ধোঁয়াশার মেঘ পর্ব-০৮

0
6

#ধোঁয়াশার_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৮

মিহিকা কপাল কুচকে বলল,
“আপনি এতো অসভ্য কেন?”

তুরাব চোখ বুজেই বলে উঠলো,
“পুরুষ মানুষ একটু অসভ্য হওয়াই লাগে। এখন চুপচাপ ঘুমাও।”

মিহিকা অনেকক্ষন নড়াচড়া করে পরে ক্লান্ত হয়ে ঘুমালো। মিহিকার নিশ্বাসের উষ্ণতা তীব্র হতেই তুরাব মুচকি হাসলো। আলতো করে মিহিকাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে তুরাব উঠে দাঁড়ালো। ঘড়িতে সকাল দশটা। শীতের তীক্ষ্ণ রোদের ঝলকানি জানালার ফাঁক দিয়ে আসছে। তুরাব ধীর পায়ে গিয়ে দাঁড়ালো জানালার পাশে। দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে তাকালো মিহিকার মায়াবী মুখের দিকে। আর ভাবতে লাগলো কিভাবে সে মিহিকাকে নিজের করে পেল।

নিজের কাজকর্ম ভেবে নিজেই হাসলো কিছুক্ষন। হুট করে মনের ভিতর অতীতের কিছু ছায়া এসে ডানা ঝাপটাতে লাগলো। ফোন করলো একটা নাম্বারে। অপরপাশে শুধু নিশ্বাসের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তুরাব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“তোকে বলেছিলাম না বিয়েটা হয়ে গেলে আমি আমার সাথে মিহিকার দেখা হওয়া থেকে শুরু করে সব বলবো।”

অপরপাশ থেকে গম্ভীর গলায় আওয়াজ ভেসে এলো,
“হুম”

তুরাব বলতে লাগলো,
“যেদিন আমরা জানতে পারলাম আমাদের আর একসাথে পড়া হবে না। আমি আর তুই মন খারাপ করে বাসায় ফিরেছিলাম। মনে আছে তো।”

অপরপাশ থেকে আবারো গম্ভীর কন্ঠে ভেসে এলো,
“হুম তারপরেই তো তোর চান্স হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।”

তুরাব দম নিয়ে বলল,
“হুম। তুই তো চলে গেছিলি তখন আমি একা একাই ভার্সিটি যেতাম। তুই তো জানিস আমি প্রাইভেট পড়াতাম। আমি একদিন প্রাইভেট পড়াতে হাজির হই খান বাড়ির সামনে। তোর শাওন ভাইয়ের ছোট বোন ইরাকে পড়াতে হবে।”

আরহাম বসা থেকে লাফিয়ে উঠে বলল,
“এই ব্যাটা এই কথা তো তুই আমাকে আগে বলিসনি, যে তুই ইরার টিচার ছিলি!”

তুরাব ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
“কথার মাঝে কথা বলিস না তো। শুন আগে আমার কথা।”

আরহাম গাল ফুলিয়ে বলল,
“আচ্ছা বাবা বল।”

তুরাব একপলক মিহিকার দিকে তাকিয়ে আবারো বলতে লাগলো,
“পড়ানোর তিনদিনের মাথায় আমি যখন মেইন গেট দিয়ে ঢুকছিলাম তখনি কেউ আমার মাথায় ময়লা পানি ফেলে। আমি উপরে তাকাতেই ছাদের উপরে হাসির শব্দ শুনতে পারি। মেয়েটার জামার এক অংশ দেখা যাচ্ছিলো। সেদিন আর পড়ানো হয়নি। এরপরে প্রতিদিন নানা দুর্ঘটনা আমার সাথে হতো। যেমন ধর, চেয়ারে বসার পরে প্যান্টে কাঁচা দিম লেগে যাওয়া, উষ্ঠা খাওয়ানোর জন্য দড়ি রাখা ইত্যাদি ইত্যাদি। তো আমি একদিন ইচ্ছা করেই তাড়াতাড়ি যাই। সেদিন দেখি একটা মেয়ে আমার বসার চেয়ারে সেন্টার ফ্রুট লাগাচ্ছে। মেয়েটাকে দেখে বেশি বড় মনে হচ্ছিলো না। আমার প্রচন্ড রাগ হয়। হুট করেই আমি ওর হাত চেপে ধরি। মেয়েটা ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কেন যেন আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। আমি থমকে যাই সেখানে। মনে হচ্ছিলো মেয়েকে আকড়ে ধরে রেখে দেই নিজের কাছে।”

আরহাম চোখ বড় বড় করে বলল,
“তারপর!”

তুরাব নাকমুখ কুচকে বলল,
“দাঁড়া ব্যাটা পানি খেয়ে নেই। গলা শুকিয়ে গেছে আমার।”

আরহাম চরম বিরক্ত হয়ে বলল,
“হারাম*জাদা এতো ঢং বাদ দিয়ে সব কথা ক তাড়াতাড়ি।”

তুরাব মুখ বাঁকিয়ে পাশের বেডসাইট টেবিল থেকে পানি খেয়ে বলল,
“বলতেছি ব্যাটা। সেদিন কিছু বলার আগেই মেয়েটা আমার হাত ছাড়িয়ে দৌড় দেয়। ইরাকে চাপ দিতে ও বলে দেয় মেয়েটা ওর চাচাতো বোন। নাম মিহিকা। এরপর থেকে আমি না চাইতেও মেয়েটাকে একপলক দেখার জন্য অস্থির থাকতাম।”

আরহাম দ্বিগুন মনোযোগ দিয়ে বলল,
“তারপর, তারপর!”

তুরাব বিছানার কাছে গিয়ে ধপ করে মিহির পাশে শুয়ে পড়ে বলল,
“তুই তো জানিসই আমি সোজাসুজি কথা বলি। মেয়েকে যখন পছন্দ হয়েছে তখন ওকে আমার লাগবেই। একবারে বিয়ে করেই ছাড়বো। তো আমি দেখা করি ওর বাবা সাথে।”

তুরাব আরেকটু দম নিয়ে বলল,
“কিন্তু ওর বাবা আমাকে এমন অপমান করেছিলেন। শুধুমাত্র আমার টাকা কম ছিলো বলে। উনি আমাকে যা না হয় তাই বলে। তারপরেই আমার জেদ চেপে যায় যে আমি টাকা ইনকাম করবো। আর মিহিকেই বিয়ে করবো।”

আরহাম আয়েশ করে বসে বলল,
“ট্রিট দে।”

তুরাব মুচকি হেসে বলল,
“ট্রিট তো দিবোই। তোর সাহায্য ছাড়া আমি তো মিহিকে পেতাম না।”

আরহাম কলার উচিয়ে বলল,
“হুমমম এখন কি করবি?”

তুরাব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“এখন তো শুরু হবে আসল কাহিনী।”

আরহাম হাই তুলে বলল,
“তুই ও বিয়ে করে ফেললি। আমি এক পাঠা সিঙ্গেলই রয়ে গেলাম।”

তুরাব হেসে বলল,
“সোহা কে?”

আরহাম আমতা আমতা করতে করতে বলল,
“তুই বেশি কথা বলিস!”

তুরাব এবার হো হো করে হাসতে লাগলো। আরহাম খট করে মুখের উপর ফোন কেটে দিলো।

তুরাব উঠে বসলো। ঘড়িতে দুপুর একটা পনেরো। তুরাব তার এক বডিগার্ডকে কল করে দুপুরের খাবার আনতে বলল। ফ্রেশ হওয়ার জন্য গোসল করা প্রয়োজন। তুরাব হাই তুলে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে গেল।

মিহিকা পিটপিট করে চোখ খুলতেই সামনে তুরাবের মুখ দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেল মিহিকার। চেঁচিয়ে উঠবে তার আগেই তুরাব বিরক্তি নিয়ে বলল,
“এই চুপ। একদম চুপ।”

মিহিকা তাকিয়ে দেখলো তুরাব খালি গায়ে শুধু একটা তোয়ালে পেঁচানো। শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি। মিহিকা তাড়াতাড়ি নিজের চোখে হাত রেখে বলল,
“ছেহ, কাপড় পড়ে আসুন তাড়াতাড়ি। এমন করে দাঁড়িয়ে থাকতে লজ্জা লাগছে না আপনার।”

তুরাব চোখ ছোট ছোট করে মিহিকার হাত ওর চোখ থেকে সরিয়ে বলল,
“এমন ভাব করছিস যেন আমার গায়ে কিছুই নাই। যতসব ঢং তোর। তাড়াতাড়ি শাওয়ার নে।”

চোখ মুখ খিচে বন্ধ রেখেই মিহিকা বলল,
“ওসব পরে হবে আগে আপনি কাপড় পড়ুন দয়া করে।”

তুরাব দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
“কেন মেঘনন্দিনী মনের মাঝে কিছু হয় নাকি!”

মিহিকার কান গরম হয়ে গেল। মনে মনে বলল,
“আল্লাহ বাঁচাও তুমি। হয় আকাশ ফুটো করে চিল পাঠাও। না হয় মাটি ফাঁক করে ইদুর পাঠাও।”

তুরাব মিহিকা কপালে পড়ে থাকা ছোট চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে বলল,
“এতো কি বিড়বিড় করো জান। যা বলবে জোরে বলো। আমি তো আর বাহিরের কেউ না। তোমার একমাত্র নান্না মুন্না টুংকু স্বামী।”

মিহিকা রাগী কন্ঠে বলল,
“যান কাপড় পড়ুন।”

তুরাব ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,
“কি বললে? আহ বউয়ের মুখে জান শুনে কি যে শান্তি লাগছে।”

মিহিকা চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে বলল,
“এই মিয়া আমি তো আপনাকে যেতে বললাম।”

তুরাব মিহিকার চোখে চোখ রেখে বলল,
“আরে বউরানী ভুলে যেও না আমাদের বাসর দিন কিন্তু এখনো বাকি। শশুড়মশাইকে বললাম যে তাড়াতাড়ি বাসরদিন করবো। আর তুমি তো ঘুমিয়ে কতটা সময় নষ্ট করলে।”

মিহিকার এবার চিক্কুর দিয়ে কান্না করতে মন চাইছে। কি নিলজ্জ লোকের পাল্লায় পরেছে সে। কি কি বলছে? মিহিকা ধমকে বলল,
“সরুন আমি ওয়াশরুমে যাবো।”

তুরাব আবারো দুষ্টু হেসে বলল,
“আমি নিয়ে যাই।”

মিহিকা রক্ত লাল চোখে তুরাবের দিকে তাকাতেই তুরাব ঠোঁটে আঙুল রেখে বলল,
“আচ্ছা বাবা যাও। আমি আর কিছুই বলবো না।”

মিহিকা বিছানা থেকে উঠে গটগট পায়ে ওয়াশরুমে যেতে নিবে তখনি তুরাব বলল,
“জান শাওয়ার নিয়ে কি পড়বে?”

তুরাবের কথায় মিহিকার মনে পড়লো তাই তো সে কি পড়বে। তুরাব আবারো ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,
“অবশ্য না পড়লেও সমস্যা নেই।”

মিহিকা চেঁচিয়ে বলল,
“এই চুপ, একদম চুপ। আর একটা কথাও বলবেন না আপনি।”

তুরাব মিটমিটিয়ে হেসে একটা সপিং ব্যাগ এগিয়ে দিলো মিহিকার সামনে। মিহিকা কপাল কুচকে তাকাতেই তুরাব বলল,
“এখানে শাড়ির সাথে তোমার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আছে।”

মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে তুরাবের কাছ থেকে ওগুলো নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

তুরাব মাথার পিছনে চুলকে হাসলো।

———————-

খান বাড়ির সবাই জেনে গিয়েছে যে মিহিকাকে তুরাব তুলে নিয়ে গিয়েছে। বিয়ের বিষয়টাও সবাই যেনে গিয়েছে। কারণ তুরাব তাদের কাবিননামার ছবি তুলে সবার ফোনেই দিয়ে দিয়েছে। আরিফুল সাহেব তখন থেকেই দম ধরে বসে আছেন। শাওন মনে মনে খুশি হয়েছে। কারণ তুরাবকে তার আগে থেকে বেশ পছন্দ। ছেলেটা বেশ দায়িত্ববান।

মাহি মিহির কাছে এগিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলল,
“মিহিপুর কাছে কখন নিয়ে যাবি?”

মিহিরও ফিসফিসিয়ে বলল,
“জিজুকে বলেছি তোর কথা।”

মাহি আগ্ৰহ নিয়ে বলল,
“তো জিজু কি বলছে?”

মিহির এপাশঅপাশ তাকিয়ে বলল,
“জিজু বলেছে ফোন করে জানাবে।”

মাহি গাল ফুলিয়ে বলল,
“ধুর ভালো লাগে না।”

মিহির নাকমুখ কুচকে বলল,
“এমন ভাব করছিস যেন মিহিপুকে কত যুগ দেখিস না।”

মিহিরের কথায় মাহি মুখ বাঁকালো। ঝাঝালো গলায় বলল,
“তুই চুপ থাক। তোরও তো বোন হয়। না জানি কেমন আছে?”

মিহির হিসহিসিয়ে বলল,
“তোর এতো চিন্তা করতে হবে না। মিহিপু তার জামাইয়ের কাছে আছে। তার জামাই বুঝে নিবে সবটা।”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে