুমি আমার মিস নভেম্বরি হয়ে উঠেছিলে।

নুহা মুচকি হেসে সামিনের ঘাড়ে মাথা রাখল। এতো কষ্টের মাঝেও সুখ এসে ধরা দিলো তার নভেম্বরের_শহরে।
সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে