ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-২২

0
631

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_২২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেঘ ধূসরের সাথে নিচে আসলো। ড্রাইনিং টেবিলে খাবারের ব্যবস্থা দেখে মেঘ অবাক হলো। এতো এলাহি কারবার। মায়মুনা চৌধুরী নিজ দায়িত্বে ধূসরকে দেখে দেখে খাওয়াচ্ছেন। আজ মেঘকেও দেখে দেখে খাওয়াচ্ছে। মেঘ খাবে কি ওর মায়ের এতো ভালোবাসা দেখে ওর পেট এমনিতেও ভরে উঠছে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে মেঘ নিজের রুমে এলো। ধূসর দাদুভাই আর আজানের সাথে কথা বলতে লাগলো। মেঘ সবে বিছানায় বসবে এমন সময় মায়মুনা চৌধুরী মেঘের রুমে এলেন। তা দেখে মেঘ বলল,,

“কিছু বলবেন?”

মায়মুনা চৌধুরী আসামির মতো এগিয়ে এসে বললেন,,

‘না তেমন কিছু না এমনিই এলাম। একা বসে আছো তাই?”

“ওহ আচ্ছা বসুন!”

মায়মুনা চৌধুরী বসলেন। তখন মেঘ বলল,,

‘আমাকে সত্যি করে একটা কথা বলুন তো! হুট করে এতো খেয়াল রাখছেন কেন? আবার আমার হাজবেন্ড কে আর আমাকে দেখে দেখে খাওয়ালেন। আমি একা আছি দেখে আপনি এলেন সঙ্গ দেওয়ার জন্য। এসবের মানে কি? আপনি ঠিক কি চাইছেন বলুন তো?”

মায়মুনা চৌধুরী অসহায় হেঁসে বললেন,,

“জীবনের এমন একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছি যে, মেয়ের একটু খেয়াল রাখবো তাতেও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।”

মেঘ ভাবলেশহীন ভাবে বলল,,

“এসবের জন্য আপনি দায়ী নন কি? যখন আমার একটু আদরের দরকার ছিল, একটু খেয়াল রাখার দরকার ছিল তখন তো আসেন নি। হুট করে এত বছর পর একটু খেয়াল রাখছেন কেয়ার করছেন। এটা আমি সহজ ভাবে নিতে পারছি না। হুট করে কেউ অপত্যাশিতভাবে অতিরিক্ত ভালোবাসা দেখালে আমার কাছে মনে হয় তার স্বার্থের জন্য করছে। আমি সহজ ভাবে এগুলো নিতে পারি না।”

‘আমাকে মাফ করে, একবার মা হিসেবে কাছে টেনে নেওয়া যায় না। আমি ভুল করেছি তোমার সাথে অন্যায় করেছি। আমায় মাফ করে দাও।”

মেঘ মুচকি হাসলো। মায়মুনা চৌধুরীর মনে হচ্ছে এই হাঁসি কতোটা চমৎকার সেই সাথে অন্যরকম কিছু একটা আছে। মেঘ বলল,,

“হুট করে আপনার কেন মনে হলো? আমার কাছে আপনার মাফ চাওয়া উচিৎ। সত্যি বলতে আপনি কি করেছেন আমার সাথে? আমি আর আমার ভাই যে একসাথে আপনার পেটের ভেতর ছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমার ভাই হওয়ার পর মারা যায়। সেই জন্য আপনি কি করেছিলেন ঐ ছোট্ট নবজাতক শিশু কে খুনী তকমা লাগিয়েছিলেন। কারন ডক্টর বলেছিল ঐ বাচ্চাটার জন্য আরেকটা বাচ্চার পজিশন সরে গিয়েছিল তাই বাচ্চাটার মৃত্যু ঘটেছে। সেই নবজাতকের কি দোষ বলুন তো সবই তো আল্লাহর ইচ্ছে । সেই নবজাতক কি কিছু করেছিল ঐ বাচ্চাটা কি করতে পারে আপনিই বলুন। অথচ আপনি কি করলেন? মেয়েটাকে জীবিত তো রাখলেন দুধ ও খাওয়ালেন। কিন্তু আদর ভালোবাসা স্নেহ থেকে বঞ্চিত করলেন। তার ওপর মেয়েটা হলো সবার থেকে কালো যা আপনার পছন্দ হলো না। লোকের কথা শুনতে আপনার এতো গায়ে লাগলো যে। প্রয়োজন ছাড়া তার সাথে কথাও বলতেন না। মেয়েটা আপনার আদর পাওয়ার জন্য বারবার আপনার পেছনে ঘুরতো। আপনি কি করতেন ধমকে নয়তো মেরে সরিয়ে দিতেন।”

