#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_২০
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
ধূসর যেভাবে মেঘকে নিয়ে গোডাউনে ঢুকেছিল। সেভাবেই কোলে নিয়ে মেঘকে নিয়ে বেরিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিল। ধূসর গাড়িতে উঠে বসলো।তখন মেঘ বলল,,
“এভাবে কোনদিন তো আপনাকে দেখি নি?”
“দেখবে কিভাবে? কোনদিন তোমার সামনে এই রাগী আমিকে দেখাই নি। তুমি জানো কলেজে থাকতে কিছু অন্যায় দেখলেই তার সাথে আমার লেগে যেত। কতো মারপিট করেছি মেয়েদের কে ডিস্টার্ব করতো এই জন্য। তবে হ্যা এর আগে এতো হিংস্র কোনদিন ও হইনি। তুমি আমার খুব শখের মেঘবালিকা। তোমার সাথে ওরা যা যা করেছে তার কাছে এটা কিছুই না।”
“হুম অনেক হয়েছে এখন গাড়ি স্টার্ট দিন। মা বাবা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”
ধূসর গাড়ি স্টার্ট করলো একটা ফুলের দোকান দেখে গাড়ি থামিয়ে দিল।তারপর গাড়ি থেকে নেমে একটা বেলী ফুলের মালা আর কয়েকটা লাল গোলাপ নিয়ে এলো। তারপর মেঘ কে বলল,,
“হাত দাও মেঘবালিকা।”
মেঘ হাত বাড়িয়ে দিল। ধূসর মেঘের হাতে বেলী ফুলের মালা পরিয়ে দিতে দিতে বলল,,
“কতোদিন হয়ে গেল, আমায় হাতে কেউ বেলী ফুলের মালা পরিয়ে দেয় না। সেই জন্য বোধহয় হাতটাও আর বেলী ফুলের মালা দিয়ে জড়িয়ে থাকে না।
এই লাইনটা লিখতে ভুলে গেছিলে বোধহয় তাই আমিই পড়ে শোনালাম।”
মেঘ হাসলো আর বলল,,
“ধূসর হাওয়ার মিঠাই কিনে দেবেন? সেই আপনার সাথেই লাস্ট হাওয়ার মিঠাই খাওয়া হয়েছিল।”
ধূসর হেঁসে গাড়ি স্টার্ট দিল তারপর হাওয়ার মিঠাই দেখে গাড়ি থামিয়ে কয়েকটা হাওয়ার মিঠাই কিনলো। মেঘ আর ধূসর একসাথে হাওয়ার মিঠাই খেল। বাকিগুলো নীল রিমঝিম এর জন্য নিয়ে গেল। খান বাড়ির সকলে মেঘদের জন্যই অপেক্ষা করছিল। ওরা যেতেই দিলরুবা খানম বলল,,
“কিরে এত দেরি হলো কেন?”
তখন ধূসর বলল,,
“আর বলো না মা কিছু বাকি কাজ ছিল সেগুলো শেষ করলাম। তারপর তোমার বউমা বায়না করলো হাওয়ার মিঠাই খাবে তাই একটু দেরি হলো।”
তখন নীল বলল,
‘হাওয়ার মিঠাই তো আমার এত্তগুলা প্রিয় আম্মু। তুমি আমার জন্য হাওয়ার মিঠাই আনো নি?”
মেঘ হেঁসে বলল,,
“হুম নীলবাবু এনেছি তো দেখো তোমার মামা তার পেছনে হাত রেখে আছে। সেই হাতেই তো তোমাদের জন্য হাওয়ার মিঠাই নিয়ে এসেছে।”
নীল রিমঝিম এগিয়ে গেল তা দেখে ধূসর সরে গেল। আর ওরা তিনজন ধূসরের চারদিকে ঘুরতে লাগলো। সবাই ধূসরের কান্ড দেখে হাসলো অনেকদিন পর মনে হয় বাড়িটা প্রান ফিরে পেল। তখন রোহিনী বলল,,
“হুট করেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তোমার সাথে আমাদের সম্পর্ক জুড়ে গিয়েছিল মেঘ। তবে বুঝতেই পারি নি সেই গম্ভীর মুখু মেয়ে আমাদের পরিবার কে এতটা জড়িয়ে ফেলবে। এই যে কতোদিন তুমি ছিলে না। বাড়িতে মনে হয় প্রান ছিল না। তুমি আসতে
না আসতেই বাড়িটা মনে হয় প্রান ফিরে পেল।”
“ভাবী এরকমটা বলো না। তবে একটা পরিবারের সবাই যখন একসাথে থাকে তখনি পরিবারটা পরিপূর্ণ। কিন্তু ঐ পরিবারের সদস্য যেমনই হোক না কেন একজন যদি অনুপস্থিত থাকে তাহলে পুরো পরিবারটাই যেন কেমন যেন হয়ে যায়। ঐ একজনের অনুপস্থিতিই যেন সবাই কে শূন্যতা অনুভব করানোর জন্য যথেষ্ট।”
“তুমি ঠিক বলেছো।”
তখন দিলরুবা খানম বললেন,,
‘এই যে দুই জা এখানেই সব গল্প করবে নাকি। মেঘ অসুস্থ ওকে রুমে নিয়ে রেস্ট করতে হবে তো। আর ধূসর এতদিন বউয়ের কতো কেয়ার করলো। অথচ বাড়ি আসতে না আসতেই উনি বউয়ের হাত ছেড়ে দিয়ে বাচ্চাদের সাথে মজা করছে।”
এ কথা শুনে ধূসর বলল,,
“কি এত বড় কথা আমি একটু মজা করছি। এটা তোমার চোখে লাগছে। তোমরা এতগুলো মানুষ আছো তবুও আমাকে কেন দরকার। এভাবে বলছো তো দাঁড়াও দেখাচ্ছি।”
এই বলে ধূসর মেঘকে কোলে নিল আর বলল,,
“আমি সোজা আমার বউকে রুমেই নিয়ে যেতাম তাও আবার কোলে করে। আমার বউকে আমি কোলে করে নিয়ে আসিনি আমার বউ লজ্জা পাবে বলে। তোমাদের জন্য আমাকে লজ্জা দিতেই হলো।”
এই বলে ধূসর ওপরে গেল ওর কান্ড দেখে সকলে হাসলো। তখন নীলি সোহেল কে আর রোহিনী দিশান কে বলল,,
“কিছু শেখো ধূসর ভাইয়ার থেকে।”
বেচারা দু’জন ধূসরের ভালোবাসার চক্করে ফেঁসে গেল। নোলক ,দিলরুবা খানম আর এহসান খান হাসলো। ধূসর মেঘকে নিয়ে রুমে গিয়ে নামালো। এদিকে সবার সামনে কোলে নিয়েছে দেখে মেঘের লজ্জা লাগলো। কিন্তু প্রকাশ করলো না। কিন্তু ধূসর ঠিকই বুঝতে পেরে বলল,,
“হইছে আর লজ্জা পেতে হবে না। এখন ফ্রেশ হও। আর হ্যা ক্ষত গুলো যে পর্যন্ত না কমছে তুমি এই কয়েকদিন শাড়ি পরবে। তাহলে ক্ষত জায়গায় ওষুধ লাগাতে বা ড্রেসিং করতে সুবিধা হবে।”
“শাড়ি টা ঝামেলা হবে এর থেকে থ্রিপিস কিংবা গোল জামা বেটার। তাছাড়া সবকিছু তো আপনিই করবেন শাড়ির দরকার নেই।”
ধূসর দুষ্টু হেসে বলল,,
“তারমানে বোঝাতে চাইছো সব তো আমিই করবো তাহলে জামা না,,”
মেঘ ধমকে উঠলো,,
‘আপনি বড্ড অসভ্য ধূসর! একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবেন না।”
‘তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো।”
‘না আমার রাগ লাগছে! এখন সামনে থেকে সরুন আমি ফ্রেশ হবো।”
বলেই মেঘ ওয়াশরুমে চলে গেল। তা দেখে ধূসর হেঁসে বলল,,
“আজকাল লজ্জা বাবাজি আমার বউয়ের খুব কাছে থাকছে। যাই হোক মেঘবালিকা তোমার লজ্জামাখা মুখ আমার খুব প্রিয়। অনেক দিন হলো তোমার এই লজ্জা মাখা মুখ দেখি না। সুস্থ হও তারপর না হয় নতুন করে তোমার লজ্জা ভাঙাবো।
মেঘ ফ্রেশ হয়ে বের হলে তারপর ধূসর গেল ফ্রেশ হতে।
________________
“বস নয়না আর আকাশকে পুলিশ গ্ৰেফতার করেছে। তবে জানেন কি? আকাশ কে খুব মারা হয়েছে ছেলেটা কতোদিন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না কে জানে? কিন্তু নয়না,,
“কি করেছে আমার মেয়ের সাথে?”
“ওর ডান হাতটা কব্জি থেকে কেটে ফেলেছে একেবারে।”
লোকটার কথা শুনে A.R.K “কি!!!! বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে পরলো। আর বলল,,
“আয়মান আর মেঘ তোমরা কাজ টা ঠিক করো নি। আমার মেয়ের হাত কেটে ফেলেছো। এবার দেখবে আমি তোমাদের সাথে কি কি করি। আমি পুরো মাথাটাই তোমাদের শরীর থেকে আলাদা করে দেব। আমার মেয়ে হলো আমার জান। তাড়াতাড়ি শহরের বেস্ট উকিল এপোয়েন্ট করো। ওদের তাড়াতাড়ি করে ছাড়াতে হবে।যেভাবেই হোক ওদের কে জেল থেকে বের করার ব্যবস্থা করো। আর মেঘ আমি তোমাদের ছাড়বো না রেডি থেকো।
বলেই রেগে চেয়ারটাই সামনের দেয়ালে ছুড়ে মারলো ওখানে থাকা লোকটা ভয় পেয়ে গেল। লোকটা চলে গেল ভয়ে A.R.K কে ঘরে ভেতর রাগে ফুঁসতে লাগলো। এই জন্যই বলে যার আপনজনের আঘাত লাগে তখনি সে বুঝতে পারে তার কেমন লাগে। কিন্তু তার বোঝার ক্ষমতা নেই অন্যের মেয়েকে আঘাত করলে তার কেমন লেগেছিল।
_________________
‘বাবা আমি গ্ৰামের বাড়িটা নিতে চাই। এখন আপনার মতামত জানান।”
রাতে চৌধুরী বাড়িতে খাবার টেবিলে সবাই বসেছে খাবার খাওয়ার জন্য । হুট করে রেজাউল আহমেদ এর কথায় সবাই অবাক হলো। সমশের চৌধুরী মাথা উঠিয়ে বলল,,
“তোমার বাড়িটা কিসের জন্য প্রয়োজন? এমন তো নয় তুমি ঐ বাড়িতে থাকবে।”
তখন রেজাউল আহমেদ বললেন,,
‘আসলে বাবা একটা অফার এসেছে ঐ বাড়িটাকে নিয়ে অনেক মোটা অঙ্কের টাকা দেবে। ঐ বাড়ির যত দাম পরবে তার থেকে দিগুন দেবে। কম্পানিটাও ভালো যাচ্ছে না। ওটা বিক্রি করে যদি বিজনেস এ লাগাতে পারি তাহলে বিজনেস ভালো চলবে। আমি আমার জন্য নয় বরং আপনার কম্পানির জন্য চাইছি।”
সমশের চৌধুরী হাসলেন আয়মান চৌধুরীর দিকে একবার তাকিয়ে। রেজাউল আহমেদ এর দিকে তাকিয়ে বললেন,,
“আমাদের ভালো ভেবেছো শুনে ভালো লাগলো। তবে তুমি আমার বড় মেয়ের জামাই। তোমার কেউ নেই দেখে তোমাকে আমার কম্পানিতে যোগ দিতে বলেছিলাম। এই মানে এই না আমার পারিবারিক বাড়ি নিয়ে নিজের কথা রাখবে। তোমার মনে আছে এর আগে শাফিয়ান আমার কাছে বাড়িটা চেয়েছিল নতুন ফ্যাক্টরি বানাবে দেখে আমি দিই নি। এর কারন জানো ঐ বাড়িটা আমি কাউকে দিতে চাই না।”
“আশা আপনার বড় মেয়ে সেই হিসেবে আমাদের ও কিন্তু ঐ বাড়ির ওপর অধিকার আছে।”
‘এই তো নিজের পথে এসেছো। তো আশরাফ তুমিও ও তো ঐ বাড়িটা চাও। তা তোমরা দুজন একসাথে বুদ্ধি করেছো নাকি আলাদাভাবে।”
হুট করেই এমন কথায় আশরাফ হক কাঁশতে লাগলো। সকলে বিষ্ফোরিত নয়নে আশরাফ হকের দিকে তাকালো। এমনকি রেজাউল আহমেদ নিজেও।আয়মান চৌধুরী আর সমশের চৌধুরী মুচকি মুচকি হাসছেন। তাদের এক অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছে। আশরাফ হক বললেন,,
“আসলে বাবা আমারও একটা লোকের সাথে কথা হয়েছিল। বড় দুলাভাই বলছে দেখে চুপ করে আছি আপনি তাকেই দেবেন না সেখানে আমি তো কোন ছাড়।তাই কিছু বলছি না।”
“শাফিয়ান তুমি কিছু বলবে?”
এ কথা শুনে শাফিয়ান চৌধুরী তার বাবার দিকে চট করে তাকালো। আল বলল,,
“আমার কাছে অফার এসেছিল তবে আমি বলেছি আপনি বাড়িটা কাউকে দিতে চান না। তবে যদি দেন তাহলে উনাকে বলবো।”
সমশের চৌধুরী বললেন,,
“আয়মান বুঝলে তো এভাবে টোপ ফেলতে হয় চারদিকে একদিকে না একদিকে মাছ উঠবেই। কিন্তু মাছ যদি তার থেকেও বেশি বুদ্ধিমান হয়। তাহলে সে একটু লোভের জন্য খাবার খুঁজবে না। বরং নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য আরো গভীরে চলে যাবে। এমন যায়গায় লুকিয়ে পরবে যাতে সে টোপ ও দেখতে না পায় আর তার লোভ ও না হয়।”
সমশের চৌধুরীর কথা আর কেউ বুঝতে পারলো না কিন্তু আয়মান চৌধুরী হেঁসে ফেললেন। আর
বললেন,,
“জি আব্বা বুঝতে পেরেছি।”
“তো এখন বলো তোমাদের তিনজন কে কারা কারা এই অফার দিয়েছে?”
“A.R ইন্ড্রাস্টিজ এর মালিক ।”
তিনজনে একসাথে একটা কথাই বলে উঠলো। সবাই অবাক হলেও সমশের চৌধুরী অবাক হলো না। আয়মান চৌধুরী ও একটু অবাক হয়েছেন। তখন সমশের চৌধুরী বললেন,,
“আমার নাতনি মানুষ চিনতে ভুল করে না। সে ঠিকই বলেছিল এবার বুঝতে পারলে আয়মান।”
“জি আব্বা বুঝতে পেরেছি।”
“তো তোমাদের মতামত ঐ বাড়ির ওপর তোমাদের সকলের অধিকার আছে।”
আয়মান চৌধুরী ব্যতিত সবাই একসাথে বলত উঠল,,
“জি অবশ্যই আছে!”
