#পর্ব২_৩
#নতুন_ভোরের_আগমন
#অর্ষা_আওরাত
—“দেখো রিহান এখন আর কথা বাড়িও না। যা কথা হবে তোমাদের বৌভাত এর পরে হবে। এখন বাড়ি ভর্তি মানুষজন রয়েছে কোনো সিনক্রিয়েট করবে না। এখন আর কোনো কথা বাড়িও না। চুপচাপ শুয়ে পড়ো নিজের ঘরে গিয়ে। বাড়িতে মেহমান কমুক আমি তোমাদের সবটা বলবো তখন এবার দয়া করে চুপচাপ চলে যাও। আর এমন কোনো কিছু করবে না যাতে এই পরিবারের বা ইনসিয়ার কোনো অসম্মান হয়। আপাততো কিছুদিন সময় দাও আমাকে।”
—“কিন্তু বাবা আমার কথাটা তো শোনো ওরকম পঙ্গু মেয়ের সাথে তুমি আমার বিয়ে দিলে**
আর কোনো কিছু বলতে পারলো না রিহান! মিসেস মিতালী রহমান রিহানকে চুপ করতে বললেন!
–“রিহান তোর বাবা যখন বলেছে ক’টা দিন সময় দিতে তাহলে সময়টুকুনি দে। বাড়ি ভর্তি মেহমান কোনো সিনক্রিয়েট তৈরী করিস না। এই নিয়ে আর কোনে কথা বাড়াস না এমনিতেই তোর বাবা হাই প্রেশার আবার হার্টের রোগী তাই ওনার এখন একটু বিশ্রাম নেওয়া দরকার। সারাদিনের ধকল সেড়ে এখন যদি বিশ্রাম নিতে না পারে নিশ্চয়ই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়বে তাই এখন একটু ওনাকে বিশ্রাম নিতে দে। আমি জানি তোর সাথে ঠিক হয়নি তাও বলছি বাবা তুই একটু ক’দিন চুপ থাক। নিজের ঘরে যা।”
রিহান বাবার কথা অনুযায়ী চলে গেলো নিজের রুমে। তাদের পরিবারে তার বাবার কথাই শেষ কথা। আর তাছাড়াও তার কারনে তার বাবার কোনো ক্ষতি হউক সেটা কোনো সন্তানই চাইবে না তাই সেও বাধ্য সন্তানের মতন চলে গেলো।
ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটা পেড়িয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। সারা রুমে ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার হয়ে আছে। এর মধ্যেই বাতি বন্ধ করে ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার রুমের মধ্যে ইনসিয়া শুয়ে রয়েছে! ঘুমোইনি এখনো চোখের পাতা বন্ধ করে রেখেছে! হটাৎই চোখে আলো পড়তে চোখ খুলে দেখত পেলো রিহান ঘরে এসেছে। রিহানকে দেখেই কেমন জানি ভয় করতে লাগলো ইনসিয়ার! রিহানের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে! কোনো কিছু নিয়ে বেশ রেগে আছে রিহান তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে! রিহান কি তাকে এখন এই রাএেই বের করে দিবে কিনা সেই ভয় ঢুকে গেছে মনের ভিতরে! ইনসিয়াকে চমকে দিয়ে রিহান ইনসিয়া পাশে এসে বসলো কিন্তু মাঝখানে একটু দুরত্ব আছে।
—“দেখো ইনসিয়া আমার পক্ষে তোমাকে মেনে নেওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। আর যাই হোক আমি তো তোমার এই পঙ্গুর কথা জানতাম না তাই কোনো মিথ্যে দিয়ে আমি সম্পর্ক শুরু করতে চাই না। তাই আমরা ডির্ভোস নিয়ে নিবো। বাড়ি ভর্তি লোক রয়েছে লোকজন কমে গেলেই ডির্ভোসের জন্য এপ্লাই করবো আমি।”
মুহুর্তের মধ্যেই ইনসিয়ার চোখের কোনে পানি চিকচিক করতে লাগলো! না চাইলেও অক্ষি জোড়া থেকে পানি সমান তালে পড়ে যাচ্ছে! ইনসিয়া চেয়েও আটকাতে পারছে না! যতোই হোক আর পাঁচটা মেয়ের মতনই ইনসিয়ারও স্বপ্ন ছিলো সংসার করা। কিন্তু বিয়ের প্রথম রাএেই ডির্ভোসের কথা শুনতে হবে সেটার জন্য ইনসিয়া মোটেও প্রস্তুত ছিলো না! একটু আগে ভেবেছিলো হয়তো রিহান রাগ করে ইনসিয়াকে দু চার কথা শোনাবে কিন্তু এভাবে যে ডির্ভোসের কথা বলবে সেটা ভাবেনি একবারো! তাইতো হঠাৎই রিহানের মুখ থেকে ডির্ভোসের কথা শুনে না চাইতেও অক্ষি জোড় থেকে পানি এসে পড়েছে! ইনসিয়া রিহানের দিকে না ফিরে জানলার ধারে গিয়ে রিহানকে আড়াল করে দাঁড়ালো। সে রিহানকে তার চোখের পানি দেখাতে চায় না! সে রিহানের কাছে তার দুর্বলতা প্রকাশ করতে চায় না বিধায় এই ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো! ইনসিয়া রিহানকে বলে ওঠলো,
—“আমার তো কোনো দোষ ছিলো না রিহান তাহলে আমাকে এভাবে অপমানিতো করবার অধিকার কে দিলো আপনাকে? আমার জীবনটা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কি আমি আদৌ আপনাকে দিয়েছি? শুধু শুধু কেনো আমার জীবনে ডির্ভোসি মেয়ের তকমা লাগাবেন আপনি? আপনি কি আমার জীবনটা নিয়ে খেলা করছেন? কেনো এভাবে অপমানিতো করলেন আমাকে? লোক সমাজে আমার বাবা, মা,ভাই তাদেরও অপমানিতো করলেন! সবাইকে অপমান করার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে?”
–“তোমাদের কেই বা কে অধিকার দিয়েছে একটা মিথ্যের সঙ্গে আমার জীবন শুরু করবার? আমি তো সব দিক দিয়ে পার্ফেক্ট তাহলে কেনো আমি তোমার মতন একটা পঙ্গু মেয়েকে মেনে নিবো? মেনে নেওয়া তো পরের কথা আমি তো জানতামই না আমি যাকে বিয়ে করবো মানে আমার বউ একজন পঙ্গু মেয়ে হবে!এটা জানলে আমি কখনোই তোমাকে বিয়ে করতাম না। এখন যখন বিয়ে হয়ে গেছে তখন তোমাকে ডির্ভোস দেওয়া ছাড়া তো কোনে উপায় নেই! তোমাকে ডির্ভোস দিতেই হতো। এমন একজনের সাথে আমি কখনোই থাকবো না।”
—“এখন আপনার এই না জানার কারনে আমার জীবনে ডির্ভোসি তকমা টা লাগাতে চাইছেন তাই তো মিঃ রিহান? বেশ মানছি আপনি কিছুই জানেন না তাই বলে যে আপনার পরিবারো কিছু জানতো না সেটা আপনার দায়। শুধুমাত্র আপনাদের ভুলের জন্য আমার জীবনটা নষ্ট করলেন! তবে যাই হোক জোর করে তো কারো জীবনে থাকা যায় না তাই চলে যাওয়াই ভালো আমিও চলে যাবো আপনি না হয় আপনার মতন পার্ফেক্ট কাউকে খুঁজে নিবেন।”
–“বেশ তাহলে বাড়ি থেকে লোকজন কমুক তারপরে না হয় এগুলা নিয়ে কথা হবে। এখন ক’দিন একটু বউ সেজেই না হয় থাকো। এখন এই খাটে শুয়ে পড়ো তুমি আমি বরং’চ বারান্দায় সোফাতে শুয়ে পড়ছি।”
–” ঠিকআছে আসল বউ হয়েও না হয় নকল বউ সেজেই থাকবো। কারন মন থেকে তো আর আমি আপনার বউ নই। কিন্তু আপনার ঘরে আপনি থাকবেন বাহির হলে আমি হবো আপনি না।”
–“শোনো মেয়ে চুপ করে শুয়ে থাকো। তুমি আপাততো এ’কদিন এ বাড়ির অতিথিই বলতে পারো তাই তুমি থাকো। যতোই হোক অতিথির কোনো সমস্যা হক সেটা চাই না আমি তাই তুমি শুয়েই পড়ো।”
–ইনসিয়া কোনো কথা না বাড়িয়েই শুয়ে পড়লো খাটে। আর রিহান বারান্দায় গিয়ে শুয়ে পড়লো লাইট অফ করে। ইনসিয়া শুয়ে রয়েছে ঠিকই কিন্তু চোখে কোনো ঘুম নেই তার! ঘুম আসবেই কিভাবে যেখানে তার স্বামী বিয়ের প্রথম রাএেই ডির্ভোস এর কথা বলে। বিয়ে করা বউকে বউ বলে অস্বীকার করে বাড়ির অতিথি বলে। ভাতেই চোখের কার্নিশ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে!
পরিচয় পর্ব জানা যাক?………………………….
ইনসিয়ারা হচ্ছে এক ভাই এক বোন। বড়ো ভাই ভার্সিটির টিচার বিয়ে করেনি এখনো। আর বাড়িতে বাবা মা থাকে শুধু। রিহানের বাবা মিজানুর রহমানের সাথে ইনসিয়ার আগেই ভিবিন্ন ভাবে আলাপ হয়। রিহানের বাবা একদিন এক্সিডেন্টে হতে যাচ্ছিলো ঠিক সে সময়ই ইনসিয়া বাঁচায় মিজানুর রহমানকে। ঠিক তারপর থেকেই মিজানুর রহমান এর সাথে ইনসিয়ার নানা ভাবে যোগাযোগ আদান প্রদান হয়। তারপরেই কিছু মাস পর মিজানুর রহমান রিহানের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে ইনসিয়ার জন্য। যেহেতু মিজানুর রহমান ইনসিয়াকে আগ থেকেই চিনে সেখানে ইনসিয়ার পঙ্গুত্বের কথা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না এটাই স্বাভাবিক। আর সেই কারনেই ইনসিয়ার বাবা, মা বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু মিজানুর রহমান কাউকে কিছু না বলায় দোষী ইনসিয়াই হলো। রিহান এখন একটি জব করছে। রিহানরা দু বোন আর এক ভাই। এক বোনের বিয়ে হয়ে গেছে আর এক বোন ভার্সিটিতে পড়ছে। মিজানুর রহমান এর জয়েন ফ্যামিলি তাদের সাথে তার মা ও ছোটো এক ভাই থাকে।
#পর্ব৩
–“সকালবেলা ইনসিয়া ঘুম থেকে ওঠেই দেখতে পেলো রিহান তার……
সূর্য ওঠেছে বেশ অনেকক্ষনই হয়ে যাচ্ছে। দেয়ালে ঘড়ির দিকে তাকাইতেই ঘড়ি জানান দিলো সারে সাতটা বেজে গেছে! জানলার পর্দা ভেদ করে রোদ্রের উওাপ ছড়িয়ে পড়েছে সারাঘর জুড়ে। ইনসিয়া জানলার দিকে তাকাতেই সবটা বুঝতে পারলো। তড়িঘড়ি করে তাড়াতাড়ি ওঠতেই ঘুমন্ত রিহানের দিকে দৃষ্টিপাত করলো ইনসিয়া! ঘুমন্ত মুখশ্রীতে রোদ্রের লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে। ওই লাল আভা রাঙা ঘুমন্ত মুখশ্রীটি ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করলো ইনসিয়ার। কিন্তু পরক্ষনেই মস্তিষ্কে বাজতে থাকলো কালকের বলা কথাগুলো। তৎক্ষনাৎই ইনসিয়া রিহানের দিকে দৃষ্টিপাত না করে ওঠে চলে গেলো ফ্রেশ হতে! মস্তিষ্কে ঘুরতে থাকলো রিহান তো বলেছিলো বারান্দায় থাকবে তাহলে খাটে আসলো কেনো? ফ্রেশ হয়ে নতুন শাড়ি পড়ে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে ইনসিয়া। সদ্য শাওয়ার নিয়ে আসায় চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে! ইনসিয়া পানি সরাতে চুলগুলোকে মুছতে লাগলো। ড্রেসিং টেবিল খাটের বেশ কাছে হওয়ায় রিহানের চোখে মুখে ঠান্ডা পানির ছিটা লাগতেই আয়েশের ঘুম ছুটে গেলো! চোখ খুলেই লাল রঙের শাড়ি পরিহিতা, লম্বা চুলের অধিকারিণী এক মেয়েকে দেখতে পেলো! ইনসিয়া সামনের দিকে তাকিয়ে থাকায় রিহান শুধু ইনসিয়ার পেছন টুকুই দেখতে পেলো! রিহান ইনসিয়ার দিকে দৃষ্টিপাত বন্ধ করে বলে ওঠলো,
–“সকাল সকাল কি পেয়েছো কি? এভাবে চুলের পানি ছিটা দিয়া আমার ঘুম ভাঙালে কেনো? কি মনে করেছো তুমি এভাবে আমার মন গলাবে তুমি?”
ইনসিয়া রিহানের কথা শুনে রাগান্বিত স্বরে রিহানকে বলে ওঠলো,
–“আপনাকে আমার রুপ দিয়ে আর্কষন করে ধরে রাখার কোনো প্রয়জোন বোধ করি না আমি। আপনার মনও গলাতে চাই না আমি। চুলের পানি মুছতে গিয়ে আপনার গায়ে পানির ছিটা লেগেছে আমি ইচ্ছে করে দিইনি। সবটা না জেনে কারো সম্পর্কে এভাবে বলার কোনো অধিকার নেই আপনার। আর আপনি তো বারান্দায় ছিলেন হঠাৎ করে রুমে আসলেন কখন?”
–“তুমি যেভাবে ছিলে তাতে আমি কেনো সবাই এরকম টাই ভাববে। যাই হোক রেডি হয়ে নিও তাড়াতাড়ি। আজকে তো আবার রিসিপশন আছে। বারান্দায় প্রচুর ঠান্ডা লেগেছিলো তাই বাধ্য হয়েই রুমে তোমার সাথে বেড শেয়ার করে শুতে হলো।”
ইনসিয়া বলে ওঠলো,
–“হ্যাঁ মিথ্যা বিয়ের মিথ্যা রিসিপশন। শুধু শুধু লোক জানাজানি হবে। আর আমাকে নিয়ে প্রহসন করবে সবাই।”
–“এখন আর এগুলো বলে তো কোনো লাভ নেই যা হবার হয়ে গেছে! যা ঘটেছে সেখানে আমিই শুধু দায়ী নই দায় তোমারও আছে সুতরাং এখন আর এসব বলবে না।”
রিহান ইনসিয়ার উদ্দেশ্য কথা গুলা বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো! ইনসিয়া বসে বসে সেই আগের ন্যায় ভাবতে লাগলো সত্যিই কি এই বিয়েতে তার কোনো দোষ ছিলো আদৌ! তার বিয়েটাও তো বাকি মেয়েদের মতন স্বাভাবিক হতে পারতো। ইনসিয়ার ভাবনার মাঝেই দরজায় কড়া ঘাত করতে লাগলো কেউ। ইনসিয়া মাথায় বেশ বড়ো করে ঘোমটা টেনে নিলো। মিথ্যে হলেও সে তো এ বাড়ির নতুন বউ। দরজা খুলে দেখতে পেলো মিজানুর রহমান দাঁড়িয়ে আছেন! ইনসিয়া দরজা খুলতেই তিনি রুমে এসে পড়লেন। রুমেই এসেই ইনসিয়ার উদ্দেশ্য বললো,
—“ইনসিয়া তুই ঠিক আছিস তো মা? ভালো আছিস তো বল?”
–“হ্যাঁ কিরকম ভালো আছি তা তো দেখতেই পাচ্ছেন আংকেল। আপনি সবটা জেনেও কি করে পারলেন আপনার পরিবারের কারো কাছে কিছু না জানিয়ে? কেনো দোষী আমাকেই বানালেন আংকেল? আমি তো কোনো দোষ করিনি বলুন?তাহলে কেনো আমার সাতে এসব হচ্ছে?”
একদমে পুরো কথা গুলো বলে থামলো ইনসিয়া! কথা গুলো শুনেই বোঝা যাচ্ছে কতোটা রেগে আছে ইনসিয়া মিজানুর রহমান এর উপর! মিজানুর রহমানও এটাই আশা করেছেন। সে জানতো ইনসিয়া এগুলোই বলবে এটা স্বাভাবিক। ইনসিয়ার কথার উওর দিতে মিজানুর রহমান বলতে লাগলেন,
–“ইনসিয়া তুই একটু তোর আংকেল কে সময় দে দেখবি কিছুদিনের মধ্যেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে একদম।”
–“কি ঠিক হওয়ার কথা বলছেন আংকেল?যেখানে কোনো কিছু ঠিক হবার কোনো সুযোগই নেই! আপনার ছেলে তো আমায় অস্বীকার করেছে তার স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে। সে বলছে আমি নাকি তাকে ঠকিয়েছি! তাকে ঠকিয়ে এ বাড়ির বউ হয়ে এসেছি আমি। কিন্তু আপনি তো সবটা জানতেন আংকেল। যেদিন আমার বিয়ের সমন্ধ নিয়ে এসেছিলেন আমার বাবা, মা, জিগেস করেছিলো তো আপনাকে যে আপনার পরিবার সবাই জানে তো আমার সমস্যার কথা? আপনি তখন বলেছিলেন সবটা দেখে নিবেন আপনি, তাহলে এখন কি হলো? আপনি কেনো লুকিয়ে গেলেন সবটা? কেনো দোষী বানালেন আমাকে?”
–“আমাকে ক্ষমা করে দে! আমি বুঝতে পারিনি রিহান এতোটা রিয়্যাক্ট করবে তোর সাথে। আমি ভেবেছিলাম যে একবার বিয়েটা হয়ে গেলে রিহান ও কিছু করতে পারবে না সে মেনে নিবে সবটা কিন্তু রিহান যে এরকম ব্যবহার করেছে তোর সাথে সেটা ভাবিনি। যদি রিহানকে সব সত্যিটা বলে দিতাম তাহলে রিহান কোনোদিনই রাজি হতো না তোকে বিয়ে করতে আর আমি জানি রিহানের জন্য তুইই একমাএ উপযুক্ত মেয়ে যে কিনা রিহানের ও এই পরিবারেরও যোগ্য বউ। তাই বাধ্য হয়েই কাউকে কিছু না জানিয়ে তোর সাথে রিহানের বিয়েটা দিতে হলো রে। যদি এতে তোর মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে হাতজোড় করে বলছি আমাকে ক্ষমা করে দে ইনসিয়া।”
ইনসিয়া কিছু বলবে কিন্তু মিজানুর রহমান এর হাতজোড় করে এভাবে থাকায় ইনসিয়া দুর্বল হয়ে কিছুই বলতে পারছে না! ইনসিয়া বলে ওঠলো,
–“এতে ক্ষমার কিছু নেই আংকেল সব বাবা মা তাদের সন্তানের জন্য ভালো চায় হয়তো আপনিও ভেবেছিলেন যে রিহানের সাথে আমার বিয়ে হলে আমরা খুশি হবো কিন্তু বাস্তবে এমন কোনো কিছুই নয়। সে চায় না আমার সাথে থাকতে আর আমিও এমন কারো সাথে থাকতে চাই যে আমাকে ভালোবাসে না।”
–“তবুও ক’টা দিন সময় দিস সব ঠিক করে দেবার চেষ্টা করবো আমি।”
আর কোনো কথা না বলে চুপ করে ঘর থেকে চলে গেলো মিজানুর সাহেব। আর কোনো কথার মুখও নেই তার! ইনসিয়াও মিজানুর সাহেব চলে যাওয়ার পর দরজা চাপিয়ে দিয়ে আবার খাটে আনমনে বসে রইলো! ওদিকে ওয়াশরুম থেকে রিহান বেরিয়ে এসে ইনসিয়াকে এভাবে দেখতে পেয়ে রিহান বলে ওঠলো,
–“এভাবে মন মরা হয়ে বসে আছো যে? এখন বাড়িতে প্রচুর মানুষ জন। একটু বাদেই সবাই নতুন বউ দেখতে ভীর করবে তখন যদি দেখে নতুন বউ এভাবে মন মরা হয়ে বসে আছে তখন কি হবে? তাই এভাবে বসে না থেকে একটু ভালো করে রেডি হও। একটু পরেই পার্লার থেকে লোক এসে তোমাকে সাজিয়ে দিয়ে যাবে তারপর সাজগোজ শেষ করে নিচে যাবে আর খবরদার নিচে গিয়ে কিন্তু কোনোরকম সিনক্রিয়েট করবে না। বা কাউকে এখনি জানতে দিবে না আমাদের ডির্ভোসের কথা বা বারান্দায় শোয়ার কথা।”
–“ওসব নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না। ক’দিনের জন্য হলেও আমি আপনার আসল বউ হয়ে থেকে যাবো। কাউকে জানতে দিবো না কোনোকিছু।”
ইনসিয়াকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রিহান চলে গেলো রুম থেকে! যাবার সময় দরজা বন্ধ করে চলে গেলো। ইনসিয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে চারপাশ টা দেখছিলো ঠিক তখনি পিছন থেকে কেই ইনসিয়ার কাঁধে হাত বাড়ালো! ইনসিয়া পিছন ফিরে তাকাবে এর আগেই অপর পাশে থাকা লোকটি ইনসিয়াকে………..
#চলবে