#পর্ব৮
#নতুন_ভোরের_আগমন
#অর্ষা_আওরাত
রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে তার গন্তব্য স্থলে। অপর পাশ দিয়ে সাঁই সাঁই করে কয়েকটি বড়ো বড়ো ট্রাক চলে গেলো। যাওয়ার সাথে সাথেই রাস্তাঘাট ধুলোময় করে দিলো! গাড়ির ইন্জিনের বিকট শব্দে গাছে থাকা পাখিগুলোও ডানা ঝাপটে ওড়াল দিলো খোলা আকাশে। রাস্তা দিয়ে বড়ো বড়ো গাড়ি যাওয়ার পরেই কয়েকটি মোটরসাইকেল এক এক করে চলে গেলো সাঁই সাঁই করে মনে হচ্ছে কোনো প্রতিযোগিতা করছে তারা। আবারো ধুলো দিয়ে রাস্তা পুরো ধুলোময় করে দিয়ে চলে গেলো! ইনসিয়া জানলার পাশ ঘেঁসে বসে ছিলো বিধায় তার চোখে ধুলোর কনা গেলো! ইনসিয়া বা হাত দিয়ে চোখ কচলাচ্ছে কিন্তু তাও চোখের খচখচানি কমলো না! রিহান ইনসিয়ার চুলকানো দেখে ইনসিয়াকে সাহায্য করতে চাইলে ইনসিয়া বলে ওঠে,
–“থাক না আপনার সাহায্য। এখন সাহায্য করে তো কোনো লাভ নেই বাকি জীবন আমাকেই দেখতে হবে তখন তো কেউ আর সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিবে না। তার চেয়ে বরং নিজের কাজ নিজেই করা ভালো।”
রিহান এতে অপমানিতবোধ করলো। সে নিজে যেচে গিয়ে হেল্প করতে চাইলো অথচ ইনসিয়া তার সাহায্য নিলো না। রিহানের কাছে মেয়েটাকে বেশ অন্যরকম মনে হলো। ওদিকে ইনসিয়া চোখ কচলাতে কচলাতে চোখ থেকে ময়লা বের করে চোখে পানির ছিটা দিয়ে আবার জানলার পাশ ঘেঁসে বসে রইলো। আবারও দেখতে পেলে অনেক গুলো গাড়ি চলে যাচ্ছে এক এক করে। ইনসিয়া গাড়ি গুনতে লাগলো। গুনতে গুনতে একসময় দেখলো গাড়িটি চলা বন্ধ হয়ে গেছে। ইনসিয়া অন্যমনস্ক ছিলো বিধায় বুঝতেও পারে নি গাড়িটি তার বাড়ির সামনে এসেই থেমেছে। গাড়ি থেকে নামতেই তার কাজিনরা সব মিলে তাকে ঘিরে ধরেছে! একে একে সব ভীড় ভাট্টা সেড়ে ইনসিয়া নিজের রুমে গেলো। নিজের রুমে এসে শান্তিতে তার শরীর খানা মেলে দিলো খাটের উপর। বোঝাই যাচ্ছে বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছে ইনসিয়া। খানিক্ষন চোখ বুঁজে নিজেকে অনুভব করলো। তার কল্পনাতেও রিহান এসে ধরা দিলো! রিহান এর কথা মনে পড়তেই তার মনে হলো সে গাড়ি থেকে নেমেই তড়িঘড়ি করে আগে রুমে এসেছে। রিহানকে ডাকতে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তেই দরজা চোখ গেলো ইনসিয়ার। দরজায় হেলান দিয়ে হাত দু’খানা পকেটে রেখে ইনসিয়ার দিকে কেমন গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে রিহান! ইনসিয়া এরূপ তাকানোর অর্থ বুঝতে না পেরে রিহানকেই প্রশ্ন করলো,
–“আপনি এভাবে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কেনো? ভিতরেও তো আসতে পারেন নাকি?”
–“তুমি এতোটা ইডিয়টের মতন কাজ করো কেনো বলোতো?”
—রিহানের কথায় ইনসিয়ার মস্তিষ্কে একটি কথারই উদয় হলো সে কি এমন করলো যে রিহান বাড়িতে আসতে না আসতেই তাকে ইডিয়ট উপাধি দিলো! ভাবনার ছেদ ঘটলো রিহানের ডাকে!
–“সারাক্ষণ এতো কি চিন্তা ভাবনা করো তুমি? যখনই দেখি তখনই যেনো কিছু একটা ভাবতে থাকে।”
–“আপনার অতো ভাবতে হবে না আমি কি ভাবছি। দরজায় এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে ভিতরে এসে বসুন। কিন্তু আপনি আমায় ইডিয়ট বললেন কেনো?”
রিহান খাটে এসে বসলো। ইনসিয়াও শোয়া থেকে ওঠে বসলো। রিহান বলতে লাগলো,
–“তোমাদের বাড়িতে তো এই প্রথমই এসেছি এরকম ইডিয়ট এর মতন আমাকে গাড়ীতে একলা রেখে চলে আসলে যে? একবারো ভাবলে না আমি কি করে আসবো?”
–“হ্যাঁ আপনাকে একলা রেখে চলে এসেছি তাড়াহুড়ো করে। আমার উচিত ছিলো আপনাকে সাথে করে নিয়া আসা কিন্তু মনে ছিলো না। তবে আপনি এতোটাও ছোটো বাচ্চা নয় যে রুমে আসতে পারবেন না। আর তাছাড়াও এমনতো নয় যে আপনি আমার হাসবেন্ড যে আপনাকে খাতির দারি করে আনতে হবে। আর কেউ না জানুক আমিতো জানি আপনি আমাকে বউ হিসাবে মেনে নিননি। আর যাই হোক যে আমাকে বউ হিসাবে মানে না আমি তাকে আমার স্বামীর জায়গায় বসিয়ে খাতির দারি করতে পারবো না অন্ততো। আপনি যেমন আমাকে নিজের বউ হিসাবে মানতে পারেন নি ঠিক তেমনি আমিও আপনাকে মেনে নিতে পারি নি।”
ইনসিয়ার বলা কথা গুলো বুঝতে কিঞ্চিৎ সময় লাগলো রিহানের! রিহান স্তম্ভিত হয়ে গেলো ইনসিয়ার কথা শুনে! তার এই সামান্য কথায় ইনসিয়া এতোটা রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারে নি। তবে হ্যাঁ ইনসিয়ার বলা কথাগুলো প্রত্যেকটা সত্যি কথা। রিহান ইনসিয়াকে প্রতি উওর করলো,
–“বউ ঠিকই হতে যদি তোমার খামতি বা আমি প্রতারনার স্বীকার না হতাম তাহলে আর পাঁচটা সম্পর্কের মতন আমাদের সম্পর্কও টা একই হতো। কোনো খামতি বা কোনো দুরত্ব থাকতো না আমাদের দুজনের মধ্যে। তবে যা হবার নয় সেগুলো বলেও লাভ নেই। যতোই যা হোক না কেনো আমার পক্ষে সম্ভব নয় তোমার সাথে সংসার করা।”
রিহান নিজের কথা বলা শেষ করে ব্যাগ থেকে জামাকাপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ইনসিয়া চুপটি করে জানলার পাশে বসে খোলা আকাশ দেখতে লাগলো। আকাশে অনেকগুলো পাখি দল বেঁধে উড়ে চলে যাচ্ছে তাদের গন্তব্য স্থলে। পাখিগুলো নিজের মর্জি মতন নেই কোনো বাঁধা, বাধ্যবাধকতা। খোলা আকাশে পাখিগুলো ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে! ইনসিয়ারও হঠাৎ ইচ্ছে হলো সে যদি পাখি হতে পারতো তাহলে খোলা আকাশে উড়ে বেড়াতো। ইনসিয়ার ওষ্ঠদ্বয় ফাঁক হয়ে হাসির রেখা উঁকি দিলো। নিজের আনমনে কিসব ভাবছে সে। দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলেন ইনসিয়ার বাবা। মেয়েকে বড্ড বেশি ভালোবাসেন তিনি। কিছু সময় মেয়ের পাশে বসে থেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। বাবা চলে যেতেই ইনসিয়ার আবারো খোলা আকাশে ধ্যান দিলো। ওদিকে ম্যানশন পরিবারে মিজানুর রহমান আর মিতালী রহমান দু’জন মিলে আলওচনা করছেন কীভাবে রিহান আর ইনসিয়ার সম্পর্কটা আর পাঁচটা স্বাভাবিক সম্পর্কের মতন হয়।
–“দেখো মিতালী আমি জানি আমি ভূল করেছি রিহানের থেকে সবটা লুকিয়ে, কিন্তু আমার শুধু একটাই কথা মনে হচ্ছিলো সে সময় দাঁড়িয়ে ইনসিয়ার সাথে রিহানের বিয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু এখন যেরকম পরিস্থিতি দেখছি তাতে মনে হচ্ছে না আদৌ ওরা একসাথে থাকবে। আমার একটি ভূলের জন্য কি ওদের দু’টো জীবন নষ্ট হয়ে যাবে বলোতো? আমি তো সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না বলো।”
–“সেটা আগে ভাবতে তাহলে হতো বা রিহানের সাথে কথা বলে নিতে তাহলেও কিছু একটা করা যেতো। কিন্তু তুমি তো কিছুই করলে না। সবটা লুকিয়ে বিয়েটা দিলে। কিন্তু বাধ্য হয়ে একটা কথা বলছি তুমিই দায়ী একমাএ ওদের দু’জনের জীবনটা এভাবে ছন্নছাড়া করে দেওয়ার জন্য। আমার তো একটাই কথা মনে হচ্ছে তোমার এই হটকারিতার জন্য না ওদের জীবন দু’টো নষ্ট হয়ে যায়।”
-“আর বলো না মিতালী আমি বুঝতে পারছি রিহানকে না জানিয়ে বিয়েটা দিয়ে আমি চরম ভূল করেছি। এখন আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা যাতে ওরা ভালো থাকে।”
ওদিকে রিহান ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই ইনসিয়া রিহানকে বলে ওঠলো,
–“আপনি তো এই বিয়েটা মেনে নিতে পারছেন না। তাহলে ওই বাড়িতে গেলেই ডির্ভোসের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েন তাড়াতাড়ি। আমি চাই না আপনার সাথে জোর করে থাকতে। আমার নিজেরও আত্মসম্মান বোধ আছে।”
–“সেটা নিয়ে তোমাকে আর ভাবতে হবে না। আমি ডির্ভোস ঠিকই দিবো তোমায়।”
ইনসিয়ার মা রুমে খাবার দিতে এসেছে। খাবার দেওয়া শেষ করে তিনি চলে গেলেন নিজ গন্তব্য। ওদিকে রিহানের খাবার দেখেই নাক কুচকে ওঠলো! ইনসিয়ার মা হরেক রকম এর আইটেম রান্না করেছে কিন্তু রিহানের সবগুলোর একটাও খায় না। ইনসিয়া খাবার বেড়ে দিলো রিহানকে। রিহান খাবার নিয়ে প্লেটে নাড়াচাড়া করছে কিন্তু খাচ্ছে না। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ইনসিয়া তখনি…………..
#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।