“ওহ আচ্ছা তাহলে শুনো আমার গ্ৰামের জমিজমা সব ভাগ করে দিয়েছি। আশা আর আয়নাকে তাদের প্রাপ্য অধিকার মোতাবেক চাষাবাদের কিছু জমি ওদের নামে করেছি। রেজাউল আশরাফ তোমরা চাইলে সেটুকু বিক্রি করতে পারো আমি কিছুই বলবো না। আর শাফিয়ান তোমাকে আমাদের গ্ৰামের বাজারে কতোখানি জমি আছে সেই খানি আর বাড়ির পাশের চাষাবাদের জমি তোমার নামে করেছি। তুমি চাইলে যা ইচ্ছে তাই করতে পারো।”
এটা শুনে রেজাউল আহমেদ বললেন,
“আর বাড়ি ওটা কাকে দিয়েছেন?”
“ওটা আপাতত মেঘের নামে আছে। ওটা মেঘের বাড়ি।”
সকলে একসাথে ‘কি’ বলে উঠলো যে পুরো বাড়িতেই প্রতিধ্বনি হতে লাগলো। সমশের চৌধুরী হেঁসে বললেন,,
“ওটা আমার বড়ছেলে আয়মানের নামে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আয়মান বলল মেঘের নামে করতে সে পুরোটা মেঘকে দিয়ে দিয়েছে।”
হুট এরকম কথা শুনে সবাই আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকালো। আর আয়মান চৌধুরী সমশের চৌধুরীর দিকে। কারন তিনি বলেননি মেঘের নামে করে দিতে। তখন জিয়ান বলল,,
“দ্যাখ আজান দ্যাখ তোর বাবা মুনকে আর তোকে একদম ভালোবাসে না।”
তখন আজান হেঁসে বলল,,
“সম্পত্তির লোভ আমার কোনকালেই ছিল না। বাবা যদি মেঘ আপুকে বাড়িটা দিয়ে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই ভালো ভেবেই দিয়েছে। আর সব থেকে বড় কথা দেনাপাওনায় কখনো ভালোবাসা হয় না। ভালোবাসা মন থেকে আসে মানুষের কাজের মাধ্যমে। বাবা মেঘ আপুকে আমাদের থেকে বেশি ভালোবাসে কারন সে সেটা ডিজার্ভ করে। তার মানে এই না আমাদের ভালোবাসে না। আমাকে আর মুন আপুকে বাবা যথেষ্ট ভালোবাসে। তবে মেঘ আপুকে একটু বেশি। এই যে বাবা একটা বিজনেস করে সেখানে A.M.C ইন্ডাস্ট্রিজ নাম বাবা সেখানে বাবা মেঘ আপুর নামের অক্ষরের জন্য M দিয়েছে। ঐ পুরো কম্পানি যদি মেঘ আপুর নামে করে দেয় তাহলে সেটাও তার প্রাপ্য। কারন যখন ওটা হয়েছে তখন মেঘ আপু বাবার পাশে ছিল আমরা ছিলাম না। এমন কি তখন আমাদের কেউ বাবার পাশে ছিল না। ঐ একটা মানুষ ছিল যে বাবার পাশে ছিল বাবাকে হারতে দেয় নি বরং আগলে রেখেছিল। মেঘ আপুর সেই অবস্থার পর বাবা এমনি এমনি হার্ট অ্যাটাক করে নি। এটাই তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।”
ছেলের কথা শুনে আয়মান চৌধুরীর মন ভরে উঠলো। আর সকলে চুপ মেরে গেল।তখন আয়না চৌধুরী বললেন,,
“আমি বুঝতে পারলাম না আজান? যেই মেঘকে তুই ছয় বছর দেখিস নি। তার সাথে তোর এত ভালো সম্পর্ক হলো কখন। তার ওপর তোর এত ভালোবাসা এলো কোথা থেকে?
“কে বলেছে এই ছয় বছরে আমাদের দেখা হয় নি। মেঘ আপু সপ্তাহে দুদিন স্কুলে আমার সাথে এসে দেখা করতো। এমনকি বাবাও আমার সাথে দেখা করতো। আমরা কতো একসাথে আইসক্রিম ফুচকা খেয়েছি। এমন কি ধূসর ভাইয়ার সাথে আপুর বিয়ের পর ধূসর ভাইয়াও আমাদের সাথে এসে ফুচকা আইসক্রিম খেতো আমরা কতো মজা করতাম। কিন্তু ধূসর ভাইয়ার স্মৃতি চলে যাওয়ার পর, আপু তেমন বেশি দেখা করতো না। বিয়ে বাড়িতে ধূসর ভাইয়াকে দেখে খুশি হয়েছিলাম অনেক। কিন্তু ধূসর ভাইয়ার সামনে এমন ভাবে কথা বলেছি মাঝে আজই নতুন দেখছি।”
আজানের কথা শুনে সবাই অবাক হলো সবথেকে বেশি মায়মুনা চৌধুরী। মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,
“ধূসরের স্মৃতি কিভাবে গেল? আর মেঘ কি ধূসরের স্মৃতি যাওয়ার পর ধূসরদের সাথে থাকতো না।”
তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“ধূসরের আর মেঘের অনেক বড় এক্সিডেন্ট হয়েছিল। সেখান থেকেই ধূসরের স্মৃতি চলে যায়। ধূসর পুরোনো পাঁচ বছরের স্মৃতি ভুলে যায়। পুরোনো কিছু মনে করতে গেলে ধূসরের লাইফ রিস্ক ছিল, তাই মেঘ আলাদা থাকতো। তবে ধূসর বাদে আর সবার সাথে যোগাযোগ হতো।”
মেয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছিল শুনে মায়মুনা চৌধুরীর বুকটা ধক করে উঠলো। আর সেদিনের কথা মনে পরলো মেঘ বেঁচে আছে। তাই তিনি তাড়াতাড়ি করে বললেন,,
“সেদিন একটা লোক বলেছিল মেঘ বেঁচে আছে ওটা কি ছিল ওটাই এক্সিডেন্ট ছিল।’
“হুম মেঘের বাঁচার কথা ছিল না। ওদের আমি আর এহসান উদ্ধার করি তখন ওরা মৃত প্রায়। তবুও আল্লাহর রহমতে দুজন বেঁচে উঠেছে আলহামদুলিল্লাহ।”
মায়মুনা চৌধুরীর হুট করেই খুব কাঁদতে ইচ্ছে করলো। তিনি কান্না গুলো কে গিলে ফেললেন। সকলে এতক্ষন মনোযোগ দিয়ে মেঘের কথা শুনছিল মেঘের ব্যাপারে তারা পুরোই অজ্ঞাত। হুট করে মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,
“ওদের আসতে বলো আমাদের বাড়িতে। তখন তো জানতাম না ধূসর আমার মেয়ের জামাই।”
“যাকে মেয়ে হিসেবে কোনদিন মানলে না। তার জামাইকে মেয়ের জামাই হিসেবে মেনে নিলে। যাক খুশি হলাম। মেঘ আরেকটু সুস্থ হোক তারপর বলবো আসতে।এমনিতেও এ বাড়ি আসতে হবে।”
মায়মুনা চৌধুরী আর কিছু বললেন না। তখন সমশের চৌধুরী বললেন,,
“তো আশা এবং আয়না তোমাদের স্বামীরা সম্পত্তি নিয়ে কথা বলল এটায় তোমাদের মতামত কি?”
আশা চৌধুরী বললেন,,
“এটা নিয়ে আমার এবং ওনার মাঝে কোন কথা হয় নি। যদিও আমার আপনার থেকে কিছু নেওয়ার ইচ্ছে নেই। কিন্তু উনি যখন বলে ফেললেন তাহলে উনার প্রয়োজন হলে উনি নিতে পারেন। কিন্তু আমি ওখানে হাত লাগাচ্ছি না।”
তখন রেজাউল আহমেদ বললেন,,
“এমন করে বলছো কেন আশি? আমি তো বাড়িটার কথা বলছিলাম তাও তোমাদের কম্পানির জন্য।আমার নিজের জন্য নয়।”
“আপনাকে কিছু বলতে হবে না রেজাউল আমি আপনাকে চিনি এবং জানি।”
তখন আয়না চৌধুরী বলল,,
“আপা বাদ দাও না যা হয়েছে হয়েছে। তবে বাবা ভাইয়া ওটা মেঘের নামে করে দিয়ে একদম ঠিক করে নি। সব থেকে দামি জায়গাটা কেন ও পাবে? আজান না নিক মুনের তো অধিকার আছে। তাছাড়াও এ বাড়ির আরো নাতি নাতনি আছে ভাইয়া না নিলে জিয়ান শিফা ওদের দিতে।”
সমশের চৌধুরী ধমকে উঠলেন মেয়েকে বাবার ধমকে আয়না চৌধুরী ভয় পেল। সমশের চৌধুরী বললেন,,
“আমি আয়মান কে দিয়েছি ওটা তাই ওটা আয়মান ঠিক করবে কাকে দেবে কাকে দেবে না? আমি একবার ও বলেছি আয়মান ওটা নেয় নি। আমি বলেছি ওটা আয়মান মেঘের নামে করে দিয়েছে। একটা সহজ কথা তোমার মাথায় ঢোকেনা। ওটা আয়মানের অধিকার আর আমিই নিজ হাতে ওটা মেঘকে লিখে দিয়েছি আয়মানের হয়ে। এটা নিয়ে যেন আর কোন কথা না শুনি। অনেক দিন তো হলো বাপের বাড়ি এসেছো এখন বাড়ি যাও কয়েকদিন ওখানে থেকে তারপর আবার এসো। মানলাম তোমার শ্বশুরশাশুড়ি জীবিত নেই। কিন্তু তোমার সংসার তো ওটা তাই না।”
আর কোন কথা হলো না। সবাই খাওয়া শেষে নিজেদের রুমে চলে গেলেন। এদিকে চৌধুরী বাড়ির কিছু লোক রাগে ফুঁসছে। কিন্তু কিছু করতে পারছে না। ঐ বাড়ির বিনিময়ে শুধু টাকা না আরো অনেক কিছু পেত।
______________
“লিলি কোথায়?”
মেঘের প্রশ্নে ধূসর হেঁসে বলল,,
“কেন মিস করছো বুঝি?”
“আপনি সব ভুলে যাওয়ার পর। আপনার দেওয়া একমাত্র সেই -ই তো আমার সাথে ছিল।”
ধূসরের হাঁসি মুখটা হুট করেই মূর্ছা গেল। ধূসর বলল,,
“সেদিন ঐ অবস্থার পর কি হয়েছিল মেঘ!”
“আব্বা আর বাবা আমাদের উদ্ধার করে তখন নাকি আমাদের পালস্ অনেক স্লো ভাবে চলছিল। হাসপাতালে নেওয়া হলে তাড়াতাড়ি করে চিকিৎসা শুরু করে ডক্টর। আমার জ্ঞান একদিন পর ফেরে কিন্তু আপনার অবস্থা আমার থেকে বেশি খারাপ ছিল।আপনার জ্ঞান ফেরে একমাস পর যদি সহজ ভাবে বলি তাহলে ঐ একমাস আপনি কোমায় ছিলেন। আমি ঐ একমাসে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠি। আপনার জ্ঞান ফিরলে সবাই আপনার সাথে দেখা করে আপনি সবাইকে চিনতে পারেন । সবার শেষে আমি ঢুকি হেঁসে আপনার দিকে এগুতেই আপনি বলেন,, আপনি কে? ব্যস এইটুকুতেই বুঝে যায় সবাই আপনি স্মৃতি হাড়িয়েছেন ।হুট করেই আপনি বলেন আমি বোধহয় আপনাকে চিনি। এই বলেই আপনার মাথায় প্রচুর যন্ত্রনা শুরু হয় আপনি অজ্ঞান হয়ে যান। পরে ডক্টর জানায় আপনার শর্ট টাইম মেমোরি লস হয়েছে তিনি আশংকা করছেন আপনি পাঁচ বছর কিংবা তার বেশি সময়ের মেমোরি ভুলে গেছেন। আমার জন্য আপনার ঐ অবস্থা হয়েছে আমাকে যেন আমার থেকে দূরে রাখা হয়। ব্যস এইটুকুই।
মেঘের চোখে পানি ছলছল করছে তখন ওর কেমন লাগছিল সেটা শুধু ঐ জানে। ধূসরের চোখেও পানি ছলছল করছে ধূসর বলল,,
‘আমি জানি না মেঘবালিকা। তোমার তখন কেমন লাগছিল? আমি হলে তো সহ্যই করতে পারতাম না। তুমি যদি আমাকে ভুলে যাও এটা আমি ভাবতেও পারি না।”
বলেই ধূসর মেঘকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। মেঘ আধ শোয়া হয়ে বসেছিল আর ধূসর ওর হাত ধরে বিছানায় বসেছিল। ধূসর বলল,,
“তারপর কি হয়েছিল মেঘবালিকা? তোমার সাথে তো আমার আটমাস আগে দেখা হলো। তার আগের একবছর তুমি কোথায় ছিলে?
“সবার প্রথমে আমি নয়না আর আকাশকে খুঁজি। কিন্তু কোথাও নেই ওরা। ওদের নাগাল পাই না। তারপর আপনার ঐ অবস্থায় পর আমি আমার ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করার জন্য বিদেশে চলে যাই। যদিও তখন যেতে চাইছিলাম না। কিন্তু আপনার সামনেও আসতে পারতাম না। দূর থেকে আপনাকে দেখে যে আমার চোখের তৃপ্তি হতো না। দিন কে দিন অসহ্যকর হয়ে উঠছিল সবকিছু। হাসতে ভুলে গেছিলাম কথা বলতেও ইচ্ছে করতো না। তাই আব্বা আর বাবা জোর করে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। আমার ব্যারিস্টার হওয়ার পর দেশে ফিরে আসার পর ভাবি অনেক হয়েছে আপনার থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয়। আপনি ভুলে গেছেন তো কি হয়েছে আমি তো আপনাকে ভুলিনি। সবথেকে বড় কথা আপনাকে আমার মনে আছে। ব্যস এইটুকুই শেষ পর্যন্ত আপনাকে আমার মনে আছে।
~চলবে,,
#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_২১
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
আপনার আমাকে মনে না থাকতেই পারে,
কিন্তু আমার তো আপনাকে মনে আছে!
আপনি আমাদের ছোট ছোট সুন্দর কাটানো মুহূর্তগুলো ভুলতেই পারেন। কিন্তু আমার তো মনে আছে!
আমি আমার প্রিয়জনদের ক্ষেত্রে খুবই স্বার্থপর ধূসর!
আপনি আমার কাছে না আসতেই পারেন,
কিন্তু আমি তো যেতে পারি তাই না।
ভালোবাসায় এমন টা জরুরি নয় আমি আপনাকে যেভাবে মনে রেখেছি, আপনি আমায় সেভাবেই মনে রাখবেন। জরুরী নয় আমি যেভাবে আপনাকে চাই আপনিও সেভাবেই আমাকে চান। আপনি মানুষটা যেমনই হোন না কেন ? আমাকে আপনার মনে থাক বা না থাক। আমি আবারও আপনাকেই চাই। সবশেষে আমার মাথায় একটাই কথা সেট হয়ে গেছিল, আমার আবারও আপনাকেই চাই।
সব শুনে ধূসরের চোখ ছলছল করে উঠলো। এই মেয়েটা তাকে এমনভাবে ভালোবাসে কেন? মেঘের মুখ স্থির কিন্তু অন্যরকম একটা জেদ চোখে মুখে দেখা যাচ্ছে আমার আবারও আপনাকেই চাই। ধূসর মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,,
“আমারও তোমাকেই চাই মেঘবালিকা ! জীবনে যাই হোক না কেন?কিন্তু তুমি তো হাসপাতালে প্রথমে গিয়ে মেয়ে ডক্টর খুঁজছিলে। তোমার হাতের কনুই তে অনেক খানি কেটে গিয়েছিল। তারপর হুট করে আমাকে দেখে না তুমি আমার কাছে সেবা নিতে রাজি হলে। আর তুমি ওভাবে ব্যাথা পেয়ে হাসছিলে কেন? যার জন্য তোমাকে নিষ্ঠুর মেয়ে উপাধি দিয়েছিলাম প্রথম দিনই।”
মেঘ হেঁসে বলল,,
” আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। ঠিক তখন একটা ছোট্ট এক্সিডেন্ট হয়। আমার হাত অনেকটা কেটে যায়। আপনি তো জানেনই আমি পুরুষ মানুষের থেকে দূরে থাকি। আপনি আর আব্বা ছাড়া কারো স্পর্শ আমি নিতে পারি না।এখন ভালোমতো ট্রিটমেন্ট করাতে মেয়ে ডক্টর লাগবে তো। তাই মেয়ে ডক্টর খুঁজছিলাম। হুট করেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনাকে দেখলাম। আপনি এসেই ব্যস্ত হয়ে আমার হাত ধরলেন আমাকে দেখেও আপনার কিছু হলো না। এটা ভেবে আমি অনেক খুশি ছিলাম। আর এতটাই খুশি ছিলাম যে হাতের কথা আপনাকে দেখেই বেমালুম ভুলে গেলাম। তারপর থেকেই শুরু করলাম আপনার কাছে আসা যাওয়া।”
“তাই বুঝি ইচ্ছে করে নিজেকে আঘাত করতে?”
“একটু আঘাতে যদি শখের মানুষের সঙ্গ পাওয়া যায় তাহলে ক্ষতি কি?”
“তুমি আমায় এতো ভালোবাসো কেন মেয়ে?”
“আমি কখন বললাম আমি আপনাকে ভালোবাসি?”
“তোমার ভালোবাসা অদ্ভুত বুঝলে মেঘবালিকা। যা প্রকাশিত নয় তবে অপ্রকাশিতও নয় । তুমি তো মুখে প্রকাশ করো না ভালোবাসি। তোমার কাজের মাধ্যমে তুমি তোমার ভালোবাসা প্রকাশ করো। এটাতেই তো আমি ভিশন রকম ফাঁসি।শুনো নিষ্ঠুর মেয়ে আমি তোমায় ভালোবাসি।
“অনেক হয়েছে এখন লিলি কোথায় বলুন?”
“এই যে দিয়ে দিলে তো আমার ভালোবাসায় বাগড়া নিষ্ঠুর মেয়ে একটা।”
মেঘ হাসলো তা দেখে ধূসর বলল,,
“এই যে একদম হাসবে না।”
“আচ্ছা বেশ এখন লিলিকে নিয়ে আসুন। কবে থেকে বাচ্চাটাকে দেখি না।”
“নোলককে ওর দায়িত্ব দিয়েছিলাম। বোধহয় ওর রুমেই আছে।আমি গিয়ে নিয়ে আসছি।”
ধূসর গেল লিলিকে আনতে। তখন মেঘ বলল,,
“এই পুরোনো ধূসরকেই তো আমি মিস করছিলাম। যে রোজ নিয়ম করে আমাকে তার ভালোবাসা প্রকাশ করতো। ভালোবাসি ধূসর খুব ভালোবাসি আপনাকে।”
কিছুক্ষণ পর ধূসর লিলিকে নিয়ে। লিলি মেঘকে দেখেই ডাকতে লাগলো। কিন্তু ধূসর ছাড়লো না যদি এক লাফ দিয়ে মেঘের পেটের ওপর উঠে। তাই একেবারে মেঘের হাতে দিল। মেঘ লিলিকে পেয়ে একদম আদরে ভরিয়ে দিল। কয়েকটা চুমু ও দিল। তা দেখে ধূসর বলল,,
“হুম হুম খালি লিলিকেই এভাবে আদর করো। তোমার জামাই কতোদিন পর তোমার হলো কই তাকে তো একবার ও ,,
ধূসরের কথা শেষ হওয়ার আগেই মেঘের শুকনো গলায় কাঁশি উঠে গেল। কি বলছে এসব অসভ্য মানুষ। মেঘ কোন রকমে কাঁশি থামিয়ে লিলিকে পাশে নামিয়ে বলল,,
“মিস্টার ধূসর এহসান শুভ্র আপনি কি জানেন? দিনদিন আপনি বেশি অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন।”
“এতদিন পর বউকে কাছে পেলাম এখানে অসভ্য এর কি হলো। তুমি শুধু একবার সুস্থ হও তারপর দেখাবো অসভ্য কাকে বলে।”
ধূসরের কথা শুনে মেঘ লজ্জা পেল কিন্তু প্রকাশ করলো না। ও বলল,,
“অনেক কিছু হলো এখন আমাকে আমার ইনজেকশন দিন। আমি ঘুমাবো খুব ঘুম পাচ্ছে।’
“তুমি এত নিষ্ঠুর মেয়ে যে কি বলবো। ইনজেকশন নেওয়ার কতো তাড়া তোমার আর সবাই নাম শুনেই ভয় পায় ।
“আমি নিষ্ঠুর মেয়ে সেটাই ঠিক আছি। বেশি ভালো হতে হবে না। কিন্তু আপনাকে বলছি ভালো হয়ে যান ধূসর।”
মেঘের কথা শুনে ধূসর শব্দ করে হাসলো। আর বলল,,
“এই প্রথম বোধহয় কোন বউ তার জামাই একটু রোমান্টিক কথাবার্তা বলছে দেখে। জামাইকে ভালো হয়ে যাওয়ার কথা বলছে। ”
“আমি ঘুমিয়ে পরলাম আপনি থাকুন জেগে। লিলি তুই এখানে আয় আজ তুই আমাদের মাঝখানে শুবি।”
মেঘ শুয়ে পড়লো মাঝখানে লিলিকে শুয়ালো। ধূসর একটা ইনজেকশন মেঘের শরীরে পুশ করে দিল। ধূসর লিলিকে উঠিয়ে রুমের বাইরে দিয়ে বলল,,
“যা লিলি আজ তোর ফুপির রুমে গিয়ে ঘুমা। তোর বাপ মায়ের মাঝে তোর এলাচি হয়ে লাভ নেই। সত্যি বলতে তোকে আমার বিশ্বাস নেই তোর মায়ের পেটের ওপর উঠলে তোর মা ব্যাথা পাবে। তাই সেই রিস্ক আমি নেব না। ”
লিলি কি বুঝতে পারল কে জানে? ও দুই বার মিয়াও মিয়াও ডেকে চলে গেল নোলকের রুমে। ধূসর পেছনে ঘুরতেই দেখতে পেল মেঘ ধূসরের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে ধূসর লাইট অফ করে দিয়ে বলল,,
“হয়েছে এখন ঘুমাও। তোমার এতকিছু মাথায় ঢুকাতে হবে না।”
কিন্তু মেঘ ঘুমাচ্ছে না ও ধূসরের দিকে তাকিয়ে আছে। ধূসর কিছু বলবে মেঘ কিছু বলার সুযোগই দিলো না। মেঘ চোখ বন্ধ করে নিল। ধূসর হাসলো মেয়েটা এমন কেন?
__________________
‘মেঘের নামে জমিটা করা। এখন আর ওটা নেওয়ার চেষ্টা করাও বৃথা।”
“সেটা তোমাদের ভাবতে হবে না। তোমার আপাতত কাজ শেষ এখন ফোন রাখতে পারো।”
ওপাশের লোকটা ফোন রেখে দিল। এপাশের লোকটা ফোন নামিয়ে বলল,,
“সমশের চৌধুরী তুমি বুদ্ধি করে মেঘের নামে করেছো সেটা আমি ভালো করেই জানি। কারন সবাই লোভী হলেও আয়মান আর মেঘ লোভী নয়। সমস্যা নেই সামনে দেখতে থাকো কি হয়। তোমার জন্য যেমন আমি আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিলাম সেভাবে তোমার পুরোনো বাড়িটাও আমি তোমাকে হাতছাড়া করতে চেয়েছিলাম। ক’টা দিন নিশ্চিন্তে থাকো আপাতত আমার মেয়েকে ছাড়াই। আমার মনে হচ্ছে মেঘের সাথে মেঘের হাজবেন্ড ও মিলিত। ওর হাজবেন্ড ও বেঁচে আছে শুনলাম। তারমানে ঐটাই সেই ধূসর যে ধূসরকে নয়না ভালোবাসতো। এবং মেঘের সাথে মেরে ফেলেছিল আমি বুঝতে পারলাম না ওরা দুজনেই কিভাবে বাঁচলো? আমার সন্দেহ হচ্ছে ওদের কাছে ভিডিওটা এখনো আছে। কিন্তু ওটা নেব কিভাবে মেঘ যে বুদ্ধিমতী মেয়ে। তাছাড়া এখন তো ওর হাজবেন্ড ও আছে। আয়মান সব জায়গায় গার্ড ঠিক করে রেখেছে। ধূসর ও একজন নামকরা ডক্টর। এহসান ও বিজনেস ম্যান কিছু করলে ধরা পরার চান্স বেশী। একদিকে নয়না একদিকে আমি । এখন কি করবো এই মেঘ কেমন যেন চারদিক থেকে গোলক ধাঁধার মতো আমার চারদিকে ঘুরছে।
______________
দেখতে দেখতে এভাবেই আরো সাত দিন পেরিয়ে গেল। মেঘ মোটামুটি সুস্থ। আজকে নয়না আর আকাশের কেস কোর্টে উঠবে। মেঘের কষ্ট হলেও মেঘ কোর্টে আসলো। মেঘ আর ধূসর কোর্টে পৌঁছাতেই দেখলো আয়মান চৌধুরী মেঘের অফিসের কেবিনে বসে আছে। মেয়েকে দেখে এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করলো। আর বেস্ট অফ লাক জানালো। মেঘ সবার প্রথমে নয়নার বাবাকে খুঁজলো না কোথাও নেই। নয়না আর আকাশ কে আনা হলো। মেঘ আর ধূসর তাদের দিকে এগিয়ে গেল। মেঘ নয়নার সামনে গিয়ে হেঁসে বলল,,
‘কিরে কি অবস্থা? একটা হাত নেই আর এক হাত দিয়ে সব করতে পারছিস তো ঠিক ভাবে?”
নয়না রেগে বলল,,
“আমার জন্য তোর চিন্তা করতে হবে না। আমার বাবা ঠিক আমাকে বাঁচিয়ে নেবে তারপর দেখবো তুই কিভাবে বাঁচিস।”
মেঘ হেঁসে বলল,,
“তা তোর বাবা কোথায় দেখছি না তো! ওহ হো তোর বাবা তো আবার জনসম্মুখে মুখ দেখাতে লজ্জা পায়। তাই তো সবসময় মুখ ঢেকে থাকে।”
“মুখ সামলে কথা বল মেঘ নাহলে তোকে ,,
তখন ধূসর বলল,,
‘ভুলে চেষ্টাও করবে না আমার মেঘবালিকার কিছু করতে। একবার হাত গেছে পরেরবার প্রানটাই না নিয়ে নিই। ডক্টর মানুষ বলবো অপারেশন করতে গিয়ে মারা গেছে ব্যস ওখানেই খেল খতম। তাছাড়া আমার বউ একজন লয়ার ঠিক কিছু বলে কেস শেষ করে ফেলবে।”
এ কথা শুনে আকাশ আর নয়না অবাক হয়ে বলল,,
‘কি মেঘ লয়ার?”
“ইয়েস আফামনি এখনকার বেস্ট লয়ারদের মধ্যে অন্যতম লয়ার K.A.Megh…
ধূসরের এরকম কথা শুনে মেঘ হেঁসে বলল,,
‘কোর্টের ভেতর যা হবে তার জন্য তৈরি থেকো নয়না। তোমার বাবাও আজ তোমাকে বাঁচাতে পারবে না। উল্টে তোমার বাবা না আজ ফেঁসে যায়। চলুন ধূসর!”
মেঘ ধূসরের হাত ধরে চলে এলো। এদিকে নয়না পরে গেল চিন্তায়। এই লয়ারের নামে অনেক শুনেছে কিন্তু এটাই যে মেঘ এটা বুঝতে পারে নি। কিন্তু ও আশে পাশে কোথাও ওর বাবাকে পেল না। অতঃপর কেস কোর্টে উঠলে মেঘ সব প্রমান করে দিল। ধূসর ও তার স্টেটমেন্ট দিল। সবার শেষে মেঘ এটাও বলল দেশের বড় শত্রু অবৈধ সব কারবারের সাথে জড়িত A.R.K তাকে ধরতে। কোর্ট যেভাবে হোক A.R.K কে ধরার নির্দেশ দিল। নয়নার আর আকাশের আইন অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হলো। কিন্তু কোথাও নয়নার বাবাকে দেখা গেল না। তা দেখে মেঘ হাসলো। মেঘ গাড়ির কাছে এসে বলল,,
“ধূসর আপনি বাড়ি যান। আমি আব্বার সাথে কিছু কথা বলে আব্বার সাথে বাড়ি যাবো।”
“তারমানে বলতে চাইছো তুমি আমার শ্বশুরবাড়ি যাবে?’
“হুম একটু দাদুভাই এর সাথে কথা বলবো।”
“তাহলে চলো আমিও তোমার সাথে শ্বশুরবাড়ি যাবো।”
“না আজ আমি একা যাবো। কাল সকালেই চলে আসবো।”
“তোমার ওষুধগুলো তো বাড়িতে তাই না।”
“আমি নিয়ে এসেছি আমার ব্যাগে।”
“এ কথাগুলো আমাকে আগে বললেই হতো।”
‘সরি মনে ছিল না কাল রাতে আপনার ইমার্জেন্সি এসে পরেছিল তাই।”
ধূসর মন খারাপ করে বলল,,
“ওহ আচ্ছা তাহলে আমি যাই। নিজের খেয়াল রেখো!
ধূসর চলে যেতে নিল। মেঘ হেঁসে বলল,,
‘আচ্ছা ঠিক আছে তবে আপনি চাইলে রাতে শ্বশুরবাড়ি যেতে পারেন। এখন তো আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে একটা অপারেশন আছে তাই।”
হুট করেই ধূসর এর মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। ধূসর হেঁসে বলল,,
“নিষ্ঠুর মেয়ে একটা! এটা আগে বললে কি হতো।আচ্ছা ঠিক আছে আমার বউ যখন বললো তাহলে আমি রাতেই শ্বশুরবাড়ি যাবো।”
“আমি কখন বললাম।”
‘সব মুখে বলতে হবে নাকি। আচ্ছা আমি আসছি নিজের খেয়াল রেখো। আল্লাহ হাফেজ।”
‘আল্লাহ হাফেজ।”
ধূসর চলে গেল । মেঘ আয়মান চৌধুরীর কাছে এসে বলল,,
“আব্বা চলুন একটু A.R.K এর সাথে দেখা করে আসি।”
আয়মান চৌধুরী বললেন,,
“আম্মা আপনি তো অসুস্থ চলুন আজ থাক সুস্থ হোন আগে। তারপর না হয় তার সাথে দেখা করা যাবে।”
“কিছু কিছু জিনিস দেরি করা উচিৎ নয়।”
আয়মান চৌধুরীর আর কি? মেয়ে যখন বলেছে তাহলে যেতেই হবে। মেঘ আর আয়মান চৌধুরী চললেন তাদের গন্তব্যে। গাড়িটা গিয়ে একটা বাড়ির সামনে দাঁড়ালো। মেঘ আর আয়মান চৌধুরী বাড়িতে ঢুকে দেখতে পেলেন সবাই লাঞ্চ করছে। তা দেখে মেঘ হাসলো। মেঘ আর আয়মান চৌধুরী কে এই সময় দেখে সকলে অবাক হলো। হুট করে একজন উঠতে উঠতে বলল,,
“আরে আয়মান হঠাৎ এই সময় আমার বাড়িতে?”
তখন মেঘ বলল,,
“আরে আতাউর আঙ্কেল উঠছেন কেন? খাবার ছেড়ে উঠতে নেই। আসলে কিছু কথা বলার ছিল। আপনি খাওয়া শেষ করুন আমি আর আব্বা অপেক্ষা করছি।”
“আর মেঘ তুমি না অসুস্থ এই অবস্থায় আসতে গেলে কেন? খুব প্রয়োজনীয় হলে আমাকে বলতে আমি নাহয় তোমাদের সাথে দেখা করতে চলে যেতাম।”
‘”আমি অসুস্থ আপনি কি করে জানলেন?”
এ কথা শুনে আতাউর রহমান একটু হকচকিয়ে উঠলো। তবুও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,
“ঐ একটা কাজে রেজাউল কে ফোন করেছিলাম ও বলেছে তাই। ঐ তো অসুস্থ শরীর নিয়ে এলে কেন? আমাকেই বলতে না হয়।”
“না আঙ্কেল যার প্রয়োজন তারই সবসময় যাওয়া আসা করা উচিৎ। আপনি খাবার খান আমরা বসছি।”
‘তোমরাও আমাদের সাথে বসে পড়োনা। এই সময় এসেছো নিশ্চয়ই খেয়ে আসো নি।”
“না আঙ্কেল আমরা একদম বাড়ি গিয়ে খাবো। খাওয়ার আগে আমার একটা ওষুধ আছে।”
“ওহ আচ্ছা!”
আতাউর রহমান তাড়াতাড়ি করে খাওয়া শেষ করলেন। মেঘ আর আয়মান চৌধুরী ওখানেই ড্রয়িংরুমে বসে ছিল। মেঘ আতাউর রহমানের ফ্যামিলিকে দেখলো। আতাউর রহমান ওনার মিসেস এবং ওনার ছেলে আর বউমা খাবার খাচ্ছে এটাই বোধহয় তাদের পরিবার। আতাউর রহমান ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় বসলেন। আর বললেন,,
“তো মেঘ বলো কি বলবে?”
“তেমন ইম্পোর্টেন্ট কিছু না শুধু আপনাকে দেখতে এসেছিলাম। আর একটা কথা বলতে।
‘মানে?”
“আজ নয়না রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আমি শুনেছিলাম আপনার মেয়ের নাম ও নয়না রহমান তাই না।”
হুট করে নয়নার কথা শুনে রহমান পরিবার আতকে উঠলেন। মিসেস রহমান বললেন,,
“হ্যা আমার মেয়ের নাম ও নয়না রহমান। তো কি হয়েছে ও তো কয়েকদিন হলো দেশে ফিরেছে। কিন্তু পনেরো বিশ দিন ধরে ওর কোন খোঁজ পাচ্ছি না। কিন্তু কারাদণ্ড কেন? ওটা কি বলছিলে তুমি।”
“আরে রিল্যাক্স আন্টি আমি তো বলি নি সেই নয়না রহমান আপনার মেয়ে নয়না রহমান। কিছু দিন আগে আমার ওপর একটা মেয়ে অ্যাটাক করে। সেই অভিযোগ এ নয়না রহমান নামে কাউকে গ্ৰেফতার করা হয়।আসলে সে আর তার এক বন্ধু মিলে আমাকে মারতে চেয়েছিল তাই পুলিশ ধরেছে। আজ কোর্টে কেস উঠেছিল। অপর পক্ষের লয়ার তার সকল কর্মকাণ্ড কোর্টে পেশ করেছে তাই তার শাস্তি হয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় জানেন মেয়েটার পরিবারের কেউ তার জন্য কোর্টে যায় নি। মেয়েটা অনাথের মতো চারদিকে দেখছিল বোধহয় কাউকে খুঁজছিল। মনে হয় তার বাবাকে খুঁজছিল। তবে আমার মনে হচ্ছিল ওটা আতাউর আঙ্কেল এর মেয়ে অথচ আঙ্কেল কে কোথাও দেখলাম না। অবশ্য ভুল হতেই পারে নয়না রহমানের বাবা তো A.R.K কিন্তু আপনি তো আতাউর রহমান তাই না আঙ্কেল।
হুট করে এমন কথায় আতাউর রহমান চমকে উঠলেন। তার মানে মেঘ সব জানতে পেরেছে। আতাউর রহমান বললেন,,
“তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো মেঘ?”
“কিছু না ওটা এমনিই বললাম। আসলে আজ থেকে ঠিক পনেরো দিন পর আমাদের বাড়িতে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তাই আপনাকে দাওয়াত দিতে এসেছি।”
“কি উপলক্ষে?”
“সেটা গেলেই জানতে পারবেন! যাই হোক আপনাদের পরিবারের সকলকে নিয়ে যাবেন ঠিক আছে। আন্টি ভাইয়া আপনারাও কিন্তু যাবেন। আজকের মতো আসি আল্লাহ হাফেজ। পনেরো দিন পর দেখা হবে।”
মেঘ আর আয়মান চৌধুরী চলে গেল। আতাউর রহমান নিজেদের রুমে গিয়ে কাউকে ফোন করলেন আর জানতে পারলেন মেঘ যা বলেছে তাই সত্যি। কিন্তু ঐ লয়ার তো বলেছিল যে করেই হোক নয়না কে ছাড়িয়ে আনবে। উনি মূর্তির মত বসে রইলেন। তখন মিসেস রহমান রুমে গিয়ে ওনাকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে বললেন,,
‘নয়না কোথায়? মেয়েটা আমার ঠিক আছে তো?
তুমি তো বলেছিলে ও ঘুরতে বেরিয়েছে। কিন্তু এ কয়েকদিন ওকে ফোনে কেন পাওয়া যাচ্ছিল না।”
এসব শুনে আতাউর রহমান চিৎকার করে বলল,,
“নয়না নেই ও কোথাও নেই। মেঘ যে নয়নার কথা বলছিল সেটাই আমার মেয়ে নয়না। নয়না মেঘের পেটে ছুরি বসিয়েছিল তাই ওকে পুলিশ এরেস্ট করেছে। আর আজ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। বুঝতে পেরেছো তুমি।”
এ কথা শুনে মিসেস রহমান অসহায় হয়ে পরলেন। তিনি চিৎকার করে বললেন,,
“তার মানে তুমি সব জানতে? তাহলে আমাকে জানাও নি কেন? তোমার জন্য এসব হয়েছে তুমি তো অন্ধকার রাস্তায় গেছোই সাথে আমার মেয়েটাকেও নিয়েছো। তোমার জন্য আজ এই অবস্থা আমার মেয়ের। আর তুমি নিজে ধরা পরবে বলে আমাকে মেয়ের কাছে যাও নি। ছিঃ তুমি বাবা তুমি বাবা নামের কলঙ্ক। ওহ হো মেয়েটা যখন বলল নয়নার বাবা তো A.R.K তখনি আমার বোঝা উচিৎ ছিল যে, ওটা আমার মেয়েই মিস্টার আব্দুল রহমান কাদের ওরফে A.R.K ….
আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তোমার পুরোনো নাম মিস্টার আতাউর রহমান। আমার মেয়েকে এনে দাও আমার একটাই মেয়ে আমার খুব আদরের। তোমার না এত ক্ষমতা তুমি প্লিজ আমার মেয়েকে এনে দাও।”
আতাউর রহমান বললেন,,
“একদম কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করবে না। আমি বলেছিলাম তোমার মেয়েকে মেঘকে মারতে। এখন তো রায় বেরিয়েই গেছে এখন কি করার আছে?”
“শুধু মাত্র তোমায় ভালোবেসে তোমার সব জানার পরও আমি তোমার সাথে আছি। ভেবেছিলাম তুমি একদিন শুধরে যাবে। কিন্তু তুমি দিনকে দিন ভালো হবার বদলে আরো নিকৃষ্ট মানুষ হয়ে যাচ্ছো। নয়না না তোমার কত আদরের ছিল। আজ ধরা পরেছে বলে নিজের মেয়েকেই ভুলে গেলে যদি নিজের পরিচয় সামনে আসে। এরকম স্বার্থপর তুমি।”
আতাউর রহমান অসহায় কন্ঠে বলল,,
“একজন মানুষ খারাপ হলেও কখনো কোন বাবা খারাপ হয় না। আমি নয়নাকে এসবে জড়াতে চাই নি। তোমার মেয়ে নিজেই জড়িয়েছিল। আমি শুধু চৌধুরী পরিবার কে শেষ করার জন্য অবৈধ ভাবে ওপরে উঠেছি। তাই বলে আমি কোন দিন ও চাই নি নয়না এসবে জড়াক।তবে হ্যা আজ আমি স্বার্থপর হয়েছি কারন ওখানে গেলেই আমাকে ধরে ফেলতো। কিন্তু আমি যে এত সহজে ধরা দেব না। মেঘকে আর চৌধুরী পরিবার কে শেষ না করা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই। তুমি জানো ওরা নয়নার ডান হাত কেটে দিয়েছে আমি ওদের মাথা কাটবো।”
একথা শুনে মিসেস রহমান কেঁদে উঠলেন আর কাঁদতে কাঁদতে বললেন,,
“যা হয়েছে হয়েছে তুমি আর এসবে যেও না। এগুলো খুব খারাপ জিনিস ধ্বংস করে ফেলবে সব।”
“ধ্বংসই তো করবো। পনেরো দিন পর দাওয়াত দিয়ে গেল তো। যাই দাওয়াত খেয়ে আসি তার পনেরো দিন পর না হয় আবার যাবো ধ্বংস করতে।”
বলেই আতাউর রহমান হাসতে লাগলো। তা দেখে মিসেস রহমান ভয় পেলেন না জানি কি হয়।
_________________
মেঘের খারাপ লাগছে দেখে আয়মান চৌধুরী মেঘকে ধরে ধরে আনছে। মেঘ এখানে আসতো না, কিন্তু দাদুভাই কে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে বলতে হবে। কেন না সব ওকেই বুঝিয়ে বলতে হবে।কারন পনেরো দিন পরেই তো ওদের শত্রুর দি ইন্ড করবে। আয়মান চৌধুরী মেয়ের হাত শক্ত করে ধরে আনছে এই সময় তেমন কেউ বাড়িতে নেই শুধু সমশের চৌধুরী,
জাহানারা আর মায়মুনা চৌধুরী বাড়িতে। মেয়েকে এভাবে ধরে আনতে দেখে মায়মুনা চৌধুরী বললেন,,
‘কি হয়েছে মেঘের?”
তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,
‘তেমন কিছু না একটু খারাপ লাগছে। তুমি একটু খাবারের ব্যবস্থা করো। খেয়ে ওষুধ খেতে হবে মেঘের।”
“আচ্ছা এখনি যাচ্ছি তোমরা ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি তাহলে তোমাদের খাবার রুমে পাঠিয়ে দিই। তোমাদের নিচে আসতে হবে না। তাছাড়া মেঘ ও অসুস্থ।”
মায়মুনা চৌধুরী চলে গেলেন এদিকে মেঘ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মেঘ বলল,,
“আব্বা এটা কি হলো?”
“তেমন কিছু না আম্মা। একটু আপনার মা হওয়ার চেষ্টা। তবে কারনটা আমি জানি না। আপনি ওপরে চলুন।”
আয়মান চৌধুরী মেঘ কে নিয়ে ওপরে গেলেন। মেঘরা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিল। বিকেল এ মেঘ সমশের চৌধুরী কে বললেন অনুষ্ঠানের কথা। অতঃপর সমশের চৌধুরী বিকেলেই ওনার সব আত্মীয় স্বজন কে অনুষ্ঠানের কথা জানিয়ে দিলেন। হুট করে অনুষ্ঠান শুনে সবাই অবাক হলো। একটা ফোন এহসান খান এর কাছেও গেল। আয়মান চৌধুরী আগেই বলে রেখেছিলেন রাতে ধূসর আসবে। তাই মায়মুনা চৌধুরী সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন। রাত আটটায় ধূসরের আগমন ঘটলো এই প্রথম সে সজ্ঞানে শ্বশুরবাড়ি এলো। ধূসর সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো তারপর মেঘের রুমে গেল। মেঘ আধশোয়া হয়ে বই পরছিল । মেঘকে এভাবে দেখে ধূসর গিয়ে বলল,,
“তুমি তো দেখি খুব মজায় আছো জামাই কে ছাড়া?”
মেঘ মুখ তুলে বলল,,
“আপনি এসে পরেছেন? আমি ভাবলাম আরও দেরি হবে।”
“বউ আমার শ্বশুরবাড়ি আসতে বলেছে। বেশি দেরী করলে হয় নাকি।”
“আচ্ছা যান আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি আপনার খাবারের ব্যবস্থা করছি।”
“তোমার করতে হবে না। শাশুড়িমা আমাকে ফ্রেশ হয়েই নিচে যেতে বলেছে। সে আমার খাবারের ব্যবস্থা করছে।”
বলেই ধূসর ওয়াশরুমে ঢুকলো। এদিকে মেঘ ওর মায়ের বিষয়টা বুঝতে পারছে না উনি চাইছে টা কি?
~চলবে,,