ধোঁয়াশার মেঘ পর্ব-০১

0
14

#ধোঁয়াশার_মেঘ
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০১

“চৌধুরী সাহেব এটা আপনি কি করে পারলেন!আমি খান বংশ বংশের মাইয়া। আপনি ভাবলেন কি করে যে আমি সতীন নিয়ে সংসার করবো!আপনি হয় শুধু আমার নয় তো কোনো বেডি মানুষের না।”

মিহিকার ঘুমের মাঝে বলা এসব ফালতু কথা শুনে বরাবরের মতোই বিরক্ত মিসেস হেনা খান। তীব্র বিরক্তিতে মিহিকার গায়ের কম্বল টেনে বললেন,
“মিহি তুই ঘুম থেকে না উঠলে তোরে অন্য মাইয়ার সতীন করে পাঠাবো বলে দিলাম।”

মিহিকা মায়ের বিরক্তিভরা ঝাঁঝালো গলা শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠলো। মাথা চুলকে হেসে বলল,
“আম্মু কি হয়েছে এমন করে ডাকছো কেন?”

হেনা বেগম একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললেন,
“হিয়ারা আসছে আজকে ভুলে গেছিস।”

মিহিকা মুখ চিকচিক করে উঠলো সে তো সত্যিই ভুলে গেছিলো আজ তো হিয়া আপুরা আসবে। দুইবছর যাবত দেখা হয়না। মিহিকা তড়িঘড়ি করে উঠতে গিয়ে চেয়ারের সঙ্গে উষ্টা খেলো। মিহিকা করুন দৃষ্টিতে পায়ের ছোট আঙুলটার দিকে তাকালো। নিজে নিজেই বলল,
“কিরে ভাই তোর জন্মই কি খালি উষ্টা খেয়ে লাল নীল হয়ে থাকার জন্য। যতসব ফালতু উষ্টা।”

মিহিকা পাটাকে টেনে নিয়ে গেল ওয়াশরুমের দিকে। ফ্রেশ হয়ে একটা নীল রঙের লম্বা জামা, জিন্স, সাদা জ্যাকেট আর হালকা নীল রঙের একটা হিজাব পড়ে নিলো। সাজগোজ করার সময় নেই হাতে। তাই হালকা করে কাজল দিয়ে বেড়িয়ে পড়লো সে। মিহিকার ফুফাতো বোন হিয়া।

হিয়ারা ঢাকায় থাকে আর মিহিকারা বগুড়ায়। এখন সময় বিকেল চারটা। মিহিকা আর তার ছোট ভাই মিহির দাঁড়িয়ে আছে বাসস্ট্যান্ডে। অপেক্ষা করছে বাস আসার। মিহিকা এপাশ অপাশ তাকালো। সামনেই একটা গাড়ি থামলো। হিয়াকে সেই বাস থেকে নামতে দেখে মিহিকা ছুটে গেল। ছুটে গিয়ে হিয়াকে জড়িয়ে ধরতেই পাশ থেকে কে যেন আর্তনাদ করে উঠলো। মিহিকা কপাল কুচকে তাকাতেই দেখলো একটা লম্বা চওড়া খাম্বার মতো ছেলে পায়ে হাত দিয়ে লাফাচ্ছে। মিহিকা তার লাফানোর মানে খুঁজে পেল না। ছেলেটা দাঁতে দাঁত পিষে মিহিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ওই মেয়ে তোমার চোখ নেই। কি জোরে আমার পাটাকে পিষে খান খান করে দিলে। চোখ কি জুতার তলায় চাপা দিয়ে রাখো?”

হিয়াকে ছেড়ে দিয়ে মিহিকা চোখ ছোট ছোট করে কোমরে দুইহাত রেখে বলল,
“আপনি চোখে দেখেন না,আপনি কেন আমার পায়ের নিচে পরতে গেলেন শুনি?”

ছেলেটা বেকুব হয়ে গেল। কোথায় তার পাটাকে জুতা দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে দিলো বলে ক্ষমা চাইবে। তা নয় তাকেই দোষ দিচ্ছে। ছেলেটা তেতে উঠে বলল,
“আমার কোন ঠেকা তোমার মতো কচু গাছের লটকানো সাতচুন্নির পায়ের নিচে পরবো। তুমিই তো ইচ্ছে করে পা দিয়ে পিষে দিয়ে আমার নিরিহ পা টাকে।”

মিহিকা মাথা দুইপাশে নাড়িয়ে বলল,
“মোটেও এমনটা করিনি আমি। আপনিই তো মুছিনির মতো নিজের পাটাকে লাল নীল বানানোর জন্য আমার জুতা নিচে ইচ্ছা করে পা দিয়েছেন। আবার আমাকে কচু গাছের সাতচুন্নি বলছেন। আপনি তো বনে বনে ঘুরে বেড়ানো বন মুরগি।”

ছেলেটা কিছু বলতে নিবে তার আগেই হিয়া বাধা দিয়ে বলল,
“তোরা কি বাচ্চা? রাস্তায় এগুলো কি করছিস?”

