নভেম্বরের শহরে পর্ব-১৫

0
965

#নভেম্বরের_শহরে
লেখক – এ রহমান
পর্ব ১৫

ভোঁতা অনুভূতি নিয়ে চোখের পাতা খোলার চেষ্টা করলো নুহা। পুরোটা মেলতে পারলো না। প্রচন্ড ভারী লাগছে চোখ দুটো। কোন রকমে কালো মনিটা বের করে চারিদিকে দেখে নিলো আবছা ভাবে। অন্ধকার ঘরে নীলচে ডিম লাইট জ্বলছে। কোথায় আছে ঠাওর করতে পারলো না। চোখ আবার বন্ধ হয়ে আসছে নিজে নিজে। মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা। কোন রকমে এক হাত তুলে মাথায় হাত দিলো। আলগা খস খসে কিছু একটা স্পর্শ হলো। হাতটা একটু এগিয়ে আনতেই মনে হলো মাথার ভেতরে কেউ যেনো সুচ ফোটালো। প্রচন্ড যন্ত্রণায় শিউরে উঠলো।জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে পাশ ফিরে তাকাল। কিছু একটা চোখে পড়তেই পিটপিট করে চোখের পাতা স্থির করে দেখার চেষ্টা করলো। সামিন পাশে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। বিষয়টা প্রথমে মাথায় না ঢুকলেও খানিকবাদে মনে পড়ে গেলো। মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল নুহা। তারপর কি হয়েছিল মনে নেই। মাথায় আবারও হাত দিয়ে বুঝতে পারলো ব্যান্ডেজ বাঁধা। তার মানে ফেটে গিয়েছে। বাসায় যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু যেতে পারেনি। তাহলে তাকে এই বাড়িতেই রেখে দিয়েছে। কিন্তু সে এখন কোথায়। একটু নড়েচড়ে চারিদিকে দেখে বোঝার চেষ্টা করলো। সম্পুর্ণ অচেনা পরিবেশ। কোন ঘরে শুয়ে আছে সেটাও বুঝতে পারছে না। নুহা উঠে বসতে চেষ্টা করলো। কিন্তু মাথা তুলতে পারলো না। প্রচন্ড ব্যাথায় টনটন করে উঠলো। হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে ‘আহ্’ শব্দ উচ্চারণ করে উঠতেই সামিন চমকে উঠলো। ঘুম ভেংগে গেল তার। মাথা তুলে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল
— কোন অসুবিধা হচ্ছে? মাথা ব্যাথা করছে?

নুহা ক্লান্ত সরে বলল
— না আসলে মাথায় একটু ব্যাথা লেগেছিলো।

সামিন বিচলিত হয়ে বলল
— কিভাবে ব্যাথা লাগলো?

নুহা সামিন এর কথার উত্তর না দিয়ে বলল
— আমার কি হয়েছিলো?

সামিন উঠে বসলো। পাশের বেড সাইট ল্যাম্পটা অন করে বলল
— কতোদিন ধরে রাতে ঘুমাও না? কতোদিন ধরে ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করনা?

নুহা পিটপিট করে তাকাল। হাত দিয়ে আলো আটকানোর চেষ্টা করলো। মৃদু সরে বলল
— ঘুমাই তো। সময় মতই খাই।

— সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। ঘুমাও না ঠিক মতো। খাওয়া দাওয়া করোনা। অতিরিক্ত স্ট্রেস। প্রেসার লো। আরো শুনবে?

নুহা কথা বলল না। সামিন তার দিকে ফিরে তাকাল। গম্ভীর গলায় বলল
— খারাপ লাগছিলো আমাকে বলতে পারতে। সব কিছু নিজে নিজে করার তো কোন দরকার নেই। নিজে নিজে করার ফল দেখেছো?

নুহা মিনমিনে কণ্ঠে বলল
— আমি বুঝতে পারিনি। পানির পিপাসা পেয়েছিল। পানি খেতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কি হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না।

সামিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
— আচ্ছা নুহা তুমি যেমন আমার মনে পুরোটা জায়গা করে নিয়েছো আমি তেমন তোমার মনে জায়গা করে নিতে পারিনি তাই না? কি এমন অপরাধ আমার? নাকি যোগ্যতা নেই তোমার ভালোবাসা পাওয়ার?

নুহা উঠে বসতে চেষ্টা করলো। মাথাটা ঘুরে যাচ্ছে তার। পড়ে যেতেই সামিন ধরে ফেললো। নুহা শুয়ে পড়লো। মিনমিনে কণ্ঠে বলল
— সেরকম কিছু না। আপনি ভুল ভাবছেন।

সামিন অভিমানী সরে বলল
— তুমি আমার কাছ থেকে কোন সাহায্য নিতে চাও না। এতদিন তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক ছিল না তাই সেটা নিয়ে এত সমস্যা। এখন তো আমি তোমার হাসবেন্ড। তোমার সমস্যা তোমার কষ্ট সব কিছুর উপরে আমার অধিকার আছে। কিন্তু তুমি আমাকে এসব থেকে দূরেই রাখতে বেশি পছন্দ করো। কারণটা আমার কাছে স্পষ্ট নয় নুহা।

নুহা নরম কণ্ঠে বলল
— এরকম কিছুই না। আমি এভাবে কখনোই ভাবিনি। আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।

সামিন নুহা কে ভালো করে শুয়ে দিয়ে বলল
— ঠিক আছে। তোমার কথা মানলাম। এখন ঘুমাও। আমরা সকালে কথা বলবো। তোমার রেস্ট দরকার।

নুহা কিছু বলল না। উল্টা দিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো। চোখে মুখে তার অসস্তি। সামিন সরু চোখে তাকিয়ে বলল
— আমার সাথে ঘুমাতে অসুবিধা আছে? থাকলে বলতে পারো।
নুহা কোন উত্তর দিল না। চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। সামিন মুচকি হেসে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো।

——————-

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আসে পাশে তাকিয়ে দেখলো নুহা। তার মনে আছে। মাঝ রাতে ঘুম ভেংগে দেখেছিল সে সামিন এর ঘরে। কিন্তু এখন ঘরে কেউ নেই। সে একা শুয়ে আছে। ক্লান্ত ভাবে উঠে বসলো। মাথাটা ভারী হয়ে আছে। শরীর টাও কেমন লাগছে। কত সকাল হয়েছে সেটা বোঝার উপায় নেই। কারণ চারিদিকে দরজা জানালা বন্ধ। ঘরটা অন্ধকার হয়ে আছে। নুহা বিছানা থেকে নেমে মেঝেতে পা ফেলতেই দরজা খুলে গেলো। নুহা ভয় পেয়ে আবার পা উঠিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলো। সামিন দরজায় দাড়িয়ে কিছুক্ষণ নুহাকে দেখলো। তারপর কাছে এসে বসে বলল
— তুমি কখন উঠেছ?

নুহা মিনমিনে কণ্ঠে বলল
— একটু আগেই।

— আমাকে ডাকোনি কেনো? আর একা একা বিছানা থেকে নামতে গেছো কেনো?

সামিন এর ধমকের সুরে বলা কথায় নুহা নেতিয়ে গেলো। শুকনো ঢোক গিলে বলল
— আমার কিছু হয়নি। আমি ঠিক আছি তো। নিজে নিজে নামতে পারবো।

সামিন গম্ভীর গলায় বলল
— তোমাকে এত বেশি বুঝতে বলেছে কে? এতো কথা বলা আমার পছন্দ না।

বলেই উঠে দাড়ালো। হাত বাড়িয়ে বলল
— হাত দাও। তোমাকে ওয়াশ রুমে দিয়ে আসি।

নুহা আড়ষ্ট হয়ে বলল
— আমি পারবো তো। সত্যি পারবো।

সামিন হতাশ শ্বাস ছেড়ে বলল
— আমি জানি পারবে। তবুও হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। ধরতে কি সমস্যা?

নুহা কোন কথা বলল না। হাত বাড়িয়ে সামিন এর হাত ধরলো। সামিন এগিয়ে নিয়ে ওয়াশ রুমের দরজা পর্যন্ত দিয়ে আসলো। নুহা ওয়াশ রুমে ঢুকে ফ্রেশ হলো। সামিন বাইরেই দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে তার জন্য। নুহা বের হয়ে হাত মুখ মুছে বলল
— কয়টা বাজে?

সামিন হাতের ঘড়িটা দেখে বলল
— ৯ টা বাজে।

নুহা আতকে উঠলো। এতো বেলা পর্যন্ত সে আগে কখনো ঘুমায় নি। তাকে এভাবে আতকে উঠতে দেখে সামিন বলল
— ৯ টা পর্যন্ত ঘুমালে কেউ তোমাকে ফাঁসিতে ঝোলাবে না। তোমার শরীর খারাপ তাই ঘুমিয়েছ। এভাবে রিয়্যাক্ট করার কি আছে?

নুহা কোন উত্তর দিল না। কিন্তু সামিন এর কথা তার পছন্দ হলো না। সামিন বুঝেও পাত্তা দিল না। বলল
— চলো নাস্তা খাবে।

বলেই নুহা কে নিয়ে বাইরে চলে গেলো।

—————–

সময় নিজস্ব গতিতে ছুটে চলেছে। পেরিয়ে গেলো কয়েক মাস। জীবনের সব কিছু নিয়ম মতই চলছে। সামনে নুহার ভর্তি পরীক্ষা। সে তার পড়ালেখা নিয়ে বেশ ব্যস্ত। বাড়ির কাজ সামলে নিজের পড়ালেখা করছে। নুহার পরীক্ষার কারণে মৌয়ের উপরে কাজের চাপটা একটু বেশি পড়ে গেছে। নুহার মায়ের শরীর টা এখন একটু ভালো। তিনিও এখন বাড়ির কাজ করতে পারেন। নুহা নিজের টেবিলে বসে পড়ছিলো। হঠাৎ করে ফোন বাজায় বেশ বিরক্ত হলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। বিরক্ত নিয়ে ফোনটা ধরেই ফেললো। ফোনের ওপাশের গলা শুনে চমকে উঠলো। কাপা কাপা সরে বলল
— বাবা!

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে