#পর্ব৬
#নতুন_ভোরের_আগমন
#অর্ষা_আওরাত
বিয়ে বাড়ির ব্যস্ত কোলাহোল পূর্ন জায়গাটি এক নিমিষেই নিস্তব্ধতায় গ্রাস করলো! একজন আহত মানুষ তার ব্যাথা যত সহজে ভুলে যায়, একজন অপমানিত মানুষ তত সহজে অপমান ভোলে না! ঠিক তেমনি ভাবে ইনসিয়াও তার অপমান ভুলতে পারছে না! তার একটি পা নেই বলে যে সে কারো অযোগ্য হবে এটা তো কোনো অংশেই ঠিক না! হোক না কেনো বিপরীত মানুষটি যতোই পার্ফেক্ট। তবুও ইনসিয়া নিজের দিক দিয়ে নিজে পার্ফেক্ট। হঠাৎই কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেলো রিহান দাঁড়িয়ে আছে! কিন্তু রিহানের এভাবে ইনসিয়ার দিকে দাঁড়িয়ে থাকাটা ঠিক বোধগম্য হলো না ইনসিয়ার! রিহান বলে ওঠলো,
–“হোক না সে আমি আপনাকে নিজের স্ত্রী হিসাবে মানি না। কিন্তু একজন মেয়ে এভাবে কাঁদবে এটাতো মোটেও দেখতে শোভা পায় না বলুন? চোখের অশ্রু মুছে ফেলুন দেখি।”
ইনসিয়া বুঝতে পারলো না যে মানুষটা তাকে স্ত্রীর মর্যাদাই দিলো না সেখানে ইনসিয়া কাঁদলেই বা তার কি আসে যায়। ইনসিয়া কৌতুহুল দমিয়ে রাখতে না পেরে রিহানকে জিগেস করলো,
–“আমি কাঁদলে আপনারই বা কি তাতে? তার চেয়ে বরং আপনি আপনার নিজের কাজ করুন।”
–“আপনাকে আমি ভালোর জন্যই বলেছিলাম কান্না না করতে কিন্তু আপনি তো কেঁদেই যাচ্ছেন। হ্যাঁ আপনি কাঁদলে আমার কোনো কিছুই না তবে বাড়ি ভর্তি লোকজনের সামনে এভাবে কান্না কাটি না করলেই ভালো। আপনাকে তো কেউ মিথ্যা কোনো কিছু বলেনি আপনার তো সত্যিই পা নেই! হ্যাঁ রিতার বলার ধরন একটু ভিন্ন ছিলো কিন্তু রিতাও ভুল কিছু বলে নি।”
–“কাউকে পছন্দ না করা ঠিক আছে তবে কাউকে অপমান করা কখনোই ঠিক নয়। মানুষকে সবচেয়ে বেশি যেটা কষ্ট দেয় তা হলো অপমান। হ্যাঁ মানছি আমার একটি পা নেই তাতে আমার কোনো আফসোস নেই। আর এই বিয়েটা সেটা তো আপনার বাবাই করেছেন সবকিছু।”
রিহান আর ইনসিয়াকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। ইনসিয়া চুপচাপ ভাবে বসে রইলো সোফায়। হঠাৎই দেখতে পেলো তার বাব, মা, বড়ো ভাই এসেছে! তারা এসেই প্রথমে আগে ইনসিয়ার কাছে গেলো। কিন্তু ইনসিয়ার যেনো তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ হলো না। সে বসে রইলো ঠিক আগের মতন যেমনি ভাবে এখানে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো। ইনসিয়ার মা ইনসিয়াকে জিগেস করার জন্য বলতে যাচ্ছিলো ঠিক তার আগেই ইনসিয়া বলে ওঠলো,
–“কেমন আছি সেটা জিগেস করবে না কারন ঠিক যেভাবেই রেখেছো আমায় আমিও ঠিক সেভাবেই আছি। তোমাদের কাছে তো বোঝা হয়ে গেছিলাম তাই কোনো মতে আমাকে বিদেয় করতে চাচ্ছিলে।”
ইনসিয়ার মা তার মেয়ের মুখ থেকে এ-ধরনের কথা শুনবে বলে আশা করেনি। সে-তো ইনসিয়ার ভালোর জন্যই বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন মেয়ের কথা শুনে তো অন্যরকম মনে হচ্ছে । তিনি ইনসিয়াকে জিগেস করলেন,
–“এসব কি ধরনের কথা বার্তা বলছিস কি হয়েছে তোর? তোকে তো তোর বাবা আমি আমরা কেউ কম ভালোবাসিনি তাহলে এসব বোঝার কথা কি বলছিস কি তুই?”
–“কেনো বলেছি সেটা না পরে বুঝতে পারবে মা। এখন না হয় আর কথা বাড়িও না।”
–মেয়ের এরূপ কথা শুনে ইনসিয়ার বাবা গেলেন মিজানুর রহমান এর খোঁজে। কারন রিহানদের পরিবারে সবথেকে বেশি চিনেন মিজানুর রহমানকে। কিন্তু মিজানুর রহমানকে খুঁজে না পেয়ে রিহানের কাকির কথায় সোফায় বসেছিলো ঠিক তখনি একজন মহিলা বলে ওঠলেন,
–“আপনি তো রিহানের শশুড়মশাই তাই না?”
–“হ্যাঁ কালই সবে মাএ মেয়ের বিয়ে দিলাম এ বাড়িতে আপনি কি কিছু বলতে চান আমাকে?”
–“বলি বড়োলোক বাড়ি আর সুর্দশন ছেলে দেখে নিজের পঙ্গু মেয়েকে তো এ বাড়িতে গছিয়ে দিয়েছেন! একবারো কাউকে খোলসা করে সবটা কিছু জানালেন না”
ইনসিয়ার বাবা স্তম্ভিত হয় গেলো মহিলার কথা শুনে। এখানে এসে এরকম কথা শুনবে মোটেও আসা করেনি।”
–“আপনি কি বলতে চাচ্ছেন ইনসিয়াকে মিজানুর রহমান নিজে পছন্দ করে সবটা জেনেশুনেই রিহানের বউ করেছে আমরা কিছু লুকোয়নি।”
ভদ্র মহিলা আর কোনো কিছু বলবেন ঠিক তার আগ মুহুর্তেই মিজানুর সাহেবের গলা শোনা গেলো! ভদ্র মহিলার উদ্দেশ্য বললেন,
–“রাবেয়া ভালো না লাগলে এখান থেকে চলে যাও কিন্তু কাউকে এখানে দাঁড়িয়ে কোনো কটু কথা বলতে পারবে না তুমি।”
মিজানুর রহমান এর কথা শুনে মহিলাটি চলে গেলেন। মহিলাটি যেতেই ইনসিয়ার বাবা মিজানুর রহমান এর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,
–“এসব কি হচ্ছে? এই মহিলা এভাবে কথা বললেন কেনো? আপনি তো সবই জানতেন ইনসিয়ার ব্যাপারে আর এও বলেছিলেন আপনিই আপনার পরিবারের সকলকে সব বলবেন তাহলে এগুলো কি হচ্ছে এখন?”
–“দেখুন এখন আর কোনো ভনিতা না করে সোজা সাপ্টাই বলছি, আমি আমার পরিবারের কাউকে কোনে কিছু জানায়নি ইনসিয়ার কথা। কারন সবটা জানলে হয়তো। এ বিয়েতে কেউই রাজি হতো না। রিহান কাল রাএে জেনেছে সবটা আর সবাই একটু আগে জানলো আমার বন্ধুর মেয়ের মুখ থেকে।”
ইনসিয়ার মায়ের আর বুঝতে বাকি রইলো না কেনো তখন ইনসিয়া ওভাবে কথা বলেছে! ইতিমধ্যেই মিজানুর রহমান এর সাথে এখন মিতালী রহমানও এসেছে তাদের সাথে কথা বলতে। মিজানুর সাহেবকে ইনসিয়ার ভাই বলে ওঠলো,
–“আপনার ভূলের জন্য এখন আমার বোনকে মাশুল দিতে হবো তাহলে বলুন? আমি নিশ্চিত এখন যদিও বা আমার বোন এই বাড়িতে সংসার করে তাকে শুনতে হবে প্রতিনিয়ত যে সে সবাইতে ঠকিয়েছে। কিন্তু আদৌতে কি আমার বোন দোষী ছিলো বলুন? আমরা বলেছিলাম আপনাকে ইসুর সমস্যার কথা আপনি বলেছিলেন আপনার পরিবারকে সব জানাবেন। তাহলে এখন এসব কথা কেনো শুনতে হচ্ছে?”
মিজানুর রহমান বললেন,
–“তোমাদের কোনো দোষ নেই বাবা। যা দোষ সবটা আমারই। আমিই ইচ্ছে করে কাউকে কোনো কিছু জননতে দিইনি আমি ভুল করেছি। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। তবে আমি কথা দিচ্ছি ইনসিয়ার কোনো ক্ষতি বা অপমান আমি বেঁচে থাকতে হতে দিবো না এটুকু বিশ্বাস রাখতে পারো আমার উপর।”
–“আপনি বয়সে অনেক বড়ো তাই ক্ষমা চেয়ে আমাকে লজ্জা দিবেন না দয় করে। তবে যা হয়েছে সেটা একদমই ভালো হয়নি। মনে হয় না ইসু সুখী থাকতে পারবে আপনাদের সাথে।”
ছেলের কথায় সায় দিলো ইনসিয়ার বাবা মা দুজনেই। এবার মিতালী রহমান বললেন,
–“দেখুন আমি বলবো যে সুখ আপনা আপনি এসে ধরা দিবে না। ইনসিয়াকে বলেছি আমি একটু ধৈর্য্য ধরতে। একটু ধৈর্য্য আর সময়ের প্রয়োজন তাহলেই রিহানের সাথে তার সম্পর্কটা আস্তে আস্তে মজবুত হবে। সম্পর্কের শুরুটা কিন্তু ইনসিয়াকে করতে হবে প্রথমে তারপর আস্তে আস্তে রিহানও বুঝতে পারবে সম্পর্কের মূল্য। তারপর আশা করি ওরা ওদের দাম্পত্য জীবনে অসুখী থাকবে না।”
ইনসিয়ার মা’য়ের মনে উঁকি দিলো তার মেয়ে এমনিতেই পঙ্গু তার উপর যদি আবার ডির্ভোসি তকমা লেগে যায় তাহলে জীবনেও আর ইনসিয়ার বিয়ে হবে না। এসব ভেবেই সে রিহানের মা’কে বললো,
–“হ্যাঁ সেটাও ঠিক বলেছেন আপা। ইনসিয়া না হয় ক’টা দিন ধৈর্য্য ধরবে তারপরেও যদি ঠিক না হয় তাহলে পরের টা পরে দেখা যাবে। এখন বলুন রিহান কোথায়? ওর সাথে তো আসা ধরে দেখাই হলো না একবারো।”
মিজানুর রহমান রিহানকে ডেকে দিলেন। রিহানও ভালোমতনই সবার সাথে সালাম দিয়ে ভালোমতন কথা বললো। তার কথা শুনে বিন্দুমাত্র ও বোঝা যাচ্ছে না যে কাল রাএে ঠিক সে কি বলেছিলো ইনসিয়াকে! ওদিকে ইনসিয়া সবটা নিরব দর্শকের মতন দেখে যাচ্ছে। তারই জীবন অন্য কেউ ঠিক করছে কি হবে আর কি হবে না। কিন্তু ইনসিয়াতো জানে রিহান ঠিক কি চায়। ইনসিয়ার বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে রিহান হঠাৎ করে……
#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।