#পর্ব৪
#নতুন_ভোরের_আগমন
#অর্ষা_আওরাত
খোলা চুলে বারান্দায় এক কোনে এসে দাড়িয়ে রয়েছে ইনসিয়া! সকাল সকাল উওাল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে! বাতাসের কারনে তার চুল এলোমেলো হয়ে গেছে! বারান্দায় দাঁড়ালেই রিহানদের সামনে একটা পুকুর রয়েছে আর পুকুর ঘিরে এক পাশে অসংখ্য নারিকেল গাছ ও আরো ভিবিন্ন রকমের লাগানো হয়েছে আর এক পাশে মানে সামনের দিকে নানা রকমের ফুল গাছ লাগানো হয়েছে! নানা রঙের সংমিশ্রণে মিলিত পুষ্পগুলো দেখতে বড়োই নজর কাড়া লাগছে! সব মিলিয়ে বারান্দা থেকে দাঁড়ালে এই পুকুরের দৃশ্যটা দেখা যায়। এই অপরূপ সৌন্দর্য্যের দিকে তাকালে বিষন্ন মনকে এক নিমিষেই দূর করা যায়। ইনসিয়াও ঠিক সে-রকম ভাবেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুকুর ঘাটের মনোরম দৃশ্য দেখছিলো ঠিক সেই সময় ইনসিয়ার কাধে কেউ হাত রাখতে ইনসিয়া স্তম্ভিত হয়ে গেলো! সঙ্গে সঙ্গে পিছন ফিরে তাকাতেই একজন শাড়ি পড়া মুখে পান চিবানো অবস্থায় এক মহিলাকে দেখতে পেলো! পান চিবানোর কারনে মহিলাটির ঠোঁট গুলো পুরো রক্তিম বর্নের ধারন করেছে। ইনসিয়ার মহিলাটাকে বেশ পরিচিত লাগলো! মনে করার চেষ্টা করলো যে এই মহিলাকে তিনি আগে কোথাও দেখেছে কিনা? কিন্তু ইনসিয়ার মস্তিষ্কে সেটা ধরা পরবার আগেই মহিলা পান চিবাতে চিবাতে বলতে লাগলো,
–“এভাবে সাত সকাল বেলা চুল খোলা রেখে শাড়ির আঁচল মাটিতে গড়াগড়ি খাইয়ে কি করছো টাকি তুমি এখানে? বলি এভাবে থাকলে তো ভূত পেত্নী তোমার কাছে আসতে একটু সময় নিবে না গো নতুন বউ! এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে বসতে পারতে নাকি?”
ইনসিয়ার ভালো লাগলো না মহিলার কথাগুলো! এখন কার সময়ে এসেও কেউ যে ভূতে বিশ্বাস করে তা হয়তো এই মহিলাকে না দেখলে বিশ্বাস করা যেতো না! ইনসিয়া কথার প্রতিউওর দিতে বলে ওঠলো,
–“আসলে আমি তো বারান্দায় আসিনি আগো কখনো তাই একটু এসেছিলাম। আর চুল গুলো ভেজা ছিলো তো তাই খোলা রেখেছিলাম। আর আমি শাড়িও অতো ভালো করে পরতে পারি না।”
শাড়ি পড়তে না পারার কথাটা নতো মস্তিষ্কে বললো ইনসিয়া! তার নিজেরই লজ্জা লাগছিলো এতো বড়ো মেয়ে হয়ে এখনো শাড়ি পড়তে পারে না তাও সেটা কিনা এক অপরিচিত মহিলাকে বলতে হচ্ছে! তাই সংকোচ হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভদ্র মহিলা বলে ওঠলো,
–“শোনো মেয়ে এভাবে কোনো সময় বারান্দায় যেও না। বলা তো যায় না তুমি নতুন বউ যদি তোমার কিছু হয়ে যায়? তাই আর এভাবে খোলা চুলে বারান্দায় দাড়াবে না। তোমার বিয়েই তো হলো কালকে সারাজীবন পড়ে আছে ওসব দেখার জন্য।”
মহিলাটির কথা শুনে ইনসিয়া তাচ্ছিল্যের হাসি হেঁসে নিলো! যেখান তার মেয়াদ আর দু একদিন পর্যন্ত সোখানে কিনা সারাজীবন থাকার কথা বলছেন ওনি। ইনসিয়ার সারাজীবন কেনো হয়তো দু’দিন এর মাথায়ই এ বাড়ি থেকে পরিত্যাগ হবে!
–“কি গো নতুন বউ আমি ঠিকই বলেছিলাম তোমাকে তোমাকে নিশ্চয়ই ভূতে ধরেছে! যদি ভূতে নাই ধরতো তুমি এভাবে একলা একলা হাসছো কেনো?”
মহিলাটির কথা শুনে ইনসিয়ার হাসি থেমে গেলো! এখন যদি কিছু না বলে মহিলাটিকে নির্ঘাত ইনি গিয়ে সবাইকে বলে দিবেন ইনসিয়াকে ভূতে পেয়েছে! আর সেটা ইনসিয়ার জন্য মোটেও ভালো হবে না তাই চুপ করে না থেকে ইনসিয়া বলতে লাগলো,
–“আপনি কিছু মনে করবেন না। একটা হাসির ঘটনা মনে পড়ে গেলো তাই হেঁসে ফেলেছি! আপনি প্লিজ অন্য কিছু মনে করবেন না।”
মহিলাটি ইনসিয়ার কথা শুনে নিজেই হেঁসে দিলো! ইনসিয়ার কাছে তার এরুপ হাসির অর্থ বোধগম্য হলো না! তার মস্তিষ্কে একটা কথা উঁকি দিচ্ছে বারবার সে তো কোনো হাসির কথা বলে নি তাহলে এই মহিলা হাসছে কেনো? কৌতুহল দমাতে না পেরে ভদ্র মহিলাকে ইনসিয়া প্রশ্ন করলেন,
–“আমি তো হাসির কথা বলেনি তাহলে আপনি এভাবে হাসছেন কেনো?”
