#নতুন_অথিতি
#Sohana_Akther
সাত মাসের অন্তঃসত্বা অবনী আর এই অবস্থায় আজ তার স্বামী নবীন তার গায়ে হাত তুলেছে ।
ভালোবেসে বিয়ে করেছিল দুজনে আজ এই তার ভালোবাসার নমুনা ।
” দেখো অবনী কতোবার তোমাকে বলেছি মায়ের সাথে তর্ক করবে না , মা যা বলে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে তুমি ” ।
নবীনের থাপ্পরের কারণে অবনী যেয়ে খাটের উপর পরলো আর তার হাত খাটের সাথে টেবিলের কাচের উপর পরে তার হাত কেটে গেল , খাটে উবু হয়ে পরার কারনে তার পেটেও কিছুটা ব্যথা পেল সেদিকে খেয়াল নেই নবীনের ।
খাট থেকে ওঠে অবনী নবীনকে বললো ,
” দেখো নবীন আমি মাকে কিছুই বলিনি আজ আমার শরীরটা একটু খারাপ লাগছিল তাই মা যে আজ মালাই চিংড়ি করতে বললো সেটা করা হয়নি । আমি মাকে বলেছিও এই কথা মা বাকি রান্না তো সব হয়েছে এটা না হয় কাল করে দেই আজ শরীরটা খারাপ যাচ্ছে একটু ” । এর বেশি আর কিছু বলিনি , কিন্তু মা তোমায় বললো আমি তার পছন্দের খাবার রান্না করতে পারবো না বলে মুখে মুখে তর্ক করেছি কিন্তু আমি সত্যি বলছি নবীন আমি কিছু করিনি ” ।
” তাহলে কি আমার মা এই বয়সে এসে মিথ্যা কথা বলবে অবনী , দেখো যাই হোক ওনি তোমার গুরুজন ওনি যা বলবে যেকোনো পরিস্থিতিতে তোমার তা করতে হবে মনে থাকে যেনো ” ।
নবীনের কথা শেষ হতে না হতে তার মা সালেহা বেগম রুমে ঢুকে বললেন ,
” দেখলি খোকা তোর বউ কিভাবে বলছে আমি তোকে মিথ্যে বলেছি হায় আল্লাহ এই দিন দেখার আগে আমায় নিয়ে গেলে না কেনো ” । এই বলে ন্যাকা কান্না শুরু করে দিল ।
” আহ মা এবার চুপ করো অবনী সামনের থেকে আর কখনো এমন করবে না তুমি তোমার এই আহাজারি বন্ধ করো ” ।
এই বলে নবীন রুম থেকে বের হয়ে গেল , নবীনের যাওয়ার পথে একাধারে তাকিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো অবনী । আজ যেনো সে তার ভালোবাসার মানুষটি কে চিনতেই পারছেনা। সংসার জীবনে সুখ দুঃখ সবকিছুই বিদ্যমান । স্ত্রীদের ভালো লাগা খারাপ লাগা সে তার স্বামীর সাথেই শেয়ার করতে ভালোবাসে আর সেই স্বামীই যদি না বোঝে তাদের । এর চেয়ে কষ্টের কিছু আর হতে পারে না ।
রাতে নবীন বাহির থেকে খেয়ে এসে শুয়ে পরলো একবারও অবনী কে জিজ্ঞাসা করলো না সে খেয়েছে কিনা অবশ্য সে কখনো এই কাজটি করেনি যে আজ করবে অথচ বিয়ের আগে প্রতি রাতে বললো খেয়েছি কিনা আমি না খেলে ও খাবে না , সবই আবেগ বঈ আর কিছু না । হাত কাটার জন্য অবনী রাতে কিছু খেতে পারে নি , এই অবস্থায় না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলো পেটে তার চিনচিন ব্যথা করছে ।
দুই দিন পরের কথা সালেহা বেগম নবীন কে অফিস দুপুরে ফেরার সময় পাচঁ কেজি ওজনের কাতলা মাছ কিনে নিয়ে আসতে বললো , বাসায় নাকি কাটবে তাই আর বাহির থেকে কেটে নিয়ে আসেনি ।
পাচঁ কেজি ওজনের মাছ অবনী এই অবস্থায় কিভাবে কাটবে তা একবার ভেবে দেখে প্রয়োজন বোধ করেনি সালেহা বেগম , নবীনের তো সংসারে কি হয় সে বিষয়ে কোনো খবরই থাকে না ।
কাটা হাত নিয়ে কোনো প্রকার মাছ কাটলো অবনী , ঘেমে নেয়ে একাকার সে । সালেহা বেগম একটি বারের জন্যও সাহায্য করতে আসেনি তাকে অথচ এই মাছ তার মেয়ের জন্যই আনা হয়েছে । কাল নবীনের ছোট বোন নবনীতা তার শ্বশুর বাড়ি থেকে আসবে তার স্বামী সহ তার জন্যই এতো আয়োজন ।
