#নব্যদিনের সূচনা
হুমাইরা হুর
(১)
যেদিন নিজের সৎ বাবার অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ পেয়েছিলাম সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম যে এ বাসা আমার জন্য নয়।এ পরিবার আমার নয়।বয়স টা তখন সবে ১৬ ছিলো।বুঝে গিয়েছিলাম বাঁচতে হলে দূরে যেতে হবে। কিন্তু উপায় ছিলো না আমার।যাওয়ার কোনো জায়গায়ই ছিলো না, না ছিলো কোনো আত্মীয় স্বজন।এতীমদের কি আল্লাহ ছাড়া আদৌ কেউ আছে? হাহ মা থেকেও এতীম। ভাগ্যের পরিহাসে অনিচ্ছার সত্ত্বেও থেকে যেতে হলো সেই বাড়িতে।ভাগ্যকে মেনে নিয়ে যথাসম্ভব আড়াল রাখতাম ঐ লোক থেকে। কিন্তু তার কুনজর আমার উপর থেকে সরত না।
আমার বাবা মারা যান যখন আমার বয়স ১৪ ছিলেন।বাবা মারা যাওয়ার পনেরো দিন পরেই আমার মা নতুন বিয়ের পিড়িতে বসলেন।যেখানে সদ্য হারানো বাবার শোকে কাতর ছিলাম সেখানে আমার মা ছিলেন বিয়ের আমেজে মত্ত্ব। দীদুনের কাছে শুনেছিলাম আমার মা ছিলো গরীব ঘরের সন্তান।টিনের বাড়ি ছিলেন তাদের।কিন্তু আমার মা ছিলেন অত্যান্ত সুন্দরী। আমার বাবা এক দেখায় আমার মাকে বিয়ে করেন।মায়ের পরিবারে সকল দায়িত্ব নেন। ভালোই তো ছিলো সব।হটাৎ এক ঝড় হওয়ায় উল্টে গেলো আমার পৃথিবী।স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। হটাৎ বাড়ির সামনে লোক জড় দেখে ভিতরে ঢুকে যা দেখলাম তাতে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিলো।এক মুহুর্তে দুনিয়া যেন অন্ধকার ঢেকে গিয়েছিলো আমার। আমার বাবা শুয়ে আছে।সারা শরীরে আঘাত,মুখটা ক্ষ`ত বি`ক্ষত হয়ে ছিলো। ভয়ে শোকে অঙ্গান হয়ে পড়লাম। যখন আমার জ্ঞান ফিরল ততক্ষণে আমার বাবার কবর দেওয়া হয়ে গিয়েছিলো।নিজের বাবাকে শেষ দেখাটুকুও সেদিন দেখতে পারি নি। ১৫ দিন যেতে না যেতেই আমার মা বিয়ে করে নিলেন।তাও আমার বাবার বেস্ট ফ্রেন্ড কে। তার নাকি দুই ছেলে মেয়ে আছে।পরে জানতে পেরেছিলাম তার সাথে নাকি আমার মায়ের গভীর প্রণয়ের সম্পর্ক ছিলো ।
মায়ের বিয়ের পর আমার বাবার পরিবার আমাদের সাথে সকল সম্পর্ক বিছিন্ন করে দিয়েছিলো।যদিও তারা আমাকে সাথে রাখতে চেয়েছিলো।কিন্তু মা দেয় নি।মাকেও আমি ভীষণ ভালোবাসতাম। এত ভালোবাসতাম যেন আমার মার করা অন্যায় গুলো সঠিক ভাবতাম,কখনো প্রতিবাদ করতাম না।তিনি যা করেছেন সবই ঠিক করেছেন। বাবার আদর পাব এটা ভেবেই খুশি হয়েছিলাম।কিন্তু এটাই যে কাল হয়ে দাড়ায় আমার জীবনে।পরিবারের সেই চঞ্চল মেয়ে টা আসতে আসতে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে।
একদিন যখন মা বাইরে গিয়েছিলো আমি রুমে বই পড়ছিলাম।হটাৎ করে দেখি তিনি আমার রুমে।তাকে আমি কখনোই বাবা ডাকি নি। তিনি এসে আমার সাথে কথা বলা শুরু করলেন।কিন্তু এর পিছনে যে তার নিচু মানসিকতা ছিলো তা আমার জানা ছিলো না।তিনি হটাৎ করে আমার গায়ে হাত দিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন।বিষয়টা পাত্তা না দিলেও পরে বুঝতে পারলাম তার উদ্দেশ্য। অতটাও ছোট নই। বোঝায় বয়স হয়েছে তখন আমার। ।ভয়ে কুকড়ে যেতে থাকি।।অসহায় যেন কেউ নেই আমার মত।মনে মনে নিজেকে আল্লাহ প্রতি বিশ্বাস রাখতে বলছিলাম। যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন।হ্যা আল্লাহ ই আমাকে ঐদিন সাহায্য করেছিলেন শয়তানের হাত থেকে বাঁচতে। তিনি যখন আমায় ছোয়ার চেষ্টা করেন তখন বাড়ির কাজের লোক রেহেনা আপা আমার রুমে খাবার দিতে আসছিলেন।তাকে থেকে লোক টা চলে যায়। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাচি।মনের মধ্যে ভয় দানা বাঁধতে থাকে৷ নিজেকে আড়াল করতাম সব সময়।
এ ঘাটনার পর তিনি প্রায় আমার সাথে নোং|রামি করার চেষ্টা করতেন।আমার মাকে জানালে তিনি এ বিশ্বাস করেন না। আমাকে মার ধর করেন। আমাকে ৩ দিন খেতে দেন না। লেখা পড়া বন্ধ করে দিলেন।মাঝে মাঝে রেহেনা আপা লুকিয়ে আসতেন। জোর করে কিছু খায়িয়ে দিতেন।তার কলে মাথা রেখে চোখের জল বিসর্জন দিতাম।কিছু দিনের মাথায় মা আসেন। নিজের সাথে জরিয়ে ধরেন।আদর করে খাওয়ান। আমার কাছে ক্ষমা চান মারধর করার কারনে। আমাকে বোঝান এগুলো আমার মনে ভুল।বাবা হিসেবে তিনি আদর করছিলেন।আরো অনেক কিছু।সেদিন নিরব চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।তার পর ২ বছর ভালেই ছিলাম। তিনি কোনো খারাপ ব্যাবহার করেন নি আমার সথে।ভেবেছিলাম হয়েতো সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।হয়তো বাবার আদর পাব।
এত কিছু পর ও ঠিক ছিলো সব।কিন্তু ধৈর্য্যের বাধ সেদিন ভাঙ্গল গেলো যেদিন উনি রাতে আমার রুমে আসলেন। সেদিন সকালে বৃষ্টি ভেজায় জ্বর এসেছিলো রাতে। শরীর টা তখন দুর্বল ছিলো।ঘুমের মধ্যে হটাৎ অনুভব করলাম কেউ আমার মুখে হাত দিয়ে বা`জে ভাবে স্পর্শ করছে। ধড়পড়িয়ে উড়লাম।সামনে কালো অবয়ব দেখে দূর্বল হাতে ধাক্কা দেও চেষ্টা করলাম।খুব বেশি সরে না গেলোও হালকা সেরে গেলেন।আবার আমার দিকে তেড়ে এসে আমার গলা চেপে ধরলেন।। বুঝে গিয়ে ছিলাম কালো ছায়া টা কে। নিশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো আমার।ধ`স্তা`ধ`স্তি একসময় আমি যেনো নেতিয়ে পড়ছিলাম। তবে কি?আজ রেহাই পাব না? মানুষ রুপী জানোয়ার এর কাছ থেকে নিজেকে বাচাতে পারব না আর? আমাকে নেতিয়ে পড়তে দেখে লোকটা ভয় পেয়ে আমার গলা ছেড়ে দিলো। কোনো মতে লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেলাম বাড়ি থেকে।সেই রাতেই এক কাপড়ে ঐ বাসা ছেড়েছিলাম আমি।হাতে না ছিলো ফোন না ছিলো কোনো টাকা।
কিন্তু এখানেও শেষ না। ঝড় আসা তো কেবল শুরু হয়েছিলো জীবনে।
কোথায় যাবো তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না।।এ শহরে যে কেউ ছিলো না আমার। হটাৎ মনে পড়ল রীতি আপু কথা।রীতি ছিলো আপু কলেজের এক বড় আপু।যদিও অনেক দিন তার সাথে কথা হয় না। কষ্টের সময় তার কথাই মনে পড়েছিলো আমার। কলেজে একমাত্র তাকেই পেয়েছিলাম আমি। তার সাথে আমার সম্পর্ক যেনো বোনের মতই ছিলো। কিন্তু আপুর এইচএসসি শেষ হওয়ার পর আমাদের মাঝে আর যোগাযোগ ছিলো না। তার বাসা যেহেতু চেনা ছিলো আমার তাই যেখানের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।
রাত তখন ১ টা কি ২ টো বাজে। রীতি আপু আমাকে দেখে চমকে উঠলেন।রীতি আপু দেখে যেনো আমার চোখে পানি বেরিয়ে আসল।আপুকে জরিয়ে ধরে অঝোরে কান্না করেছিলাম সেদিন। মনে হয়েছিলো তার থেকে আপন কেউ নেই আমার।আমাকে কি হয়েছে জিগেশ করতেই সব ঘটনা খুলে বললাম। সব ঘটনা শুনে স্তব্ধ হয়ে পড়ছিলেন তিনি।হয়তে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিলো তার।তিনি কোনো মতে আমাকে শান্ত করে তারে পাশের রুমে নিয়ে গেলেন। রীতি আপুর বাসাটা বেশ সুন্দর। ছিমছাম করে গুছানো।তার বাসায় দুটো রুম।একটা বাথরুম আর রান্নাঘর। একা একটা বাসায় থাকে ভাবতেই অবাক লাগে।রুমে আসার সময় লক্ষ করলাম একটা ছেলে ফোনে গেম খেলছে।ছেলেটার চেহারা দেখতে না পালেও ভালোই সুদর্শন মনে হলো।কথায় কথায় জিগ্যেস করতেও তিনি অকপটে বলে দেন এটা তার ভাই।আমার জানা মতে আপু কোনো ভাই ছিলো না।হটাৎ করে উদয় হলো কিভাবে?ধুর থাকতেই পারে। সেদিকে মাথা ঘামালাম না। সকল ভাবনা চিন্তা বন্ধ করে দিলাম।রীতি আপু আমাকে জোর করে খাইয়ে শুয়ে দিয়ে চলে গেলেন।
মাঝ রাতে গভীর পানি পিপাসায় আমার ঘুম ভেঙে গেলে।হাতের কাছে পানি না পেয়ে পানি আনার জন্য উঠে দরজার খুলতে গেলেই আশর্য হলাম দরজা বন্ধ। কিন্তু রীতি আপু দরজা বাইরে দিয়ে কেনো লাগিয়ে দেবে?
আবার ও কি সামনে বিপদ? অপেক্ষা করছে অনেক কিছু,,,,,
চলবে!