মহিলাটি মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে আবার বলতে লাগলো,
–“তোমার হাসির কথা মনে পেয়েছে তাই তুমি হেসেছো কিন্তু সেটা আমাকে এভাবে ভয় পেয়ে কি বলার আছে বলো? আমি তো আর বাঘ ভাল্লুক না যে তোমাকে খেয়ে ফেলবো। ওসব কথা বাদ দিয়ে এখন শোনো আমি হলাম তোমার কাকি শাশুড়ী মানে তোমার শাশুড়ির একমাএ জা আর রিহানের কাকীমা।”
এই জন্যই ইনসিয়ার ভদ্র মহিলাকে এতো চেনা চেনা লাগছিলো কারন মিজানুর রহমান যেদিন ইনসিয়াকে দেখতে এসেছিলো সেদিন মিজানুর রহমান এক এক করে তাদের পরিবারের সকলের ছবি দেখিয়েছিলো ইনসিয়াকে। সেজন্যই এখন ভদ্র মহিলাকে দেখে ইনসিয়ার এতো চেনা চেনা লাগছিলো। ইনসিয়ার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে কাকীমা বলে ওঠলেন,
–“রিহান আমাকে কাকীমা বলে তুমি যেহেতু রিহানের বউ সে ক্ষেএে তুমিও আমাকে কাকীমা বলেই ডেকো। তোমাকে ডাকতে এসেছিলাম কারন পার্লার থেকে মেয়েরা তোমাতে সাজাতে আসবে আর কিছুক্ষণের ভিতরে তাই দেখতে এসেছিলাম তুমি রেডি হয়েছো কিনা। এখন আর বারান্দায় যেও না। এখানেই ঘরে বসো কিছুক্ষণের ভিতরে পার্লার থেকে লোক আসবে তোমাকে রেডি করতে, তারপরে তো তোমার বাড়ির লোকও আসবে তোমাকে আর রিহানকে ও বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য।”
ভদ্র মহিলা নিজের কথা শেষ করে চলে গেলেন রুম থেকে! ইনসিয়া ভাবতে লাগলো তার এই পরিনতির জন্য কি কোথাও তার বাবা মা দায়ী নয়তো? আবার ইনসিয়ার ভাবনা ছেদ করে দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলেন এক মহিলা। ইনসিয়ার এই মহিলাকে চিনতে এক মুহুর্তও সময় লাগলো না। কারন ইনি হলো রিহানের মা। তিনিও মিজানুর রহমান এর সাথে ইনসিয়াকে দেখতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ইনসিয়া ওনাকে দেখা মাএ মাথার চুলগুলো ঠিক করে শাড়ির আঁচল দিয়ে মাথায় লম্বা করে ঘোমটা টেনে সালাম দিলো। মিতালী রহমান সালাম এর জবাব দিয়ে খাটে বসলো,
–“দেখো আমি ভণিতা করে কোনো কিছু বলতে পারি না তাই যা বলার সোজাসুজি ভাবেই বলছি, রিহানের বাবা ছাড়া আমরাও কেউই জানতাম না তেমার পঙ্গুত্বের কথা। তাই এটা একপ্রকার লুকানো হয়েছে আমাদের সবার থেকে। এখানে দোষ তোমার বা তোমার পরিবারের নেই দোষ যদি কেউ করে থাকে তাহলে সেটা করেছেন রিহানের বাবা! ওনার উচিত ছিলো সবাইকে সবটা জানানোর কিন্তু ওনি না জানিয়ে বিষয়টাকে জটিল করে তুলেছে অনেক। যেটার ভার এখন তোমাকেও বইতে হবে। কিন্তু বিয়েটাতো হয়েছে বলো তাই এখন আর কোনো কিছুই করার নেই। আর পাঁচটা সম্পর্কের মতন তোমাদের সম্পর্ক সেরকম যে হবে না সেটা নতুন করে কিছু বলার নেই সবটাই জানো তুমি। রিহান যেহেতু তোমার ছবি দেখে পছন্দ করেছে সেহেতু তুমি যতি একটু রিহানের মন জুগিয়ে চলো তাহলে আমার মনে হয় তোমাদের এই তিক্ততার সম্পর্কে মার্ধুযতা আসবে একটু একটু করে। তখন আর পাঁচটা দম্পতির মতনই থাকবে তোমরা।”
ইনসিয়া চেয়েও মিতালী রহমান এর মুখের উপর আর কথার কোনো প্রতিউওর দিলো না। এমনিতেই দু তিন দিনের ভিতরে তাদের ডির্ভোস হয়ে যাবে তাই এখন আর কোনো কথা না বলে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সম্মতি জানিয়ে চুপ করে রইলো। মিতালী রহমান চলে গেলেন। যাওয়ার সময় কাজের লোক রুবা এসে ইনসিয়াকে খাবার দিয়ে গেলো। ইনসিয়া খাবার খেয়র বিশ্রাম নিচ্ছিলো তখন পার্লার থেকে লোক এসে ইনসিয়াকে সাজিয়ে গুজিয়ে রেডি করে চলে গেলো। তারপর ইনসিয়াকে নিচে সবার সামনে নিয়ে যাওয়া হলো। ইনসিয়া সোফায় বসে ছিলো ঠিক তখনি দেখলো………
#চলবে?