রাতে খাওয়ার দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে রুমে এসে দেখলো নবীন মাথা ধরে বসে আছে,
” কি হয়েছে তোমার মাথা ব্যথা করছে নাকি ” ।
” না তেমন না এই একটু আর কি ” ।
” চলো মাথা টিপে দেই তোমার শুয়ে পরো ”
নবীন ও আর কিছু না বলে শুয়ে পরলো মাথাটা একটু বেশিই ব্যথা করছে তার । মাথা টিপতে টিপতে অবনী নিজেই ঘুমিয়ে পরলো । নবীন তা দেখে তাকে ঠিক করে খাটে শুইয়ে দিল আর তার কপালে একটি চুমু দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পরলো।
অবনী ঘুমায়নি এখনো চোখ বন্ধ করেই মুচকি হাসলো সে মনে মনে ভাবতে লাগলো ভালোবাসা তাহলে এখনো কমেনি শুধু সংসার জীবনে ছাপা পরে গেছে ।
আজ নবনীতারা দুপুরে খাওয়ার আগে আসলো।
নানান রকমের আইটেম রান্না করতে করতে ক্লান্তি এসে পরলো কিন্তু কিছু করার নেই তাদেরকে খাবার দিয়েই আমি খেতে পারবো আর বিশ্রাম নিতে পারবো । খাবার টেবিলে তরকারি নিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ মাথা টা একটু ঘুরে ওঠলো যার কারণে হাত থেকে তরকারির বাটি টা পরে গেল অবনীর । সালেহা বেগম ধমক দিয়ে ওঠলেন ,
” কি বউমা দেখে শুনে চলতে পারো না কি , দিলে তো তরকারির বাটি টা ফেলে ” ।
নবীন তখন কিছু বলতে যেও মায়ের মুখের উপর কিছু বললো না কিন্তু নবনীতা ঠিকি বললো ,
” মা তুমি দেখছো ভাবির শরীরটা ভালো নেই ভুলে পরে গেছে হাত থেকে বাটি এখন এসব বলো কেনো , ভাবি তো আর ইচ্ছে করে করেনি । আসার পর থেকেই দেখছি ভাবি কাজ করেই যাচ্ছে একটু ক্লান্ত এসে গেছে হয়তো ” ।
” হ্যা হ্যা এখন তো আমিই খারাপ তোরা সবাই মহান যত্তসব আহ্লাদী বলে খেতে বসে পরলো সালেহা বেগম ।
দেখতে দেখতে অবনীর ডেলিভারির ডেইট চলে আসলো , সকাল থেকেই আজ তার পেট ব্যথা করছে সালেহা বেগমের রুমে যেয়ে সে বললো ,
” মা আমার পেটটা আজ খুব ব্যথা করছে একটু নবীন কে কল করে আসতে বলুন ” এই বলেই পেটে ধরে অবনী নিচে বসে পরলো । সালেহা বেগম তাড়াতাড়ি করে পাশের বাসার লোকের সাহায্যে অবনীকে হাসপাতালে নিয়ে গেল আর যাওয়ার পথে নবীনকে হাসপাতালে যেতে বললো।
হাসপাতালে যাওয়ার সাথে সাথেই অবনীকে কেবিনে নিয়ে গেল , নবীন ও তার অফিস থেকে দ্রুত হাসপাতালে এসে পরলো । বেচারা হঠাৎ কান্নাই করে দিল অবনীর জন্য । ভিতর থেকে অবনীর চিৎকার শুনতে পাচ্ছে সে । কিছু সময়ের পর একটি নবজাতকের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল তারা । নার্স একটি ফুটফুটে পরীর মতো দেখতে মেয়ে বাবু এনে নবীনের হাতে দিল ।
” অবনী কেমন আছে আমার স্ত্রী ” ?
” চিন্তা করবেন না আপনার স্ত্রী সুস্থ আছে আপনি যেয়ে দেখা করতে পারেন ” । এই বলে নার্স চলে গেল ।
নবীন ও তার মা বাচ্চা নিয়ে ভিতরে গেল অবনীর কাছে , ঘুমিয়ে আছে সে । একদিন পরেই অবনীকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসলো তারা ।
অবনী খেয়াল করে দেখলো বাড়িতে নতুন অতিথির আগমনে নবীন ও সালেহা বেগম আগের থেকে অনেক বদলে গেছে । মেয়েকে তারা সবাই প্রচন্ড আদর ঘরে । সালেহা বেগম তো নাতিন বলতে পাগল । এখন আর সে অকারণে অবনীর সাথে ধুর ব্যবহার করে না যথেষ্ট ভালো ব্যবহারই করে । অবনী আজ অনেক খুশি তার সংসারে নতুন অতিথি আগমনের কারণে ।