ছেলেটা রাগী গলায় হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
“দেখ হিয়া তুই চুপ থাক। যেটা বুঝিস না ওটা নিয়ে কথা বলবিনা।”

চারপাশের মানুষজন সবাই তাকিয়ে আছে তখনি বাস থেকে হিয়া বাবা মা, বড় চাচা চাচি,হিয়ার বড় ভাই হামিম, হামিদের স্ত্রী রোদেলা,হিয়ার চাচাতো বোন আরিশা নামলো। হিয়ার বড় চাচা গমগমে গলায় বলে উঠলো,
“আরহাম কি করছো এসব?”

মিহিকা কপাল কুচকে তাকালো ছেলেটার দিকে। নিজ মনেই বলল,
“ও তার মানে এটাই হিয়া আপুর বড় চাচার ছেলে আরহাম মির্জা।”

মিহিকা সবাইকে সালাম দিলো। হিয়ার বড় চাচা আরিফুল সাহেব আরহামকে ধমকানোতে সে চুপ হয়ে গেলেও মিহিকার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো। মিহিকা মুখ বাঁকিয়ে সবার সাথে যেতে লাগলো।

আরহামকে সিএনজিতে গাল ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে হামিম বলল,
“কিরে এমন গাল ফুলিয়ে রেখেছিস কেন?”

আরহাম কিছু বলল না। হামিম কুনিই দিয়ে একটা গুতো দিয়ে বলল,
“কিরে কি হলো?”

আরহাম থমথমে গলায় বলল,
“মানুষের কাজিন কতো ভালো হয় আর হামিম ভাই তোমার কাজিন একেবারে জঘন্য, ফালতু।”

আরহামের কথা শুনে হেসে দিলো হামিম। আরহামের গা জ্বলে গেল হামিমের হাসিতে। নিজে নিজেই বকবক করতে লাগলো সে।

খানিকবাদেই তারা পৌঁছে গেল বাসায়। মিহিকার চাচাতো বোন ইরার বিয়ে তাই সবাই এসেছে। কাল ইরার গায়ে হলুদ। সবাই একে একে ভিতরে ঢুকলো। মিহিকা ভিতরে যেতে নিবে তার আগেই আরহাম ওর পাশে দাঁড়িয়ে হিসহিসিয়ে বলল,
“আব্বু চুপ করতে বলেছিলো বলে ভেবোনা তোমাকে ছেড়ে দিবো। তোমার মতো বেয়াদব মাইয়াকে সাইজ করা আরহাম মির্জার বাম হাতের কাজ।”

মিহিকা দাঁত বের করে হেসে বলল,
“বাম হাত দিয়ে কোনো কাজই ভালোমতো হয় না। ডান হাতের সাহায্য লাগেই। তাই ফাউ না বকে নিজের চরকায় তেল দেন। আমার পিছনে লাগতে আইসেন না।”

বলেই মিহিকা গটগট পায়ে চলে গেল। আরহাম নিজ মনেই বিড়বিড়ালো,
“এতো শুধু বেয়াদব না প্রো ম্যাক্স। আমি ওর চেয়ে কত বড় তার সে দিকে হুশ নাই আমার সঙ্গে লাগতে আসে। চিনে না তো আমি কে!”

আরিশা পাশে এসে ফুস করে বলল,
“ভাইয়া তুই তো বনে বনে ঘুরে বেড়ানো বন মুরগি।”

আরহাম রক্ত চোখ নিয়ে তাকালো আরিশার দিকে। আরিশা ভো দৌড় দিলো। একবার আরহাম হাতে কাছে পেলে তার আর রক্ষা নেই।

আরহাম ভিতরে এসে সোফায় বসলো। একটা মেয়ে তাকে শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিলো। আরহাম চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো বারো তেরো বছরের এক কিশোরী তার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। আরহাম তার হাসির কারণ খুঁজে পেল না। নিজের দিকে একবার তাকালো। সাদা টিশার্টের উপর কালো জ্যাকেট, কালো জিন্স পড়েছে সে। সব তো ঠিকিই আছে। তাহলে মেয়েটা হাসছে কেন। কপাল কুচকে শরবতের গ্লাসটা নিলো আরহাম। পাশেই হামিম বসে ছিলো। ওকে কুনই দিয়ে গুতিয়ে আরহাম বলল,
“এটা আবার কোন মঙ্গল গ্ৰামের মাইয়া!”

হামিম হেসে বলল,
“এটা আমার বড় মামার ছোটমেয়ে। ও এমনি চাপ নিস না।”

আরহাম নাকমুখ কুচকালো। মাইয়া যে সুবিধার না বুঝতে বাকি নেই আরহামের।

#চলবে কি?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে