#পর্ব১৭
#নতুন_ভোরের_আগমন
#অর্ষা_আওরাত
সময় পেরিয়ে গেছে অনেকটা। আরো তিন মাস সময় দেখতে দেখতে অনায়াসেই কেটে গেলো। ইনসিয়া এখন একটা এনজিও তে কিছু বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করে সময় কাটাচ্ছে। রিহান বিয়ে করে পনেরো দিন হবে। ইনসিয়া গিয়েছিলো রিহানের বৌভাতে দু’জনকে দেখে মনে হচ্ছিলো তারা কতোটা খুশি একে অপরকে পেয়ে। অথচ ইনসিয়ার সাথে বৌভাত ছিলো যেদিন সেই দিনটি কেমন বিষাদময় তিক্ত ছিলো। সবশেষ রিহান ম্যানশন পরিবারের সকলেই সুখে আছে। এই তিন মাসে ইনশাদও কম যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি ইনসিয়ার সাথে। কিন্তু ইনসিয়ার সেই একই কথা সে ইনশাদকে তার জীবনের সাথে জড়াতে পারবে না। কিন্তু ইনশাদও হাল ছাড়েনি সে এখনো স্বপ্ন দেখে ইনসিয়ার সাথে বাকি জীবন টা কাটাবে। ইনসিয়ার সকল ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে মুঠোফোনটি বাজতে লাগলো,
–“হ্যালো কে বলছেন?”
–“এখনো যদি আমাকে চিনতে না পারো প্রেয়সী তবে এর থেকে আর কোনো দুঃখ নেই আমার।”,
ইনসিয়ার কাছে এবার স্পষ্ট হয়ে গেলো এটা ইনশাদ। কারন ইনশাদ ছাড়া ইনসিয়ার সাথে কেউ এভাবে কথা বলে না। ইনসিয়া রাগান্বিত স্বরে বলে ওঠলো,
–“কেনো ফোন করেছেন আপনি? আপনাকে তো আমে আমার থেকে দূরে থাকতে বারন করেছিলাম না?”
–“তুমি বারন করলেই হবে ইসু পাখি?একবার তোমাকে হারিয়ে যেই যন্ত্রনা পেয়েছি দ্বিতীয় বার সেই একই যন্ত্রনা আমি পেতে চাই না। এখন তো কোনো বাধা নেই বলো? তাহলে কিসের এতো বারন তোমার?”
–“এতোকিছু শুনতে চাই না আমি আপনার মুখ থেকে আমি যা বলেছি তাইই হবে।”
–“ঠিক আছে তাই না হয় হবে। তবে যদি তুমি আমার সাথে শেষবারের মতো দেখা করো তাহলে।”
–“ঠিক আছে আমি দেখা করবো তবে এটাই শেষ বার এরপর আপনি আমায় ফোন ও দিবেন না। দেখা করতেও চাইবেন না। মনে রাখবেন এটাই শেষ।”
ইনশাদ বাঁকা হেসে ফোনটা রেখে দিলো। মনে মনে আওরাতে থাকলো, “এই শেষ থেকেই যে সবটা নতুন করে শুরু হবে প্রেয়সী!”
ইনসিয়া রেডি হয়ে গেছে বেরোবার উদ্দেশ্য। ইনশাদ তার বন্ধুদেরকে সিগনাল দিয়ে দিলো যাতে পরিকল্পনা মোতাবেক সকল কাজ হয়। ইনসিয়া ভিতরে এসে বসতেই ইনশাদ ও ইনসিয়ার পাশের চেয়ারে বসলো। বললো,
–“শেষ বারের মতন বলছি তুমি যদি আমাকে ফিরিয়ে দাও তাহলে আর আমি কোনদিনও আসবো না তোমার কাছে।”
ইনসিয়া ইনশাদের দিকে তাককিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে ওঠলো,
–“আমি বুঝতে পেরে গেছি আপনি কি বলতে চান। আমি গেলাম।”
ইনসিয়া হাঁটা শুরু করে দিলো। ওদিকে ইনশাদ চিৎকার করে ইনসিয়াকে বললো,
–“ইসু পাখি আমার জন্য তোমার মনের গহীনে ভালোবাসা লুকিয়ে আছে সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। এখন দেখা যাবে সেটা এখনো বেঁচে আছে কিনা!”
এই বলে ইনশাদ হাতের কাছে থাকা ধারালো ছুড়ি নিয়ে পেটের ভিতর ঢুকিয়ে দিলো! গলগল করে রক্ত পড়ে যাচ্ছে পেট থেকে। ইনসিয়া পাশ ফিরে এ দৃশ্য দেখবে তা কল্পনাও করে নি। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে বলতে লাগলো,
–“আপনাকে বাঁচাতেই তো আপনার জীবন থেকে চলে যাচ্ছিলাম আমি। কিন্তু আপনিই যে একেবারের জন্য ছেড়ে চলে যাচ্ছেন আমাকে! কথা দিচ্ছি আপনি ফিরে আসুন একবার আর যেতে দিবো না আপনাকে।”
হাউমাউ করে কাঁদছে ইনসিয়া। তার মনের সুপ্ত কুঠুরিকে যে এখনো তার প্রথম প্রেম ইনশাদেরই বসবাস! মুখে যতোই অস্বীকার করুক কিন্তু মন তো আর তা অস্বীকার করতে পারবে না! চিৎকার করে কাঁদছে যদি ইনশাদ আবার ফিরে আসে তাহলে আর কখনোই যেতে দিবে না। ইনসিয়া কাদঁছে এর ভিতরেই তাকে বিস্মিত করে ইনশাদ উঠে বসলো!
–“সত্যি বলছো তো ইনসিয়া? এবার ফিরে আসলে আমাকে আর যেতে দিবে না তো বলো?”
ইনসিয়া সঙ্গে সঙ্গে ইনশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো! যেনো তার দেহে প্রান ফিরে এসেছে ইনশাদকে দেখে! কিন্তু পরক্ষনেই মস্তিষ্কে উদয় হলো ইনশাদের না পেট থেকে রক্ত পড়লো তাহলে?
–“আপনি কি আমার সাথে মজা করলেন? আপনি তো একদম সুস্থ আছেন তাহলে এসব কি?”
–“এটা সবটাই নাটক ছিলো ইনসিয়া। শুধু দেখতে চেয়েছিলাম তুমি কি এখনো আমায় ভালোবাসো নাকি বাসো না?”
ইনসিয়া ইনশাদের কথা শুনে বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো! সত্যি মানুষটি পারেও বটে। শেষে কিনা মৃত্যু নিয়ে অভিনয়!
–“তা আপনি পরিক্ষা যে করলেন কি পেলেন পরিক্ষা করে?”
–“এই যে আমার ইনসিয়া আমাকে ঠিক আগের মতনই ভালোবাসে এখনো। সত্যি বলছি এটা শুধু তোমাকে পরিক্ষা করার জন্য ছিলো সবটা। কিন্তু এই দেখো এটা বিষের বোতল তুমি যদি আজ আমায় ফিরিয়ে দিতে আমি সত্যি সত্যিই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতাম আজ।”
–“কিন্তু আমার সাথে থেকে কি আপনি সুখী হবেন? আমি একজন পঙ্গু ডির্ভোসি মেয়ে।”
ইনশাদ এবার নিজের রাগ সামলাতে না পেরে ঠাস করে চড় মেরে দিলো ইনসিয়ার গালে! ইনসিয়া হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো ইনশাদের দিকে! বুঝতে পারলো না ঠিক কি কারনে ইনশাদ তাকে চড় মারলো!
–“চড় টা দিলাম কারন তুমি সেই শুরু থেকেই এক কথা বলে যাচ্ছো তাই! আমি তো তোমাকে ভালোবাসি সেটা কব কম ছিলো তোমার কাছে? তুমি পঙ্গু কিংবা ডির্ভোসি সেসব নিয়ে তো আর আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই তাহলে তুমিই বা এতো মাথা ঘামাচ্ছো কেনো ইনসিয়া।”
ইনসিয়ার আর বুঝতে বাকি রইলো না ইনশাদ ঠিক তাকে কতোটা ভালোবাসে। ইনসিয়ার ভাবনার মাঝেই ইনশাদ ইনসিয়ার হাত দু’টো নিজের হাতের মুঠোয় ভরে বলতে লাগলো,
–“আমি তোমাকে ভালোবাসি ইনসিয়া। শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। হও না তুমি পঙ্গু আরো অন্য যাই কিছু। আমার যে শুধু তোমাকেই লাগবে। একবার হারিয়ে অনেক কষ্টে পেয়েছি তোমায় আর হারাতে চাই না তোমাকে। একটি বার সুযোগ দাও জীবনকে নতুন করে সাজানোর।”
ইনশাদের করুন স্বরে আবদারটি ইনসিয়া ফেলতে পারলো না। মনের ভিতরে যেই শক্ত জমাট ছিলো সেটা আজ গলে গেলো!
–“অবশ্যই থাকবো আমি আপনার সাথে। এরকম একটি মানুষকে কি আর ফেরানো যায়? আমারো আর সাহস নেই আপনাকে ফেরানোর!”
ইনসিয়া তার উত্তর দিয়ে এক মুহুর্তও অপেক্ষা না করে চলে গেলো! ওদিকে ইনশাদের মুখে আজ তৃপ্তির হাসি!
__________________________________
আজ পুরো ম্যানশন মহল সাজনো হয়েছে। বাড়ির প্রত্যেকে আজ প্রচুর খুশি সেটা তাদের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বিশেষ করে মিজানুর রহমান তো সবচেয়ে বেশি খুশি। কারন আজ ইনসিয়া আর ইনশাদের বিয়ে হয়েছে। আর একটু পরেই ইনশাদ বউ নিয়ে আসবে। গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনতেই বাচ্চারা গিয়ে ভীড় করলো নতুন বউ দেখবে বলে। অবশেষে ইনসিয়া আবারো সেই ম্যানশন মহলের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে আর সেটা ইনশাদের বউয়ের পরিচয়ে আর মুখে আনন্দের হাসি নিয়ে। মিজানুর রহমান বললেন,
–“তুই আবার ফিরে এসেছিস আমার তো আর খুশি ধরছে না! যে অন্যায় তোর সাথে হয়েছিলো সেটা ইনশাদ হয়তো কমাতে পেরেছে। মন খুলে দোয়া করি তোরা দু’জনে সারাজীবন সুখী থাক।”
ইনসিয়াকে বরন করে রুমে প্রবেশ করানোর পর মিতালি রহমান বলে ওঠলেন,
–“ইনসিয়া তুমি এ সংসারে থেকেছো তাই কিছুটা হলেও তুমি বুঝতে পেরেছো এ সংসারের মানুষগুলো কে কিরকম। আমি চাই যে আমার অবর্তমানে এই সংসারটা পুরো দেখে রাখবে তুমি। আগের অতীতের সৃত্বি ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করো এই কামনা করি।”
রিহান ও ইনসিয়াকে শুভকামনা জানালো। সে নিজেও এখন নিজের বিবাহিতো জীবনে সুখী। সেও সবার মকনই চায় ইনসিয়া যাতে ইনশাদের সাথে সুখী হয়। ইনসিয়াও হাসি মুখে ইনশাদকে ধন্যবাদ জানালো।
ঘড়ির কাঁটা ঠিক বারোটার ঘরে গিয়ে পৌছালো! কিন্তু এখনো ইনশাদের ফেরার কোনো নাম নেই। অথচ সেই কখন ইনসিয়াকে বসিয়ে রাখা হয়েছে বাসর ঘরে বর নামক মানুষটির জন্য! ইনসিয়া বিরক্তি নিয়ে বসে রইলো ঠিক সেই মুহুর্তেই ইনশাদ দরজা খুলে ভুতরে প্রবেশ করলো! ইনশাদকে দেখে ইনসিয়ার শ্বাস প্রশ্বাস কেমন জানি আটকে আসলো। ঘোর লাগা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ইনশাদ ইনসিয়ার দিকে যেটা ইনসিয়াকে অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে! ইনসিয়া কাল বিলম্ব না করে ইনশাদকে সালাম করার জন্য দাড়ালো। যেই সালাম করবে ইনশাদে তাতে বাঁধা দিয়ে বলে ওঠল,
–“এতো বছর অপেক্ষা করে তোমার স্থান আমার পায়ে নয় প্রেয়সী এই হৃদমাঝারে হবে।”
সঙ্গে সঙ্গে ইনশাদ ইনসিয়াকে পরম আবেশে নিজের বুকে টেনে নিলো। ইনসিয়া হঠাৎ করেই একটি গোলাপ ফুল ইনশাদের দিকে ধরিয়ে বলে ওঠলো,
–“ভালোবাসি আপনাকে! সেই দিন যে কথাটি বলা হয়ে ওঠেনি সেই কথাটি আজ শুনুন ভালোবাসি আপনাকে শুধুই আপনাকে।”
ইনশাদের ঠোঁটের কোনো তৃপ্তির হাসি। কিছু না বলে ইনসিয়াকে নিয়ে ছাদে চলে গেলো! ইনসিয়া গিয়ে দেখণো ছাঁদের মধ্যিখাটায় অনেকগুলো গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে তার মাঝখানে ইনসিয়া রেখাটি মোমবাতির আগুনে জলজল করছে! ইনসিয়া বিস্ময় নিয়ে ইনশাদকে জড়িয়ে ধরলো! ছাঁদের এক কোনে দাঁড়িয়ে দু’জনে মিলে চন্দ্রবিলাস করতে লাগলো। তাদের অপূর্ন প্রেম আজ বৈধ ভাবে পূর্নতা লাভ করলো তার সাক্ষী হয়ে রইলো আকাশের ওই বড়ো চাঁদটি।
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্প টা শেষ হয়ে গেলো। কার কেমন লেগেছে দু লাইন মন্তব্য করে যেয়েন।
#সমাপ্ত