কি করেছেন আপনি আমার সাথে? বাড়ি যা কিছু খারাপ হতো সবকিছুর জন্য আমাকে শুধু দায়ী করতেন। এমন কি পাঁচ বছর বয়সে যখন বাগান বাড়িতে দাদুভাই এর রুমে আগুন লাগলো । তখন আমি নাকি আগুন নিয়ে খেলছিলাম । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি নিজেও জানতাম না আমি আগুন নিয়ে খেলছিলাম। আমি আর দাদীজান শুধু একসাথে ঐ রুমে কথা বলছিলাম দাদীজান আমার সাথে খেলছিল বিছানায়। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে দাদীজান মারা যায়। আপনার একবার ও মনে হয়েছে আমাকে খুনী বলার আগে যে এই আমিও ঐ আগুনে মারা যেতে পারতাম। কতো সহজেই না আপনি অবলীলায় আমাকে দুই দুই বার খুনী বলে দিলেন। কি করেছেন আপনি আমার সাথে কিছুই করেন নি। শুধু মেরে ফেলেছেন আমার দুষ্টুমিকে আর আমার ছোটবেলাকে। এই এতো অবহেলা এতো অনাদরেই আমার জীবন আগাতে লাগলো।এই সবের জন্য কেউ মাফ চায়। এগুলো তো ছোটখাটো ব্যাপার মাফ চেয়েই এসবের জন্য মাফ পাওয়া যায়। সবকিছু সহজ করে নেওয়া যায় এক নিমিষেই।

মায়মুনা চৌধুরীর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে অথচ মেঘের দৃষ্টি স্থির। মেঘ বলল,,

“সব ঠিক আছে আমিও ঠিক আছি এখন বলুন হুট করে আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা দেখানোর কারন কি?”

মায়মুনা চৌধুরী মেঘের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,,

“আমি জানতে পেরে গেছি সব মেঘ। আমার আরেকটা বাচ্চা তোমার জন্য মারা যায় নি। ডাক্তারের অপারেশন এর গাফিলতির কারণে মারা গেছে। উনি ঠিক ভাবে বাচ্চার ডেলিভারি করাতে পারেন নি। তাই রিজন হিসেবে ওনারা অন্য বাচ্চার কথা বলেছে মানে তোমার কথা। এটা আমাকে তোমরা যে হাসপাতালে হয়েছিলে সেখানে থাকা নার্স বলেছে। উনি অসুস্থ ছিলেন আমাকে দেখেই চিনতে পারেন তারপর আমাকে জানান। আমি তোমাকে ছোটবেলা থেকে আদর ভালোবাসা দিই নি কারন তোমাকে দেখলেই মনে পরতো আমার আরেকটা সন্তান থাকার কথা ছিল তোমার জন্য নেই। তোমার জন্য আমার আরেক সন্তান পৃথিবীতে নেই। আমি চেয়েও তোমাকে আপন করতে পারতাম না। নিজের দুঃখে এতটাই ডুবে গিয়েছিলাম যে এই ছোট জিনিসটা বুঝতে পারিনি একটা বাচ্চা কি করে এরকম করতে পারে যে সবে মাত্র ভূমিষ্ঠ হয়েছে। আমায় মাফ করে দাও মেঘ।

“যদি সত্যিটা আপনার সামনে কোনদিন না আসতো তাহলে কি করতেন মায়মুনা চৌধুরী। আপনি কি করে পারলেন এরকমটা করতে আমি তো আপনার নিজের মেয়ে ছিলাম। কি করে ঐ ছোট্ট বাচ্চাটার সাথে এরকম অন্যায় করতে পারলেন। সত্যি বলতে আপনি আমার মন থেকে উঠে গেছেন। তবে হ্যা আপনি আমার মা।
না চাইলেও কিছু সম্পর্ক থেকে পালানো যায় না। আমাদের সম্পর্ক ঠিক হওয়ার থাকলে হবে তবে আমার পক্ষ থেকে কিছু আশা করবেন না।”

মায়মুনা চৌধুরী মেঘকে জড়িয়ে ধরলো আর বলল,,

“আমি তোমায় ভালোবাসি মেঘ। তুমি অসুস্থ হলে আমার ভেতরটা হাহাকার করে উঠে। আয়মান যখন বলল তোমার অবস্থা এর আগে মৃত প্রায় ছিল। তখন আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল। হাসপাতালে আমি তোমাকে ঐ অবস্থায় দেখতে পারছিলাম না। তোমার এই ইগনোর গুলো আমায় বড্ড পোড়ায়।আমি খুব করে বুঝতে পারি আমি আমার মেয়ের সাথে কি কি আর কতো বড় অন্যায় করে করেছি পারলে মাফ করে দিও মেঘ।’

বলেই তিনি দৌড়ে রুমে থেকে চলে গেলেন। মেঘের চোখ ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে আর বলতে ,,

“তোমাদের ঐ অবহেলা আমাকে কতটা যন্ত্রনা দিতো তোমরা ভাবতেও পারবে না কোনদিন। এই আমি কতো রাত কেঁদেছি।কেউ আমার পাশে থাকে নি। একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কতো ছটফট করেছি কেউ আসে নি। শুধু আমার আব্বা আমায় ভালোবেসে গেছে নাহলে এই মেঘ কবেই ধরনীর বুক থেকে হাড়িয়ে যেত।”

কিন্তু বলা হয়ে উঠলো না।চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। কিন্তু মেঘ মুছে ফেললো। ও চায়না ধূসর এসে ওকে এই অবস্থায় দেখুক। তার ও আধা ঘন্টা পর ধূসর এলো মেঘ পাশ ফিরে শুয়ে আছে। ধূসর গিয়ে বলল,,

“ওষুধ খেয়েছো?”

মেঘ জবাব দিলো না। ধূসর এগিয়ে গিয়ে মেঘের সামনে দাঁড়িয়ে চেক করলো ঘুমিয়েছে কিনা। মেঘ ঘুমায় নি জেগেই আছে তা দেখে বলল,,

“কি হলো ওষুধ খেয়েছো?”

মেঘ ছোট করে উত্তর দিল,,

‘না!”

“আমি জানতাম এমনটাই হবে। তাড়াতাড়ি উঠো আমি ওষুধ দিচ্ছি। আমারই ভুল হয়েছে তোমাকে ওষুধ দিয়ে তারপর দাদুভাইদের সাথে গল্প করা উচিৎ ছিল। অবশ্য দাদুভাই ও এমনভাবে ধরলো আর উঠা হলো না।”

“আমি কিছু বলি নি আপনাকে। নিজে নিজেই এতগুলো কথা বলছেন কেন? একদিন ওষুধ না খেলে মরে যাব না। ”

ধূসর মেঘের এরকম কথা শুনে একটু ধমকের সুরে বলল,,

“একদম আজেবাজে কথা বলবে না। মরে না গেলে এই যে কষ্ট গুলো পাবে। সুস্থ হতে দেরি হবে ওগুলো ভুগবে কে? তোমার না হয় নিজের প্রতি কোন যত্ন নেই। কিন্তু আমার কেমন লাগে তোমাকে ঐ অবস্থায় দেখে আমার কতোটা যন্ত্রনা হয় তুমি বুঝো। অবশ্য তুমি বুঝবে কিভাবে তুমি তো নিষ্ঠুর মেয়ে। সবকিছুতে নিষ্ঠুরতা দেখাতেই হবে।”

এটুকু বলে ধূসর থামলো মেঘ আজ কিছুই বললো না। ধূসর মেঘকে খেয়াল করলো কেমন চুপচাপ এখন। কিন্তু মেঘ তো এরকম থাকে না। মেঘের কি মন খারাপ
ধূসর মেঘকে টেনে তুলল তারপর মেঘের সামনে বসে দুই কাঁধে হাত রেখে বলল,,

“কি হয়েছে আমার মেঘবালিকার মন খারাপ নাকি?”

মেঘ ধূসরের চোখের দিকে তাকালো। ধূসর ও ওর চোখের দিকে তাকালো। ধূসর দেখলো মেঘের চোখ ছলছল করছে। তা দেখে ধূসর বলল,,

“কি হয়েছে মেঘ?”

“আমায় একটু ভালোবাসবেন ধূসর। যতটা ভালোবাসলে সব মন খারাপ দূর হয়ে যাবে।”

“মেঘ তুমি!”

” ধূসর চলুন একটু চন্দ্রবিলাস করে আসি।”

ধূসর কিছুই বুঝতে পারলো না এই মেয়েটাও না কখন কি করে বা বলে নিজেও জানে না।মেঘ উঠে ধূসরকে নিয়ে সিঁড়ির সামনে এলো তারপর বলল,

“আপনার অসুস্থ বউকে একটু সিড়িগুলো পার করে দেবেন?”

ধূসর মেঘের মতিগতি কিছু বুঝতে পারছে না। কিন্তু মেঘ সে জানে নিজের খুশি কিভাবে নিজেকেই খুঁজতে হয়। ধূসর হেঁসে বলল,,

“কেন নয় অবশ্যই পার করে দেব! তবে শুধু পার করবো না আরো অনেক কিছু করবো।”

বলেই ধূসর মেঘকে কোলে নিল। মেঘ হেঁসে ধূসরের গলা জড়িয়ে ধরলো।ছাদে গিয়েও ধূসর মেঘকে নামালো না। দোলনায় গিয়েও ধূসর মেঘকে কোলে নিয়েই বসলো। মেঘ উঠার চেষ্টা করছে। তা দেখে ধূসর বলল,,

“এই যে মেয়ে এত ছুটাছুটি করছো কেন? আমার অসুস্থ বউ আমি তো একে কাছ ছাড়া করবো না। আজ আমার বউ আমার কোলে থেকেই চন্দ্রবিলাস করবে।”

“এটা কিন্তু ঠিক না।আমি শুধু সিড়ি পার করে দিতে বলেছিলাম।”

‘তাতে কি হয়েছে আমার বউ আমি যা খুশি করবো তাতে তোমার কি চুপ করে থাকো। আর দেখো আজ চাঁদ টা কি সুন্দর।”

“আপনার কাঁধে মাথা রেখে আপনার হাত জড়িয়ে ধরে আমি চাঁদ দেখতে চাই। সাথে পাশে তাকালেই যেন আপনার এই চাঁদের আলোয় ঝলমল করা মুখটা দেখতে পাই।এই জন্য কোলে নয় আপনার পাশে বসতে চাই।”

ধূসর হেঁসে মেঘকে পাশে বসিয়ে দিল। আর ফিসফিস করে বলল,,

“আর আমি তোমায় ভালোবাসতে চাই।”

মেঘ হেঁসে ধূসরের এক হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখলো। ধূসর ও নিজের মাথাটা মেঘের মাথায় সাথে লাগিয়ে দিল। মেঘ বলল,,

“আপনি আমার ব্যক্তিগত সুখ। যে পাশে থাকলে আমি নিজেকে সর্বদা সুখী মানুষের কাতারে রাখি।”

ধূসর একহাত দিয়ে মেঘের হাত আঁকড়ে ধরে বলল,,

তুমি ধূসর রাঙা মেঘ
আমি মেঘ রাঙা ধূসর গোধূলি
আমিবিহীন স্মৃতির শহরে থেকেছো বহুদিন
মনে রেখে আমার কথাকলি!

যদিও তুমি মুখে বলো না ভালোবাসি
তাই তো তোমায় আমি নিষ্ঠুর মেয়ে বলি
তাতে কি তোমার অন্য কথার ভাঁজে,
বোধহয় কেউ আমায় ফিসফিস করে বলে
আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি।

মেঘ কিছু বললো না চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। ধূসর বুঝতে পারলো মেঘ মতো নিজেকে আড়াল করে রাখুক ওর মন ভিশন খারাপ। নাহলে এতোটাও নিঃস্তব্ধতা ওকে কখনো ঘ্রাস করে না। ধূসর বলল,,

“মেঘ ঠিক আছো?”

মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“নিজের খুশি রাখার পথ নিজেকেই খুঁজতে হয়। নিজেকে ভালো রাখা খুশি রাখা সমস্ত দায় নিজেরেই। অন্যরা হয়তো কিছুক্ষণের জন্য স্বস্তি দেবে কিন্তু নিজে খুশি থাকবে কি থাকবে না সেটা নিজের ওপর নির্ভরশীল।”

“কি হয়েছে মেঘ এভাবে বলছো কেন? তুমি ঠিক আছো?”

মেঘের চোখটা ছলছল করে উঠলো। মেঘ ধূসরের হাত ছেড়ে ধূসরের চোখের দিকে তাকিয়ে আর মাথা নাড়িয়ে বলল,,

“আমি ঠিক নেই ধূসর! আমি ঠিক নেই। অতীতের সব তিক্ত স্মৃতি আমাকে ঘ্রাস করছে। বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে। আমি চেয়েও আজ নিজেকে সামলাতে পারছি না ধূসর। নিজেকে খুশি রাখার সব রকম চেষ্টা করছি ধূসর তবুও পারছি না।”

এই মেঘকে ধূসর এর আগে কোনদিন দেখেনি। ওকে চুপচাপ থাকতে দেখেছে একা থাকতে দেখেছে কিন্তু এরকম কোনদিন দেখেনি। এই ভাঙা মেঘকে ও দেখেনি। তার মেঘবালিকার কষ্ট যেন তাকেও ঘ্রাস করলো। ধূসরের চোখ ছলছল করে উঠলো। ধূসর মেঘের মুখে হাত দিয়ে ধরে বলল,,

“কি হয়েছে মেঘ কিসের এতো কষ্ট তোমার। তোমার ধূসর আছে তো বলো আমাকে। সব কষ্ট বিলীন করে দেবে তোমার ধূসর।”

মেঘ ধূসরকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। আজ যেন শখের পুরুষের প্রশ্নে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না। নিষ্ঠুর মেয়েটা যেন নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। এদিকে ধূসরের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। এরকমটা আজ প্রথম ঘটলো। ধূসর শক্ত করে মেঘকে ধরে রাখলো। কিছুক্ষণ পর মেঘ শান্ত হলো। আর বলল,,

‘রুমে চলুন ধূসর!”

ধূসর মেঘকে কোলে নিল কারন মেঘ ঠিক নেই। ধূসর মেঘকে কোলে নিয়ে নিচে আসলো। মেঘ কিছুই বললো না। ধূসরের গলা জড়িয়ে চুপটি করে তার প্রেমিক পুরুষের বুকে লেপ্টে রইলো। ধূসর মেঘকে বিছানায় শুয়িয়ে উঠতে চাইলো কিন্তু মেঘ ওকে আর উঠতে দিল না। ধূসর ও মেঘের পাশে শুয়ে পরলো। মেঘ চুপটি করে ধূসরের বুকের সাথে লেপ্টে রইলো। ধূসর বুঝতে পারলো মেঘ এখন তার প্রেমিক পুরুষের সান্নিধ্য চাইছে। ধূসর ও কিছু না বলে মেঘকে জড়িয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিল। তবে এটাও ভাবলো মেঘ কেন এরকম করলো। তবে ওকে জিজ্ঞেস করবে না। সময় হোক মেঘ নিজেই এসে বলবে।

_________________

দেখতে দেখতে কাঙ্খিত দিনটা এসেই পরলো। আজ চৌধুরী বাড়িতে অনুষ্ঠান। মেঘ ধূসর দুদিন আগেই এসে পরেছে। সকাল হতেই খান বাড়ির সকলে এসে পরলো। মেঘের বান্ধবীরাও এসে পরেছে। চৌধুরী বাড়ির সব আত্মীয় স্বজন হাজির। আজ মেঘ খুব খুশি সে ধূসরের পরিবারের ওর বান্ধবীদের সাথে মন খুলে হাসছে। মেঘকে এভাবে কেউ চৌধুরী বাড়ির হাঁসি খুশি দেখে নি। তাই সকলেই অবাক হলো। সমশের চৌধুরী আয়মান চৌধুরীও আজ ভিশন খুশি। সন্ধ্যার পর ড্রয়িংরুমে সোফায় আয়মান চৌধুরী আর সমশের চৌধুরীর মাঝখানে বসে মেঘ গল্প করছে হাসছে। সমশের চৌধুরী মেঘকে কিছু বলছে মেঘ আর আয়মান চৌধুরী হেঁসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। হাসতে হাসতে মেঘের চোখে পানি চলে এসেছে তবুও মেঘের হাঁসি থামছেই না। সবাই অবাক চোখে মেঘকে দেখছে। এটা মেঘ নাকি এটা নিয়েও সবার সন্দেহ হচ্ছে। একটা সময় মেঘ বলল,,

‘দাদুভাই থামুন আমি আর পারছি না। আপনি আর আব্বা ছোটবেলায় কতো বোকামো করেছেন। ভেবেই আমার হাঁসি পাচ্ছে।”

তখন সমশের চৌধুরী হেঁসে বললেন,,

“আরে এগুলো তো কিছুই না। একবার আয়মান ছোটবেলায় কি করেছে জানো,,

“দাদুভাই প্লিজ আজ থাক আর না আমার পেট ফেটে যাওয়ার জোগাড়।”

তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“থাক আব্বা আর লজ্জা দিয়েন না। আমার আম্মাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই পরে ওগুলো নিয়েই কথা শোনাবে।”

তখন মেঘ হাঁসি থামিয়ে বলল,,

‘ভাগ্যিস আমার ছোটবেলা আপনাদের মতো নরমাল ছিল না। নাহলে নিশ্চয়ই আমি ছোটবেলায় সবার মতো বোকামো করতাম।”

হুট করে এমন কথা শুনে আয়মান চৌধুরী আর সমশের চৌধুরীর হাঁসি থেমে গেল। এই তো সব ঠিক চলছিল। কেউ কিছু বলবে তখন প্রবেশ ঘটলো আতাউর রহমানের পরিবারের। তা দেখে মেঘের মুখে আবার হাঁসি ফুটে উঠল। মেঘ উঠে তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“শুভ সন্ধ্যা আঙ্কেল ধন্যবাদ এখানে আসার জন্য।”

মেঘ ওনাদের নিয়ে গিয়ে বসালো। তখন শাফিয়ান চৌধুরী বললেন,,

‘মেঘ এখন তো সবাই এসে পরেছে। এখন বলো কিসের অনুষ্ঠান তুমি তো বলেছিলে সবাই এসে পরলে তারপর বলবে।”

‘আরে কাকাই এতো তাড়া কিসের? সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হোক তারপর বলবো। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা একে অপরের সাথে কথা বলেন না।”

অতঃপর সবাই মেঘের কথা মতো নিজেদের মতো গল্প করতে লাগলো। ডিনার শেষ করে সবাই ড্রয়িংরুমে বসলো। তখন মেঘ সবার সামনে একটা প্রজেক্টর সেট করলো। আর বলতে লাগলো,,

“আমার আর দাদুভাই এর কথায় এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য সকলেকে ধন্যবাদ। তো সবার একটাই প্রশ্ন কিসের অনুষ্ঠান? তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ দিনের জন্য অনুষ্ঠান নয়। আজ থেকে ছয় বছর আগে ঠিক আজকেই দিনেই আয়মান চৌধুরী মানে আমার আব্বার ওনারে একটা অনুষ্ঠান রাখা হয়েছিল। সেখানে থাকা সকলেই আজ উপস্থিত। মূলত সেই অনুষ্ঠানে আমার আব্বা কে অপমানিত হতে হয়েছিল তাও এমন একটা ভুলের যা আমার আব্বা করেই নি। তো আপনাদের এখানে ডাকার মেন কারন হলো আমার আব্বা যে নির্দোষ এটার প্রমান দেওয়ার জন্য এবং কিছু মানুষের মুখোশ উন্মোচন করার জন্য। তো প্রথমে আপনারা একটা ভিডিও দেখুন যেটা ছয় বছর আগে দেখেছিলেন।

মেঘ একটা ভিডিও দেখালো যেখানে আয়মান চৌধুরী একজন কে টাকা দিচ্ছে তারপর আরেকটা কাট ভিডিও দেখানো হলো যেখানে ঐ লোকটা একটা পরিবারকে আটক করেছে। যেখানে আয়মান চৌধুরী কে পেছন থেকে ভিডিও করা হয়েছে তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না।আয়মান চৌধুরী কাউকে ফোন করে বলছেন যে নতুন ডিল প্রেজেন্ট করা হয়েছে সেই ডিলটা না পেলে তোমার পরিবার কে মেরে ফেলা হবে। এই আয়মান চৌধুরী ওপরে ওঠার জন্য যা কিছু করতে পারে। আর এই ডিলটা আমার জন্য খুব ইম্পোর্টেন্ট। তখন ওখানে থাকা একটা মহিলা চিৎকার করে উঠলে তিনি গিয়ে মহিলার গায়ে হাত তুলেন।

ভিডিও টা শেষ হওয়ার পর মেঘ আবারো সবার সামনে গিয়ে বলল,,

“তো এটাই ছিল সেই ভিডিও যা ছয় বছর আগে দেখানো হয়েছিল এবং আয়মান চৌধুরী কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল । তিনি নাকি নিজের মেহনত না করে এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে তার ডিল পেয়েছিলেন।

বলতে বলতেই মেঘের কথা বন্ধ হয়ে গেল। সে আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকালো সমশের চৌধুরী আয়মান চৌধুরীর হাত খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে। আয়মান চৌধুরী মেঘের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ধূসর মেঘের অবস্থা বুঝতে পেরে মেঘের পাশে গিয়ে দাড়ালো। তখন মেঘ বলতে শুরু করল,,

“তো এই ভিডিও টা অনুষ্ঠানে একটা বোমা ফেলার ন্যয় কাজ করেছিল। কিন্তু সব থেকে মজার ব্যাপার হলো আয়মান চৌধুরী এতকিছু করলো কিন্তু তাকে পুলিশে দেওয়া হলো না। যার পরিবার কে কিডন্যাপ করা হয়েছিল সে ভিশন দয়ালদার মানুষ তিনি আয়মান চৌধুরী কে পুলিশে না দিয়ে, সমশের চৌধুরীর কাছে বিচার দিলেন। যে সে তার ছেলের যে বিচার করবেন সেটাই সে মেনে নেবে। কারন সে আমার সমশের চৌধুরী কে অনেক সম্মান করে। তো সমশের চৌধুরী তো আর ছেলেকে পুলিশে দিতে পারেন না। তাই তাকে বাড়ি থেকে এবং সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে বাড়ি থেকে বের করে দেন সবার সামনে। সত্যি কি দয়ালু মানুষ তিনি। এবার আসি মেন টপিকে যার জন্য আপনাদের ডাকা তো এখন আপনারা আরেকটা ভিডিও দেখুন যেই ভিডিও দেখলেই বুঝতে পারবেন কে যেন কালপ্রিট।

মেঘ আরেকটা ভিডিও দেখালো সেখানে আগের ভিডিওটার ফুল ভিডিও দেখা যাচ্ছে। পেছন দিকে মুখ করে একটা লোক বসে আছে আয়মান চৌধুরীর গলা নকল করে কারো সাথে কথা বললেন এবং মহিলাটিকে থাপ্পড় মেরে পেছনে ঘুরলেন যেখানে স্পষ্ট লোকটার চেহারা দেখা গেল।

এই ভিডিওটা দেখে সবাই অবাক হয়ে আতাউর রহমানের দিকে তাকালো। কারন ভিডিওটার লোকটা আর কেউ না আতাউর রহমান। তখন আরেকটা ভিডিও চললো ঐ ডিল করা লোকটার সে বলছে,,

“আমি আয়মানের সাথে কিছু করতে চাই নি। ঐ আতাউর রহমান আমার পরিবার কে কিডন্যাপ করেছিল। আর বলেছিল এগুলো বলতে আর ভিডিওটা দেখাতে। তিনি তো জেলেও দিতে বলেছিল কিন্তু একটা নিরপরাধ মানুষকে কিভাবে জেলে দিই তাই সমশের চৌধুরীর কাছে বিচার দিই। আর ঐ লোকটার ভয়ে তারপরের দিনই আমি পরিবার নিয়ে বিদেশে চলে আসি যাতে ঐ লোকটা আমাদের কিছু না করতে পারে।”

মেঘ এবার আতাউর রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘তো সবাই দেখলেন সবকিছু কে করেছে। আর হ্যা প্রথমে আমার আব্বা মে টাকা দিয়েছিল ওটা লোকটার মা অসুস্থ ছিল তাই টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল। কিন্তু এই সবকিছুর প্ল্যান ছিল জনাব আতাউর রহমানের।তো আঙ্কেল এখন আপনার কেমন লাগছে বলুন। আসলে এটার জন্যই আপনাকে আসতে বলেছিলাম। পুলিশ অফিসার ভেতরে আসুন।”

পুলিশ এসে আতাউর রহমান কে ঘিরে ধরলো। একজন পুলিশ ওনার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিল।তখন আতাউর রহমান বললেন,,

“মেঘ আমাকে ধরিয়ে দিলেও তুমি বাঁচবে না। কি কেস দেবে এই সামান্য কেসের জন্য তো আমি দুদিনেই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যাবো।

তখন মেঘ হেঁসে বলল,,,

“সামান্য কেস বলছেন? আপনার ওপর কি কি কেস আছে সেটা আপনিও জানেন না? আমার পাঁচ বছর বয়সে আমার শ্রদ্ধেয় দুই ফুপা আপনার কথামতো বাগান বাড়িতে দাদুভাই কে মারার জন্য আগুন দিয়েছিল তার কেস আপনার ওপর রয়েছে। আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে আবার আব্বার ওপর অ্যাটাক হয়েছিল সেটার কেস ও আপনার ঘাড়ে। আমার দাদুভাই এর গাড়ির ব্রেকফেইল হয়েছিল তিন বছর আগে সেটার কেস ও আপনার ঘাড়ে। মুন আপুর বিয়ের সময় বাড়িতে অ্যাটাক হয়েছিল সেটাও আপনার ঘাড়ে। আরো কতো অসংখ্য কেস আপনার ওপর আপনি নিজেই জানেন না‌।

মেঘের কথা শুনে সকলে চমকে উঠলো। রেজাউল করিম আর আশরাফ হক ভয় পেল এবার তারা কি করবে? আর বাকি সবাই থমকে গেলেন আয়না চৌধুরী আর আশা চৌধুরী কাঁদতে লাগলেন। হুট করেই চৌধুরী বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এলো।ওনারা পালাতে গেলেই পুলিশ ওনাদের ধরে ফেললেন।তখন মেঘ বলল,,

“আরে আমার শ্রদ্ধেয় দুই ফুপা পালাচ্ছেন কোথায়? আপনাদের এতো লোভ যে নিজের শ্বশুরকেই মেরে ফেলতে চাইলেন। রেজাউল করিম আর আশরাফ হক সর্বদা আতাউর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করতেন। এবাড়ির সকল তথ্য আপনারা ওনার কাছে পৌঁছে দিতেন। কিসের এতো লোভ আপনাদের সামন্য সম্পত্তির জন্য এরকম টা করলেন। আর দোষ চাপিয়ে দিলেন ঐ পাঁচ বছরের বাচ্চাটার ওপর যে নাকি কিছুই বুঝতো না। কি বলেছিলেন ঐ বাচ্চাটা আগুন নিয়ে খেলছিল আর খেলতে খেলতে সমশের চৌধুরীর রুমে ঢুকেছিল। তার থেকেই এই এক্সিডেন্ট ঘটেছে তাই না। কিন্তু সত্যি তো এই সেই ছোট্ট বাচ্চা টা তার দাদীর সাথে গল্প করছিল আর সেই সুযোগে আপনারা দুজন আগুন ধরিয়ে দেন। কিন্তু আপনাদের উদ্দেশ্যে ছিল সমশের চৌধুরী কে মারা কিন্তু সে তো ছিল না ঘরে এটা বোধহয় আপনারা দুজন খেয়াল করেন নি। সমশের চৌধুরীর স্ত্রী তার নাতনি কে কোলে নিয়ে বেরুতে পারছিলেন না। আর নাতনি কে বাঁচাতে গিয়েই তিনি ওখানে মারা যান। এটাই ছিল মূল কাহিনী তাই না‌ এসব জেনেও আপনারা এতদিন চুপ ছিলেন আর দোষ চাপিয়েছিলেন ঐ বাচ্চাটার ওপর। যার জন্য বাচ্চাটার জীবনে কতোটা অন্ধকার নেমে এসেছিল। আসলে তো আপনারা ওখানের দুজনেরই খুন করেছিলেন।

মেঘের চোখ দিয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। মেঘ তাড়াতাড়ি করে মুছে ফেললো ধূসর গিয়ে মেঘকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে রইল। আশা চৌধুরী গিয়ে রেজাউল করিম আর আশারাফ হক কে থাপ্পড় মারলো। আজ আয়না চৌধুরীর কি হলো কে জানে তিনিও গিয়ে আশরাফ হক কে থাপ্পড় মারলো আর কাঁদতে লাগলো। কারন এই মানুষ দুটোর জন্যই সে তার মাকে হাড়িয়েছিল। আশা চৌধুরী আর আয়না চৌধুরী বললেন উনাদের সামনে থেকে নিয়ে যেতে।
সবাইকে নিয়ে যাওয়া শুরু করলে মেঘ বলল,,

“দাঁড়ান অফিসার আরো একজন বাকি আছে তো?”

“কে ?’

“মিস্টার শাফিয়ান চৌধুরী আমার ভাইয়ের হত্যাকারী।”

এ কথা যেন সবার মাঝে আরো একটা বিস্ফোরণ ঘটালো। আয়মান চৌধুরী আর মায়মুনা চৌধুরী মেঘের কাছে এগিয়ে এলো। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“কি বলছেন আম্মা?”

‘আমি ঠিক বলছি আব্বা! এই শাফিয়ান চৌধুরী আমার যমজ ভাইকে মারার জন্য ডক্টরকে টাকা দিয়েছিলেন। সে চেয়েছিল আপনার যাতে ছেলে বংশধর না আসে। আর বেশি সম্পত্তি তার নামে করে দেয় দাদুভাই কারন তার ছেলে ছিল জিয়ান ভাইয়া।”

“এসব কি বলছেন?”

“সব সত্য বলছি আব্বা আজান হওয়ার সময় কাকাই একজনের সাথে কথা বলছিল । যেভাবে সে আপনার আগের পুত্র সন্তান কে মেরে ফেলেছিল এবারও মেরে ফেলতে চান। কিন্তু এবার তিনি করতে পারবেন না কারন ডক্টর ছিলেন মায়ের বান্ধবী। পরে আমি খোঁজ লাগিয়েছিলাম সত্যি সত্যি শাফিয়ান চৌধুরী আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। আমি পেছন থেকে সব শুনে নিয়েছিলাম আব্বা। এমন কি আমাদের সাথে যা খারাপ ঘটনা ঘটেছে সব বিষয়ে সে হাত না দিলেও তিনি জানতেন। এমন কি মুন আপুর বিয়ের সময় আপনার ওপর অ্যাটাক হলো সেটাও তিনি জানতেন। তিনিও আতাউর রহমান এর সাথে মিলিত।”

সব শুনে মায়মুনা চৌধুরী কেঁদে উঠলেন।আয়মান চৌধুরীর চোখ ছলছল করে উঠলেন।সমশের চৌধুরী শাফিয়ান চৌধুরী কে থাপ্পড় মারলেন আর বললেন,,,

“তুমি আমার ছেলে এটা ভাবতেই আমার ঘৃনা লাগছে। অফিসার নিয়ে যাও একে।”

অতঃপর পুলিশ সবাইকে নিয়ে গেল। বাড়িতে নিস্তেজ হয়ে গেল। কিন্তু মেঘ স্থির তার কোন দুঃখ নেই যেন। এই যে এতো গুলো মানুষের নজর ওর ওপর। কিন্তু তাতে ওর কোন হেলদোল নেই। মেঘ নিঃশব্দে ওপরে উঠতে লাগলো। তখন ধূসর ওর সাথে আসতে চাইলে মেঘ বলল,,

‘ধূসর আমাকে একটু একলা ছেড়ে দিন। আমি একটু নিজেকে সামলিয়ে নিই।”

ধূসর ওখানেই দাঁড়িয়ে পরলো। মেঘ রুমে গিয়ে দরজা আটকে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। ও নিজের মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো কারন ও জানে ধূসর দরজার বাইরেই আছে সাথে ওর আব্বাও। মেঘ নিজের চুল আঁকড়ে ধরে কাঁদছে। এতদিন কার সব কষ্ট কেন একেবারে মাথায় চেপে বসেছে। কিছুক্ষণ পর মেঘ নিচে বসে দেয়ালে নিজের মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর ধূসর একটা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। অনেক হয়েছে সে তার মেঘবালিকা কে কষ্ট পেতে দেবেনা। মেঘকে ওভাবে দেখে ধূসরের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। ধূসর গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখতেই ও ধূসরকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। ধূসর মেঘকে শক্ত করে আঁকড়ে রাখলো। কিন্তু ওর মেঘের কষ্ট সহ্য হচ্ছে না। তাই মেঘকে নিজের ভালোবাসার শুভ্রতা দিয়ে তার কষ্টগুলো কে বিলীন করতে উদ্যত হলো। মেঘ তার প্রেমিক পুরুষের সান্নিধ্য পেয়ে নিজেও তাকে আঁকড়ে ধরলো।

~চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে