#পর্ব১৬
#নতুন_ভোরের_আগমন
#অর্ষা_আওরাত
রাত্রি এখন প্রায়ই শেষ প্রহরে। চারদিকে ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার! সবাই গভীর ঘুমে নিমজ্জিত হয়ে আছে। জানলা খোলা থাকায় চাঁদের আলো এসে ঘরটাকে আবছা আলোয় আলোকিত করে তুলেছে। সেই আলোই ইনসিয়া দেখতে পাচ্ছে রিহান কি সুন্দর করে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাচ্ছে! অথচ একই ঘরে থেকেও ইনসিয়ার চোখ থেকে যেনো ঘুম নামক বস্তুটি বিদায় হয়েছে। কয়েক প্রহর ঘুমানোর পরেই কিছুক্ষণ আগে ইনসিয়ার ঘুম ভেঙে যায় হাজারো চেষ্টা করে আর ঘুমে নিমজ্জিত করতে পারলো না নিজেকে। এক মুহুর্তের জন্য অতীতের ঘটে যাওয়া দিনগুলো স্বরন হলো। ভাবতে লাগলো ইনশাদের সাথে কাটানো সময় গুলি। ইনসিয়ার ভাবনা চিন্তার মাঝখানেই আজানের আওয়াজ কানে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো। কাল বিলম্ব দেরি না করে নামাজের জন্য ওঠে গেলো ইনসিয়া। নামাজ সেরে ওঠেছে অনেক্ষন হয়ে গেছে সকালের নাস্তা করাও শেষ সবার। ইনসিয়া অনেক্ষন যাবত লক্ষ্য করছে রিহান মিজানুর রহমানকে তার কাঙ্ক্ষিত কথাটি বলবে বলবে করেও বলতে পারছে না! মিজানুর রহমান বারান্দায় বসে আছে। রিহান রুমে দাঁড়িয়েই পায়চারি করছে। ইনসিয়া এরুপ অবস্থা দেখেই নিজেই আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গেলো মিজানুর রহমান এর সাথে।
–“আংকেল যদি কিছু মনে না করেন আপনার কি একটু সময় হবে আমার সাথে কথা বলার জন্য?”
মিজানুর রহমান বারান্দায় বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো ইনসিয়ার ডাকে স্তম্ভিত ফিরে তাকায়।
–“হ্যাঁ বলো তুমি কি বলতে চাও? নির্ধিধায় বলো আমি শুনছি সব কথা।”
–“আপনি বলেছিলেন না আমরা একসাথে থাকবো কি থাকবো না সেই কথা আপনাকে জানাতে? আমি এখন সেই কথাই জানাতে এসেছি আপনাকে।”
–ইনসিয়ার কথা শুনে রিহানের পায়চারি করা বন্ধ হয়ে যায়! সে এক পলকের জন্যও ভাবেনি ইনসিয়া এভাবে তার সাথে কোনো আলোচনা না করেই ডির্ভোসের কথা বলবে তার বাবাকে। কৌতুহল দমাতে না পেরে ইনসিয়ার পাশে গিয়ে দাড়ালো রিহান। আড়াল থেকে সবটা লক্ষ্য করে যাচ্ছে ইনশাদ! তারও চিন্তা হচ্ছে খানিক ইনসিয়া যদি রিহানের সাথে থাকতে চায় তাহলে কি হবে? যদিও বা সুখে থাকতো তাহলে ইনশাদ নিজ থেকেই সরে আসতো। সে চায়নি ইনসিয়ার সংসার ভেঙে নিজে শুরু করবে। কিন্তু যে সম্পর্ক স্থায়ী নয় সেখানে নিজের জীবনকে আরো একটি সুযোগ দেওয়াই যায় ।তার সকল ভাবনা চিন্তার ব্যাঘাত ঘটিয়ে ইনসিয়া বলে ওঠলো,
–“আংকেল আমি আর রিহান আমরা দু’জনে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা একসঙ্গে থাকতে পারবো না। ডির্ভোসের জন্য কথাও বলেছি এখন তিন মাস পর ডির্ভোস কার্যকর হবে।”
মিজানুর রহমান বিস্ময় নিয়ে ইনিসয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো! সে ভেবেছিলো এ ক’দিনে হয়তো রিহানের সাথে ইনসিয়ার সম্পর্ক কিছুটা হলেও এগিয়েছে কিন্ত তারা ডির্ভোস চাইবে এটা তার ধারনার বাহিরে ছিলো! মিজানুর রহমান রিহানকে বললো,
–“তুমিও কি তাইই চাও রিহান?”
রিহান কাল বিলম্ব না করে মিজানুর রহমান এর প্রশ্নের উত্তর দিলো সাথে সাথে।
–“হ্যাঁ বাবা আমি আর ইনসিয়া আমরা দু’জনে মিলেই ডির্ভোস চাইছি।”
মিজানুর রহমান আর কোনো কিছু বললো না। সে চায় না আর তার জন্য কোনো ভুলের সৃষ্টি হউক। দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে যখন একসাথে না থেকে আলাদা থাকতে চাইছে তখন তাদের আলাদা থাকতে দেওয়াই উত্তম মনে করে মিজানুর রহমান ইনসিয়া আর রিহানকে বলে ওঠলেন,
–“একবার যে ভূল করেছি আমি দিত্বীয় বার আর সেটা করতে চাই না। তোমরা যখন নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছো ডির্ভোস নেওয়ার তাহলে তাই হউক।”
মিজানুর রহমান আর কোনো কথা না বলে সে জায়গায় থেকে চলে গেলো ওদিকে রিহান খুশিতে ইনসিয়াকে ধন্যবাদ বলে বেরিয়ে গেলো। রিহানের চোখে মুখে যেনো আনন্দের বন্যা বইয়ে পড়ছে বোঝাই যাচ্ছে সে কতোটা খুশি হয়েছে। ওদিকে ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে থাকা ইনশাদের মুখেও হাসির রেখা ফুটে ওঠলো তাদের কথা বার্তা শুনে। তার মন গহীন এখন একটাই কথা বলছে তার ইসু পাখি এখন তার একান্ত নিজের সম্পদ হবে। ইনসিয়া চুপচাপ ভাবে ভিতরে চলে গেলো। সে কষ্ট না পেলেও এই মিথ্যা সম্পর্কের থেকে মুক্তি মিলবে এতেই খুশি।
__________________________________________
দেখতে দেখতে তিন মাস হয়ে গেছে। সেদিন এর পর থেকে ইনসিয়া আলাদা রুমে থাকে। বাড়ির সকলেই তাদের ডির্ভোসের কথা শুনে কোনো রুপ মন্তব্য করেনি। তারা শুধু এটুকুই বলেছে জোর করে কোনো সম্পর্ক রাখা যায় না। রিহান আর ইনসিয়া নিজেরাই যখন আলাদা থাকতে চাইছে তখন জোর করা উচিত নয়। মিজাুনর রহমান বা মিতালি রহমান কারোরই কোনো আপওি ছিলো তাদের ডির্ভোস নিয়ে। ইনসিয়ার পরিবারেও কোনো আপত্তি ছিলো না কারন তারা ইনসিয়ার মুখে সবটা শুনেছিলো। মেয়ের খুশিই তাদের কাছে সব। অবশেষে আজকে তাদের ডির্ভোস আইনত ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন আর ইনসিয়া রিহানের বউ নয়। মুক্তি মিললো মিথ্যা সম্পর্ক থেকে। যাবার সময় হয়র গেছে এবার। ইনসিয়া যাবার জন্য রেডি হয়ে নিচে আসতেই সবার কাছ থেকে বিদায় নিতে লাগলো। একে একে সবাইকে সালাম করে বিদায় নেওয়া শেষ ইনসিয়ার। হঠাৎই মিজানুর রহমান ইনসিয়াকে পিছন ফিরে ডাক দিলো,
–“ইনসিয়া মা পারলে এই মানুষকে ক্ষমা করে দিস। আমার জন্যই তোর আজকে ডির্ভোসি তকমা টা লাগলো। পাররে মন থেকে ক্ষমা করে দিস। আর নিজের জীবনটা নিজের মতন করে শুরু করে নিস।”
–” আপনি আমার গুরুজন হন ক্ষমা চেয়ে আমাকে লজ্জিত করবেন না। যা হয় তা ভালোর জন্যই হয়। হয়তো আমার জন্য অন্য কেউ আছে। যা হবার হয়ে গেছে। তার জন্য আমি বিন্দু পরিমানও মন খারাপ করে নিই।”
মিজানুর রহমান সস্তির নিশ্বাঃস ফেললেন। ইনসিয়া হাসি মুখে সবাইকে বিদায় দিলো। চলে যেতেই রিহান ডাক দিয়ে বললো,
–“ভালো থেকো ইনসিয়া। জোর করে কোনো সম্পর্ক টিকানো যায় না। তাই আমাদের আলাদা হবার সিদ্ধান্ত। আশা করি তুমি জীবনে ভালো থাকবে।”
ইনসিয়া মুচকি হেসে চলে গেলো। একেবারে ম্যানশন মহল থেকে। অপরদিকে ইনশাদ ইনসিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়েছে। আর তো কিছুদিনের অপেক্ষা তার পরেই তার ইসু পাখি একেবারে তার বউ হয়ে এই পরিবারে আবার আসবে। ইনসিয়ার সুখে থাকার সময় যে বড়ো নিকটে।
ইনসিয়া কিছুক্ষণ এর ভিতরে বাড়িতে পৌঁছে গেলো। ইনসিয়াকে দেখেই ইনসিয়ার মা বলে ওঠলো,
–“ইনসিয়া আরো একটু অপেক্ষা করে আসতি মা। তোর বাবা তো একটু পরেই অফিস থেকে যেতো তোকে আনতে।”
–“মা বাদ দাও তো। যেখান থেকে চলে আসতে হতো সেখান থেকে যতো তাড়াতাড়ি আসাই ভালো।”
ইনসিয়ার মা আর কোনো কথা বাড়ালো না যেখানে তার মেয়ে সুখী হবেনা সেখানে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। দেখতে দেখতে কেটে গেলো দুসপ্তাহ!
ইনসিয়াদের পুরো বাড়ি আজ বিয়ের সাজে সেজেছে। নয়নের বিয়ে হবে। নয়নের সাথে মুনের বিয়ে আজ। সেদিন এর পরেই নয়ন মুনের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। মুনের বাবা মা সবাই ইনসিয়াদের চিনে সে কারনে বিয়েতে কোনো আপত্তি করেনি। অবশেষে সকল বাধা পেরিয়ে পূর্নতা পেলো আরো এক জুটি ভালোবাসা! দূর থেকে ওদের দেখে কেনো যেনো না চাইতেই চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো ইনসিয়ার! এখন যদি সবটা ঠিক থাকতো তাহলে তারও এরকম একটি সংসার থাকতো। তার ভাবনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে ইনশাদ ফোন করলো,
–“কষ্ট পেয়ো না প্রেয়সী। খুব শ্রিঘই আমরাও এক হবো। যে কথাটি আগে দেওয়া ছিলো সেই কথাটি পরিপূর্ণ হবে একদিন।”
ইনসিয়া আর কোনোকিছু বললো না। ফোন কেটে দিলো। ওদিকে ফোন কেটে দিলেও ইনশাদ যে তার প্রেয়সীকে দূর থেকে আড়াল হয়ে সামনাসামনি ঠিকই দেখে যাচ্ছে! আর তো কয়েকটা দিন মাত্র তারপরেই তাদের অপূর্ন প্রেম পূর্নতা লাভ করবে। এতো প্রহরের অপেক্ষা শেষ হবার পালা এসেছে এবার।
#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।